শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৪

সাধারণের অসাধারণ কাঠমান্ডু

অজস্র বলিরেখার ভাবলেশহীন মুখেও স্মিত হাসি৷‌ ঠোঁটের কোনায় সেই হাসিটাই ঝুলিয়ে রেখে আমাদের ড্রাইভার গুরুং উত্তর দিল- রামরো৷‌ জানতে চেয়েছিলাম, ‘কস্ত ছ?’ গুরুংয়েরই শেখানো৷‌ অর্থাৎ ‘কেমন আছো’? ‘রামরো’ অর্থাৎ ভাল৷‌ তা সেই গুরুং গুরুর শেখানো বিদ্যা আজ প্রয়োগ তারই ওপর৷‌ একেই বলে গুরুমারা বিদ্যা৷‌ স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপের সেই ওপর থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকায় তখন রোদ যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে৷‌ পুরো শহরটা ঝলমল করছে৷‌ ৩৫০ সিঁড়ি ভাঙবার ক্লাম্তি আগেই চলে গেছিল কাঠমান্ডুর এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটি দেখে৷‌ আর এখন ঝলমলে শহরের ঝলকে থামেল থেকে এতদূর হাঁটার কথা মনেই রইল না৷‌ গুরুং গাড়ি নিয়েই উঠতে বলেছিল৷‌ নিজেই উঠিনি৷‌ চারপাশের ঘিরে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো না থাকলে ঠিক বোঝা যায় না ৪,৬০০ ফিট উচ্চতায় আছি৷‌ মোটামুটি সমতল এই ৫০.৬৭ বর্গকিমির শহর৷‌ এবার ঠিক ছিল একদম ছক কষে এটা-ওটা দেখব না৷‌ যখন যা মন চাইবে সেটাই দেখব৷‌ তাই এর আগে গেছিলাম বাগমতী তীরের ললিতপুরে৷‌ না না, নতুন কোনও জায়গা নয়৷‌ ললিত পাট্টন বা ললিতপুর আজকের পাটন৷‌ মল্ল রাজবংশের অতীত রাজধানী দরবার স্কোয়্যার, মিউজিয়াম, অসংখ্য মন্দির, যার মাঝে গোল্ডেন টেম্পলও রয়েছে, ইত্যাদি নিয়ে এক দুর্দাম্ত ব্যাপার৷‌ প্যালেস তো রয়েইছে৷‌ অপূর্ব কাজ সর্বত্রই কাঠের ওপর৷‌ ১০.৩০-১৭.৩০-এর ছোট্ট মিউজিয়ামটিও অনবদ্য৷‌

নেওয়ার গোষ্ঠীর ভক্তপুর চোখ-ধাঁধানো৷‌ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ভক্তপুর ও তার দরবার স্কোয়্যার, লায়ন গেট, গোল্ডেন গেট, ৫৫ জানালার প্রাসাদ, পিকচার গ্যালারি, বাতসালা মন্দির নিয়ে এক অন্য জগৎ৷‌ সম্মোহিত হতে হয় প্রাচীন শহরের অলিগলিতে আর জু জু দইয়ের স্বাদে৷‌ কাঠমান্ডুর আর এক যমজ শহর কীর্তিপুর তুলনায় একটু যেন কম ধারে ও ভারে৷‌ তাও বাঘভৈরব মন্দির, চিলিমচো স্তূপ, উমা-মহেশ্বর মন্দির, শ্রীকীর্তি বিহার যথেষ্টই আকর্ষণীয়৷‌

কাঠমান্ডুর দরবার স্কোয়্যারে কাম্তিপুর, ললিতপুর, ভক্তপুর আর কীর্তিপুরের প্রতিনিধিত্বকারী হেরিটেজ বিল্ডিং ছাড়াও কাষ্ঠমণ্ডপ (যার থেকেই নাম কাঠমান্ডু), কুমারী ঘর আর মল্ল ও শা রাজবংশের হনুমান ঢোকা প্যালেস৷‌ সব মিলে বেশ একটা হইচই করা ব্যাপার৷‌ কুমারী দেবীর ঘরে বেশ একটা ছমছমে পরিবেশ, ধর্ম ধর্ম গন্ধ৷‌ ধর্মীয় ব্যাপারই তো! আর সেই ধর্মীয় ব্যাপারের রেশ ধরেই কাঠমান্ডুর পূর্ব প্রাম্তে আর এক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ৫ম শতাব্দীর পশুপতিনাথ মন্দিরে আজও কর্ণাটকের ব্রাহ্মণরাই একমাত্র পূজারি৷‌ প্যাগোডা স্টাইল মন্দির৷‌ অনবদ্য কাঠের কারুকাজ৷‌ সোনা-রুপো নির্মিত দ্বিতল ছাদ বিশিষ্ট মন্দিরটি বাগমতীর তীরে৷‌ অহিন্দুরা আজও প্রবেশাধিকার পায়নি৷‌

ক্রিক স্ট্রিটেও গিয়েছিলাম৷‌ অতীতে হিপিরা আস্তানা গাড়লেও আজ কেবলই দোকানপাট আর রেস্তোরাঁ৷‌ বৌদ্ধনাথ স্তূপটিও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মধ্যে পড়ে৷‌ ১০৮টি ধ্যানী বুদ্ধের অমিতাভ মূর্তিতে স্তূপের ভিতটি সজ্জিত৷‌ অত্যম্ত পবিত্র এই ক্ষেত্রটি৷‌ বুদ্ধ নীলকন্ঠ মন্দিরে শায়িত বিষ্ণুমূর্তি দেখে মনটা সত্যিই প্রসন্ন হয়ে গেল৷‌ আরণ্যক পরিবেশে এক নিরালায় স্বয়ং বিষ্ণু নিদ্রিত৷‌ সত্যি মনোরম৷‌ থামেলের কথা আগেই বলেছি৷‌ অস্ট্রিয়ান সরকারের সহযোগিতায় এখানকার গার্ডেন অফ ড্রিমসে আধুনিকতার ছোঁয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির সাহচর্য এক অনন্য পাওনা৷‌ দুর্দাম্ত কফি শপে রেস্ত পকেটে থাকলে বসে পড়াটা অন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে৷‌ থামেলেই করা যায় কেনাকাটা৷‌ রেস্টুরেন্টের সংখ্যাও বহু৷‌

সব শেষে নারায়ণহিতি প্যালেস মিউজিয়াম৷‌ রাজশাসন অবলুপ্ত হওয়ার পর প্যালেসের কিছু অংশ আজ উন্মুক্ত৷‌ খানিকটা অংশে বিদেশ দপ্তর৷‌ সত্যিই নজরকাড়া নারায়ণহিতি৷‌ বিরাট সব হলঘর আর বিত্তবৈভবে মোড়া সারা প্যালেস৷‌ প্যালেস ছেড়ে যখন বেরিয়ে আসি সূর্য প্রায় অস্তমিত৷‌ লাল আভায় রঙিন হয়ে ওঠে রাজমহল৷‌ এতক্ষণ নিজেকে রাজা-উজির মনে হলেও জনারণ্যে মিশে যাই৷‌ বুঝতে পারি ইতিহাস সাধারণ মানুষই লেখে৷‌ কাঠমান্ডুর পথে-ঘাটে, রেস্তোরাঁয়, মন্দিরে, স্তূপে আজও সেই সাধারণ লোকেরই কাহিনী!

ব্যাকপ্যাক
এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট উড়ছে সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি ১৩.৫০-এ কলকাতা থেকে৷‌ ভাড়া প্রায় ২০,০০০ টাকা৷‌ বাগডোগরা থেকেও মিলবে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট৷‌ আছে সস্তার উড়ানও৷‌ শিলিগুড়ি থেকে কাকরভিটা (নেপাল) হয়ে সড়ক পথেও চলা যায়৷‌ উপরি পাওনা নেপাল হিমালয়ের মুগ্ধ করা প্রকৃতি৷‌ কাঠমান্ডু ট্যুরিজমের ভ্রন্দ্ব্ত্বব্দন্ব্ধন্দ্ব ভ্রভ্রভ্র.ব্ধপ্সব্ভব্জন্ব্দপ্পন্স্রব্ধড়প্প্রুস্তুব্ভ.ন্তুপ্সপ্প এ মেলে নানা তথ্য৷‌

পুজোর প্যাকেজে যাঁরা নেপাল ঘুরতে চান তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন ১- ছুটি ছুটি ট্রাভেলস: ৮০১৭০-৪৫৭০৫, (০৩৩)২২৬২-৫৪৮৮ ২- তিরুপতি স্পেশাল: ৯৮৩১৩-১২৯৪৯ ৩- ক্লাসিক ট্যুরিজম: ৯৮৩০৬-১২১২৭ ৪- চৌধুরি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস‍্: (০৩৩)২২৫৭-০৬৩৫ আর যাঁরা বিদেশে যেতে চান তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া: ৯৮৩১১-২৩৬০১ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন