শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৫

অজন্তার বিষ্ময়কর সৃষ্টি (ইলোরা)

ইলোরা ভারতের মহারাষ্ট্র
রাজ্যের আওরঙ্গবাদ শহর থেকে ৩০ কিমি (১৮.৬ মাইল) দূরে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। রাষ্ট্রকুট রাজবংশ এই নিদর্শনের স্থাপনাগুলো নির্মাণ করেছিল। এখানে রয়েছে প্রচুর স্মৃতি সংবলিত গুহার সারি। এটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে।
ভারতের শিলা কেটে কোন কিছু তৈরি করার প্রাচীন প্রতিরূপ স্থাপত্যটি এখানে অনুসৃত হয়েছে। এখানে মোট ৩৪টি গুহা রয়েছে যেগুলো চরনন্দ্রী পাহাড়ের অভ্যন্তর থেকে খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে। গুহাগুলোতে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের মন্দিরের স্বাক্ষর রয়েছে। ৫ম থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যে এই ধর্মীয় স্থাপনাগুলো নির্মিত হয়েছিল। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের ১২টি হিন্দু ধর্মের ১৭টি এবং জৈন ধর্মের ৫টি মন্দির রয়েছে। সব ধর্মের উপাসনালয়ের এই সহাবস্থান সে যুগের ভারতবর্ষে ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শন বহন করে।

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুহাচিত্র ও ভাস্কর্যের জন্য ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো অজন্তা গুহাকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত করে।ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গবাদ জেলায় অজন্তা গ্রামের পাশেই পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত ২৯টি গুহায় রয়েছে অপূর্ব সব ভাস্কর্য,দেয়ালচিত্র বা ফ্রেসকো এবং পাথর খোদাই কাজ।পাহাড়ের গায়ে পাথর কেটে এই গুহাগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে ।এই গুহা-মন্দিরগুলো দুটি পর্বে নির্মিত হয় ।১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০ খ্রিস্টাব্দ সময়ে ৯,১০,১২ এবং১৫ নম্বর গুহা-মন্দির নির্মিত হয়।সাতবাহন রাজবংশের সময় হীনযান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী এখানে গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয় ম্যুরাল,ফ্রেসকো ও ভাস্কর্য ।এখানে দ্বিতীয় পর্বের কাজ হয় ৪৬০ থেকে ৪৮০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২০ বছর সময়ের মধ্যে।ভক্তক রাজবংশের সম্রাট হরিসেনার রাজত্বকালে ২৩টি গুহায় মন্দির নির্মিত হয়।গুহাগুলোতে শিল্পীরা রীতিমত পরষ্পরের সাথে প্রতিযোগিতা করে গুহার দেয়ালে ফুটিয়ে তোলেন তাঁদের শিল্পকর্ম যা মানব সভ্যতার শিল্পকলার ইতিহাসের এক অনন্য সম্পদে পরিণত হয় ।৪৮০ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট হরিসেনার রাজত্বের অবসান হলে মন্দিরগুলো ধীরে ধীরে পরিত্যাক্ত হয় ।বিস্মৃতির অন্ধকারে তলিয়ে যায় এই অতুল কীর্তি ।অরণ্য গ্রাস করে নেয় পুরো এলাকা ।গুহাগুলো পরিণত হয় সাপ ও অন্যান্য বন্য জন্তুর আবাস স্থলে ।শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে যায়।১৮১৯ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ব্রিটিশ সেনা অফিসার জন স্মিথ জঙ্গলে বাঘ শিকার করতে গিয়ে প্রথমে ১০ নম্বর গুহাটি খুঁজে পান । বাদুর, সাপ আর অন্যান্য ছোট বড় জন্তুর ভয় সত্ত্বেও জন স্মিথ গুহার শিল্প সম্পদ দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান ।এরপর এখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্বিক অভিযান।
গুহা মন্দিরগুলোতে দুটি বা তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে । একটি মূল প্রবেশদ্বার ও অন্যগুলো পার্শ্বদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হত ।দুটি দরজার মাঝখানে রয়েছে চারকোণা জানালা ।ভিতরে রয়েছে অনেকগুলো স্তম্ভ ।মন্দিরের সামনে চত্বরে একসময় ছিল অনেক ভাস্কর্য । এর ধ্বংসাবশেষ এখনো সংরক্ষিত রয়েছে ।প্রথম গুহায় রয়েছে বৌদ্ধ জাতক কাহিনীর বিভিন্ন ঘটনার ভাস্কর্য ।গুহার দেয়ালে গৌতম বুদ্ধের একটি বিশাল মূর্তি উত্কীর্ণ রয়েছে । ধর্মচক্রপ্রবর্তন মুদ্রায় এই বুদ্ধ মূর্তিটি শিল্প নৈপূণ্যে অনবদ্য ।গুহার অন্যান্য দেয়ালে রয়েছে জাতক কাহিনীর ফ্রেসকো ।গুহার স্তম্ভগুলো কারুকার্যশোভিত । অন্যান্য গুহার ভিতরেও একই ভাবে বোধিস্বত্তের বিভিন্ন রূপের ভাস্কর্য ও দেয়ালচিত্র রয়েছে । এছাড়া রয়েছে মঞ্জুশ্রীসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি ।গুহা গুলোর অলংকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লতাপাতা, মানুষ,অপ্সরা,যক্ষ,নাগ এবং বিভিন্ন বাস্তব ও কাল্পনিক প্রাণীর মূর্তি ও ফ্রেসকো ।গুহাগুলোর মেঝে ছাড়া দেয়ালের ও ছাদের প্রতিটি অংশে রয়েছে কারুকার্য,মূর্তি, ফ্রেসকো ও ম্যুরাল ।দ্বিতীয় গুহার প্রবেশদ্বার অন্য গুহাগুলোর চেয়ে একটু অন্যরকম ভাবে নির্মিত । কারুকার্যও বেশি ।গুহা গুলোর সামনে রয়েছে বারান্দা ।বারান্দার ছাদ ও স্তম্ভগুলো দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে শোভিত ।প্রতিটি গুহার মাঝখানে রয়েছে প্রশস্ত জায়গা বা হল ।হলগুলোর চারদিকে রয়েছে বড় চারটি স্তম্ভ ।ছাদ যেন ধ্বসে না পড়ে সে জন্য রয়েছে পাথরের খিলান ।চতুর্থ গুহাটি বেশ বড় ।তবে এর কিছু অংশের নির্মাণ অসমাপ্ত রয়েছে ।চতুর্থ গুহায় বোধি স্বত্ব অবলোকিতেশ্বরের বিভিন্ন মুর্তি উত্কীর্ণ রয়েছে । অজন্তায় গুহাচিত্রের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের গুহাচিত্রের পদ্ধতির চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক ।ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরচিত্রেরও অন্যতম হলো অজন্তার মন্দির চিত্র ।পাহাড় কেটে কিভাবে এই মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল তা আজও স্থাপত্যজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক বড় বিষ্ময়।প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক আওরঙ্গবাদ শহর থেকে একটু দূরে অজন্তার ভুবনবিখ্যাত মন্দির দেখতে আসেন ।প্রাচীন ভারতীয় শিল্পীদের অপূর্ব শিল্প প্রতিভায় বিষ্ময়ে বিমুগ্ধ হন তাঁরা ।(শান্তা)

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুহাচিত্র ও ভাস্কর্যের জন্য ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো অজন্তা গুহাকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত করে।ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গবাদ জেলায় অজন্তা গ্রামের পাশেই পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত ২৯টি গুহায় রয়েছে অপূর্ব সব ভাস্কর্য,দেয়ালচিত্র বা ফ্রেসকো এবং পাথর খোদাই কাজ।পাহাড়ের গায়ে পাথর কেটে এই গুহাগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে ।এই গুহা-মন্দিরগুলো দুটি পর্বে নির্মিত হয় ।১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০ খ্রিস্টাব্দ সময়ে ৯,১০,১২ এবং১৫ নম্বর গুহা-মন্দির নির্মিত হয়।সাতবাহন রাজবংশের সময় হীনযান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী এখানে গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয় ম্যুরাল,ফ্রেসকো ও ভাস্কর্য ।এখানে দ্বিতীয় পর্বের কাজ হয় ৪৬০ থেকে ৪৮০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২০ বছর সময়ের মধ্যে।ভক্তক রাজবংশের সম্রাট হরিসেনার রাজত্বকালে ২৩টি গুহায় মন্দির নির্মিত হয়।গুহাগুলোতে শিল্পীরা রীতিমত পরষ্পরের সাথে প্রতিযোগিতা করে গুহার দেয়ালে ফুটিয়ে তোলেন তাঁদের শিল্পকর্ম যা মানব সভ্যতার শিল্পকলার ইতিহাসের এক অনন্য সম্পদে পরিণত হয় ।৪৮০ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট হরিসেনার রাজত্বের অবসান হলে মন্দিরগুলো ধীরে ধীরে পরিত্যাক্ত হয় ।বিস্মৃতির অন্ধকারে তলিয়ে যায় এই অতুল কীর্তি ।অরণ্য গ্রাস করে নেয় পুরো এলাকা ।গুহাগুলো পরিণত হয় সাপ ও অন্যান্য বন্য জন্তুর আবাস স্থলে ।শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে যায়।১৮১৯ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ব্রিটিশ সেনা অফিসার জন স্মিথ জঙ্গলে বাঘ শিকার করতে গিয়ে প্রথমে ১০ নম্বর গুহাটি খুঁজে পান । বাদুর, সাপ আর অন্যান্য ছোট বড় জন্তুর ভয় সত্ত্বেও জন স্মিথ গুহার শিল্প সম্পদ দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান ।এরপর এখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্বিক অভিযান।
গুহা মন্দিরগুলোতে দুটি বা তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে । একটি মূল প্রবেশদ্বার ও অন্যগুলো পার্শ্বদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হত ।দুটি দরজার মাঝখানে রয়েছে চারকোণা জানালা ।ভিতরে রয়েছে অনেকগুলো স্তম্ভ ।মন্দিরের সামনে চত্বরে একসময় ছিল অনেক ভাস্কর্য । এর ধ্বংসাবশেষ এখনো সংরক্ষিত রয়েছে ।প্রথম গুহায় রয়েছে বৌদ্ধ জাতক কাহিনীর বিভিন্ন ঘটনার ভাস্কর্য ।গুহার দেয়ালে গৌতম বুদ্ধের একটি বিশাল মূর্তি উত্কীর্ণ রয়েছে । ধর্মচক্রপ্রবর্তন মুদ্রায় এই বুদ্ধ মূর্তিটি শিল্প নৈপূণ্যে অনবদ্য ।গুহার অন্যান্য দেয়ালে রয়েছে জাতক কাহিনীর ফ্রেসকো ।গুহার স্তম্ভগুলো কারুকার্যশোভিত । অন্যান্য গুহার ভিতরেও একই ভাবে বোধিস্বত্তের বিভিন্ন রূপের ভাস্কর্য ও দেয়ালচিত্র রয়েছে । এছাড়া রয়েছে মঞ্জুশ্রীসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি ।গুহা গুলোর অলংকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লতাপাতা, মানুষ,অপ্সরা,যক্ষ,নাগ এবং বিভিন্ন বাস্তব ও কাল্পনিক প্রাণীর মূর্তি ও ফ্রেসকো ।গুহাগুলোর মেঝে ছাড়া দেয়ালের ও ছাদের প্রতিটি অংশে রয়েছে কারুকার্য,মূর্তি, ফ্রেসকো ও ম্যুরাল ।দ্বিতীয় গুহার প্রবেশদ্বার অন্য গুহাগুলোর চেয়ে একটু অন্যরকম ভাবে নির্মিত । কারুকার্যও বেশি ।গুহা গুলোর সামনে রয়েছে বারান্দা ।বারান্দার ছাদ ও স্তম্ভগুলো দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে শোভিত ।প্রতিটি গুহার মাঝখানে রয়েছে প্রশস্ত জায়গা বা হল ।হলগুলোর চারদিকে রয়েছে বড় চারটি স্তম্ভ ।ছাদ যেন ধ্বসে না পড়ে সে জন্য রয়েছে পাথরের খিলান ।চতুর্থ গুহাটি বেশ বড় ।তবে এর কিছু অংশের নির্মাণ অসমাপ্ত রয়েছে ।চতুর্থ গুহায় বোধি স্বত্ব অবলোকিতেশ্বরের বিভিন্ন মুর্তি উত্কীর্ণ রয়েছে । অজন্তায় গুহাচিত্রের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের গুহাচিত্রের পদ্ধতির চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক ।ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরচিত্রেরও অন্যতম হলো অজন্তার মন্দির চিত্র ।পাহাড় কেটে কিভাবে এই মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল তা আজও স্থাপত্যজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক বড় বিষ্ময়।প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক আওরঙ্গবাদ শহর থেকে একটু দূরে অজন্তার ভুবনবিখ্যাত মন্দির দেখতে আসেন ।প্রাচীন ভারতীয় শিল্পীদের অপূর্ব শিল্প প্রতিভায় বিষ্ময়ে বিমুগ্ধ হন তাঁরা ।(শান্তা)
MAIN LINK

টিপু সুলতানের মহীশুরে একদিন

বিটিভিতে যখন সোর্ড অব টিপু সুলতান দেখানো হতো, আমি ছিলাম মুগ্ধ দর্শক। মহীশুরের রাজপ্রাসাদ দেখে ভেবেছি কবে যাবো সেখানে! ছোট ছিলাম তখন, তাই ভাবনা শধুমাত্র স্বপ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তারপর একদিন সুযোগ হলো আমার স্বপ্নটাকে বাস্তব করার।
সময়টা ২০০৪ সালের জানুয়ারী মাস। ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী ব্যাঙ্গালোর শহরে ব্যক্তিগত কাজে প্রায় এক মাস থাকা হয়। ঠিক সেই সময়টাতেই একদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো মহীশুর ঘুরতে যাওয়ার। এক শুক্রবার খুব সকালে মাইক্রোবাস ভাড়া করে ব্যাঙ্গালোর থেকে মহীশুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।
মহীশুর হচ্ছে কর্ণাটকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, ব্যাঙ্গালোর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে চামুন্দী পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। সকাল দশটার ভিতর মহীশুর শহরে পৌঁছে গেলাম। এই শহরকে সাধারণত ‘প্রাসাদের শহর’ বলা হয়ে থাকে। তাই প্রথমেই গেলাম মহীশুরের রাজ প্রাসাদে।
এই রাজপ্রাসাদের আরেকটি নাম আছে- আমবা ভিলাস প্রাসাদ (Amba Villas Palace)। এই প্রাসাদটি হচ্ছে মহীশুরের রাজকীয়  ওদিয়ার পরিবারের বাসস্থান। ওদিয়ার বংশ ১৩৯৯ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মহীশুর রাজ্য শাসন করেছিলো। যাহোক, মহীশুর রাজপ্রাসাদ ভারতের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান এবং দর্শনার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় তাজমহলের পরেই এর অবস্থান। ইন্দো-সারাসেনিক স্টাইলে নির্মিত এই রাজপ্রাসাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে হিন্দু, মুসলিম, রাজপুত এবং গথিক স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব সংমিশ্রণ আছে। তিন তলা এই প্রাসাদটি পুরোটাই ঘিয়া রংয়ের গ্রানাইট পাথরে নির্মিত এবং এর গম্বুজগুলো নির্মিত গাড় গোলাপী রংয়ের মার্বেল পাথরে, সাথে আছে ১৪৫ ফুট উঁচু পাঁচ তলার সমান একটি টাওয়ার। আর আছে প্রাসাদের চারপাশে নয়ন জুড়ানো বাগান। এর নকশায় ছিলেন ব্রিটিশ স্থাপত্যবিদ হেনরি আরউইন।

মহীশুর রাজপ্রাসাদ
 প্রাসাদের মূল প্রবেশ পথেই একজন গাইড পেলাম। একজন বিদেশী হিসেবে ২০০ রুপী দিয়ে টিকেট কেটে প্রাসাদের ভিতরে যখন ঢুকতে যাবো, শুনলাম ভিতরে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যাবে না! হা হুতোম্মি! ঘুরবো, দেখবো অথচ ছবি তুলতে পারবো না! যখন গিয়েছিলাম, প্রাসাদের এক অংশে সংস্কার কাজ চলছিলো। আর পুরো প্রাসাদটিও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা ছিলো না। শুধুমাত্র চারটি বিশেষ রুম দেখতে পেয়েছিলাম। আজ এতো বছর পর সবকিছু ঠিকমতো মনে নেই, তবে বিশাল দরবার হলের কথা ভালোই মনে আছে। দরবার হলের বিশালতায় নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হচ্ছিল। প্রতিটি পিলারের কারুকাজ দেখে যেনো মোহিত হচ্ছিলাম। দরবার  হলের সাথেই বিশাল ব্যালকনি, যেখানে এসে সামনের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হওয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলো না! আমি যে পুরো চামুন্দী পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি!
বারোটার মধ্যেই রাজপ্রাসাদ দেখা শেষ করে রওয়ানা দিলাম শ্রীরঙ্গাপাটনার দিকে। এই সেই শ্রীরঙ্গাপাটনা, মহীশুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের যে ছোট্ট শহরটি হঠাৎ করেই আঠারশ শতাব্দীর দিকে বিখ্যাত হয়ে উঠে, শের-ই-মহীশুর টিপু সুলতানের রাজধানী হওয়ার কারণে। শহরটির চারপাশ দিয়ে কাবেরী নদী প্রবাহিত হওয়ায় এটি আসলে একটি দ্বীপ! প্রথমেই শহরটির একেবারে মাঝে অবস্থিত  শ্রীরঙ্গনাথস্বামী মন্দিরে গেলাম। গ্রানাইট পাথরে তৈরী ভারতের অন্যতম প্রাচীন এই মন্দিরটির বিশালতা উপলদ্ধি করতে না করতেই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড় লাগালাম দরিয়া দৌলাত বাগের দিকে- টিপু সুলতানের বাগান প্রাসাদ। দরিয়া দৌলাত বাগ অর্থ হচ্ছে ‘সমুদ্রের সম্পদ’। ১৭৮৪ সালে প্রধানত সেগুন কাঠ দিয়ে ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত সবুজ রংয়ের প্রাসাদের চারপাশের বাগানে যেনো টিপু সুলতানের ছোঁয়া অনুভব করতে পারছিলাম। কৈশোরের হিরোর বাগান বাড়ি বা গ্রীস্মকালীন বাড়িটি দেখে চোখের জল আর বাঁধ মানছিলো না! এখানে টিপু সুলতানের সময়কালের সমরাস্ত্র, পেইন্টিং এবং মুদ্রা দেখতে দেখতে একটি তৈলচিত্রের দিকে চোখ আটকে গেলো। স্যার রবার্ট কার পর্টারের আঁকা “শ্রীরঙ্গপাটনামের ঝড়” (Storming of Srirangapattanam) –এ ১৭৯৯ সালের ৪ঠা মে ব্রিটিশদের কাছে টিপু সুলতানের চূড়ান্ত পরাজয়টা যেনো জীবন্ত হয়ে উঠেছে! বাগান বাড়ি থেকে শ্রীরঙ্গপাটনা ছেড়ে চলে যাবার পথে থামলাম- টিপু সুলতানের সমাধিক্ষেত্রে। শহরের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত এই সমাধিক্ষেত্রটি টিপু সুলতান নিজেই নির্মান করেছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের শেষ ঠিকানা হিসেবে। ইংরেজদের কাছে টিপু সুলতানের পতন হলে ১৭৯৯ সালের ৫ই মে তাঁকে এখানে সমাধিস্থ করা হয়। চারকোণা এই সমাধিক্ষেত্রের উপরে উঠে গেছে ইট দিয়ে তৈরী গম্বুজ। চারপাশের খোলা করিডোরগুলো তৈরী করা হয়েছে কালো পাথরের পিলার দিয়ে। এই সমাধিক্ষেত্র কমপ্লেক্সের ভিতরে একটি মসজিদও আছে, যাতে মোঘল স্থাপত্যশৈলীর ছাপ পাওয়া যায়। ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ টিপু সুলতানের সমাধিক্ষেত্র থেকে আবার চলে এলাম মহীশুর শহরে। বেলা তখন প্রায় তিনটা।
শ্রীরঙ্গনাথস্বামী মন্দির, মহীশুরশ্রীরঙ্গনাথস্বামী মন্দির, মহীশুর
দরিয়া দৌলাত, মহীশুরদরিয়া দৌলাত, মহীশুর
দরিয়া দৌলাত-২, মহীশুরদরিয়া দৌলাত-২, মহীশুর
টিপু সুলতানের সমাধিক্ষেত্র, মহীশুরটিপু সুলতানের সমাধিক্ষেত্র, মহীশুর
দ্রুত মধ্যাহ্ন ভোজন শেষ করে দেখতে গেলাম মহীশুর চিড়িয়াখানা। এতোকিছু থাকতে চিড়িয়াখানায় কেনো? মহীশুর চিড়িয়াখানার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। সরকারীভাবে এর নাম শ্রী চামারাজেন্দ্র জু’লজিকাল গার্ডেন। ১৮৯২ সালে মহীশুরের মহারাজা শ্রী চামারাজ ওয়াদিয়ার এই চিড়িয়াখানার পত্তন করেন এবং এভাবেই এটি হয়ে উঠে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চিড়িয়াখানা। এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – এখানেই ভারতের যে কোনো চিড়িয়াখানা থেকে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে। চিড়িয়াখানা দেখতে দেখতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। এই সময়ই রওয়ানা দিলাম খুবই আকর্ষনীয় এক জিনিস দেখতে!
মহীশুর শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর- পশ্চিমে কাবেরীসহ আরো দুটি নদীর মিলিত স্থানে নির্মিত কৃষ্ণরাজ সাগর বাঁধের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রওয়ানা দেবার মূল কারণটা হচ্ছে বৃন্দাবন গার্ডেনের আলো ঝলমলে নৃত্যরত ঝর্না (Dancing Fountain) দেখা! ভারতের সবচেয়ে পুরাতন সেচ বাঁধের নিচেই তৈরী করা হয়েছে বৃন্দাবন গার্ডেন। কাশ্মিরের শালিমার গার্ডেনের অনুকরণে নির্মান করা এই গার্ডেনে আছে প্রচুর প্রজাতির বৃক্ষ এবং পুষ্প। তবে এর সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে, যেটার কারণেই দর্শনার্থীরা এখানে আসেন, সেটি হচ্ছে নৃত্যরত ঝরণা। মিউজিকের তালে তালে ঝরনা থেকে পানি বেরিয়ে আসে সিনক্রোনাইজড ভঙ্গিতে। এবং এই নৃত্য শুরু করা হয়  সন্ধ্যা সাতটা থেকে, চলে এক ঘন্টা। রক্তিম সন্ধ্যার আলোতে এই আলোকজ্জ্বল ঝরনার মিউজিকের তালে নাচাটা- এক মোহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে। পুরো একটি ঘন্টা শুধু মিউজিকই শুনলাম আর ঝর্নার নাচই দেখলাম। সারাদিনের দৌড়াদৌড়ি যেনো এই এক ঘন্টায় ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেলো।
রাতের বৃন্দাবন গার্ডেনের ঝর্নারাতের বৃন্দাবন গার্ডেনের ঝর্না
 নির্মল আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে সাড়ে আটটার দিকে বাঁধ থেকে যখন ব্যাঙ্গালোরের দিকে রওয়ানা দিলাম, তখন মন থেকে মহীশুরের রাজ বংশ উধাও, টিপু সুলতান উধাও, সেখানে শুধু বিরাজ করছিলো এক অপার্থিব মুগ্ধ মৌনতা! তাই ঘড়ির হিসেবে পরের দিন (রাত বারোটার পর) যখন ব্যাঙ্গালোরে এসে পৌঁছালাম, তখন ক্লান্তির জায়গায় ভর করেছিলো জীবনের অসম্ভব প্রিয় কিছু মুহূর্ত, প্রিয় কিছু স্মৃতি জমা হওয়ার আনন্দ।

একদিন ভূমধ্যসাগরের তীরে

প্রাচীনকালের মানুষেরা ভেবেছিলো সাগরটির অবস্থান পৃথিবীর মধ্যখানে, যে কারণে নাম হয়েছিলো ভূমধ্যসাগর। আর কেনইবা ভূমধ্যসাগর বলবে না? এটা যে এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত! তাই ছোটবেলা থেকেই ভূমধ্যসাগর দেখার এক প্রবল ইচ্ছা মনের ভিতর সুপ্ত ছিলো। সেই ইচ্ছাটা পূর্ণ হলো এই যৌবনে এসে।

লিবিয়ান স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে চাকরী নিয়ে ২০১০ সালে স্বস্ত্রীক গিয়েছিলাম লিবিয়াতে। আমাদের পোস্টিং হয়েছিলো লিবিয়ার গারিয়ান টিচিং হাসপাতালে। গারিয়ান শহরটি আমাদের দেশের বান্দরবনের মতো, এক বিশাল পর্বতশ্রেণির গা বেয়ে উঠে যেতে হয়। পর্বতশ্রেণিটি নাফুসা মাউন্টেন রেঞ্জ নামে পরিচিত। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি থেকে প্রায় আশি কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত নাফুসা মাউন্টেন এরিয়া লিবিয়ান সিভিল ওয়ারে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা রেখেছিলো।  অনেক কাল থেকেই নাফুসা মাউন্টেন এরিয়া লিবিয়ার উপজাতি মানুষদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিলো, কিন্তু গাদ্দাফীর শাসনামলে তাদের এই বৈশিষ্ট্য চাপা পড়ে, তাই যখন গণ আন্দোলন শুরু হয়, প্রথম থেকেই এই এলাকার জনসাধারণ বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়। ১৮ই আগষ্ট, ২০১১-তে  বিদ্রোহী বাহিনী যখন গারিয়ান দখল করে, ত্রিপলী দখল করা তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ত্রিপলীর পতন ঘটে ২৩ আগষ্ট, ২০১১। 

Nafusa Muntain Range নাফুসা মাউন্টেন রেঞ্জ
গারিয়ান টিচিং হাসপাতালে সেই সময়ে আমরা স্বামী স্ত্রী ছাড়া আর কোনো বাংলাদেশী ডাক্তার বা নার্স ছিলো না। পুরো গারিয়ানেই এক বাংলাদেশী পরিবার ছিলো, তারা প্রায় দশ বছর যাবত সেখানে বসবাস করছিলেন। গারিয়ানে যাওয়ার তৃতীয় দিনেই তাঁদের সাথে আমাদের পরিচয় হলো। সেলিম ভাই এবং তাঁর স্ত্রী আমাদের দুইজনকে প্রথম দেখাতেই আপন করে নিলেন। সেই হাসপাতালে বেশকিছু ভারতীয় ডাক্তার ছিলেন, ছিলো পাকিস্তানী ডাক্তার পরিবারও। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের আড্ডাগুলো হয়ে উঠলো উপমহাদেশের ছোট সংস্করণ- বাংলাদেশী, ভারতীয় আর পাকিস্তানীদের মিলনমেলা। এরকমই এক আড্ডায় সিদ্ধান্ত হলো শুক্রবার জুমার নামযের পর আমরা সবাই ত্রিপলিতে যাবো। ত্রিপলিতে তখন বাণিজ্যমেলা চলছিলো,  বানিজ্যমেলায় ঘুরে রাতে ভূমধ্যসাগরের পাড়ে খাবার খাবো। ঠিক হলো প্রত্যেক পরিবার একটি করে আইটেম রান্না করে নিয়ে যাবে।

যথাসময়ে শুক্রবার দুপুর দুইটায় আমরা বাংলাদেশী দুই পরিবার, ভারতীয় দুই পরিবার আর পাকিস্তানী তিন পরিবার পাঁচটি প্রাইভেট কারে করে ত্রিপলির উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। সময় খুব বেশি লাগেনি, আশি কিলোমিটারের মতো রাস্তা প্রায় এক ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম। যাত্রাপথে ছোট একটি শহরের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার সময় সেলিম ভাই জায়গাটার নাম বললেন আজিজিয়া। মনে পড়ে গেলো স্কুলের ভুগোল পড়ার সময় পড়েছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম জায়গার নাম লিবিয়ার আজিজিয়া। ১৯২২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর আজিজিয়ার তাপমাত্রা দেখা যায় ৫৭.৮° সেলসিয়াস। সেই থেকে আজিজিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান। এখন কিন্তু সেরকম উষ্ণ লাগলো না!

Azizia- Libya আজিজিয়া- পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান
ত্রিপলিতে পৌঁছেই আমরা বাণিজ্য মেলায় চলে গেলাম। ঢাকা বাণিজ্য মেলা দেখে ত্রিপলি বাণিজ্য মেলা খুব ছোট লাগলো। কিন্তু সাজানো গোছানো। লোক সমাগম ভালোই ছিলো। এক শালের দোকানে কথা বলতে গিয়ে জানা গেলো তারা এই বছরই ঢাকা বাণিজ্যমেলায় স্টল দিয়েছিলেন, ইরানী স্টল। ঢাকার মেলার খুব প্রশংসা করলেন। আমাদের দলের ভারতীয় আর পাকিস্তানী সদস্যদের সামনে গর্বে আমার চোখে জল এসে গেলো।

Trade Fair, tripoli ত্রিপলি বাণিজ্য মেলায় আমরা ক’জনা
বাণিজ্য মেলায় উত্তর আফ্রিকার অনেকগুলো দেশের স্টল ছিলো, ছিলো অনেক ইরানী স্টলও। আর ছিলো একপ্রান্তে বিশাল প্যাভিলিয়ান জুড়ে ভারতীয় স্টল। আমাদের ভারতীয় সদস্যরা সেই স্টলেই সময় কাটালেন অনেকক্ষণ। কোনো বাংলাদেশী স্টল না দেখে আমি একা একা মেলার এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। কখন সন্ধ্যা হয়ে রাত হয়ে গেলো খেয়ালই হয় নি। রাত আটটার দিকে আমরা সবাই মেলার প্রধান গেটে একত্রিত হয়ে রাতের ত্রিপলি দেখতে বের হলাম। প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত ত্রিপলির মার্কেটগুলো ঘুরে রাত দশটার দিকে ভূমধ্যসাগরের পাড়ে গেলাম।

ভূমধ্যসাগরের ত্রিপলির অংশটি খুব সুন্দর করে বাঁধানো। গাদ্দাফী সরকার এটিকে টুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তুলছিলো। ত্রিপলিতে আমাদের কক্সবাজারের মতো কোনো সমুদ্র সৈকত দেখতে পেলাম না। তবে লিবিয়ার প্রায় সব বড় বড় শহর ভূমধ্যসাগরের তীরেই অবস্থিত। অন্যান্য বেশ কিছু শহরে কক্সবাজারের মতোই সমুদ্র সৈকত আছে। ত্রিপলির তীরে বিশাল জায়গা জুড়ে বাঁধানো। শিশুদের খেলার জন্য অনেকগুলো স্লিপার জাতীয় জিনিস আছে, আছে বসার জন্য প্রচুর বেঞ্চ, একটু পর পর খেজুর গাছ, আর আছে পয় নিষ্কাশনের জন্য ভালো সুব্যবস্থা। রাতের বেলাতে আশে পাশ খুব ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না। দূর থেকে নোঙর করা বিভিন্ন জাহাজের আলোগুলো দেখে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। ঠিক করলাম একবার দিনের আলোয় এখানে আসবো। পরের সপ্তাহেই আমি এবং আমার স্ত্রী আবার এসেছিলাম, দিনের আলোয় অবলোকন করেছিলাম ভূমধ্যসাগরকে। খুব ভালোও লাগেনি আবার খুব খারাপও লাগেনি। আসলে ত্রিপলি অংশটিকে কখনোই সৈকতের মতো মনে হয় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এর ভালো লাগার অংশটিই হারিয়ে গেছে। 

Meditarean Sea দিনের আলোয় ভূমধ্যসাগর

Meditarean Sea ভূমধ্যসাগরের তীরে স্বস্ত্রীক লেখক


যাহোক রাতের আলোয় আমাদের উপমহাদেশীয় আড্ডা হয়ে উঠলো অসাধারণ। খেলাধুলা, ধর্ম, সমাজনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতিও পর্যন্ত চলে এলো সেই আড্ডায়। হলো অনেক তর্ক বিতর্ক, কিন্তু কোনো তর্কই আমাদের উপমহাদেশের মতো যুদ্ধংদেহী হলো না! অবশেষে রাত প্রায় বারোটার দিকে আমরা খাওয়ার আয়োজন শুরু করলাম।

Meditarean Sea ভূমধ্যসাগরের তীরে রাতের খাওয়া
(এই লেখাটি ২১শে ডিসেম্বর, ২০১২ সালে দৈনিক যুগান্তরের 'যেতে যেতে পথে'- এ প্রকাশিত।