অনেক দেশ ঘোরার স্বপ্ন থাকলেও মায়ানমার যাব ঘুরতে তা কখনও ভাবিনি।
আমার হাসব্যান্ড তসলিমের চাকরীর কারণে শেষ পর্যন্ত ঘুরে এলাম আমাদের পাশের
দেশ মায়ানমার। ১৯ দিনের আমার এই সফরে আমি ঘুরে দেখেছি বেশ কিছু সুন্দর
জায়গা, যার বর্ণনা আমি আমার এই লেখায় দিব। আর হ্যা, মায়ানমার দেশটি ঘুরে
আমি তৃপ্ত।
বাগান- দ্যা সিটি অফ প্যাগোডাঃ
প্রথমেই যে জায়গার কথা বলব তা হল বাগান। কারণ মায়ানমার পৌঁছে পরদিন ই আমি চলে গেছি এই বাগানে। মায়ানমার এর প্রথম রাজধানী এটি। জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসী এই জাতি জ্যোতিষীর কথা মত এই নিয়ে ৪ বার তাদের রাজধানী বদল করেছে।
ইয়াঙ্গুন থেকে বাগানে বিলাসবহুল বাস চলাচল করে প্রতিদিন। ৪০০মাইলের এই পথ পেরোতে ৮ ঘণ্টার মত সময় লাগে। বাস ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা জন প্রতি। চমৎকার হাইওয়ে দিয়ে এই ৮ ঘণ্টার জার্নি মোটেও কষ্টকর মনে হয় না। এয়ার হোস্টেসদের মত এই সব বাসে রয়েছে বাস হোস্টেস। আমরা সন্ধ্যা ৭:৩০ এ রওনা দিয়ে পরদিন ভোর রাতে এসে পৌছাই বাগানে। বাগান নাম শুনলেই মনে হতে পারে ফুলের শহর হয়ত এই বাগান।কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। বাগান হল প্যাগোডার শহর। যেখানেই চোখ যায়, শুধু প্যাগোডাই চোখে পড়ে। ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৪৪০০ টি প্যাগোডা আছে এই শহরে।
তৎকালীন শাসকেরা নাকি কোন পাপকর্ম করলে, পাপমোচনের জন্য তৈরি করে ফেলতেন একটি প্যাগোডা। আর তাই, প্যাগোডার অভাব নেই এখানে। ছিমছাম ছবির মত গোছানো এক শহর এই বাগান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক আসে এই শহর দেখতে। বাগানে আসার আগেই শুনেছি সূর্যোদয় দেখার জন্য এই বাগান সেরা। বিভিন্ন প্যাগোডার ছাদে বসে পর্যটকেরা উপভোগ করেন এই সূর্যোদয়। ঘোড়ার গাড়ি করে এলাম এক প্যাগোডায় সূর্যোদয় দেখতে। আমাদের আগেই পৌঁছে গেছে আরও অনেক দেশী বিদেশী পর্যটক। কি যে সুন্দর এই সূর্যোদয়ের দৃশ্য। অন্ধকার আকাশের বুক চিড়ে উঁকি দিল সূর্য। আর সূর্যোদয় হওয়া মাত্রই হঠাৎ দেখা গেলো একটু দূরে আলোর ঝলকানি। দুরের এক বিল্ডিং এর মাথায় জড়ো হতে লাগলো বেশ কিছু বিশাল আকৃতির বেলুন। এরপরই, আকাশের বুকে উড়তে শুরু করল হট এয়ার বেলুনগুলো। দেখেই মনটা নেচে উঠলো খুশিতে।
নিজেও এই হট এয়ার বেলুন রাইড নিতে চাইলাম। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না। কমপক্ষে ৭ দিন আগে বুক না করলে সিট মিলে না এই বেলুনে ওঠার। বিদেশী পর্যটকদের জন্য জন প্রতি খরচ ও কম না। ৩২০ ডলার। বেলুনে না ওঠার এই দুঃখ আমার এখনো রয়ে গেছে।
মায়ানমার একটি নিরাপদ দেশ। তাই ঘুরে বেড়াতে কোন দুশ্চিন্তা করতে হয় না পর্যটকদের। বিভিন্ন পর্যটক নিজেরা সাইকেল চালিয়েই ঘুরে বেড়ায় এই বাগানে। এছাড়া রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। বিভিন্ন প্যাগোডা ঘুরে বেড়ালাম একটা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে। প্যাগোডাতে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয়। শুধু তাই নয়, স্বল্প পোশাকে এই সব প্যাগোডায় ঢোকা নিষেধ। বেশি-র ভাগ প্যাগোডায় ঢুকতে কোন প্রবেশ মূল্য লাগে না। কয়েকটি প্যাগোডায় ঢুকতে ১৫ ডলার প্রবেশ মূল্য দিতে হয়। তবে যেকোনো একটি প্যাগোডায় ১৫ ডলার দিলেই হবে। আপনাকে ধরিয়ে দিবে একটি কার্ড, যা দিয়ে এরপরের ৭ দিন যে কোন প্যাগোডা আপনি ভ্রমন করতে পারবেন। সূর্যোদয়ের মত সূর্যাস্ত দেখতেও অনেকে ভীড় করে বিভিন্ন প্যাগোডায়। আমরাও ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত বু প্যাগোডায় গেলাম সূর্যাস্ত দেখতে। মন মুগ্ধকর ছিল সেই সূর্যাস্তের দৃশ্য।
পোপা মাউন্টেইনঃ
বাগান থেকে আমরা গেলাম পোপা মাউন্টেন। বাগান থেকে ১.৫ ঘণ্টার পথ। গাড়ি ভাড়া নিয়েই যাওয়া যায়। এখানে রয়েছে ৭৯৮ মিটার ওপরে একটি অদ্ভুত সুন্দর রিসোর্ট। নাম পোপা মাউন্টেইন রিসোর্ট। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য । এত উঁচুতে পাহাড়ের বুকে এই রিসোর্টের নির্মাণ শৈলী মুগ্ধ করার মত। পুরোটাই যেন কাঠ দিয়ে তৈরি। সবুজের মাঝে চোখে পরে সুন্দর করে তৈরি বেশ কিছু ভিলা। অসংখ্য বিদেশী পর্যটক এর দেখা মিলল এখানে। চারপাশের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ এবং পাহাড়প্রেমী মানুষের জন্য এর চেয়ে সুন্দর জায়গা খুব কমই আছে বলে আমার ধারনা।
শুধু তাই না, এখানে আছে চমৎকার একটি সুইমিংপুল, যেখান থেকে খুব সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায় টঙ কেলাট এর। পোপা মাউন্টেইন রিসোর্ট এর অন্যতম আকর্ষণ এই প্যাগোডাটি।
৭৭৭ টি সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে হয় এই প্যাগোডায়। কথিত আছে, এই প্যাগোডায় দোয়া করলে তা পুরন হয়। কাজেই ধার্মিক মানুষের ভিড় অনেক। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়েও মানুষ এই ৭৭৭ টি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। আর বিদেশী পর্যটকরা তো আছেনই। বেশ কিছু দুষ্টু বানর এর দেখাও মিলবে এই টঙ কেলাট এ।
এই রিসোর্ট এর পাশেই রয়েছে একটি হর্স রাইডিং জোন। চাইলে কোন ঘোড়া ভাড়া করে ঘুরে দেখতে পারেন এই রিসোর্ট এর চারপাশ। রিসোর্ট এ আমরা যে রুমে ছিলাম, তার বেলকনি দিয়েও দেখা যেত এই টঙ কেলাট। দুপুরে রাতে খেতে হবে এই রিসোর্ট এই। আসে পাশে তেমন ভালো কোন রেস্টুরেন্ট নেই তাই। বলে রাখা ভালো যে, এই রিসোর্টটি বেশ এক্সপেন্সিভ। আমরা যে ভিলাতে ছিলাম তার ভাড়া ছিল ১৫০ ডলার এবং খাবারের বিল ও ডলারেই দিতে হয়েছে। কিন্তু এত সুন্দর পরিবেশে একদিন থাকতে পেরেই আমি মহাখুশি।
নুই সং সী বিচঃ
মায়ানমার এ বেশ কিছু সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে। সব চেয়ে সুন্দর সৈকত এর নাম না পলি। এটা ইয়াঙ্গুন থেকে অনেক দূরে এবং বিদেশী পর্যটক দের জন্য খুব একটা নিরাপদ না কারণ, মুসলিমদের সাথে দাঙ্গা হয়েছে যে রাখাইন পল্লী তে তা, এই না পলি-র পাশেই।
তাই আমরা বেছে নিলাম নুই সং সমুদ্র সৈকতকে।
ইয়াঙ্গুন থেকে প্রতি সকালে বাস ছাড়ে, নুই সং এর উদ্দেশ্যে। বাঙালি কমিউনিটি থেকে নুই সং যাওয়ার একটা প্ল্যান করা হল। তাই আমাদের আর বাসে যেতে হয় নাই। এক ভাই এর গাড়িতে করেই গেলাম। সময় লাগলো ৫ ঘণ্টা। নুই সং পৌঁছেই খুশিতে মনটা নেচে উঠলো। এত সুন্দর সমুদ্র চোখের সামনে। পানি অসম্ভব সুন্দর নীল।
আমরা যে রিসোর্ট এ উঠলাম তার নাম বে অফ বেঙ্গল। সমুদ্র ঘেঁষেই তৈরি এই বিলাসবহুল রিসোর্টটি। পানি দেখে নিজেকে আটকে রাখা খুব কঠিন। রুমে যেয়ে একটু ফ্রেশ হয়েই চলে গেলাম বিচে। অদ্ভুত সুন্দর। আমার এই জীবনে আমি বেশ কিছু সী বিচ দেখেছি, কিন্তু এত সুন্দর, শান্ত এবং নীল পানি-র বিচ দেখি নাই। এই সী বিচ, বিদেশী পর্যটক দের জন্যই মূলত। স্থানীয় মানুষ এর ভিড় নেই। নেই প্যারা সেইলিং, স্নরকেলিং এর ব্যবস্থা। আর এই কারণেই পানি এত সুন্দর। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, এই সবের ব্যবস্থা আছে, আর এর জন্য আপনাকে ট্রলারে করে আর একটু দূরে যেতে হবে। আমাদের এইই সবের ইচ্ছা ছিল না। সমুদ্র দেখেই তৃপ্ত ছিলাম। বাইক ভাড়া করে ঘুরে বেড়ালাম সী বিচ এর পাশ দিয়ে।
এখানে রয়েছে একটা লাভারস আইল্যান্ড, যেখানে রয়েছে একটা মারমেইড এর মূর্তি। জোয়ারের সময় এখানে যেতে হয় ট্রলারে, কিন্তু ভাটার সময় হেটেই চলে যাওয়া যায়। আমরা বাইক নিয়ে যেয়ে এই লাভারস আইল্যান্ড ঘুরে দেখলাম। এর সামনেই দেখলাম বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরা বালি দিয়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য বানাচ্ছে। কোনটা দেখার মত হচ্ছে, কোনটা দেখে হাসি পেল।
এই নুই সং এর পানি-র রঙ সকাল, দুপুর, বিকালে বিভিন্ন রঙ ধারন করে। সকালে পানির রঙ খুব গাঢ় নীল, দুপুরের দিকে কিছুটা হাল্কা, আর বিকালে পানি তে হাল্কা নীল আভা দেখা যায়।
আমাদের রিসোর্ট এর সুইমিংপুল ও সমুদ্রমুখী। সুইমিংপুলে ভিজে ভিজে জুস খেতে খেতে সমুদ্র দেখতে যে কত টা ভালো লাগে, তা এবার বুঝলাম।
আমাদের রিসোর্ট এর পাশেই ওয়েস্টার্ন পয়েন্ট, সামুদ্রিক খাবারের দোকান। অসম্ভব মজার খাবার পাওয়া যায় এখানে। সমুদ্র থেকে ধরা মাছ ভেসে বেড়ায় এই রেস্টুরেন্ট এর চৌবাচ্চায়। আপনি যেটাকে পছন্দ করে দিবেন, সেটাই আপনার মন মত রেধে পাঠিয়ে দেয়া হবে আপনার টেবিল এ।
আপনাদের জন্য একটা তথ্য। নুই সাং এর পেঁপে অনেক মজার। গেলে খেতে ভুলবেন না।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে এসে বসলাম সমুদ্র তীরে রাখা রিলাক্সিং চেয়ারগুলোতে। আসে পাশে কেও নাই। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। সাথে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। সামনে বিশাল সমুদ্র। মনে হচ্ছে আমার জন্যই রিসার্ভ করে রাখা পুরো বিচ টা। এ যেন ছিল এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
ইয়াঙ্গুনঃ
২ দিন নুই সাং এ কাটিয়ে ফিরে এলাম ইয়াঙ্গুন। অনেকেই আমরা ভাবি, এটাই মায়ানমার এর রাজধানী। কিন্তু তা নয়। মায়ানমার এর রাজধানী নেই পি ডো। খুব গোছানো ছিমছাম শহর এই ইয়াঙ্গুন। রাস্তা ঘাট চকচকে। উঁচু বহুতল ভবন খুব একটা নেই। দামি দামি গাড়ি হাঁকিয়ে মানুষ ছুটে চলে। ৫ তারকা হোটেল ও আছে বেশ কিছু। এই শহরে কিংবা এই দেশে সাধারণত ২ শ্রেণীর মানুষ আছে। উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত। মধ্যবিত্ত নাই বললেই চলে। আমি আমার সফরের অধিকাংশ সময় এই ইয়াঙ্গুনেই থেকেছি কারণ আমার হাসব্যান্ড এর অফিস এখানেই।
ইয়াঙ্গুন শহরের প্রধান আকর্ষণ শুয়ে ডাগন প্যাগোডা। স্বর্ণ এবং হীরকখচিত এই প্যাগোডা দেখতে দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসে ইয়াঙ্গুনে। শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে দেখা যায় এই প্যাগোডার চূড়া। বিদেশী পর্যটক হওয়ার কারণে জনপ্রতি ৮ ডলার প্রবেশ মূল্য দিয়ে ঢুকতে হল আমাদের। ধর্মভীরু হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে প্রার্থনা করে সুতায় ঝুলিয়ে রেখে যায় তাদের ব্যবহৃত দামি দামি অলংকার। পূর্ণিমার রাতে এই প্যাগোডার সৌন্দর্য আরও ভালো ভাবে নাকি বোঝা যায়।
এর পর ইয়াঙ্গুন এসে যেটা না দেখলেই না, সেটা হল পানিতে ভাসমান এক জোড়া ড্রাগনমুখী রেস্টুরেন্ট। নাম কারায়ুই প্যালেস। খুব ই নামকরা এই রেস্টুরেন্ট এ ৩দিন আগে থেকে বুকিং না দিলে নাকি সিট পাওয়া যায় না। এই রেস্টুরেন্ট টি যে লেকে অবস্থিত, তার নাম কানুজি লেক। এই লেকের চারপাশে রয়েছে ছোট বড় আর ও কিছু রেস্টুরেন্ট, যেগুলোতে অগ্রিম বুকিং এর প্রয়োজন নেই।
শহরের ঠিক মাঝখানে রয়েছে ইনায়া লেক। অং সাং সূচির বাসায় ও এই লেক এর পাশেই। এখানে রয়েছে একটি মেরি গো রাউন্ড, যেটিতে চড়ে পুরো শহরটাকে এক নজর দেখে ফেলা যায়।
খাওয়া দাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে এই শহরে। বলে রাখা ভালো, খুবই এক্সপেন্সিভ দেশ এই মায়ানমার। রেস্টুরেন্ট এ খাবার খরচ এবং হোটেল এ থাকার খরচ অনেক বেশি। আমার ভাগ্য ভালো যে তসলিমের বাসাতেই ছিলাম,নিজেই রান্না বান্না করে খেয়েছি, বিভিন্ন বাঙালি ভাই,ভাবিরা দাওয়াত করে খাইয়েছেন। আর ইয়াঙ্গুনে আমার প্রিয় রেস্টুরেন্ট ছিল মেরি ব্রাউন। মালয়শিয়ান চেইন রেস্টুরেন্ট।
বেশ কিছু ভারতীয় রেস্টুরেন্ট এও খেয়েছি। খেয়েছি চায়না টাউনে। তবে দুঃখ লেগেছে এটা ভেবে যে নামী দামী কোন ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট এখানে নেই। জানি না কেন?
আপনাদের যদি বিভিন্ন জেমস/ স্টোন এর প্রতি আকর্ষণ থাকে, তবে অবশ্যই চলে আসবেন এই ইয়াঙ্গুনে। রুবি, পান্না, সাফায়ার, ডায়মন্ড কি নেই এখানে? শপিং এর জন্য রয়েছে বোজও মার্কেট, অং সাং সূচির বাবার নামে এই মার্কেট। আর স্বর্ণের দাম ও বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কম এখানে। ভরি তে হাজার ১০ কম তো হবেই। তবে স্বর্ণের ক্রেতাদের খুব একটা পাত্তা দিবে না এরা। আমাদের দেশের স্বর্ণের দোকানদার দের মত কোমল পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করা দূর এর কথা।
দেখতে দেখতেই যেন পার হয়ে গেল আমার ১৯ দিন এর এই সফর। ফিরে আসতে হল নিজ দেশে। কিন্তু মনের মাঝে রয়ে গেছে মায়ানমার ভ্রমনের সুন্দর স্মৃতিগুলো।
ভ্রমনের পূর্বে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়ঃ
* ৮ বছর বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে ঢাকা -ইয়াঙ্গুন- ঢাকা বিমানের ফ্লাইট। প্রতি সোম এবং বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বিমান ইয়াঙ্গুন এর পথে। ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় লাগে। ভাড়া ৩৮৫ ডলার ( রিটার্ন সহ)।
* মায়ানমার যেতে ভিসা লাগে এবং ৩ কর্ম দিবস লাগে ভিসা পেতে। টুরিস্ট ভিসা ফী ২০০০ টাকা। মনে রাখবেন, মায়ানমার এম্বাসীর বাঙালি লোকগুলো কিন্তু টাকা ছাড়া কাজ করতেই চায় না। কাজেই ওদের টাকা না দিতে চাইলে হাতে সময় নিয়ে ভিসার জন্য দাড়াবেন।
* মায়ানমারে খরচ তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। যদিও ১ ডলার ভাঙিয়ে ওদের দেশে প্রায় ৯৯০ চাট ( মায়ানমার এর মুদ্রা) পাবেন আর আমাদের ১ টাকা সমান ওদের ১২ চাট প্রায়। উদাহরণস্বরূপ ট্যাক্সিতে ওঠা মাত্রই আপনাকে বাংলাদেশী টাকার প্রায় ২০০ টাকা দিতে হবে। এর নিচে যেন ভাড়াই নেই। তবে ট্যাক্সির জন্য আপনাকে কখনই অপেক্ষা করতে হবে না। প্রচুর ট্যাক্সি আছে রাস্তায়।
** চলাফেরা করতে ওখানে কোন সমস্যা নেই। চোর ডাকাত এর ভয় নেই। খুব সিকিউরড দেশ মায়ানমার।
* এদের ইংলিশ এর ওপর খুব একটা দখল নেই। কাজেই কিছুটা সমস্যায় পরতে পারেন।
তবে তারা ইংলিশ জানুক আর না জানুক, আপনি দেখা মাত্রই কোন বার্মিজকে বলুন মিংলাবা। এটা তাদের সম্ভাষণ। তারা খুশি হয়ে যাবে।
মাদিহা খান জিতা LINK
বাগান- দ্যা সিটি অফ প্যাগোডাঃ
প্রথমেই যে জায়গার কথা বলব তা হল বাগান। কারণ মায়ানমার পৌঁছে পরদিন ই আমি চলে গেছি এই বাগানে। মায়ানমার এর প্রথম রাজধানী এটি। জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসী এই জাতি জ্যোতিষীর কথা মত এই নিয়ে ৪ বার তাদের রাজধানী বদল করেছে।
ইয়াঙ্গুন থেকে বাগানে বিলাসবহুল বাস চলাচল করে প্রতিদিন। ৪০০মাইলের এই পথ পেরোতে ৮ ঘণ্টার মত সময় লাগে। বাস ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা জন প্রতি। চমৎকার হাইওয়ে দিয়ে এই ৮ ঘণ্টার জার্নি মোটেও কষ্টকর মনে হয় না। এয়ার হোস্টেসদের মত এই সব বাসে রয়েছে বাস হোস্টেস। আমরা সন্ধ্যা ৭:৩০ এ রওনা দিয়ে পরদিন ভোর রাতে এসে পৌছাই বাগানে। বাগান নাম শুনলেই মনে হতে পারে ফুলের শহর হয়ত এই বাগান।কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। বাগান হল প্যাগোডার শহর। যেখানেই চোখ যায়, শুধু প্যাগোডাই চোখে পড়ে। ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৪৪০০ টি প্যাগোডা আছে এই শহরে।

তৎকালীন শাসকেরা নাকি কোন পাপকর্ম করলে, পাপমোচনের জন্য তৈরি করে ফেলতেন একটি প্যাগোডা। আর তাই, প্যাগোডার অভাব নেই এখানে। ছিমছাম ছবির মত গোছানো এক শহর এই বাগান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক আসে এই শহর দেখতে। বাগানে আসার আগেই শুনেছি সূর্যোদয় দেখার জন্য এই বাগান সেরা। বিভিন্ন প্যাগোডার ছাদে বসে পর্যটকেরা উপভোগ করেন এই সূর্যোদয়। ঘোড়ার গাড়ি করে এলাম এক প্যাগোডায় সূর্যোদয় দেখতে। আমাদের আগেই পৌঁছে গেছে আরও অনেক দেশী বিদেশী পর্যটক। কি যে সুন্দর এই সূর্যোদয়ের দৃশ্য। অন্ধকার আকাশের বুক চিড়ে উঁকি দিল সূর্য। আর সূর্যোদয় হওয়া মাত্রই হঠাৎ দেখা গেলো একটু দূরে আলোর ঝলকানি। দুরের এক বিল্ডিং এর মাথায় জড়ো হতে লাগলো বেশ কিছু বিশাল আকৃতির বেলুন। এরপরই, আকাশের বুকে উড়তে শুরু করল হট এয়ার বেলুনগুলো। দেখেই মনটা নেচে উঠলো খুশিতে।

নিজেও এই হট এয়ার বেলুন রাইড নিতে চাইলাম। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না। কমপক্ষে ৭ দিন আগে বুক না করলে সিট মিলে না এই বেলুনে ওঠার। বিদেশী পর্যটকদের জন্য জন প্রতি খরচ ও কম না। ৩২০ ডলার। বেলুনে না ওঠার এই দুঃখ আমার এখনো রয়ে গেছে।
মায়ানমার একটি নিরাপদ দেশ। তাই ঘুরে বেড়াতে কোন দুশ্চিন্তা করতে হয় না পর্যটকদের। বিভিন্ন পর্যটক নিজেরা সাইকেল চালিয়েই ঘুরে বেড়ায় এই বাগানে। এছাড়া রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। বিভিন্ন প্যাগোডা ঘুরে বেড়ালাম একটা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে। প্যাগোডাতে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয়। শুধু তাই নয়, স্বল্প পোশাকে এই সব প্যাগোডায় ঢোকা নিষেধ। বেশি-র ভাগ প্যাগোডায় ঢুকতে কোন প্রবেশ মূল্য লাগে না। কয়েকটি প্যাগোডায় ঢুকতে ১৫ ডলার প্রবেশ মূল্য দিতে হয়। তবে যেকোনো একটি প্যাগোডায় ১৫ ডলার দিলেই হবে। আপনাকে ধরিয়ে দিবে একটি কার্ড, যা দিয়ে এরপরের ৭ দিন যে কোন প্যাগোডা আপনি ভ্রমন করতে পারবেন। সূর্যোদয়ের মত সূর্যাস্ত দেখতেও অনেকে ভীড় করে বিভিন্ন প্যাগোডায়। আমরাও ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত বু প্যাগোডায় গেলাম সূর্যাস্ত দেখতে। মন মুগ্ধকর ছিল সেই সূর্যাস্তের দৃশ্য।
পোপা মাউন্টেইনঃ
বাগান থেকে আমরা গেলাম পোপা মাউন্টেন। বাগান থেকে ১.৫ ঘণ্টার পথ। গাড়ি ভাড়া নিয়েই যাওয়া যায়। এখানে রয়েছে ৭৯৮ মিটার ওপরে একটি অদ্ভুত সুন্দর রিসোর্ট। নাম পোপা মাউন্টেইন রিসোর্ট। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য । এত উঁচুতে পাহাড়ের বুকে এই রিসোর্টের নির্মাণ শৈলী মুগ্ধ করার মত। পুরোটাই যেন কাঠ দিয়ে তৈরি। সবুজের মাঝে চোখে পরে সুন্দর করে তৈরি বেশ কিছু ভিলা। অসংখ্য বিদেশী পর্যটক এর দেখা মিলল এখানে। চারপাশের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ এবং পাহাড়প্রেমী মানুষের জন্য এর চেয়ে সুন্দর জায়গা খুব কমই আছে বলে আমার ধারনা।

শুধু তাই না, এখানে আছে চমৎকার একটি সুইমিংপুল, যেখান থেকে খুব সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায় টঙ কেলাট এর। পোপা মাউন্টেইন রিসোর্ট এর অন্যতম আকর্ষণ এই প্যাগোডাটি।

৭৭৭ টি সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে হয় এই প্যাগোডায়। কথিত আছে, এই প্যাগোডায় দোয়া করলে তা পুরন হয়। কাজেই ধার্মিক মানুষের ভিড় অনেক। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়েও মানুষ এই ৭৭৭ টি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। আর বিদেশী পর্যটকরা তো আছেনই। বেশ কিছু দুষ্টু বানর এর দেখাও মিলবে এই টঙ কেলাট এ।

এই রিসোর্ট এর পাশেই রয়েছে একটি হর্স রাইডিং জোন। চাইলে কোন ঘোড়া ভাড়া করে ঘুরে দেখতে পারেন এই রিসোর্ট এর চারপাশ। রিসোর্ট এ আমরা যে রুমে ছিলাম, তার বেলকনি দিয়েও দেখা যেত এই টঙ কেলাট। দুপুরে রাতে খেতে হবে এই রিসোর্ট এই। আসে পাশে তেমন ভালো কোন রেস্টুরেন্ট নেই তাই। বলে রাখা ভালো যে, এই রিসোর্টটি বেশ এক্সপেন্সিভ। আমরা যে ভিলাতে ছিলাম তার ভাড়া ছিল ১৫০ ডলার এবং খাবারের বিল ও ডলারেই দিতে হয়েছে। কিন্তু এত সুন্দর পরিবেশে একদিন থাকতে পেরেই আমি মহাখুশি।
নুই সং সী বিচঃ
মায়ানমার এ বেশ কিছু সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে। সব চেয়ে সুন্দর সৈকত এর নাম না পলি। এটা ইয়াঙ্গুন থেকে অনেক দূরে এবং বিদেশী পর্যটক দের জন্য খুব একটা নিরাপদ না কারণ, মুসলিমদের সাথে দাঙ্গা হয়েছে যে রাখাইন পল্লী তে তা, এই না পলি-র পাশেই।
তাই আমরা বেছে নিলাম নুই সং সমুদ্র সৈকতকে।
ইয়াঙ্গুন থেকে প্রতি সকালে বাস ছাড়ে, নুই সং এর উদ্দেশ্যে। বাঙালি কমিউনিটি থেকে নুই সং যাওয়ার একটা প্ল্যান করা হল। তাই আমাদের আর বাসে যেতে হয় নাই। এক ভাই এর গাড়িতে করেই গেলাম। সময় লাগলো ৫ ঘণ্টা। নুই সং পৌঁছেই খুশিতে মনটা নেচে উঠলো। এত সুন্দর সমুদ্র চোখের সামনে। পানি অসম্ভব সুন্দর নীল।

আমরা যে রিসোর্ট এ উঠলাম তার নাম বে অফ বেঙ্গল। সমুদ্র ঘেঁষেই তৈরি এই বিলাসবহুল রিসোর্টটি। পানি দেখে নিজেকে আটকে রাখা খুব কঠিন। রুমে যেয়ে একটু ফ্রেশ হয়েই চলে গেলাম বিচে। অদ্ভুত সুন্দর। আমার এই জীবনে আমি বেশ কিছু সী বিচ দেখেছি, কিন্তু এত সুন্দর, শান্ত এবং নীল পানি-র বিচ দেখি নাই। এই সী বিচ, বিদেশী পর্যটক দের জন্যই মূলত। স্থানীয় মানুষ এর ভিড় নেই। নেই প্যারা সেইলিং, স্নরকেলিং এর ব্যবস্থা। আর এই কারণেই পানি এত সুন্দর। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, এই সবের ব্যবস্থা আছে, আর এর জন্য আপনাকে ট্রলারে করে আর একটু দূরে যেতে হবে। আমাদের এইই সবের ইচ্ছা ছিল না। সমুদ্র দেখেই তৃপ্ত ছিলাম। বাইক ভাড়া করে ঘুরে বেড়ালাম সী বিচ এর পাশ দিয়ে।

এখানে রয়েছে একটা লাভারস আইল্যান্ড, যেখানে রয়েছে একটা মারমেইড এর মূর্তি। জোয়ারের সময় এখানে যেতে হয় ট্রলারে, কিন্তু ভাটার সময় হেটেই চলে যাওয়া যায়। আমরা বাইক নিয়ে যেয়ে এই লাভারস আইল্যান্ড ঘুরে দেখলাম। এর সামনেই দেখলাম বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরা বালি দিয়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য বানাচ্ছে। কোনটা দেখার মত হচ্ছে, কোনটা দেখে হাসি পেল।
এই নুই সং এর পানি-র রঙ সকাল, দুপুর, বিকালে বিভিন্ন রঙ ধারন করে। সকালে পানির রঙ খুব গাঢ় নীল, দুপুরের দিকে কিছুটা হাল্কা, আর বিকালে পানি তে হাল্কা নীল আভা দেখা যায়।
আমাদের রিসোর্ট এর সুইমিংপুল ও সমুদ্রমুখী। সুইমিংপুলে ভিজে ভিজে জুস খেতে খেতে সমুদ্র দেখতে যে কত টা ভালো লাগে, তা এবার বুঝলাম।

আমাদের রিসোর্ট এর পাশেই ওয়েস্টার্ন পয়েন্ট, সামুদ্রিক খাবারের দোকান। অসম্ভব মজার খাবার পাওয়া যায় এখানে। সমুদ্র থেকে ধরা মাছ ভেসে বেড়ায় এই রেস্টুরেন্ট এর চৌবাচ্চায়। আপনি যেটাকে পছন্দ করে দিবেন, সেটাই আপনার মন মত রেধে পাঠিয়ে দেয়া হবে আপনার টেবিল এ।
আপনাদের জন্য একটা তথ্য। নুই সাং এর পেঁপে অনেক মজার। গেলে খেতে ভুলবেন না।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে এসে বসলাম সমুদ্র তীরে রাখা রিলাক্সিং চেয়ারগুলোতে। আসে পাশে কেও নাই। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। সাথে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। সামনে বিশাল সমুদ্র। মনে হচ্ছে আমার জন্যই রিসার্ভ করে রাখা পুরো বিচ টা। এ যেন ছিল এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
ইয়াঙ্গুনঃ
২ দিন নুই সাং এ কাটিয়ে ফিরে এলাম ইয়াঙ্গুন। অনেকেই আমরা ভাবি, এটাই মায়ানমার এর রাজধানী। কিন্তু তা নয়। মায়ানমার এর রাজধানী নেই পি ডো। খুব গোছানো ছিমছাম শহর এই ইয়াঙ্গুন। রাস্তা ঘাট চকচকে। উঁচু বহুতল ভবন খুব একটা নেই। দামি দামি গাড়ি হাঁকিয়ে মানুষ ছুটে চলে। ৫ তারকা হোটেল ও আছে বেশ কিছু। এই শহরে কিংবা এই দেশে সাধারণত ২ শ্রেণীর মানুষ আছে। উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত। মধ্যবিত্ত নাই বললেই চলে। আমি আমার সফরের অধিকাংশ সময় এই ইয়াঙ্গুনেই থেকেছি কারণ আমার হাসব্যান্ড এর অফিস এখানেই।
ইয়াঙ্গুন শহরের প্রধান আকর্ষণ শুয়ে ডাগন প্যাগোডা। স্বর্ণ এবং হীরকখচিত এই প্যাগোডা দেখতে দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসে ইয়াঙ্গুনে। শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে দেখা যায় এই প্যাগোডার চূড়া। বিদেশী পর্যটক হওয়ার কারণে জনপ্রতি ৮ ডলার প্রবেশ মূল্য দিয়ে ঢুকতে হল আমাদের। ধর্মভীরু হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে প্রার্থনা করে সুতায় ঝুলিয়ে রেখে যায় তাদের ব্যবহৃত দামি দামি অলংকার। পূর্ণিমার রাতে এই প্যাগোডার সৌন্দর্য আরও ভালো ভাবে নাকি বোঝা যায়।
এর পর ইয়াঙ্গুন এসে যেটা না দেখলেই না, সেটা হল পানিতে ভাসমান এক জোড়া ড্রাগনমুখী রেস্টুরেন্ট। নাম কারায়ুই প্যালেস। খুব ই নামকরা এই রেস্টুরেন্ট এ ৩দিন আগে থেকে বুকিং না দিলে নাকি সিট পাওয়া যায় না। এই রেস্টুরেন্ট টি যে লেকে অবস্থিত, তার নাম কানুজি লেক। এই লেকের চারপাশে রয়েছে ছোট বড় আর ও কিছু রেস্টুরেন্ট, যেগুলোতে অগ্রিম বুকিং এর প্রয়োজন নেই।

শহরের ঠিক মাঝখানে রয়েছে ইনায়া লেক। অং সাং সূচির বাসায় ও এই লেক এর পাশেই। এখানে রয়েছে একটি মেরি গো রাউন্ড, যেটিতে চড়ে পুরো শহরটাকে এক নজর দেখে ফেলা যায়।
খাওয়া দাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে এই শহরে। বলে রাখা ভালো, খুবই এক্সপেন্সিভ দেশ এই মায়ানমার। রেস্টুরেন্ট এ খাবার খরচ এবং হোটেল এ থাকার খরচ অনেক বেশি। আমার ভাগ্য ভালো যে তসলিমের বাসাতেই ছিলাম,নিজেই রান্না বান্না করে খেয়েছি, বিভিন্ন বাঙালি ভাই,ভাবিরা দাওয়াত করে খাইয়েছেন। আর ইয়াঙ্গুনে আমার প্রিয় রেস্টুরেন্ট ছিল মেরি ব্রাউন। মালয়শিয়ান চেইন রেস্টুরেন্ট।
বেশ কিছু ভারতীয় রেস্টুরেন্ট এও খেয়েছি। খেয়েছি চায়না টাউনে। তবে দুঃখ লেগেছে এটা ভেবে যে নামী দামী কোন ইন্টারন্যাশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট এখানে নেই। জানি না কেন?
আপনাদের যদি বিভিন্ন জেমস/ স্টোন এর প্রতি আকর্ষণ থাকে, তবে অবশ্যই চলে আসবেন এই ইয়াঙ্গুনে। রুবি, পান্না, সাফায়ার, ডায়মন্ড কি নেই এখানে? শপিং এর জন্য রয়েছে বোজও মার্কেট, অং সাং সূচির বাবার নামে এই মার্কেট। আর স্বর্ণের দাম ও বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কম এখানে। ভরি তে হাজার ১০ কম তো হবেই। তবে স্বর্ণের ক্রেতাদের খুব একটা পাত্তা দিবে না এরা। আমাদের দেশের স্বর্ণের দোকানদার দের মত কোমল পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করা দূর এর কথা।
দেখতে দেখতেই যেন পার হয়ে গেল আমার ১৯ দিন এর এই সফর। ফিরে আসতে হল নিজ দেশে। কিন্তু মনের মাঝে রয়ে গেছে মায়ানমার ভ্রমনের সুন্দর স্মৃতিগুলো।
ভ্রমনের পূর্বে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়ঃ
* ৮ বছর বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে ঢাকা -ইয়াঙ্গুন- ঢাকা বিমানের ফ্লাইট। প্রতি সোম এবং বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বিমান ইয়াঙ্গুন এর পথে। ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় লাগে। ভাড়া ৩৮৫ ডলার ( রিটার্ন সহ)।
* মায়ানমার যেতে ভিসা লাগে এবং ৩ কর্ম দিবস লাগে ভিসা পেতে। টুরিস্ট ভিসা ফী ২০০০ টাকা। মনে রাখবেন, মায়ানমার এম্বাসীর বাঙালি লোকগুলো কিন্তু টাকা ছাড়া কাজ করতেই চায় না। কাজেই ওদের টাকা না দিতে চাইলে হাতে সময় নিয়ে ভিসার জন্য দাড়াবেন।
* মায়ানমারে খরচ তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। যদিও ১ ডলার ভাঙিয়ে ওদের দেশে প্রায় ৯৯০ চাট ( মায়ানমার এর মুদ্রা) পাবেন আর আমাদের ১ টাকা সমান ওদের ১২ চাট প্রায়। উদাহরণস্বরূপ ট্যাক্সিতে ওঠা মাত্রই আপনাকে বাংলাদেশী টাকার প্রায় ২০০ টাকা দিতে হবে। এর নিচে যেন ভাড়াই নেই। তবে ট্যাক্সির জন্য আপনাকে কখনই অপেক্ষা করতে হবে না। প্রচুর ট্যাক্সি আছে রাস্তায়।
** চলাফেরা করতে ওখানে কোন সমস্যা নেই। চোর ডাকাত এর ভয় নেই। খুব সিকিউরড দেশ মায়ানমার।
* এদের ইংলিশ এর ওপর খুব একটা দখল নেই। কাজেই কিছুটা সমস্যায় পরতে পারেন।
তবে তারা ইংলিশ জানুক আর না জানুক, আপনি দেখা মাত্রই কোন বার্মিজকে বলুন মিংলাবা। এটা তাদের সম্ভাষণ। তারা খুশি হয়ে যাবে।
মাদিহা খান জিতা LINK
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন