মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

HIMACHAL PRADESH - INFORMATION

হিমাচল প্রদেশহিমাচল প্রদেশকে বলা হয় দেবভূমি. হিমাচল প্রদেশের জনসংখ্যা (২০০১) ৬০৭৭২৪৮ জন. হিমাচলের রাজধানির নাম- সিমলা. পশ্চিম হিমালয়ের পার্বত্য রাজ্য যার নাম হল হিমাচল প্রদেশ. হিমাচল প্রদেশের প্রচুর দেখবার মতো সুন্দর যায়গা আছে যেমন- সিমলা, রামপুর, সাংলা, কল্পা, সারহানা, মান্ডি, কুলু, মানালী, নাকো, টাবো, ডালহৌসী, রেকিংপিও, কাজা, রোটাং পাশ, মণিকরন ইত্যাদি. এপ্রিল থেকে জুন এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের সময়ে এখানকার আবহাওয়া খুব ভালো থাকে. শীতকালে অনেকগুলি যায়গাতে তূষারপাত হয়.

সিমলা-
২১০০ থেকে ২৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্হিত হিমাচল প্রদেশের রাজধানি সিমলা. এখানে ব্রিটিশ যুগের নানা স্হাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়. এখানকার ম্যাল পর্যটকদের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষন. এখানে দেখবার মতো কয়েকটি যায়গা হলো - চাদউইক জলপ্রপাত যা প্রায় ৭০মিটার দীর্ঘ, যার দুরত্ব সিমলা থেকে প্রায় ৭কিলোমিটার, সঙ্কটমোচন মন্দীর(সিমলা থেকে ৭কিলোমিটার) , তারদেবী মন্দীর (সিমলা থেকে ১১কিলোমিটার), ইনস্টিটিউট অব এডভান্স স্টাডিজ (সিমলা থেকে ৪কিলোমিটার), স্টেট মিউজিয়াম (সোমবার এবং ২য় শনিবার ছাড়া প্রিতদিন খোলা. সময় সকাল ১০টা থেকে বৈকাল ৫টা পর্যন্ত. সিমলা থেকে- ৩কিলোমিটার), গেইটি থিয়েটার, সিমলা কালিবাড়ি (বাঙালিদের জন্য অন্যতম, এখানে থাকার জন্য যায়গা আছে. অগ্রীম বুকিং এর জন্য ফোন নং- ০১৭৭ ২৬৫২৯৬৪. একদিনের টাকা অগ্রীম পাঠিয়ে বুকিং করে নিন, বাঙালিরা সিমলায় এখানেই থাকতে পছন্দ করেন), নলদেরা (সিমলা থেকে ২৩ কিলোমিটার), তত্তাপানি (সিমলা থেকে ৫৩কিলোমিটার), mmস্ক্যান্ডাল পয়েন্ট (এখান থেকে ভাইসয়রের কন্যা অপহৃত হয়েছিলেন) ইত্যাদি. হিমাচল ট্যুরিজম দপ্তরের কনডাকটেড ট্যুরে সিমলা ঘুরে নিতে পারেন, এর জন্য ট্যুরিষ্ট ইনফরমেশন অফিস (ম্যাল, সিমলা ফোন নং- ২৬৫২৫৬১) যোগাযোগ করুন. দেখতে পারেন সিমলার উচ্চতম জাকু হিলস, জাকু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্হিত হনুমান মন্দীর, চাদউইক ফলস, প্রসপেক্ট হিলস, কামনাদেবীর মন্দীর,
সিমলায় এক্সিস ব্যাঙ্কের এটিএম- ত্রিশুল টাউয়ার এবং ট্রাভেলস,৫৩, ম্যাল, সিমলা. এস.বি.আই এর এটিএম- স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট, ম্যাল

সিমলা কি ভাবে যাবেন-
হাওড়া থেকে কালকা মেলে চেপে কালকা স্টেষনে পৌছান, কালকায় নেমে ট্রয়টেন ধরুন. ট্রয়টেনে চেপে সিমলায় পৌছান.
হাওড়া- কালকা মেল (২৩১১)- হাওড়ায় ছাড়বে প্রতিদিন সন্ধ্যে ৭টা ৪০ মিনিটে. দিল্লী পৌছাবে তার পরদিন রাত্রি ৮টা ৪৫ মিনিটে এবং কালকা স্টেষন পৌছাবে তারপরদিন ভোর ৪টে ৪০ মিনিটে. কালকা যাবার জন্য এটি সবথেকে ভালো ট্রেন. ভাড়া- স্লিপার ক্লাসে- ৪৭৩ টাকা, এসিতে- ১২৭৫টাকা. মোট স্টেষন সংখ্যা- ৩৯টা. কালকা থেকে হাওড়া ফেরার জন্য- ট্রেন নং- ২৩১২. কালকায় ছাড়বে- রাত্রি ১১টা ৫৫মিনিটে, এবং হাওড়া পৌছাবে - তৃত্বীয় দিন সকাল ৭টা ১০ মিনিটে. (৪ঠা আগষ্ট, ২০০৯ অনুযায়ী)
এছাড়া হাওড়/ শিয়ালদহ থেকে দিল্লী গিয়ে সেখান থেকে কালকাগামী যেকেন ট্রেনে কালকা চলে আসতে পারেন.হাওড়া থেকে দিল্লী যে ট্রেন গুলি আসছে যেমন- হাওড়া-রাজধানী এক্সপ্রেস (২৩০১)- হাওড়ায় ছাড়বে - রবিবার বাদে প্রতিদিন বৈকাল ৪টা ৪৫মিনিটে নিউদিল্লী পৌছাবে- তারপরদিন সকাল ৯টা ৫৫মিনিটে (ভাড়া এসিতে যথাক্রমে- ৩৩৬৫টাকা, ২০১০টাকা, এবং ১৫২০টাকা.),
হাওড়া-নিউদিল্লী পূর্বা এক্সপ্রেস (২৩০৩). হাওড়ায় ছাড়বে- সোম, মঙ্গল, শুক্র, শনিবার সকাল ৮টা ৫মিনিটে এবং নিউদিল্লী পৌছাবে- তারপরদিন সকাল ৭টা ৫মিনিটে. বুধ, বৃহ, শনি তে চলে ২৩৮১ পূর্বা এক্সপ্রেস হাওড়ায় ছাড়বে- সকাল ৮টা ২০মিনিটে এবং নিউদিল্লী পৌছাবে- পরদিন সাকল ৭টা ৫ মিনিটে (ভাড়া- স্লিপারক্লাসে- ৪৪২টাকা,এসিতে ভাড়া যথাক্রমে- ২৭৪৩টাকা,১৬২৩টাকা এবং ১১৮৭টাকা)
উদয়আভা তুফান এক্সপ্রেস (৩০০৭) - হাওড়ায় ছাডবে প্রতিদিন সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে এবং নিউদিল্লী পৌছাবে- পরদিন সন্ধ্যে ৭টা ৫৫ মিনিটে. মোট স্টেষন সংখ্যা- ৮২টি.
শিয়ালদহ-নিউ দিল্লী রাজধানী এক্সপ্রেস (২৩১৩) - শিয়ালদহ ছাড়বে প্রতিদিন বৈকাল ৪টে ৪০মিনিট এবং নিউ দিল্লী পৌছাবে- পরদিন সকাল ১০টা ৩৫মিনিটে. মোট দুরত্ব- ১৪৫৪কিলোমিটার. মোট স্টেষন সংখ্যা- ৮টি.
নিউদিল্লী থেকে কালকা যাবার বিভিন্ন ট্রেন-
পশ্চিম এক্সপ্রেস (২৯২৫) নিউদিল্লী থেকে ছাড়বে প্রতিদিন সকাল ১০টা ৫০মিনিট এবং কালকায় পৌছাবে এই দিন বৈকাল ৪টে ৩০মিনিটে. (ভাড়া- স্লিপার ক্লাস এ ১৭৫টাকা)
কালকা শতাব্দি এক্সপ্রেস (২০০৫) নিউদিল্লী থেকে ছাড়বে প্রতিদিন বৈকাল ৫টা ২৫মিনিটে এবং কালকা পৌছাবে রাত্রি ৯টা ২০মিনিটে. (ফাস্ট ক্লাস এসি- ৮৬০টাকা, এসি চেয়ার কার- ৪৫০টাকা) মোট ৩০৩কিলোমিটার.
কালকা-শতাব্দি এক্সপ্রেস (২০১১) নিউদিল্লি থেকে ছাড়বে- প্রতিদিন সকাল ৭টা ৪০মিনিটে এবং কালকায় পৌছাবে- সকাল ১১টা ৪৫মিনিটে.
হিমালয়ান কুইন (৪০৯৫) নিউদিল্লি থেকে ছাড়বে প্রতিদিন ৫টা ৪০ মিনিট কালকায় পৌছাবে সকাল ১১টা ১০ মিনিটে.
কালকায় পৌছে ট্রয়ট্রেনে মোট ৯৬কিলোমটিরা পথ রওনা দিন সিমলার উদ্দেশ্যে. মোট ১০৩টি টানের পাবেন এই রাস্তায়. এটি একটি রোমাঞ্চকর যাত্রা.
কালকা থেকে যে সব ট্রেন সিমলা যাচ্ছে- কালকা সিমলা প্যাসেঞ্জার (কালকায় ছাড়বে- প্রতিদিন ভোর ৪টে তে এবং সিমলা পৌছাবে- সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে) (ভাড়া- ১৮৯টাকা)
শিবালিক এক্সপ্রেস(২৪১) কালকায় ছাড়বে- ভোর ৫টা ৩০মিনিট, সিমলায় পৌছাবে- সকাল১০টা ১৫ মিনিটে (ভাড়া ২৮০টাকা)
কালকা সিমলা এক্সপ্রেস (২৫১) কালকায় ছাড়বে- ভোর ৬টায় , সিমলায় পৌছাবে- সকাল ১১টায় (মোট ভাড়া- ২২৮টাকা)
হিমালয়ান কুইন (২৫৫) কালকায় ছাড়বে- দুপুর ১২টা ১০মিনিটে , সিমলায় পৌছাচবে- বৈকাল ৫টা ২০ মিনিটে (মোট ভাড়া- ১৬৭টাকা)

সিমলায় কোথায় থাকবেন-
সিমলায় থাকার জন্য প্রচুর হোটেল আছে যেমন- হোটেল ইভ (+91 999 66 20365), হোটেল সূর্য (+91-177-2801979, 2804724, +91- 93185-01389, 98050-42220), হোটেল সিতা প্যালেস (Tel- 0177 2655423), হোটেল কোহিনুর (সিমলার লোকাল বাস স্ট্যান্ডের কাছে, Tel-0177 2802008), হোটেল অপ্সরা (কার্ট রোড, সিমলা- Tel-0177 2811652), হোটেল মধুবন (Tel-0177 2801044), সিমলা কালিবাড়ি (এটি বাঙালিদের কাছে খুব প্রিয়, ফোন নং- ০৯৮১৬০২৭০৫৩), হোটেল ক্যাপিটেল- (০১৭৭-২৬৫৩৫৮২), হোটেল ডালজিল (০১৭৭-২৮০৬৭২৫), হোটেল শীলা (০১৭৭-২৬৫৭৩৬৯), হোটেল মহারাজ (০১৭৭-২৬৫৭৭৮৮), হিমল্যান্ড ওয়েস্ট (০১৭৭-২৬২৪৩১২), হোটেল সিংগার (ম্যালের কাছে, (177) - 2652881 , 2658481), হোটেল সংগীত (ম্যাল, (177) - 2802506 , 2802506 ), গুলমার্গ হোটেল ((177) - 2653168 , 2656968 , 2657766), মেরিনা হোটেল (ম্যাল, ০১৭৭-২৮০৬১৪৮)
হিমাচল ট্যুরিজমের ফোন নং- 0177 - 2625864 / 2625924 / 2623959 / 2625511 টোল ফ্রি ফোন নং- 1800-180-8077,
সিমলার পুলিশ স্টেষনের নং- ২৬৫৭৪৩০, এম্বলেন্স- ২৮০৪৬৪৮, ট্যুরিষ্ট ইনফরমেশন অফিস (ম্যাল)- ২৬৫২৫৬১.
সিমলা মেইন বাস স্ট্যান্ড- ২৬৫৮৭৬৫, রেল অনুসন্ধান- ২৬৫২৯১৫

মানালি
মানালি দিল্লি থেকে ৫৫০কিলোমিটার দুরত্বে অবস্হিত. ২০৫০ মিটার (৬৩৯৮ফুট) উচ্চতায় অবস্হিত মানালি একটি শৈলশহর. মানালি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি যায়গা. মানালিতে দেখবার মতো প্রচুর যায়গা আছে যেমন- হিড়িম্বা মন্দির (১৫৫৩ সালে তৈরী হয়েছে), বশিষ্ট উষ্ণ কু্ন্ড, গৌতম মুনির আশ্রম, মনুমন্দির, মানালির ম্যাল খুবই জমজমাট একটি যায়গা. প্রচুর দোকান, রেস্তোরা, হোটেল এখানে দেখা যায়. এখানে পর্যটকরা শাল, টুপি, শীতবস্ত্র, সোয়েটার ইত্যাদি কেনাকাটা করেন. মানালি বিপাশা নদীর তীরে অবস্হিত. মানালি থেকে চলে আসুন রোটাং পাশ দেখতে. রোটাং পাশের উচ্চতা ৩৯৭৯ মিটার. মানালি থেকে রোটাং মোট প্রায় ৫২ কিলোমিটার রাস্তা. চারিদিকে বরফে ঢাকা প্রকৃতির শোভা অসাধারন. সিমলা থেকে বাসে ১১-১২ ঘন্টার যাত্রা করে চলে আসুন মানালিতে. এছাড়া দিল্লি, চন্ডিগড়, ধরমশালা থেকেও আসতে পারেন মানালি.

মানালিতে কোথায় থাকবেন-
মানালি জুড়ে রয়েছে প্রচুর হোটেল. মানালি ইন (01902-253550 - 54), আ্যপেল কান্ট্রি (+91 - 1902 254187 - 89), স্পান রিসোর্ট ((01902) 240138, 240538), স্নোভ্যালি রিসোর্ট (01902- 253228, 253027), হানিমুন ইন (+91-1902-253234/253235/253236), উড ভ্যালি কটেজ (01902-252546), অম্বিকা হোটেল (01902-252203), অনুপম রিসোর্ট (252181), হোটেল মঙ্গলদীপ (9831116844), হোটেল আদর্শ(252493, 252593), আকাশদ্বীপ (252106, 252442), হলিডে হোম ইন্টারন্যাশানাল (252101), কুনজুম হোটেল(253197), ডায়মন্ড হোটেল (253058) ইত্যাদি.
মানালিতে এস.বি.আই এর এটিএম-এইচপি, মানালি-১৭৫১৩১

কুলু-
কুলু আসতে সিমলা থেকে বাসে প্রায় ১০ঘন্টা মতো সময় লাগে. সিমলা থেকে কুলুর দুরত্ব প্রায় ২২০ কিলোমিটার. চণ্ডিগড় থেকে কুলুর দুরত্ব ২৭০ কিলোমিটার. পাঠানকোট থেকে দুরত্ব প্রায় ২৮০ কিলোমিটার. সিমলা থেকে প্রচুর বাস আসছে কুলুতে. কুলুর এস.টি.ডি নং- ০১৯০২. কুলুকে বলা হয় ভ্যালি অব গডস. পাইন আর দেবদারু গাছে ঘেরা উপতক্যা হলো কুলু উপতক্যা. বসন্তকালে কুলু উপতক্যা আপেল, নাশপাতি আর চেরি ফলে সাজানো থাকে. কুলুতে দেখার মতো জগন্নাথ মন্দীর (ভেখলী গ্রাম), ৪কিলোমিটার দূরে বৈষ্ণোদেবীর মন্দীর, বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৮কিলোমিটার দূরে বিজলেশ্বর মন্দীর (শিব মন্দীর). কুলুর প্রানকেন্দ্র হলো ঢালপুর ময়দান. ঢালপুরেই আপনি পাবেন সরকারী বিভিন্ন অফিস, বাসস্ট্যান্ড, স্টেট ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন হোটেল, ট্যুরিষ্ট ইনফরমেশন অফিস(ফোন নং-২২৪৬০৫) ইত্যাদি. কুলুতে পুলিশ স্টেষন আছে ঢালপুরে (ফোন নং- ২২২৭৭৫). হাসপাতাল- বিস হসপিটাল (ম্যাল রোড, ফোন- ২২৪৩১২), ডিস্ট্রিক্ট জোনাল হাসপাতাল (ঢালপুর, ফোন- ২২২৩৫০), কুলু মেডিক্যাল সেন্টার (আখাড়া বাজার, ফোন- ২২৪৫২৪). বাস স্ট্যান্ডের ফোন নং- ২২২৭২৮)
কোথায় কোন ব্যাঙ্ক আছে- কানারা ব্যাঙ্ক (আখাড়া বাজার, ফোন নং- ২২২১৩৪), জম্মু কাশ্মীর ব্যাঙ্ক (আখাড়া বাজার, ফোন নং- ২২২২২৭) , ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অব কমার্স ((আখাড়া বাজার, ফোন নং-২২৪১০৮), পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক ((আখাড়া বাজার, ফোন নং-২২২৪৮০), স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (ঢালপুর, ফোন-২২২৪৭৩)

কুলুতে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল আছে. হোটেল সর্বরি (২২২৪৭১), হোটেল সিলভারমুন (২২২৪৮৮), সেন্ট্রাল হোটেল (২২২৪৮৪), রামনিক হোটেল (২২২৫৫৮), বৈশালী হোটেল (গান্ধীনগর ২২৪২২৫), বিক্রান্ত হোটেল (২২২৭৫৬), হোটেল সঙ্গম (২৬৬০৯১), হোটেল এয়ারলাইনস (২৬৫৫৪৫), হোটেল কুলু ভ্যালি(২২২২২৩), হোটেল ব্লু ডাইমন্ড(২২২৫৫৯), হোটেল সির্দ্ধার্থ (২২৪২৪৩), ইত্যাদি. বাসস্ট্যান্ডের কাছে হিমাচল ট্যুরিজমের মোনাল ক্যাফেতে ভালো খাবার পাওয়া যায়.

ধরমশালা
ধরমশালায় দেখবার মতো যায়গাগুলি হলো- দলাই লামার আবাসস্হল, ডাল লেক, ভাগসুনাগ জলপ্রপাত, সেন্টস জনস চার্চ, ধরমকোট, কুনাল পাথারি গুহা মন্দির, কাবেরী সরোবর, কালী ও দূর্গাসা মন্দীর, ওয়ার মেমোরিয়ালটি (শহিদ স্মরণে), তিব্বত মিউজিয়াম, তিব্বতিয়ান লাইব্রেরী ইত্যাদি. পাঠানকোট থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে বাসে ধরমশালা চলে আসুন. ডালহৌসি থেকে ধরমশালা আসতে পারেন যার দূরত্ব ১২৬ কিলোমিটার মতো. সেক্ষত্রে পাঠানকোট যাবার দরকার হয় না. এছাড়া চন্ডিগড় থেকে বাসে ধরমশালা চলে আসতে পারেন. তবে পাহাড়ে যারা যাবেন তাদের উচ্চতার কারনে শ্বাশজনিত কষ্ট হতে পারে, তাই প্রয়োজনিয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না.

কোথায় থাকবেন
ধরমশালায় থাকার মতো অনেক হোটেল আছে. কিছু হোটেলের নাম ও ফোন নং দেওয়া হলো কাজে লাগতে পারে. যেমন- সুরভি (০১৮৯২-২২৪৬৭৭), আকাশ গেষ্ট হাউস ( 01892-221990), গ্রীন হোটেল (+91 1892-221200 / 221479), পিঙ্ক হাউস (+91-94181-43227/01892-221145), রিভার ভিউ এপার্টমেন্ট (9816206406, 9816292228) , এনেক্স হোটেল (+91-1892-221002), ভাগসু হোটেল (01892-221091), হোটেল সেভেন সিজ (+91-1892-221573), হোটেল সিটি হার্ট (+91-1892-223761) ইত্যাদি.
এস.বি.আই ব্যাঙ্কের এটিএম- কোতয়ালী বাজার, ধরমশালা-১৭৬২১৫ . স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাটিয়ালা- লোয়ার ধরমশালা, রেড ক্রস বিল্ডং, ধরমশালা- ১৭৬২১৫

সাংলা-
সারহান থেকে জিওরি চলে এসে জাতিয় সড়ক ধরে চলে আসুন সাংলার দিকে. রাস্তার কিছুটা অংশ খুবই ধুলো. সাংলা থেকে সরাসরি কল্পা যাবার জন্য বাস পাওয়া যায়. সাংলার এস.টি.ডি কোড- ০১৭৮৬. সিমলা থেকে সাংলার দুরত্ব ২৩২কিলোমিটার এবং সারহান থেকে দুরত্ব- ৯৪ কিলোমিটার. সাংলায় দেখার মতো অনেক জায়গা আছে তার মধ্যে কাঠের কামরু দুর্গ যেটা বাসস্ট্যান্ড থেকে ২কিলোমিটার দুরে, দূর্গের ভিতরে কামাখ্যা মায়ের মন্দীর আছে. কামরা দূর্গ দেখে চলে আসুন বেরিনাগের মন্দির.
এখানে থাকার জন্য কয়েকটি হোটেলের নাম ও তাদের ফোন নং- মোনাল রিজেন্সি (২৪২৯২২), সাংলা রিসোর্ট (২৪২৪০১), হোটেল দেবভূমি রিজেন্সি (২৪৩০৩০), হোটেল মাউন্ট কৈলাশ, প্রকাশ গেষ্ট হাউস, ইগলো ক্যাম্প রিসোর্ট, বান্জারা ক্যাম্প (হোটেল বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-ইষ্টান ট্যুরিজম, ৯২৩০৬৫৩৬৯৫)

কল্পা-
২৯৬০ মিটার উচ্চতায় পাইন, দেবদারুতে ঘেরা শহর কল্পা.রেকংপিও হয়ে কল্পা পৌছাতে হবে. রেকংপিও থেকে কল্পার দুরত্ব প্রায় ১২কিলোমিটার. কল্পাতে আপেল, আঙুর, আখরোট জাতিয় গাছ দেখা যায়. এখানে বৈদ্ধধর্মের প্রভাব দেখা যায়া, কারন কল্পা তিব্বতের খুব কাছে. এখানে একটি বৈদ্ধগুম্ফা আছে, এছাড়া চন্ডিকা দেবির মন্দির, ভৈরব মন্দির. সদর হাসপাতালেক কাছে এসে সমস্হ কল্পাকে দেখা যায়. এখান থেকে কৈলাস শৃঙ্গ কাছে থেকে দেখা যায়.
সিমলা থেকে সরাসরি কল্প যেতে পারেন. সিমলা থেকে কল্পা যেতে মোটামুটি ১২ঘন্টার মতো সময় লাগে.কল্পা থেকে সিমলা ফেরার বাস ছাড়ে সকাল ৬টা নাগাদ এবং সিমলায় পৌছায় সন্ধ্যের সময়.
কল্পায় থাকার জন্য হোটেল শিবালিক (০১৭৮৬-২২৬১৫৮), কিন্নর কৈলাশ (২২৬১৫৯),(ইষ্টান ট্যুরিজমের এই হোটেল গুলি বুকিং করতে পারেন- হোটেল ব্লু লোটাস, হোটেল কিন্নর ভিলা, কৈলাশ ভিউ গেষ্ট হাউস -ফোন নং-৯২৩০৬৫৩৬৯৫)
রোটাং লা পাস-
মানালী থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত রোটাং লা পাস. হিমাচল ট্যুরিজমের দ্বারা বাসে করে রোটাং পাস ঘুরিয়ে আনা হয়. গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন রোটাং পাসে. মানালি থেকে যাবার পথে অজুর্ন গুম্ফা এবং ঠান্ডা জলের প্রসবণ নেহেরু কুন্ড দেখে নিতে পারেন. এছাড়া যেতে পারেন সোলাং ভ্যালি. এখানে জানুয়ারী মাস থেকে মার্চ-এপ্রিস মাস পর্যন্ত বরফ পাওয়া যায়. রোটাং এ আপনি বরফে স্লেজ গাড়িতে ঘুরতে পারেন. রোটাং পাস এ প্রচন্ড ঠান্ডা সাথে কনকনে হাওয়া. রোটাং যাবার পথে বিপাশা নদী পাবেন. রোটাং এ থাকার জন্য কোন হোটেল পাবেন না. তাই দিনের মধ্যেই রোটাং দেখে মানালী ফিরে চলে আসুন. হিমাচল প্রদেশে ভ্রমনে এসে রোটাং পাশ অবশ্যয় দেখবেন.


GENERAL INFORMATION OF HIMACHAL PRADESH-

Himachal Pradesh is Popularly known as the Devbhumi – "Land of the Gods",.
CAPITAL:- Shimla ** No. of Districts- 12 Nos. ** Literacy- 77.13% (As on 2001) ** Latitude- 30o 22' 40" N to 33o 12' 40" N *** Population- 6077248 (As on 2001)
Chief Minister- Prof. Prem Kumar Dhumal

SOME USEFUL INFORMATION

For Hotel Booking- http://www.himachalhotels.in/
Online Bus Booking- http://hrtc.gov.in/hrtctickets/Default.aspx (This website may be used for Advance Booking of seats in Himachal Road Transport Corporation (HRTC) buses)

Himachal Tourism

Website:www.himachaltourism.gov.in
Toll Free Number: 1800 180 8077
Block No. 28, SDA Complex, Kasumpti, Shimla-171009
ph.: 0177 - 2625864, 2625924, 2623959, 2625511
Fax: 0177 - 2625511/2625864

ধরণীর পথে পথে : ঊষ্ণীষ ঘোষ – স্বপ্নের কেরল

ভারতবর্ষের  নানা জায়গা ঘুরেও মন জুড়োয় না ।   যতক্ষণ না হিমালয় বা কেরল যাই ।  কেরালা দিল্লী থেকে অনেকটা দূর তাই বড় একটা যাওয়া হয়ে ওঠে না ।  এই মালাবার উপকূলবর্তী রাজ্যটি সব দক্ষিণের শহর থেকে পৃথক । তার সংস্কৃতি,   পূজোপার্বণ  অনেকটা পূর্ব ভারতের মতন ।
ঐতিহাসিকরা বলেন অনেক অনেক বছর আগে পূর্ব ভারতের সাথে জলপথে বিশাল ব্যবসা ছিল মালাবার আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে । অনেকে ওখানে পৌঁছেছিলেন স্থায়ীভাবে ।  তাই ওখানকার সংস্কৃতির সাথে বঙ্গ-কলিঙ্গের অনেক মিল । সেবার হঠাত সুযোগ হল ব্যাঙ্গালোর থেকে এক বিয়েবাড়িতে দিন চারেকের ছুটি নিয়ে চলে গেলাম । শুধু দুটো জায়গায় আগে কখনো যাইনি…মুন্নার ও কুমারাকম, সেবার যাওয়া হয়েছিল ।
এই যাত্রা কিন্তু শুধুমাত্র সাইট সি-ইং ছিল না ।  ছোট ভাই আর তার পরিবারের সাথে দিন কয়েক  হোটেলে দিনযাপন, আড্ডা আর সাথে কিছু ঘুরে বেড়ানো  । তাই ট্যুর অপারেটর কে বলা ছিল কুমারাকমে কোনো লেক রেসর্ট বা স্টার হোটেল চাইনা, ট্যুরিস্টদের হল্লাগুল্লা থেকে দূরে কোনো নিরিবিলি জায়গায় যেন বুকিং হয় । মুন্নারেও ডাউনটাউন থেকে একটু দূরে কোনো নির্জন পরিবেশে ভালো ছিমছাম হোটেলে উঠেছিলাম আমরা । মেক-মাই-ট্রিপ সুন্দর ব্যবস্থা করেছিল । কোচিন এয়ারপোর্টে টাটা টুয়েলভ সিটারের ভ্যান ট্যাক্সিতে চড়ে বসলাম আমরা সাতজনে মিলে ।
প্রথমে কেরালার বিখ্যাত শৈল শহর মুন্নারে পা দিলাম । চা বাগান নিয়ে মুন্নার ৪৫০০ থেকে ৮০০০ ফুট অবধি ব্যাপ্ত । এখানে সারা বছর হালকা পশমের পোষাক লাগে যা কেরালার আর কোথাও লাগেনা । অতি সুন্দর জলবায়ু । তাই মুন্নারে গেলে একটা মাফলার আর হালকা সোয়েটার নেওয়া খুব জরুরী ।   ছোট্ট শহর । অনেক ছোট ছোট হোটেল আছে । আমরা শহর থেকে অনেক দূরে নিরিবিলিতে ছিলাম । কোচিন এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ১১০ কিমি দূরে এই মুন্নার । সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে ৩-৪ ঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় ।
মুন্নারের পথ
মুন্নারের পথ
নারকেল, কলা আর রাবার প্ল্যান্টেশান দিয়ে চমত্কার দৃষ্টিনন্দন রাস্তা ।
UNG-002
চিয়াপ্পারা ওয়াটার ফলস
গাড়ি থামিয়ে চা খেয়ে তারপর জলের কাছাকাছি হেঁটে গিয়ে জলকে পেছনে রেখে ছবি তোলা যায় । ভিজে সারা হওয়া কিন্তু মন ভালো করে ফিরে আসা গাড়িতে ।
UNG-004
থাকবার কটেজ
শহর থেকে ১০ কিমি দূরে এক সুন্দর হোটেলে থাকার ব্যবস্থা ছিল একরাশ সবুজের মাঝে ।  ছোট ছোট কটেজ আছে সবুজ লনের মাঝে । হানিমুনাররা সেখানে গিয়ে ওঠেন ।
সকালে হোটেলের প্রাতরাশ খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারটি  বেশ ভদ্র ও মিশুকে । দেখার জিনিস বিশেষ কিছুই নেই । ট্যুরিস্ট স্পট আছে কয়েকটা কিন্তু ঠান্ডা হাওয়া, মেঘে ঢাকা আকাশ আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি সব কিছু ভুলিয়ে দেয় । বড্ড ভাল লাগে তখন ।  চা বাগান আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা…বড্ড ভালো লাগে সেই পথচলা ।
চা বাগান
চা বাগান
শহরের মধ্যে দিয়ে গিয়ে মাট্টুপেট্টি ড্যাম আর বিশাল জলাশয় দেখতে
UNG-007
মাট্টুপেট্টি ড্যাম
মুনার টাউন অনেক দূরে ..
মুনার টাউন
মুনার টাউন
তারপর যেতে হয় মুন্নারের বনবিভাগের বিখ্যাত ফ্লরিকালচার সেন্টারে । নানা রঙের ফুলের পসরা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় ।


.
এরপর মুন্নার শহরে প্রবেশ করে দুপুরের খাওয়া । খুব সুন্দর । ভাত, নানা রকম মাছ ভাজা, ডাল, মালাবর মাংসের কারি ইত্যাদি । শেষে এরাভিকুলাম ন্যাশানাল পার্ক। অনেক উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয় । সেখানে শুধু বনবিভাগের গাড়ি যায় । টিকিট কেটে বাসে করে আমরা গেলাম ওপরে । বেশ ঠান্ডা । সুন্দর পাহাড়ী রাস্তা আর সবুজের মাঝে বিরল প্রজাতির পাহাড়ি ছাগল, থার  চরে বেড়ায় কিন্তু অঅমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা একে দেখতে পাইনি । তারপর ন্যাশানাল পার্কের রাস্তা ।
এক নাম না জানা নীল পাখি আমাদের ওয়েলকাম করল । UNG-013
দ্বিতীয়দিনের মত যাত্রা শেষ হল । দিনের শেষে হোটেলে ফিরে এসে ডিনার খাওয়া, আড্ডা দেওয়া, টিভি দেখা আর ঘুমের দেশে পাড়ি দেওয়া । তৃতীয়দিনে সকালে বেরুনো হল কুমারোকমের পথে ।
UNG-012
সুন্দর এক গ্রাম্য পরিবেশে । হোটেল নিয়ে বলার কিছুই নেই । এত পরিষ্কার আর পরিচ্ছন্ন যে তাতেই মন ভরে যায় । আমরা এটাই চেয়েছিলাম ট্যুর অপারেটরের কাছ থেকে । মিষ্টার এন্ড মিসেস কুরিয়ানের  পরিচালনায় ” দ্যা ব্যাক ওয়াটার রিট্রিট থিম হাউস” । রিটায়ার করে এঁরা এই হোটেল বানিয়েছেন । অনবদ্য আতিথেয়তা । ছোট্ট হোটেলখানি ।  দোতলায় চারটে ঘর, টানা বারান্দা আর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট এক চিলতে নদী । ঘন গাছপালার মধ্যে । নদী দিয়ে ছোট্ট নৌকা থেকে মাঝে মাঝেই মাঝির হাঁক কানে আসে । ” মাছ চাই, ফুল চাই ইত্যাদি কত প্রাকৃতিক সম্পদ আর তার সদ্ব্যাবহার এখানে ।  জলের লেভেলে থাকলে মোটর বোট এসে নিয়ে যায় যেখানে যাবার ইচ্ছে সেখানে । এই নদীর ধারে বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরা যায়… সে ব্যবস্থাও আছে সেখানে ।   আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কোট্টায়ম থেকে মোটরবোটে করে ব্যাক ওয়াটার, সরু ক্যানাল দিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর ভেমবানাদ লেকে একটু ঘুরে নেওয়া । কুমারোকম এর প্রধান হোটেল বা রেসর্ট এরিয়া যাবার প্ল্যান ছিলনা । সব লোকেরাই লেকের কাছেই থাকে। হোটেল যাবার গ্রাম্য রাস্তা আর পিছনের ছোট নদী ।
মোটরবোটে করে ঘোরা । সকাল সকাল জলখাবার খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম । কোট্টায়ম শহরের ব্যাক ওয়াটার জেটি থেকে মোটর বোট নিয়ে যাত্রা শুরু । দৃশ্য শুধু উপভোগ করার আর ছবি তোলার ।  কোনো এক বাড়ির ঘাটে কাপড় কাচতে ব্যস্ত কেরালর মেয়ে ।
UNG-014
ক্যানাল থেকে বালি তোলার সে কি তোড়জোড় । এবার ক্যানাল ছেড়ে  ব্যাক ওয়াটারে এসে পড়লাম ।
নানারকম পাখির ভীড় । কোথাও আবার জলের মধ্যে ডানা ছড়িয়ে রোদ খাওয়াচ্ছে কোনো অচিন জল পাখি । বেগনী রঙয়ের মূরহেন দেখতে পেলাম ।
লাইন করে  কর্মোরেন্টরা বিশ্রাম নিচ্ছে । অজস্র গোলাপী লিলি ফুটে  আছে ব্যাক ওয়াটারে । দাঁড় বেয়ে  দুই মাঝি আর এক কুকুর চলেছে নৌকা করে ।
এই হল বিখ্যাত “আর ব্লক”, ২-৩ ঘন্টা ঘুরে এখানে নামলাম । এটাই একমাত্র খাবার জায়গা এই ব্যাক ওয়াটারে । কলাপাতায় করে কেরালার লাল চালের ভাত, ডাল, মাছ মৌলি আর কারিমিন ভাজা । কারিমিন হল মিষ্টি জলের মাছ ।  কিছুটা চাঁদা মাছের মতন দেখতে ।
এই আর ব্লকে দেখা যাবে অনেক হাউসবোট পার্ক করা আছে । যারা হাউসবোট ভাড়া করেন তাঁরা আসেন কুমারোকম জেটি থেকে । দিন হিসেবে ভাড়া পাওয়া যায় কাশ্মীরের মত । তবে কেরালা হাউসবোট কাশ্মীরের মত স্থানু নয় । সর্বদা চলমান ।  ছোট নৌকা করে ক্যানাল ধরে বাড়ির উঠোন, ঘাটের পাশ দিয়ে জেতে বেশ লাগে । দেখলাম  একটি দোতলা হাউসবোটে বিরাট একটি গ্রুপ চলেছে হৈ হৈ করে ।
ব্যাক ওয়াটার ছেড়ে এবার পড়লাম সেই বিশাল ভেমবানাড লেকে । কিছু দূরে আছে কুমারাকোম এর রেসর্ট অঞ্চল, জেটি আর ছোট্ট শহর । লেকে কিছু দেখার নেই, এত বড় যে কূল কিনার দেখা যায় না । এই লেক পেরিয়ে আবার ব্যাক ওয়াটার ধরে চলে যাওয়া যায় আলেপ্পি শহরে । হাউসবোট নিয়ে যাওয়া যায়, আর আছে ফেরির ব্যাবস্থা । এবার ফেরার পালা । অন্য পথ দিয়ে, ঘন জনবসতির মধ্য দিয়ে নৌকা ফিরে এল কোট্টায়াম জেটিতে  । ক্যানালের ওপরে ফুট ব্রিজ, বড় নৌকা আসলে ঠিক রেলের লেবেল ক্রসিংয়ের মত ব্রিজ উঁচু করা হয় নৌকা যাবার জন্য।
এবার সবুজ ব্যাক ওয়াটারের দেশ মালাবারী স্বপ্ন শহর কেরালার যাত্রা হল শেষ । সন্ধ্যেবেলায় হোটেলে ফেরার পালা । তারপর দিন কোচিন হয়ে দিল্লী । সে যাত্রায় কোচিন আমাদের শেডিউলে ছিলনা ।

কোথায় যাবেনঃ

সময় থাকলে মুন্নার ও কুমারাকোমের সাথে কেরালার অন্যান্য জায়গাগুলি যেমন থেকাডি, কোচিন, ত্রিবান্দ্রম, আলেপ্পিও ঘুরে নেওয়া ভালো । কি করে যাবেনঃ কোলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেন আছে কোচিন বা ত্রিবান্দ্রম যাবার । এছাড়া বিমানেও যাওয়া যেতে পারে । এক জায়গা থেকে শুরু করে  অন্য জায়গায় ভ্রমণ শেষ করতে পারেন ।

কোথায় থাকবেনঃ

প্রতিটি জায়গায় থাকবার জন্য হোটেল খুঁজুন ইন্টারনেটে । নিজের মনের মত হোটেল বেছে নিন । ট্যাক্সি ইন্টারনেট থেকে আগাম বুক করতে পারেন অথবা যে হোটেলে আগে গিয়ে উঠবেন তাদের বলুন ব্যাবস্থা করে দিতে । কন্ডাকটেড ট্যুরঃ আমার মতে একটু নাম করা ট্যুর অপারেটরের সাহায্য নিন । আপনার বাজেট মতন ওরাই ঠিক করে দেবে । যেমন মেক-মাই-ট্রিপ, কুন্ডু-স্পেশ্যাল, যাত্রা ডট কম ইত্যাদি ।link

রহস্যঘন মোহময় লাদাক ও স্বর্গীয় অমরনাথ

মাত্র ৬৭ বছরের যুবা আমি, ৬১ বছরের যুবতী বৌকে নিয়ে লাদাক আর অমরনাথ যেতে একটু চিন্তাই ছিল । এই যাত্রায় পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মাউন্টেন পাস খরদুমলা (১৮,৩৮০ ফুট) পার হতে হয় । সেখানে অক্সিজেনের অভাবে কারো কারো বুকে ব্যথা হয় শুনেছি । শেষে কত্তা-গিন্নী ঠিক করলাম, কম দিন তো বাঁচি নি, দুগ্গা বলে ঝুলে পড়ি । ঠিক করলাম কোনো গ্রুপের সঙ্গে যাবো না । তাতে ঝুঁকিটা আরও একটু বাড়ল ঠিকই, কিন্তু গ্রুপের সঙ্গে যাবার হ্যাপা আছে, ইচ্ছেমত চলা যায় না । জীবনে সব সময়ে অনেক কিছু মানিয়ে চলতে হয়। তাই এই কটা দিন আমরা দুজনে সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে চাইলাম । এখন লিখতে বসে মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস, সেটা করেছিলাম! বহু হিল স্টেশনে আগে ঘুরেছি - সিকিম, ভুটান, উত্তরখণ্ড (কেদারনাথ বদ্রীনাথও বাদ নেই), নৈনিতাল, সিমলা, শিলং, দার্জিলিং ইত্যাদি, এটা কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন জীবনের খাতায় বড় হরফে লিখে রাখার মত অভিজ্ঞতা । আমার কলম ভাল চলে না, তাই লেখার চেষ্টা না করে ছবি দিয়ে বর্ণনার অভাব পূরণ করছি ।
লাদাক, যেটি ছোট তিব্বত বলেও পরিচিত, ভারতের একটি প্রান্তিক অঞ্চল । এর অবস্থান হিমালয়ের উত্তরে কারাকরামের দক্ষিণে তিব্বতী মালভূমিতে । লাদাক কথাটার অর্থ 'পাস-এর দেশ' । 'লা' হল মাউন্টেন পাস (যেমন, নাথ লা, খারদুম লা, চ্যাং লা, ফটো লা, ইত্যাদি) । বহু পাস যেমন আছে, তেমন আছে বরফ ঢাকা পাহাড় ঘেঁসে বহু মনেস্টারি (বৌদ্ধবিহার) এবং লেক (হ্রদ) । এখানে চোখে পড়বে তিন ধরণের স্থানীয় লোক - মন, দর্দ এবং মোঙ্গল । মনরা এসেছিল প্রথমে কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চল থেকে । এরপরে আসে দর্দ এবং মোঙ্গল ।
জুন মাসের শেষাশেষি কলকাতা থেকে প্রথমে গেলাম দিল্লী - সেখান থেকে লেহ-তে । আমাদের ভাগ্য, আকাশে মেঘ ছিল না । নীচে বরফ ঢালা পাহাড়গুলো তাই চমৎকার দেখা যাচ্ছিল - হিল স্টেশন থেকে দেখা সাইড ভিউ নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং-এ যাকে বলা হয় 'টপ ভিউ' । লেহ-তে একদিনের জন্যে বিশ্রাম - কম অক্সিজেনের আবহাওয়ায় শরীরকে সইয়ে নেবার জন্যে । পরের দুদিন লেহ-র প্রাসাদ, থিকসে মনেস্টারি, স্টক প্যালেস, শান্তি স্তুপা, স্পিতুক মনাস্টেরি, হেমিস মনাস্টেরি এবং হল অফ ফেম দেখে নেওয়া গেল । এই থিকসে মনস্টেরিতেই ছিল তিনতলা উঁচু বিখ্যাত মৈত্রেয় বুদ্ধ ।
আমাদের আসল রোমাঞ্চকর যাত্রা শুরু হল তার পরের দিন থেকে । গাড়ি চেপে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম ১৫০ কিলোমিটার দূরে নুব্রা ভ্যালির দিকে । নুব্রা উপত্যকা ১০০০০ ফুট উঁচুতে, খুব ঠাণ্ডা নয় - জলের প্রাচুর্য থাকায় জায়গাটা উর্বর । ১৮৩৮০ ফুট উঁচুতে খরদুমলা মাউন্টেন পাস দিয়ে বরফের মধ্যে যাওয়াটা একটা অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা । সৈন্যবাহিনীর লোকেরা আমাদের সতর্ক করল বেশীক্ষণ পাহাড়ের এই উচ্চতায় না থাকতে । একটা মেডিক্যাল সেন্টার ওখানে আছে উচ্চতা-জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যে । গাড়িতে একটা অক্সিজেন সিলিনডার আমাদেরও ছিল - তবে ব্যবহার করতে হয় নি ।
নুব্রা উপত্যকায় প্রথম দিনই পানামিকে (প্রাচীন ইয়ারকাণ্ডি সিল্ক রুটের শেষ গ্রাম) পৌঁছে আমরা উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করে পথের ক্লান্তি দূর করলাম। পরের দিন লেহ-তে ফেরার পথে আমরা ডিস্কিট আর হুণ্ডারে থামলাম । এ দুটিও নুব্রা উপত্যকায় । ডিস্কিটে একটা বিখ্যাত মনেস্টারি আছে, যার দেয়ালে চমৎকার সব ছবি আঁকা । এছাড়া কয়েকটা প্রস্তরমূর্তিও সেখানে আছে । হুণ্ডারে দেখতে পেলাম একটা সাদা মরুভূমি - সেখানে দু-কুঁজের উটের পিঠে চড়া যায়! একদিকে মরুভূমি, অন্যদিকে বরফাচ্ছাদিত পাহাড় - সত্যিই দেখার মত দৃশ্য!
পরের দিন লেহ-তে কাটিয়ে আমরা ১৪২৭০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত বিহ্বলকারী সুন্দর প্যানগং লেক দেখতে গেলাম । ১৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার প্রস্থের এই দর্শনীয় লেকটির ২/৩ ভাগই তিব্বতে, বাকিটা ভারতে । লেকে যাওয়ার ৫ ঘণ্টার পথের দুদিকের দৃশ্যও দেখার মত । উচ্চতার জন্যে পাহাড়গুলোতে কোন গাছপালা নেই, কিন্তু পাথরের রঙে অনেক বৈচিত্র্য আছে । যাত্রার পথে পড়ল ছাংলা পাস (১৭৫৮৬ ফুট) - পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম মাউন্টেন পাস । এবার উচ্চতার সঙ্গে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে গেছি । ছাংলা পাসে দুজনে নেমে একটু হাঁটাচলা করলাম । সৈন্যবাহিনীর লোকেরা পর্যটকদের চা বিতরণ করছিল - তাও খেলাম ।
দূর থেকে প্যানগং হ্রদকে প্রথম দেখে মনে হয় একটা ক্যানভাসে আঁকা ছবি । হ্রদের সব থেকে কাছে একটা হোটেলে উঠে মালপত্র রেখে আমরা বেরিয়ে পড়লাম । হ্রদের পাশে বসলে দেখা যায় সূর্যের আলোয় জলে নীল সবুজ ফিকে গাঢ় কত রকম রঙের খেলা - আমাদের নির্বাক করে দিল! আশেপাশে কোন লোক নেই - কেবল আমরা দুজনে । শব্দ বলতে শুধু নুড়ির ওপর বয়ে যাওয়া জলের ঝিরঝির ঝিরঝির গান । এরকম জায়গাতেই মানুষ ধ্যানে বসতে পারে । খালি একটা কথাই ঘুরে ফিরে মনে আসছিল , 'প্যানগং - তুমি আমাকে দিলে আত্মার প্রশান্তি'। মানস সরোবর দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি, শুধু ছবিতেই দেখেছি । সেই ছবির সঙ্গে মিলিয়ে মনে হল প্যানগং প্রায় সেরকমই । বসে বসে কতক্ষণ কেটে গেছে খেয়ালও করি নি । লেক থেকে যখন হোটেলে ফিরছি তখন দেখি পাঁচ ঘণ্টা কখন পার হয়ে গেছে!
আবার এক রাত কাটালাম লেহ-তে । এবার আমাদের গন্তব্য-স্থল সোমোরিরি হ্রদ । হিমালয় পার্বত্যাঞ্চলের এটিই সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত হ্রদ । সাত ঘণ্টার পথ - প্রায় সবটাই সিন্ধু নদের ধার দিয়ে ।
সোমোরিরি ১৫০৭৫ ফুট উঁচুতে, দৈর্ঘ্যে ১৯ কিলোমিটার প্রস্থে ৩ । প্যানগং-এর থেকে ছোট আয়তনের হিসেবে, কিন্তু কে মাপতে যাচ্ছে ? আমাদের চোখে একই সাইজ । এটিও অপূর্ব সুন্দর । এখানে পাখির সমাবেশে বেশী বৈচির্ত্য আর বরফে ঢাকা পাহাড়গুলো দেখলে মনে হয় হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে । চন্দ্রালোকিত রাতেও হ্রদটি দেখলাম - সারাজীবন মনে রাখার মত দৃশ্য । হাতছানি দিয়ে আমাদের অন্য এক জগতে নিয়ে যাচ্ছিল।
ফিরে এসে লেহতে এক রাত বিশ্রাম, তারপর বিদায় নেবার পালা। যাবো আলচি-তে । যাবার পথে দেখে নিলাম লিকির মনাস্টেরি আর বসগো দুর্গ । দুর্গ বলার থেকে দুর্গের ধবংসাবশেষ বলাই ঠিক । অল্প একটু অংশ পর্যটকদের জন্যে খোলা আছে । আলচিতে আমরা একটা রাত কাটালাম । আলচি মনাস্টেরি দেখলাম । এখানে যেসব ছবি আছে - সেগুলো আগের মনাস্টেরিগুলোর ছবি থেকে ভিন্ন ।
পরদিন যাত্রা করলাম কার্গিলের পথে । ফোটোলা পাস (১৩৪০০ ফুট) পার হবার পরে মুলবেকে দেখলাম বিশাল পাথর কুঁদে বানানো মৈত্রেয় বুদ্ধের মূর্তি । পথে লামাযুরু মনাস্টেরি দেখে নিলাম । তখনই চোখে পড়ল দূরে পাহাড়ের একাংশ থেকে যেন হলুদ আভা বেরোচ্ছে । আমাদের ড্রাইভার জানালো ওটা পুরোপুরি 'মুলতানী মাটিতে' তৈরী, ওকে স্থানীয়রা চাঁদের পাহাড় বলে । কার্গিলে পৌঁছে এক রাত বিশ্রাম করে রওনা দিলাম সোনামার্গের দিকে । পথে পড়ল দ্রাসের ওয়ার মেমোরিয়াল - কার্গিলে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর জয়ের স্মৃতিতে বানানো । সেনাবাহিনীর লোকেরা অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ - ঘুরে ঘুরে আমদের পাহাড়ের বিভিন্ন চুড়া চিনিয়ে দিলেন যেখানে পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল ।
পথে আরেকটা পাস জোজিলা (১১৫৭৫ ফুট) । পাসের কাছে রাস্তার দুধারে নিরেট বরফের দেয়াল । সোনামার্গে পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল । বিশাল উপত্যকা সবুজে মোড়া । এইখানেই লাদাকের সঙ্গে কাশ্মীরের তফাৎ । লাদাকের পাহাড়ে গাছপালা দেখা যাবে না । কাশ্মীরের পাহাড় সবুজে ভরা ।
সোনামার্গ থেকে বেরোলাম অমরনাথ দর্শনে। অমরনাথের গুহা ১২৭৫৬ ফু উঁচুতে । সূর্য ওঠার আগেই বেরিয়ে পড়লাম হেলিকপ্টার ধরতে - যাতে সেই দিনই ফিরে আসতে পারি । বালতাল থেকে হেলিকপ্টার ছাড়ে । ভাগ্য সহায়, প্যাসেঞ্জার লিস্টে আমাদের নামই প্রথমে । পবন হংসে চেপে পঞ্জতারিণী পৌঁছনো গেল । ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরেই অমরনাথ । এই বয়সে আর সাহসে কাজ নেই, বাকি পথটা হাঁটার চেষ্টা না করে পালকিতে চাপলাম । পালকি মানে চেয়ারের দুদিকে দুটো বাঁশ লাগানো - চারজন লোক সেই বাঁশ কাঁধে নিয়ে হাঁটবে । এতে দুটো সুবিধা । প্রথম সুবিধাটা বুঝতে অসুবিধা নেই - অন্যের ঘাড় ভেঙ্গে নিজের পথ কষ্ট বাঁচানো । দ্বিতীয় সুবিধাটা ঐতিহ্যগত । এক কালে পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটে গেলে মৃত ব্যক্তিকে লোকে খাটিয়ায় তুলে কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করত । সে যুগ চলে গেছে - সে সুখ এখন প্রায় অন্তর্হিত; এখন গাড়িতে চাপিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় । সেই পুরনো সুখের কিছুটা অন্তত জীবিত অবস্থায় এই পালকি-ব্যবস্থায় ভোগ করা যায় । শুধু খাটিয়াতে শুয়ে নয়, চেয়ারে বসে ।
যেতে যেতে একবার তো হৃদ্‌স্পন্দন থেমে যাবার উপক্রম । তিন দল তীর্থযাত্রী - কেউ আমাদের মত পালকি চড়ে , কেউ বা হেঁটে কেউ ঘোড়াতে একে অন্যকে পাশ কাটাবার চেষ্টা করছিল । ধাক্কাধাক্কিতে কয়েক বার দেখলাম পালকিবাহকদের কেউ পা পিছলে পাহাড় থেকে উলটে পড়তে পড়তে কোনও মতে রক্ষা পেল । তবে সেনাবাহিনীর লোক বিপদজনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার জন্য নজরদারী করছিল - তাই রক্ষা । অনেক সময়েই লোকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে অপেক্ষা করাচ্ছিল যাতে বরফ পিচ্ছিল পথে হুড়োহুড়ি না হয় । যেতে যেতেই আমরা অমর গঙ্গা দর্শন করলাম - বরফের চাঁইয়ের নীচ দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে । প্রায় তিন ঘণ্টা লাগলো উপরে উঠতে ।
গুহাটা আরাও ৫ - ৬ তলা উপরে । সিঁড়িগুলো পিচ্ছিল বরফের জন্যে । দুয়েকবার পড়তে পড়তে কোনও মতে গুহাতে গিয়ে পৌঁছলাম । এখানে কোন গুঁতোগুঁতি নেই - সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে । সেনাবাহিনীর লোকেরা সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে বরফের সেই শিব-লিঙ্গ দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে - যার জন্যে তীর্থ যাত্রীদের এত সময় ব্যয় ও কষ্ট স্বীকার করে এত দূরে আসা । কেউই বঞ্চিত হচ্ছে না । আমরা অবশ্য তীর্থের পুণ্য আর প্রকৃতির সৌন্দর্য্য - দুটোই পেতে গিয়েছিলাম ।
আবার পালকি চড়ে ফেরা । তবে এবার সময় লাগল অনেক কম । সোনামার্গ থেকে ফিরলাম শ্রীনগর হয়ে । ইচ্ছে ছিল গুলমার্গ, মুঘল গার্ডেনস ইত্যাদিতে যাবার । কিন্তু শ্রীনগরে কারফিউ । অগত্যা নাগিন হ্রদে হাউসবোট । সবকিছুরই ভালো দিক আছে । চমৎকার তিন বেডরুমের হাউসবোটে আমরা দুটি মাত্র প্রাণী । দুদিন ধরে সিকারা চেপে ডাল আর নাগিন হ্রদের ছোট ছোট জলপথে ৭ - ৮ ঘণ্টা ঘুরে বেড়ালাম । হাউসবোটের সংলগ্ন জমিতে একদিকে বাগান । সেখানে নানান ফুলের গাছের সম্ভার । ফলের গাছও আছে - আপেল, ন্যাসপাতি আর বেদানা গাছ দেখলাম । আর আছে ছোট্ট সুন্দর ঘাস বিছানো একটা মাঠ ।
অবশেষে ফিরলাম কলকাতায় নিজেদের আস্তনায় । আমাদের দুজনেরই জীবন-দর্শন - জীবনের ইনিংস শেষ করব কোনও আক্ষেপ না রেখে । তাই কি পাই নি তার হিসেব না করে - যা পেয়েছি তাই পুরোপুরি উপভোগ করে ফিরলাম।
মূল রচনা : বিজন বন্দ্যোপাধ্যায়

অনন্য কুমায়ূন – অসাধারণ হানিমুন

Tuesday, 8 May 2012

পঙ্কজ হাজরা ও সুমনা হাজরা রক্ষিত
Nainital Lake, Nainital
   প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতির এই রঙ বদলের বহুরূপী খেলা কোনদিন যে দেখতে পাব ভাবিনি। বর্ধমান  স্টেশন- এর রিজার্ভেসনের লম্বা লাইনে তখন জানিনা যাত্রা নিশ্চিত কিনা। ২০১১ সালেরএপ্রিল মাসে যাত্রা স্থির হলেও টিকিট কাটাই হল প্রায় দুমাস আগে এবং শুরু হল হোটেল বুক করার জন্য নির্ভরযোগ্য সংস্থার খোঁজউত্তরাখণ্ড সরকারের কুমায়ূন মণ্ডল বিকাশ নিগম লিমিটেড (Kumayon Mandal Vikash Nigam Ltd.) এর বিশ্বাসযোগ্যাতায় ভর করে হোটেল বুকিং সাঙ্গ হল। ভ্রমনের আনন্দ যাতে নিরানন্দ না হয়ে যায় সে জন্য আমাদের নৈনিতাল (Nainital) ও কৌশানি (Koushani) যাত্রার পরিকল্পনা করা হল রাজধানীর পথ ধরে। হ্যাঁ, পণ্ডিতদের পরামর্শ  উপেক্ষা করে লক্ষ্ণৌ এর পথ না ধরে দিল্লীর পথই ধরলাম। বর্ধমান স্টেশন থেকে পূর্বা এক্সপ্রেসের side upper & lower সিট দুটি এই দম্পতির অস্থায়ী সংসারে পরিণত হল। কচিকাঁচাদের শিশুসুলভ আচার আচরণ দেখতে দেখতে কখন যে পাটনা-মুগলসরাই পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। রেলকোচের মৃদু আলোয় কিছুটা ম্যাগাজিন পড়া ও কিছুটা গান শোনায় যাত্রা ক্লান্তি দূর হল। দুপুরের অভুক্ত বাড়ীর তৈরি ফ্রায়েড রাইস ও চিলি চিকেন দিয়ে আমরা আমাদের রাত্রের আহার সাঙ্গ করলাম। আস্বাভাবিক কোনো উপদ্রব ছাড়াই ঘুম ভাঙ্গল আলিগঢ় স্টেশনেনির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট পরে দিল্লী স্টেশনে পৌঁছে পুরানো দিল্লীর নির্ধারিত হোটেলে আমরা উঠলাম। সেখানে সারাদিন বিশ্রাম নিয়ে ট্রেন যাত্রার ক্লান্তি দূর করে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হল রাত ১০-টায়। রানিক্ষেত এক্সপ্রেসে সময়ের স্বল্পতার কারনে সংসার পাতা সম্ভব হল না । সঠিক সময়ে কাকভোরে কাঠগোদাম স্টেশনে পৌঁছে শুরু হল এক অদ্ভুত ভাল লাগা। চতুর্দিকে ছোট ছোট পাহাড় পরিবৃত উত্তরাখন্ডের এই সাজানো গোছানো স্টেশন ও তার মনোরম আবহাওয়া মুগ্ধ করে দেবার মতনসুর্যরশ্মির পৃথিবীতে আগমন ও আমাদের নৈনিতাল যাত্রা তালে তাল মিলিয়ে চলতে লাগল। খোঁপার কাঁটার অনুরূপ বাঁকের রোমাঞ্চ এবং একদিকের গভীর খাদের অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে অবশেষে আমরা নৈনিতাল পৌঁছালাম। হোটেলে চেক-ইন এর সময় দুপুর বারোটা হলেও ম্যানেজারের এর সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতায় সকাল সাড়ে ছ-টায় আমরা রুম পেয়ে গেলাম। একটি রাতের ব্যবধানে আবহাওয়ার আমূল পারিবর্তনে স্বভাবতই মনটা ভরে গেল। ঠাণ্ডায় প্রায় থরহরি কম্পমান হয়ে বেরিয়ে পড়লাম প্রকৃতি দর্শনে। 




শুধুমাত্র একটি লেককে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প যে এইভাবে বিকশিত হতে পারে সেটা নৈনিতাল স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ম্যাল বরাবর হাঁটতে থাকলাম লেককে বাঁদিকে রেখে। রিক্সা ব্যাতিত অন্য যানের অনুমতি নেই ম্যালে । রাস্তার পরিবেশ এতটাই মনোরম যে ১১ নম্বর ছাড়া অন্য যানের কথা মনেই পরবে না। বিনোদনের পসরা সাজিয়ে স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের সারিবদ্ধ দোকান এই ম্যাল জুড়ে আর আছে অলকা ও ক্লাসিকের মত ঝাঁ চকচকে হোটেল। পকেটে রেঁস্ত কম থাকায় এগুলির কথা আর ভাবলাম না। ভ্রমনের বই থেকে বাঙালি হোটেল মৌচাক সহজে খুঁজে পেয়ে গেলাম এবং বেশ তৃপ্তি করেই দুপুরের ভোজন পর্ব সমাপণ হল। লেকের জলে রঙ-বেরঙের পাল 
Nainital
তোলা ইয়াচিং বোটগুলি ইতস্তত ঘোরাফেরা লেকের ধারে বসে উপভোগ করতে লাগলাম। টুকিটাকি ঘর সাজাবার সামগ্রী ক্রয় করে নৈনিতালের বিখ্যাত একটি রেঁস্তোরায় মোমোর স্বাদ উপভোগ করে দিনান্তে হোটেলে ফিরলাম।হোটেলের লেক ভিউ ব্যালকনিতে বসে দেখলাম রাতের নৈনিতাল যেন এক তারকা খচিত ছায়াপথ। পরদিন স্থানীয় ট্যুর সংস্থার বাসে অন্যান্য লেক ভ্রমন পর্ব সারলাম। 
Nainital
সাততাল, ভীমতাল, নউকুচিয়াতাল –তিনটি লেকই নৈনিতালের তুলানায় আকারে বড়লেকগুলির সৌন্দর্য্য খুব খারাপ না হলেও মন পরে রইল নৈনিতালের দিকেই। হোটেলে ফিরে পুনরায় বিনোদনের জগতে সান্ধ্যপর্ব শুরু করলাম। এদিনও মোমোর স্বাদকে সঙ্গী করে হোটলে ফিরে এলাম। 
Baijnath
 পরদিন সাকালে প্রাতঃরাশ সেরে কৌশানির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথে পরল কাঞ্চি বাবার আশ্রম। পাহাড় ও নদীর আনুগত্য ও ভালবাসায় লালিত পালিত এই আশ্রম পথের প্রায় প্রতিটি পর্যটককে হাতছানি দেয়। প্রকিতির শোভা উপভোগ করতে করতে পৌঁছালাম রানিখেত। ভারতের প্রথম পরমবীর চক্র সোমনাথ শর্মার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত সোমনাথ সৈনিক পার্ক দেখলাম। রাস্তার মধ্যে শুরু হওয়া বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে গাড়ি থেকে নামলাম রানিক্ষেতের বিখ্যাত গল্ফকোর্স দেখতে। এক অনন্য সাধারণ উপত্যকা পেরিয়ে যখন কৌশানি পৌঁছালাম তখন প্রায় দুপুর সাড়ে তিনটে। প্রকৃতির মুখ ভার তাই আমাদেরও মন ভার হয়ে গেল। ভারতীয় খাবার আর মিলল না, তাই চীনের খাবার চাউমিনকে উপজীব্য করে আমরা আবার বেরিয়ে পরলাম মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত গান্ধী আশ্রমের উদ্দেশ্যে। মেঘ এবং ধোঁয়াশা সরিয়ে অনতিবিলম্বেই অস্তগামী সূর্যের দেখা মিলল। সাথে সাথেই শুরু হল অবাক হওয়ার পালা । একে একে দৃশ্যমান হতে লাগল ত্রিশুল, নন্দাদেবী, নন্দাঘূণ্টী ,মৃগথূণী, চৌখাম্বা,পঞ্চচূল্লী শৃঙ্গগুলিক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হতে লাগল শৃঙ্গরাজির রূপ। স্থানীয় লোকজন আশ্বস্ত করলো পরদিন সকালে নাকি খুব সুন্দর অবাক করে দেওয়া সকাল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। মনে আশা এবং অঙ্গে দুটি কম্বল জড়িয়ে নিদ্রাদেবীর আহ্বানে সাড়া দিলাম। মোবাইল-এ অ্যালার্ম দেওয়াই ছিল,তাই পূর্ব নির্ধারিত সময় ভোর পাঁচটাতেই ঘুম ভাঙল। হোটেলের ব্যালকনির দরজা খুলতেই ঘুম ঘুম চোখে যেন একটা শিহরণ জেগে উঠল। সামনের শৃঙ্গরাজি তার আলো আঁধারি রূপ নিয়ে সামনে ভীষণ ভাবে প্রকট হল। ধীরে ধীরে পঞ্চচূল্লী শৃঙ্গরাজির পিছন 
Sunrise at Koushani
থেকে সূর্যরশ্মির আবির্ভাব শুরু হল এবং তার প্রথম আলোর প্রতিফলন ঘটল ত্রিশুলের প্রথম খাঁজের উপর। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ধীরে ধীরে অন্যান্য শৃঙ্গগুলিও ত্রিশুলের কাছে আলোক রশ্মির অংশ কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে লাগলএই দৃশ্য দেখে আমরা যখন প্রায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় ততক্ষণে স্থানীয় জনগণের দৈনন্দিন কাজকর্ম প্রায় অর্ধসমাপ্ত প্রকৃতির এই অসাধারণ রূপ তাদের কাছে যেন শিশুসুলভ আচরণ মাত্র। প্রকৃতির এই রূপ ও রস আকণ্ঠ পান করে একে একে স্নানের জন্য প্রস্তুতি নিলাম কারণ – আমাদের পরবর্তী গন্তব্য বৈজনাথ মন্দির। পূর্বনির্ধারিত সময়মত সকাল ৯ টায় গাড়ি হাজির। রওনা দিলাম বৈজনাথের উদ্দেশ্যপথে পরল এক অসাধারণ সুন্দর চা বাগান—ক্ষণিকের বিরতি –ফটোশুট এবং আবার রওনা।
Baijnath
গোমতীর তীরে এক ছোট্ট জনপদ বৈজনাথ। বরফের শৃঙ্গরাজী এখান থেকেও সুন্দর দৃশ্যমান। বৈজনাথের মন্দিরগুলির আকার আয়তন খুব বড়ো না হলেও দৃশ্যমানতায় অনেক নামী মন্দিরকেও হার মানিয়ে দিতে পারে। মন্দির দর্শন সাঙ্গ করে হোটেলে ফেরা এবং লাঞ্চ সেরে দুপুরের বিশ্রাম। দুপুরের পর থেকে আকাশের মুখ ভার, সুতরাং সূর্যাস্তের স্বাদ এদিন আর নেওয়া গেল নাবিকালবেলাটা হোটেলের চারিদিকে ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে দিলাম। খিচুড়ি ও ডিম ভাজা সহযোগে ডিনার সেরে আমরা ঘুমোতে গেলাম। পরদিন সকালে সূর্যোদয় দেখার আশা নিয়ে যথারীতি কাকভোরে ঘুম থেকে উঠলাম, কিন্তু নিরাশই হতে হল। অবশ্য সেই অর্থে নিরাশ বলব না কারণ আমরা ততোক্ষণে কাঁচ এবং কাঞ্চনের পার্থক্য উপলব্ধি করেছি। আগেরদিনের সূর্যোদয় যদি কাঞ্চন হয় আজকের টা অবশ্যই কাঁচ। যাই হোক আলো আঁধারি মেঘে ঢাকা সূর্যোদয় পর্ব শেষ করে প্রাতঃরাশ সারলাম। সময়ের স্বল্পতায় ও বাড়ির টানে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমাদের ভ্রমণ পর্বের উপসংহার টানলাম। আমাদের ফিরতি যাত্রাপথ নৈনিতালকে ছুঁয়েই। এক অসাধারণ সুন্দর রোমান্টিক হানিমুনের স্মৃতি নিয়ে এবং পুনরায় আসার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।   

আমতলী উপজেলা

সোনারচর-আশারচরঃ আমতলী উপজেলা সর্বদক্ষিণের এলাকা সোনারচর টেংড়াগিরী মৌজায় অবস্থিত। এলাকাটি বনজ সম্পদে পূর্ণ। সমুদ্রতীরের এ এলাকা বিভিন্ন নদী/খাল দ্বারা বিভাজিত। স্থানীয়ভাবে এ বন ফাতরার জংগল নামে পরিচিত। সমুদ্রতীরবর্তী হরিণঘাটা মোহনায় এর অবস্থান। এ বন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি। বন ও সমুদ্রের অপুর্ব সম্মিল ঘটেছে এখানে। বগীর ফকির হাট থেকে ট্রলারে যেতে হয় সোনারচরে। বনবিভাগ সৃজিত এ বনে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বৃক্ষ রয়েছে। বানর, বনমোরগ, শিয়াল, বেজি. চিতাবাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর এবং পাখির অভয় আশ্রম এ সোনারচরে। শীতকাল আর বসন্তের পাতাঝরা মৌসুমে সোনারচর এক অনাবিল সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এর যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ার কারণে এলাকাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। বেশ কয়েক ঘর মৌসুমী জেলের বসতি এখানে। সমুদ্র থেকে মৎস্য আহর ও শুটকি উৎপাদন এদরে কাজ। সোনারচরে সুর্যাস্তের সোনালী আভা বনের বৃক্ষরাজিতে সোনালী বিচ্ছুরণ ঘটায়। এ সৌন্দর্যের তুলনা নেই। এ সৌন্দর্য যারা একবার উপভোগ করেছেন, তারা শত বাঁধা উপেক্ষা করে সেখানে যাবেন বারেবারে। ফাতরার জঙ্গলখ্যাত সোনারচর আর আশারচরের মোহনীয় হাতছানি ভ্রমণ পিপাসুদের পক্ষে উপেক্ষা করা কঠিন। আশা করা যায় আমতলী-তালতলী-সোনারচর (পর্যটন কেন্দ্র) সড়কটির চলমান নির্মাণ কাজ শেষ হলে আশারচর নতুন আশা জাগাবে আমতলীর বুকে আর সোনারচর বয়ে আনবে সোনালী সমৃদ্ধি।
গাজী কালুর দরগাহঃ গাজী কালু এক কিংবদন্তী। যখন এসব অঞ্চল গভীর অরণ্যতে পূর্ণ ছিল সেই দূর অতীত থেকে প্রচলিত এই কাহিনী। জানা যায়, গাজী এবং কালু শাহ নামক দুই সাধক পীর তাদের সাধনার দ্বারা বন-জংগলের সমস্ত হিংস্র পশু পাখির উপর কর্তৃত্ব লাভ করেন। তাদের কথা বা নির্দেশ ছাড়া হিংস্র পশুকুল কাউকে আক্রমণ করত না। এ বিষয়টি সু্‌দরবনের মধু, মোম আহরণকারী, বাওয়ালী ও জেলেরা জানত। তাই তারা বনে নামার আগে গাজী কালু পীরের দরগায় মানত করতে যেন তারা হিংস্র জন্তু আক্রমন থেকে নিরাপদ াকতে পারে। আমতলী উপজেলা হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন টেপুরা মৌজায় এই গাজী কালুর দরগা অবস্তিত, স্থানীয় ভাবে জানা যায় গাজী ও কালু পরস্পর দুই ভাই মতান্তরে মামা ভাগিনা ছিলেন। তাঁরা ছিলেন জাগ্রত পীর। মাঝে মাঝেই তারা এই টেপুরার দরগায় সাধনের জন্য বসতেন। এখানে তাদের দরগাহ বাড়িতে দুজনের ধ্যানের জন্য দুটি আসন রয়েছে। কাছাকাছি রয়েছে একটি পাকা ইন্দিরা, সামান্য দূরে রয়েছে তাদের শিষ্য বা বারো আউলিয়ার বসার স্থান। এলাকাটি দুর্গম, যথাযথ ভাবে সংরক্ষিতও নয়। কিন্তু প্রতিদিন বিপুল সংখাক পুন্যার্থী আগমন করেন এই মাজারে। প্রতি বছর ২৯ মাঘ ও ২৯ ফাল্গুন এখানে ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। এখন আর সেই ঘন বন নেই, নেই এখানে সেই হিংস্র পশুও, কিন্তু রয়ে গেছে গাজী কালুর দরগাহ আর তাঁদের সেই কীংবদন্তী। এখনো সুন্দর বনের কাঠ-মধু-মৎস্য আহরণকারীরা পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে গাজী কালুর নাম।
চাওড়া মাটির দুর্গঃ আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামে একটি সু-উচ্চ মাটির ঢিবি দেখা যায়। মনে করা হয় এটি একটি মাটির দুর্গ। মোগল যুগে মগ পর্তুগীজ জনদস্যুদের দমনের জন্যে শাহ সুজা, শায়েস্তা খা, আগাবাকের খা ও পরবর্তী সুবেদারগণ বৃহত্তর বরিশাল এলাকায় বহু মাটির দূর্ঘ নির্মাণ করেছিলেন, এটি তারই একটি। চন্দ্রদ্বীপের রাজা কন্দর্পনারায়ণ, রামচন্দ্র ও কীর্তিনারায়ণ, গুঠিয়া, রায়পুরা, জাগুয়া, কাগাগুরা, নথুল্লাবাদ, হলুদপুর, রহমতপুর, কাশীপুর, রাজাপুর প্রভৃতি স্থানে দূর্ঘ নির্মাণ করেছিলেন। রেনেলের ১৭৬৪-১৭৭২ খ্রিস্টাব্দের মানচিত্রে রামনাবাদ নদীর তীতে রাজা কন্দর্পনারায়ণ নির্মিত দুটি দূর্ঘ দেখা যায়। বর্তমানে দূর্ঘ দুটির কোন চিহ্ন নেই। আগুনমুখা নদীতে প্রায় ১০০ বছর আগে দূর্ঘ দুটি বিলীন হয়ে যায়। চাওড়া মাটির দূর্ঘটি আমতলীর চাওড়া নদীকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছিল। চাওড়া নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কি.মি. এখন আর নদীর সেই উন্মত্ত প্রবাহ নেই তাই শুধু কালের সাক্ষী হয়ে দূর্ঘটি ঢিবি আকারে আজও টিকে আছে।
ফকিরখালী গ্রামের দীঘি ও মাটির টিলাঃ সুলতানী আমলে বরিশালে মুসলমানদের আগমন ঘটে। মোঘল জাহাঙ্গীরের সময়ে পটুয়াখালীতে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময়ে আরব, ইরান, ইরাক ও দিল্লী থেকে অনেক পীর আউলিয়া ও অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। তারা দীর্ঘ খনন করে মসজিদ ও হানকা শরীফ নির্মাণের জন্য জায়গা উচু করতেন। ফকিরখালী গ্রামে তেমন একটি দীঘি ও উচ্চ মাটির টিলা দেখা যায়। ধারণা করা হয়, এখানে কোন পীর অথবা ফকিরের আস্তানা ছিল। গ্রামের নামের সাথে উক্ত ফকির শব্দটি জড়িয়ে থাকায় এ ধারণা যুক্তিসঙ্গত বলে অনেকে মনে করেন।
তালতলীর বৌদ্ধ মূর্তিঃ আমতলী উপজেলার তালতলী রাখাইন প্রধান এলাকা। এখানে একাধিক রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি মন্দির ছিল তাঁতীপাড়ায়। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, সাধীনতার পর তাঁতীপাড়ার রাখাইন সমপ্রদায়ের লোকজন হ্রাস পেতে থাকলে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার জনৈক থঞ্চানন মাষ্টার সেই তাঁতীপাড়ার মন্দির থেকে অষ্টধাতুর তৈরী আশি মণ ওজনের বুদ্ধ মূর্তিটি চট্টগ্রাম হয়ে বার্মায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে সামপানে তুলে রওয়ানা দেয়। তখন বড়বগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অংকুজান তালুকদার, চানজোয়া তালুকদার, মংখেলা, আমজাদ মৃধা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ স্থানীয় লোকজন নিয়ে মূর্তিসহ নৌকাটি আটক করেন। এ সময় রাখাইন নেতৃবৃন্দ মূর্তিটি পার্শ্ববর্তী তালতলী জয়ারামা বৌদ্ধ মন্দিরে (তালতলী বৌদ্ধ বিহার) প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে মূর্তিটি তালতলী মন্দিরে রয়েছে। ধর্মপ্রাণ রাখাইন সমপ্রদায়ের লোকজন পরম শ্রদ্ধায় অষ্টধাতু নির্মিত এ মূর্তিতে তাদের পূজা দিয়ে থাকেন। জানা যায়, মূর্তিটি ১৯১৬ সালে নলবুনিয়া আগাপাড়াতে তৈরী হয়। আশিমণ ওজনের এ মূর্তির সমপূর্ণ অংশ খাঁটি সোনার প্রলেপে ঢাকা। তালতলীতে আগত পর্যটকদের জন্য এই বুদ্ধ মূর্তি অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
পায়রা নদীর পাড়ঃ আমতলী উপজেলার বড়বগী, পচাঁকোড়ালিয়া, আপড়পাংগাশিয়া, আমতলী ইউনিয়ন, আমতলী পৌরসভা, চাওড়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের কোল ঘেষে পায়রা নদী প্রবাহিত। এ নদীর আমতলী পৌর এলাকার দেড় কিলোমিটারে রয়েছে কংক্রিটের ব্লক। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে গ্রীস্ম ও শীত মৌসুমে এ নদীর পাড়ে ভ্রমন পিপাশুদের কোলাহল দেখা যায় ও বিভিন্ন স্থান থেকে পিকনিক করে থাকে। এ রকম স্থান এ বিভাগে বিরল।
যোগাযোগ-
কোন পথে যাবেন এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলো দেখতেঃ
বাস- ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল ৭ থেকে ১০ টা এবং রাত ৮ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বাস ছাড়ে আমতলীর উদ্দেশ্যে।
লঞ্চ- ঢাকা থেকে প্রতিদিন বিকাল ৫-৬ টা থেকে সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে আমতলীর উদ্দেশ্যে। এছাড়া মোটর সাইকেল, স্টিমার ভাড়া করে নিয়ে আসা যায় link

এক ঝলকে কেরালা


কেরালা, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত একটি অঙ্গরাজ্য যা 14টি জিলা বা প্রশাসনিক বিভাগ নিয়ে গঠিত। এই রাজ্যের প্রধান শহরগুলি হল থিরুবনন্তপুরম, কোচি এবং কোজিকোড। এই রাজ্যে মোট তিনটি বিমানবন্দর রয়েছে যা রাজ্যটিকে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্তরে সংযুক্ত করেছে।

নিচে কেরালা সম্পর্কে কিছু চট্-জলদি তথ্য দেওয়া হল যা এই রাজ্যে ভ্রমণে ইচ্ছুক পর্যটকদের বিশেষ সাহায্য করবে।


i.  অবস্থান : ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত
ii. আয়তন : 38,863 বর্গ কিমি
iii. জনসংখ্যা : 31,84,1374
iv. রাজধানী : থিরুবনন্তপুরম (ত্রিবান্দ্রম)
v. ভাষা : মালয়ালাম। ইংরেজি ভাষারও ব্যাপক প্রচলন আছে।
vi. ধর্ম: হিন্দু ধর্ম, খ্রীষ্টধর্ম, ইসলাম
vii.  সময় : GMT+5:30
viii. মুদ্রা : ভারতীয় টাকা
ix. জলবায়ু : গ্রীষ্মপ্রধান
x.  গ্রীষ্মকাল : ফেব্রুয়ারি-মে (24-33oC)
xi. বর্ষাকাল : জুন-আগস্ট (22-28oC), অক্টোবর – নভেম্বর
xii. শীতকাল : নভেম্বর – জানুয়ারি (22-32oC)

xiii. জিলাগুলির              পুরাতন নাম
xiv. কাসারাগোড়
xv.  কান্নুর :                  কান্নানোর
xvi. ওয়েআনাড়
xvii. কোজিকোড :            কালিকট
xviii. মাল্লাপ্পুরম
xix. পালাক্কাড় :                পালঘাট
xx. ত্রিসূর :                     ত্রিচূড়
xxi. এর্নাকুলাম
xxii. ইদুক্কি
xxiii. কোট্টায়াম
xxiv. আলাপ্পাৎজা :          আলেপ্পি
xxv. পাঠানামথিট্টা
xxvi. কোল্লাম :                 কুইলোন
xxvii. থিরুবনন্তপুরম :         ত্রিবান্দ্রম


প্রধান শহরগুলি :      পুরাতন নাম
থিরুবনন্তপুরম : ত্রিবান্দ্রম
কোচি : কোচিন
কোজিকোড : কালিকট 


অভিগম্যতা     
     
থিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
দূরভাষ : + 91 471 2501424

  • ঘরোয়া উড়ান (সরাসরি): থেকে/প্রতি : দিল্লী, মুম্বই, বাঙ্গালোর, চেন্নাই
  • আন্তর্জাতিক উড়ান (সরাসরি): থেকে/প্রতি : কলম্বো, মালদ্বীপ, দুবাই, শারজা, বাহরিন, দোহা, রাস-আল-খাইমাহ, কুয়েত, রিয়াধ, ফুজাইরাহ, সিঙ্গাপুর

কোচিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (CIAL), নেদামবেসারে
দূরভাষ : +91 484 2610113

  • ঘরোয়া উড়ান (সরাসরি): থেকে/প্রতি: মুম্বই, চেন্নাই, গোয়া, আগাথি, বাঙ্গালোর
  • আন্তর্জাতিক উড়ান (সরাসরি): থেকে/প্রতি: শারজা, দুবাই, আবু ধাবি, ধাহরান, বাহরিন, রিয়াধ, মাস্কাট

কালিকট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কারিপুর 
দূরভাষ : + 91 483 2710100

  • ঘরোয়া উড়ান (সরাসরি): থেকে/প্রতি: মুম্বই, চেন্নাই, কোয়েম্বাটোর
  • আন্তর্জাতিক উড়ান (সরাসরি): থেকে/প্রতি : শারজা, বাহরিন, দুবাই, দোহা, রাস-আল-খাইমাহ, কুয়েত, রিয়াধ, ফুজারিয়াহ

পুলিশ সহায়তা নম্বর

  • রাজমার্গগুলি দিয়ে ভ্রমণের সময় +91 98461 00100
  • ট্রেনে চড়ে ভ্রমণের সময় +91 98462 00100