September 2, 2013 by Leave a Comment
ঘোরাঘুরির নেশাটা আমার ছোট্টবেলা থেকেই প্রবল।
স্কুল ছুটি হলেই বাবা মাকে পটিয়ে ঢাকা থেকে বের করার গুরুদায়িত্বটা আমারই
ছিল। কলেজে ওঠার পর পড়াশোনার সাথে সাথে ঘোরাঘুরিটা বেড়েছে বৈ কমেনি।
কিন্তু সেই অর্থে বড়সড় একটা কোন ট্রিপ দেয়া হয় নি। তাই সামনে পরীক্ষা
থাকা সত্ত্বেও বাবা মাকে পটাতে লাগলাম রোজার ঈদের ছুটিতে কোথাও ঘুরতে নিয়ে
যাওয়ার জন্য এবং আমার “বেশি জোস” বাবা মা দিব্যি রাজিও হয়ে গেল 
যাওয়ার সময়
বারবার শুধু মনে হচ্ছিল – “কত আর সুন্দর হবে”। কিন্তু সীমান্তের কাছাকাছি
পৌঁছতেই আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলাম যে কত সুন্দর হতে পারে। সিলেটের
তামাবিল বর্ডার থেকে শিলং ২/৩ ঘন্টার পথ। গাড়িতে যেতে যেতে এপাশ থেকেই
ওপারের পাহাড় আর সেই সাথে পাহাডি জলপ্রপাতগুলো চোখে পড়তে লাগল। বেশ কিছু
দূরে হলেও সেগুলো বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। ওহ! বলতে তো ভুলেই গিয়েছিলাম,
মেঘালয় জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত। ৫ মিনিট পরপরই ছোট, মাঝারি, বড় ইত্যাদি
নানা আকার আকৃতির ঝর্ণা চোখে পড়তে থাকে। তো বর্ডার পার হয়ে ওপাশ থেকে
গাড়ি ভাড়া করে রওনা হলাম।
পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে কিছুদূর যেতেই চোখে
পড়ল সেই বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ যেটি জাফলং থেকে দেখা যায়। দুই পাশে পাহাড়
আর ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে চলছে পাহাড়ি নদী। আর রাস্তার পাশের পাহাড়
থেকে ছোট ছোট ঝর্ণা পড়ছে। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। গাড়ি যত উপরে উঠতে লাগল
আস্তে আস্তে কুয়াশাও বাড়তে লাগল। শেষমেশ এমন দশা যে রাস্তাই ঠিকমত দেখা
যায় না। কে বলবে, এটা আগস্ট মাস!একটু একটু ভয় লাগলেও মজাই লাগছিল ভাবতে
যে আমরা মেঘের উপরে আছি! ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আর থতমত খেয়ে যাওয়ার মত
সুন্দর প্রকৃতি দেখতে দেখতে শিলং পৌছে গেলাম।
পরবর্তী ৪/৫ দিন মহানন্দে শিলং, চেরাপুঞ্জি, ডাওকি ঘুরলাম। ভয়ঙ্কর
সুন্দর জলপ্রপাত, পাহাড়ী রাস্তা আরও কত কি! কিন্তু যত সুন্দর জলপ্রপাত ততই
আজগুবি সেগুলোর নাম। আমার তো মনে হচ্ছিল, খাসি ভাষা = চাইনিজ ভাষা +
জাপানিজ ভাষা!! ওয়াকাবা ফলস, সেভেন সিস্টার ফলস, এলিফেন্ট ফলস, বড়পানি
লেক, সুইট ফলস, ইকো পার্ক, মাওস্মাই কেভ, লিভিং রুট ব্রিজ, ব্যালেন্সিং রক,
ক্যাথড্রাল, ক্যাথলিক চার্চ, ডন বস্কো মিউজিয়াম ইত্যাদি মেঘালয়ের অন্যতম
টুরিস্ট স্পট। এছাড়াও আরো কত যে নাম না জানা (আসলে নামগুলো
উচ্চারণঅযোগ্য) ফলস রয়েছে!!তবে আমার মন বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল যখন শুনলাম বর্তমানে নিরাপত্তার কারণে প্রসিদ্ধ বিডন এবং বিশপ ফলস পর্যটকদের জন্য নিশিদ্ধ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল যে চেরাপুঞ্জি প্রসিদ্ধ সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের জন্য, আমরা যেদিন গেলাম সেদিন ঝকঝকে রোদ আর চমৎকার আবহাওয়া !! ফলস ছাড়াও কিছু মজার মজার টুরিস্ট স্পটও আছে মেঘালয়ে। যেমন - মাওস্মাই কেভ একটি প্রাকৃতিক পাহাড়ি গুহা যার একপাশ দিয়ে ঢুকে আর একদিক দিয়ে বের হওয়া যায়, বলা হয় যে সে গুহার একটা রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশে বের হওয়া যায়! কিন্তু রাস্তাটা এখন বন্ধ। অবশ্য এটি অসম্ভব কিছু না, পাহাড়টি সীমান্তের পাশেই অবস্থিত।
লিভিং রুট ব্রিজটি একটি স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদীর উপর গাছের জীবন্ত শিকড় দিয়ে তৈরী, খুব সম্ভবত প্রাকৃতিকভাবের শিকড় বেড়ে ব্রিজটির সৃষ্টি হয়। ব্যালেন্সিং রক একটি বিশালাকৃতির পাথর যা একটি খুব ছোট্ট পাথরের উপর মাটির সাথে সমান্তরালে অবস্থিত। এটি নড়েও না চড়েও না…মাটির স্পর্শ ছাড়াই বেশ ভালো ভারসাম্য রক্ষা করে আছে। এই মেঘালয়েই এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিন্নং অবস্থিত। তবে সবচেয়ে ভালো লাগছিল যখনই পাহাড়গুলো থেকে বাংলাদেশের অপূর্ব ভূমি দেখতে পাচ্ছিলাম

মেঘালয়ে ঘোরাঘুরির জন্য জায়গার অভাব নেই এবং মেঘালয় রাজ্য সরকার পর্যটকদের সুবিধার জন্য নানা সুব্যবস্থা করেছে। হোটেল, যাতায়ত প্রভৃতি বেশ সহজলভ্য। তাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যেমন সহজ তেমনি সস্তাও। খুব কম খরচে বেশ আরামে মেঘালয় ঘুরে আসা যায়। সিলেট থেকে গাড়ি ভাড়া করে তামাবিল বর্ডার পর্যন্ত গিয়ে বর্ডার পার হয়ে ওপার থেকে ট্যাক্সি বা জিপ ভাড়া করে শিলং যাওয়া যায়। তামাবিলে ভালো বাস সার্ভিস বা অন্য ব্যবস্থা না থাকায় গাড়িতে যাওয়াই নিরাপদ। বর্ডারের ওপার থেকে শিলঙে যেতে ২০০০ রুপি খরচ হয়।
শিলঙে ভালো মানের হোটেলের ভাড়া ১৫০০-২০০০ রুপি/দিন। আর পুলিশ বাজারে অবস্থিত মেঘালয় টুরিজ্যমের অফিস থেকেই পর্যটনের জন্য বিশেষ গাড়ি ভাড়া নেয়া যায়। এছাড়া প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসগুলো থেকেও গাড়ি ভাড়া করা যায়। শিলং থেকে চেরাপুঞ্জি যাওয়া-আসা এবং সব জায়গা ঘুরতে ২০০০ রুপি এবং শিলং শহর ও তার সাথে বড়পানি লেক, সুইট ফলসে যেতে ১৫০০ রুপি খরচ পড়ে। শিলং থেকে ফেরত আসার পথে ডাওকির ফলস, লিভিং রুট ব্রিজ, ব্যালেন্সিং রক, ক্লিন ভিলেজ ইত্যাদি দেখে আসা যায়, তাতে ২৫০০ রুপির মত খরচ হয়। সব মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলো ৪০০০ রুপির মধ্যেই আরামে ঘুরে আসা যায়। তবে পেট্রোলের দামের ওপর নির্ভর করে ১০০/২০০ রুপি এদিক ওদিক হতে পারে। পর্যটনের জন্য বাসের ব্যবস্থাও আছে তাতে খরচ কম পড়ে।
এভাবে মেঘালয় খুব সহজেই ঘুরে আসা যায়। খুব বেশি সময়েরও প্রয়োজন হয় না, ১ সপ্তাহের মধ্যেই সব ঘুরে নেয়া যায়। আউটডোর এক্টিভিটিস, যেমন – রাফটিং, মাউন্টেইন ক্লাইম্বিং এসবের জন্য শীতকালে মেঘালয় যাওয়া সুবিধার হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জলপ্রপাতগুলোকে দেখার জন্য বর্ষাকালই সবচেয়ে ভালো সময়। মেঘালয় সত্যিই অতুলনীয়

Khub e valo laglo meghaloy somporke pore. August/september gele better?
উত্তরমুছুনthank for your comments!!! Best time to go shilong from March to June!!
উত্তরমুছুন