ভারতবর্ষের নানা জায়গা ঘুরেও মন জুড়োয় না । যতক্ষণ
না হিমালয় বা কেরল যাই । কেরালা দিল্লী থেকে অনেকটা দূর তাই বড় একটা যাওয়া
হয়ে ওঠে না । এই মালাবার উপকূলবর্তী রাজ্যটি সব দক্ষিণের শহর থেকে পৃথক ।
তার সংস্কৃতি, পূজোপার্বণ অনেকটা পূর্ব ভারতের মতন ।
ঐতিহাসিকরা বলেন অনেক অনেক বছর আগে পূর্ব ভারতের সাথে জলপথে বিশাল
ব্যবসা ছিল মালাবার আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে । অনেকে ওখানে পৌঁছেছিলেন
স্থায়ীভাবে । তাই ওখানকার সংস্কৃতির সাথে বঙ্গ-কলিঙ্গের অনেক মিল । সেবার
হঠাত সুযোগ হল ব্যাঙ্গালোর থেকে এক বিয়েবাড়িতে দিন চারেকের ছুটি নিয়ে চলে
গেলাম । শুধু দুটো জায়গায় আগে কখনো যাইনি…মুন্নার ও কুমারাকম, সেবার যাওয়া
হয়েছিল ।
এই যাত্রা কিন্তু শুধুমাত্র সাইট সি-ইং ছিল না । ছোট ভাই আর তার
পরিবারের সাথে দিন কয়েক হোটেলে দিনযাপন, আড্ডা আর সাথে কিছু ঘুরে বেড়ানো ।
তাই ট্যুর অপারেটর কে বলা ছিল কুমারাকমে কোনো লেক রেসর্ট বা স্টার হোটেল
চাইনা, ট্যুরিস্টদের হল্লাগুল্লা থেকে দূরে কোনো নিরিবিলি জায়গায় যেন বুকিং
হয় । মুন্নারেও ডাউনটাউন থেকে একটু দূরে কোনো নির্জন পরিবেশে ভালো ছিমছাম
হোটেলে উঠেছিলাম আমরা । মেক-মাই-ট্রিপ সুন্দর ব্যবস্থা করেছিল । কোচিন
এয়ারপোর্টে টাটা টুয়েলভ সিটারের ভ্যান ট্যাক্সিতে চড়ে বসলাম আমরা সাতজনে
মিলে ।
প্রথমে কেরালার বিখ্যাত শৈল শহর মুন্নারে পা দিলাম । চা বাগান নিয়ে
মুন্নার ৪৫০০ থেকে ৮০০০ ফুট অবধি ব্যাপ্ত । এখানে সারা বছর হালকা পশমের
পোষাক লাগে যা কেরালার আর কোথাও লাগেনা । অতি সুন্দর জলবায়ু । তাই মুন্নারে
গেলে একটা মাফলার আর হালকা সোয়েটার নেওয়া খুব জরুরী । ছোট্ট শহর । অনেক
ছোট ছোট হোটেল আছে । আমরা শহর থেকে অনেক দূরে নিরিবিলিতে ছিলাম । কোচিন
এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ১১০ কিমি দূরে এই মুন্নার । সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে
৩-৪ ঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় ।
নারকেল, কলা আর রাবার প্ল্যান্টেশান দিয়ে চমত্কার দৃষ্টিনন্দন রাস্তা ।
গাড়ি থামিয়ে চা খেয়ে তারপর জলের কাছাকাছি হেঁটে গিয়ে জলকে পেছনে রেখে ছবি তোলা যায় । ভিজে সারা হওয়া কিন্তু মন ভালো করে ফিরে আসা গাড়িতে ।
শহর থেকে ১০ কিমি দূরে এক সুন্দর হোটেলে থাকার ব্যবস্থা ছিল একরাশ সবুজের মাঝে । ছোট ছোট কটেজ আছে সবুজ লনের মাঝে । হানিমুনাররা সেখানে গিয়ে ওঠেন ।
সকালে হোটেলের প্রাতরাশ খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারটি বেশ ভদ্র ও মিশুকে । দেখার জিনিস বিশেষ কিছুই নেই । ট্যুরিস্ট স্পট আছে কয়েকটা কিন্তু ঠান্ডা হাওয়া, মেঘে ঢাকা আকাশ আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি সব কিছু ভুলিয়ে দেয় । বড্ড ভাল লাগে তখন । চা বাগান আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা…বড্ড ভালো লাগে সেই পথচলা ।
শহরের মধ্যে দিয়ে গিয়ে মাট্টুপেট্টি ড্যাম আর বিশাল জলাশয় দেখতে
.
এরপর মুন্নার শহরে প্রবেশ করে দুপুরের খাওয়া । খুব সুন্দর । ভাত, নানা রকম মাছ ভাজা, ডাল, মালাবর মাংসের কারি ইত্যাদি । শেষে এরাভিকুলাম ন্যাশানাল পার্ক। অনেক উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয় । সেখানে শুধু বনবিভাগের গাড়ি যায় । টিকিট কেটে বাসে করে আমরা গেলাম ওপরে । বেশ ঠান্ডা । সুন্দর পাহাড়ী রাস্তা আর সবুজের মাঝে বিরল প্রজাতির পাহাড়ি ছাগল, থার চরে বেড়ায় কিন্তু অঅমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা একে দেখতে পাইনি । তারপর ন্যাশানাল পার্কের রাস্তা ।
এক নাম না জানা নীল পাখি আমাদের ওয়েলকাম করল ।
দ্বিতীয়দিনের মত যাত্রা শেষ হল । দিনের শেষে হোটেলে ফিরে এসে ডিনার খাওয়া, আড্ডা দেওয়া, টিভি দেখা আর ঘুমের দেশে পাড়ি দেওয়া । তৃতীয়দিনে সকালে বেরুনো হল কুমারোকমের পথে ।

সুন্দর এক গ্রাম্য পরিবেশে । হোটেল নিয়ে বলার কিছুই নেই । এত পরিষ্কার আর পরিচ্ছন্ন যে তাতেই মন ভরে যায় । আমরা এটাই চেয়েছিলাম ট্যুর অপারেটরের কাছ থেকে । মিষ্টার এন্ড মিসেস কুরিয়ানের পরিচালনায় ” দ্যা ব্যাক ওয়াটার রিট্রিট থিম হাউস” । রিটায়ার করে এঁরা এই হোটেল বানিয়েছেন । অনবদ্য আতিথেয়তা । ছোট্ট হোটেলখানি । দোতলায় চারটে ঘর, টানা বারান্দা আর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট এক চিলতে নদী । ঘন গাছপালার মধ্যে । নদী দিয়ে ছোট্ট নৌকা থেকে মাঝে মাঝেই মাঝির হাঁক কানে আসে । ” মাছ চাই, ফুল চাই ইত্যাদি কত প্রাকৃতিক সম্পদ আর তার সদ্ব্যাবহার এখানে । জলের লেভেলে থাকলে মোটর বোট এসে নিয়ে যায় যেখানে যাবার ইচ্ছে সেখানে । এই নদীর ধারে বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরা যায়… সে ব্যবস্থাও আছে সেখানে । আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কোট্টায়ম থেকে মোটরবোটে করে ব্যাক ওয়াটার, সরু ক্যানাল দিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর ভেমবানাদ লেকে একটু ঘুরে নেওয়া । কুমারোকম এর প্রধান হোটেল বা রেসর্ট এরিয়া যাবার প্ল্যান ছিলনা । সব লোকেরাই লেকের কাছেই থাকে। হোটেল যাবার গ্রাম্য রাস্তা আর পিছনের ছোট নদী ।
মোটরবোটে করে ঘোরা । সকাল সকাল জলখাবার খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম । কোট্টায়ম শহরের ব্যাক ওয়াটার জেটি থেকে মোটর বোট নিয়ে যাত্রা শুরু । দৃশ্য শুধু উপভোগ করার আর ছবি তোলার । কোনো এক বাড়ির ঘাটে কাপড় কাচতে ব্যস্ত কেরালর মেয়ে ।

ক্যানাল থেকে বালি তোলার সে কি তোড়জোড় । এবার ক্যানাল ছেড়ে ব্যাক ওয়াটারে এসে পড়লাম ।
নানারকম পাখির ভীড় । কোথাও আবার জলের মধ্যে ডানা ছড়িয়ে রোদ খাওয়াচ্ছে কোনো অচিন জল পাখি । বেগনী রঙয়ের মূরহেন দেখতে পেলাম ।
লাইন করে কর্মোরেন্টরা বিশ্রাম নিচ্ছে । অজস্র গোলাপী লিলি ফুটে আছে ব্যাক ওয়াটারে । দাঁড় বেয়ে দুই মাঝি আর এক কুকুর চলেছে নৌকা করে ।
এই হল বিখ্যাত “আর ব্লক”, ২-৩ ঘন্টা ঘুরে এখানে নামলাম । এটাই একমাত্র
খাবার জায়গা এই ব্যাক ওয়াটারে । কলাপাতায় করে কেরালার লাল চালের ভাত, ডাল,
মাছ মৌলি আর কারিমিন ভাজা । কারিমিন হল মিষ্টি জলের মাছ । কিছুটা চাঁদা
মাছের মতন দেখতে ।
এই আর ব্লকে দেখা যাবে অনেক হাউসবোট পার্ক করা আছে । যারা হাউসবোট ভাড়া
করেন তাঁরা আসেন কুমারোকম জেটি থেকে । দিন হিসেবে ভাড়া পাওয়া যায় কাশ্মীরের
মত । তবে কেরালা হাউসবোট কাশ্মীরের মত স্থানু নয় । সর্বদা চলমান । ছোট
নৌকা করে ক্যানাল ধরে বাড়ির উঠোন, ঘাটের পাশ দিয়ে জেতে বেশ লাগে । দেখলাম
একটি দোতলা হাউসবোটে বিরাট একটি গ্রুপ চলেছে হৈ হৈ করে ।
ব্যাক ওয়াটার ছেড়ে এবার পড়লাম সেই বিশাল ভেমবানাড লেকে । কিছু দূরে আছে
কুমারাকোম এর রেসর্ট অঞ্চল, জেটি আর ছোট্ট শহর । লেকে কিছু দেখার নেই, এত
বড় যে কূল কিনার দেখা যায় না । এই লেক পেরিয়ে আবার ব্যাক ওয়াটার ধরে চলে
যাওয়া যায় আলেপ্পি শহরে । হাউসবোট নিয়ে যাওয়া যায়, আর আছে ফেরির ব্যাবস্থা ।
এবার ফেরার পালা । অন্য পথ দিয়ে, ঘন জনবসতির মধ্য দিয়ে নৌকা ফিরে এল
কোট্টায়াম জেটিতে । ক্যানালের ওপরে ফুট ব্রিজ, বড় নৌকা আসলে ঠিক রেলের
লেবেল ক্রসিংয়ের মত ব্রিজ উঁচু করা হয় নৌকা যাবার জন্য।
এবার সবুজ ব্যাক ওয়াটারের দেশ মালাবারী স্বপ্ন শহর কেরালার যাত্রা হল শেষ । সন্ধ্যেবেলায় হোটেলে ফেরার পালা । তারপর দিন কোচিন হয়ে দিল্লী । সে যাত্রায় কোচিন আমাদের শেডিউলে ছিলনা ।
গাড়ি থামিয়ে চা খেয়ে তারপর জলের কাছাকাছি হেঁটে গিয়ে জলকে পেছনে রেখে ছবি তোলা যায় । ভিজে সারা হওয়া কিন্তু মন ভালো করে ফিরে আসা গাড়িতে ।
শহর থেকে ১০ কিমি দূরে এক সুন্দর হোটেলে থাকার ব্যবস্থা ছিল একরাশ সবুজের মাঝে । ছোট ছোট কটেজ আছে সবুজ লনের মাঝে । হানিমুনাররা সেখানে গিয়ে ওঠেন ।
সকালে হোটেলের প্রাতরাশ খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারটি বেশ ভদ্র ও মিশুকে । দেখার জিনিস বিশেষ কিছুই নেই । ট্যুরিস্ট স্পট আছে কয়েকটা কিন্তু ঠান্ডা হাওয়া, মেঘে ঢাকা আকাশ আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি সব কিছু ভুলিয়ে দেয় । বড্ড ভাল লাগে তখন । চা বাগান আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা…বড্ড ভালো লাগে সেই পথচলা ।
শহরের মধ্যে দিয়ে গিয়ে মাট্টুপেট্টি ড্যাম আর বিশাল জলাশয় দেখতে
মুনার টাউন অনেক দূরে ..
তারপর যেতে হয় মুন্নারের বনবিভাগের বিখ্যাত ফ্লরিকালচার সেন্টারে । নানা রঙের ফুলের পসরা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় ।
.
এরপর মুন্নার শহরে প্রবেশ করে দুপুরের খাওয়া । খুব সুন্দর । ভাত, নানা রকম মাছ ভাজা, ডাল, মালাবর মাংসের কারি ইত্যাদি । শেষে এরাভিকুলাম ন্যাশানাল পার্ক। অনেক উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয় । সেখানে শুধু বনবিভাগের গাড়ি যায় । টিকিট কেটে বাসে করে আমরা গেলাম ওপরে । বেশ ঠান্ডা । সুন্দর পাহাড়ী রাস্তা আর সবুজের মাঝে বিরল প্রজাতির পাহাড়ি ছাগল, থার চরে বেড়ায় কিন্তু অঅমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা একে দেখতে পাইনি । তারপর ন্যাশানাল পার্কের রাস্তা ।
এক নাম না জানা নীল পাখি আমাদের ওয়েলকাম করল ।

দ্বিতীয়দিনের মত যাত্রা শেষ হল । দিনের শেষে হোটেলে ফিরে এসে ডিনার খাওয়া, আড্ডা দেওয়া, টিভি দেখা আর ঘুমের দেশে পাড়ি দেওয়া । তৃতীয়দিনে সকালে বেরুনো হল কুমারোকমের পথে ।

সুন্দর এক গ্রাম্য পরিবেশে । হোটেল নিয়ে বলার কিছুই নেই । এত পরিষ্কার আর পরিচ্ছন্ন যে তাতেই মন ভরে যায় । আমরা এটাই চেয়েছিলাম ট্যুর অপারেটরের কাছ থেকে । মিষ্টার এন্ড মিসেস কুরিয়ানের পরিচালনায় ” দ্যা ব্যাক ওয়াটার রিট্রিট থিম হাউস” । রিটায়ার করে এঁরা এই হোটেল বানিয়েছেন । অনবদ্য আতিথেয়তা । ছোট্ট হোটেলখানি । দোতলায় চারটে ঘর, টানা বারান্দা আর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট এক চিলতে নদী । ঘন গাছপালার মধ্যে । নদী দিয়ে ছোট্ট নৌকা থেকে মাঝে মাঝেই মাঝির হাঁক কানে আসে । ” মাছ চাই, ফুল চাই ইত্যাদি কত প্রাকৃতিক সম্পদ আর তার সদ্ব্যাবহার এখানে । জলের লেভেলে থাকলে মোটর বোট এসে নিয়ে যায় যেখানে যাবার ইচ্ছে সেখানে । এই নদীর ধারে বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরা যায়… সে ব্যবস্থাও আছে সেখানে । আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কোট্টায়ম থেকে মোটরবোটে করে ব্যাক ওয়াটার, সরু ক্যানাল দিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর ভেমবানাদ লেকে একটু ঘুরে নেওয়া । কুমারোকম এর প্রধান হোটেল বা রেসর্ট এরিয়া যাবার প্ল্যান ছিলনা । সব লোকেরাই লেকের কাছেই থাকে। হোটেল যাবার গ্রাম্য রাস্তা আর পিছনের ছোট নদী ।
মোটরবোটে করে ঘোরা । সকাল সকাল জলখাবার খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম । কোট্টায়ম শহরের ব্যাক ওয়াটার জেটি থেকে মোটর বোট নিয়ে যাত্রা শুরু । দৃশ্য শুধু উপভোগ করার আর ছবি তোলার । কোনো এক বাড়ির ঘাটে কাপড় কাচতে ব্যস্ত কেরালর মেয়ে ।

ক্যানাল থেকে বালি তোলার সে কি তোড়জোড় । এবার ক্যানাল ছেড়ে ব্যাক ওয়াটারে এসে পড়লাম ।
নানারকম পাখির ভীড় । কোথাও আবার জলের মধ্যে ডানা ছড়িয়ে রোদ খাওয়াচ্ছে কোনো অচিন জল পাখি । বেগনী রঙয়ের মূরহেন দেখতে পেলাম ।
লাইন করে কর্মোরেন্টরা বিশ্রাম নিচ্ছে । অজস্র গোলাপী লিলি ফুটে আছে ব্যাক ওয়াটারে । দাঁড় বেয়ে দুই মাঝি আর এক কুকুর চলেছে নৌকা করে ।
এবার সবুজ ব্যাক ওয়াটারের দেশ মালাবারী স্বপ্ন শহর কেরালার যাত্রা হল শেষ । সন্ধ্যেবেলায় হোটেলে ফেরার পালা । তারপর দিন কোচিন হয়ে দিল্লী । সে যাত্রায় কোচিন আমাদের শেডিউলে ছিলনা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন