সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

আমার দেখা থাইল্যান্ড - তিন

অদেখা পাতায়া
এক পাতায়া শহরে ঘুরে ফিরে দেখার আছে অনেক কিছু। পাতায়াতে এসেই আমরা হোটেল থেকে ম্যাপ আর ভ্রমণ গাইড নি। অনেক পরিকল্পনা, কোনটা রেখে, কোনটায় যাবো। শেষেমেশে ফিরে আসার দিন দেখা গেল, বাদ রয়ে গেল সবই। এই পাতায়া কোর্স কমপ্লিট করতে আবার আসা লাগে কিনা কে জানে। যারা থাইল্যান্ডে যাবার কথা ভাবছেন বা সামনে কোন এক সময়ে হয়তো যাবেন তাদের জন্যই আজকের রচনা।
পাতায়া বিচ, কোরাল আইল্যান্ড, ওয়াকিং স্ট্রীট এ পদচারণ এগুলো তো মাস্ট ভিউ এর তালিকায় থাকবে। আর শহরটাও খুব বড় নই। তাই হাতের কাছেই দুই একটা বাদে প্রায় সবগুলো স্পটের কাজ্খিত দর্শণ পেয়ে যাবেন। আর অন্যগুলো স্পটগুলো নির্ভর করবে আপনার হাতে সময় কতটা আছে তার উপর। আমাদের যে যে স্পট বা ইভেন্ট গুলো কাভার করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু হয় নি। তার একটা তালিকা দিচ্ছি।

আন্ডার ওয়ার্ল্ড পাতায়া

নাম দেখেই বুঝতে পারছেন সমুদ্রের তলদেশের জীবনযাপন। এটি সমুদ্রের তলে স্থাপিত আধুনিক এ্যাকুরিয়াম। সমুদ্রের তলদেশে বিশাল টানেলের ভিতর দিয়ে আপনি হাটবেন আর শার্ক ছুটে আসবে আপনি গিলে খেলে। আপনি আর শার্ক মাঝখানে ব্যবধান সামান্য একটা কাচের দেয়াল। ভাবুন তো কেমন এক্সাইটিং হবে ব্যাপারটা?

নং নচ ট্রপিক্যাল গার্ডেন

এটাই নাকি দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর বাগান। নানা প্রকার সুলভ এবং দূর্লভ বৃক্ষরাশির দেখা মিলবে এখানে। নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছোট চিড়িখানা এবং থাইল্যান্ডের হাতির গেমন সো উপভোগ করতে পারবেন।

মিনি সিয়াম

পৃথিবীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্থাপিত ঐতিহাসিক এবং বিখ্যান স্থাপনার সংস্করণ নিয়ে সাজানো হয়েছে পৃথিবীর ভিতরে ছোট্ট আরেকটা পৃথিবী।

পাতায়া এলিফ্যান্ট ভিলেজ

সাদা হাতির দেশ থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ড এসে হাতি না দেখে ফিরতে না চাইলে ঘুরে আসুন এলিফ্যান্ট ভিলেজ থেকে। এইটি অবশ্য পাতায়া মূল শহর থেকে দূরে অবস্থিত।

মিলিয়ন ইয়ারস স্টোন পার্ক

রুপকথার সেই গল্পটা মনে আছে? একটা গ্রামের সব কিছুই পাথরে পরিণত হয়। এইটা সেই গ্রাম।
স্কাইট্রেন
স্কাইট্রেনকে থাইল্যান্ডবাসীরা চেনে বিটিএস নামে। শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য রাস্তার উপর ফ্লাইওভার করা। ব্যাপারটা এমন যে, আকাশপথে ট্রেনযাত্রা।

[বিটিএস স্টেশনে যাবার জন্য এস্কেলেটর]
প্রতি পাঁচমিনিট পর পর বিটিএস স্টেশনে এসে দাড়ায়। একমিনিট পরই আবার যাত্রী নিয়ে গন্তব্য রওনা হয়ে যায়। আমাদের দেশের লোকাল বাসের মতো ট্রেনের ভিতর তিল ধারনের জায়গা নেই। অধিকাংশ মানুষই দাড়িয়ে আছে। তবে ভিতরের পরিবেশ শান্ত। আমাদের দেশের লোকাল বাসে যেমন সবসময় গালাগালির উৎসব হয় এখানে এমনটা দেখা গেল না।

মিনিট পাঁচেক পরপরই ট্রেনটা নতুন একটা স্টেশনে আসে আর যে যার গন্তব্যে নেমে যায়। নতুন স্টেশন থেকে নতুন যাত্রী আবার ট্রেনটা ভরিয়ে ফেলে। প্রতিটা স্টেশনে আসলে ট্রেনের ভিতরে সেই স্টেশনের নাম এবং পরবর্তী স্টেশনের নাম ঘোষণা করে। ট্রেনের গায়েও ইলেকট্রনিক ম্যাপের মাধ্যমে জানা যায় ট্রেনটা এখন কোথায়। তাই অপরচিতিদের জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছানো সহজ হয়ে যায়।
বিটিএস স্টেশনে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। এখানে যার যার টিকিট তাকেই কাটতে হয়। প্রথমে গন্তব্যস্থল সিলেক্ট করে নির্দিষ্ট কয়েন বক্সে ঢুকিয়ে দিলে টিকিট অটোমেটিক বের হয়ে আসে। আমাদের একসঙ্গী গন্তব্যস্থল সিলেক্ট না করে প্রথমেই কয়েন দিয়ে তারপর গন্তব্যস্থল সিলেক্ট করে বসে আছে। ফলাফল তার টিকিট আর আসে না। স্টেশনে স্টেশনমাস্টারকে সমস্যাটা বলা হলো কিন্তু আগেই বলেছি এরা ইংরেজীভাষা কিছুই বোঝে না তাই কোন সমাধান পাওয়া গেল না। ব্যর্থমনোরথে আবারও কয়েন দিয়ে তাকে টিকিট কাটতে হলো। পরে জেনিছে কেউ এমন ভুল করলে ওই কয়েনগুলো টিকিট কাউন্টারের নিচে পড়ে থাকে। কেউ ভুল করলে তক্ষনিই টিকিট কাউন্টারের নিচে ফাকা বক্সে হাত দিয়ে তার কয়েনগুলো ফিরে পেতে পারে।
আমাদের দেশে যেমনটি হয় মিরপুর থেকে ফার্মগেটের টিকিট কেটে দিব্যি মতিঝিল চলে যাওয়া যায়। (সবাই এইটা করে না। কিছু কিছু মানুষের স্বভাবই এরকম। আমি নিজে দেখেছি বলেই বলছি।) ব্যাংককের বিটিএস স্টেশনে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করতে গন্তব্য স্টেশনে নেমে বক্সে টিকিট জমা দিলে তবেই গেট অটোমেটিক খুলে যায়।

[বিটিএস মাল্টিইউজ টিকিট]
টিকিটগুলো সব প্লাস্টিকের। তাই নস্ট হচ্ছে না। আর যেহেতু সবাই টিকিট জমা দিয়ে দিচ্ছে তাই এক টিকিট বারবার ব্যবহার করা যাচ্ছে। টিকিটের জন্য বাড়তি অপচয় করা লাগছে না। সিস্টেমটা ভালো।
ব্যাংককের বিটিএস সার্ভিসটা আমার ভালো লেগেছে। এর দুইটা কারণ- এক. ব্যাংককের রাস্তায় কর্মদিবসে ঢাকা শহরের মতোই জ্যাম থাকে। তাই টাক্সি বা টুকটুক থেকে বিটিএসে চেপে খুব দ্রুতই এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে চলে যাওয়া যায়। দুই. বিটিএসের ভিতরে পরিবেশটা অনেক সুন্দর।

সিয়াম সেন্টার
ঢাকা থেকে ইয়া বড় এক শপিং লিস্ট নিয়ে এসেছি। দেখতে দেখতে আবার ঢাকা ফেরার সময় হয়ে গেল কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই কেনাকাটা করা হয় নি। অল্প একটু অবসর পেতেই দৌড় দিলাম শপিং সেন্টারে। ব্যাংককে আমরা উঠেছি হোটেল ম্যানহটন-এ। নানা(nana) স্টেশন থেকে সামান্য দূরে এই হোটেল ম্যানহটন। একটু অবসর সময় পেতেই দৌড়ে এলাম নানা স্টেশনে। ম্যাপ দেখে ধারে কাছে পাওয়া গেল সিয়াম সেন্টার। অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স। দ্রুত স্কাই ট্রেনে এ উঠে বসলাম। গন্তব্য সিয়াম সেন্টার।

কিন্তু সিয়াম সেন্টারে এসে তো মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়। সিয়াম সেন্টারে বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্রান্ডের বিপনিবিতান। কি নেই এখানে। বিখ্যাত ব্রান্ডের পারফিউম, সু থেকে শুরু করে দামী ব্রান্ডের বিলাসবহুল গাড়ী।
ঝা চকচকে শপিং মল, চৌকস বিপনী কর্মী, ব্রান্ড সম্বলিত পণ্য এগুলো ঘুরে ফিরে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। বুঝতেই পারছেন। ব্রান্ড মানেই দামটা তার একটু বেশি। আমাদের কাছে অনেক বেশি। কিছুই কেনা হলো না। শুধু একটা ফ্লোর থেকে আরেকটা ফ্লোর ছোটাছুটি করলাম।


আমরা যখন শপিং মলে ঘুরঘুর করছি তখন নিচের তলায় শপিং মলের মাঝে উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট চলছে। বিখ্যাত সব শিল্পীই হবে হয়তো। আগত ক্রেতা থেকে শুরু করে শপিং মলের বিপনীকর্মী সবাই দেখলাম কনসার্ট এ অংশগ্রহণ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।

তাদের দেখাদেখি কোনকিছু কেনার ব্যর্থ চেষ্টা না করে শেষেমেশে কনসার্ট দেখায় মনযোগী হলাম। কিন্তু তিন্তু তিড়িংবিড়িং নাচ ছাড়া আর কিছুই বোঝার উপায় নাই। থাইভাষায় গীত। ক্যামনে বুঝুম?
মজা পাইলাম সিয়াম ওশেন ওয়াল্ড-এ যেয়ে। সিয়াম সেন্টারের একদম নিচ তলায় সিয়াম ওশেন ওয়াল্ড।


উপর থেকে মনে হয় সমুদ্রের নিচে দর্শনার্থীরা হেটে চলে বেড়াচ্ছে। সিয়াম ওশেন ওয়াল্ড-এ যেয়ে দেখলাম ব্যাপারটা আসলে তা নয়। এমনভাবে সবকিছু সাজানো যে মনে হবে সমুদ্রের প্রাণীগুলো জীবন্ত। অনেকটা মাদাম তুসো যাদুঘরের মতো।

দেখে মনে হবে ইয়া বড় অক্টোপাস আপনার দিকে তেড়ে আসছে। হাঙরের ভয়ংকর বিশাল হা করা মুখের ভিতরে বসে কত সহজেই না ছবি তোলা যায়। এখানে না এলে জানতে পারতাম না।

ওশেন ওয়ার্ল্ডের সাথেই ৫ডি সিনেমা হলো। থ্রিডি সিনেমায় এখন পর্যন্ত দেখা হলো না আর ৫ডি। অন্যসময়ের জন্য ৫ডি সিনেমা দেখা কর্মসূচি তুলে রাখলাম।

স্পাইডারম্যানের সাথে ছবি তুলে ফিরে এলাম হোটেল ম্যানহটনে।

সন্ধ্যায় ব্যাংককের রিভার ক্রজে যোগ দিতে হবে। তার আগে প্রস্তুতির জন্য একটু সময় তো চায়। বিদায় সিয়াম সেন্টার।
Chao Praya রিভার ক্রজ

[আলোঝলমলে রিভার ক্রজ]
ঢাকা যেমন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। থাইল্যান্ডের রাজধান ব্যাংককও Chao Praya নদীর তীরে অবস্থিত। Chao Praya নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে ব্যাংকক জনপদ, পর্যটনশিল্প। ব্যাংককের মূল আকর্ষণ Chao Praya রিভার ক্রজ। তাই স্বভাবতই ব্যাংককে আসলে রিভার ক্রজে যাবার ইচ্ছা জাগে। ব্যাংককের প্রথম রাতেই আমাদের সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে গেল। আমরা সদলবলে সন্ধ্যায় রিভার ক্রজে অংশগ্রহণ করলাম। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রিভার ক্রজের জন্য সসজ্জিত নৌযানগুলো অভিযাত্রীদের নিয়ে একে একে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু মন্দ কপাল আমাদের ব্যাংককের বিশাল জ্যাম পাড়ি দিয়ে রিভার ক্রজ সংলগ্ন ব্যাংকক শপিং কমপ্লেক্সের নির্দিষ্ট স্থানে আমরা যখন পৌছায় ততক্ষণে রিভারক্রজগুলো Chao Praya নদীর মাঝে সাতার কাটছে! ব্যাংককের রাস্তায় এতো জ্যাম যে ঢাকার জ্যামকেও হার মানিয়ে দেয়। এদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা অনেক ভালো। গাড়ীগুলো রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যাল মেনেই চলে। আমাদের দেশের জ্যামের মূল কারণ অব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক সিগন্যালকে তোআক্কা না করে যেমন খুশি তেমন গাড়ি চালিয়ে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ। ব্যাংককের জ্যামের মূল কারণ রাস্তায় অত্যাধিক গাড়ী। রাস্তায় প্রচুর প্রাইভেট কার চোখে পড়ে। থাইল্যান্ড যে কয়টা শহরকে ঘিরে অর্থনীতির ভীত গড়ে তুলেছে তারমধ্যে ব্যাংকক এদেশের মূলচালিকা শক্তি। ক্রমবর্ধমান এই শহরে তাই প্রতিদিনই যেমন বিত্তশালীদের সংখ্যা বাড়ছে, তেমন তাদের জীবনযাত্রাও পরিবর্তন আসছে। বেড়ে চলেছে নিজস্ব পরিবহনের সংখ্যা। ফলাফল ব্যাংকক শহরে প্রচুর উড়ালপথ, রাজপথ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এই অপ্রতুল রাজপথের ভুক্তভোগী হতে হলো আমাদের। তবে কী তীরে এসে তরী ডুবলো? রিভার ক্রজ মিস হয়ে গেল?

ব্যাংককে এসে আপনি ব্যর্থমন নিয়ে ফিরে যাবেন এরা তেমনটা হতে দিবে না। রিভারক্রজের নিমিত্তে এসেছি যখন রিভারক্রজ ভ্রমণ হবেই। শুধু একটু অপেক্ষা। স্বয়ং থাইরাজকন্যা যদি আপনাদের অভ্যর্থনা জানায়, অপেক্ষার সময়টা আপনাদের সাথে কাটায় তবে এই অপেক্ষার সময়টা মন্দ লাগবে না। হ্যা ঠিকই পড়েছেন, স্বয়ং রাজকন্যা আপনাদের অভ্যার্থনা জানাবে। কী বিশ্বাস হচ্ছে না? নিচের ছবিটা দেখুন।

সোজা বাঙলায় এটা ওদের টাকা আয়ের ফন্দি। রিভার ক্রজের জন্য নির্দিষ্ট কমপ্লেক্সে আসা মাত্রই রাজকন্যাবেশি সুন্দরী থাই রমনী প্রত্যেকের বুকে রিভার ক্রজের ব্যাচ লাগিয়ে, প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে অভ্যর্থণা জানায়। পাশে দাড়িয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে ছবি তোলে। সেই রাজকন্যাবেশি থাই নারীর সাথে তোলা ছবিটা নিজের সংগ্রহে রাখতে হলে আপনাকে ২০০ বাথ খরচ করতে হবে। প্লাস্টিকের ফ্রেমে একটা ছবি বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে পাঁচশ টাকা। কিনবো না কিনবো করেও শেষপর্যন্ত অনেকেই ২০০ বাথ খরচ করেই ফেলে।

[ছবির ঝুড়ি হাতে রাজকন্যাবেশি থাই রমণী।]
দেখতে দেখতে আধাঘন্টা সময় রাজকন্যাবেশি রমনীর সাথে কেটে গেল। ততক্ষণে আমাদের রিভার ক্রজও তীরে এসে পৌছেছে। সারিবদ্ধ লাইন বেধে আমরা রিভার ক্রজে আহরণ করলাম। Chao Praya প্রিন্সেস রিভার ক্রজ সাক্সোফোনের সুমধুর সুর আগত ভ্রমণার্থীদের স্বাগত জানায়। ভ্রমণার্থীদের জন্য অপেক্ষায় থাকা সুপরিবেশিত কেদারাগুলো আমাদের আগমনে ধণ্য হয়। প্রত্যেকের জন্য কেদারা নির্দিষ্ট ছিল। যে যার আসন গ্রহণ করার পর শুভ সন্ধ্যা জানিয়ে Chao Praya প্রিন্সেস রিভার ক্রজ পিঙ্কলাও ব্রীজ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।
ক্যান্ডেল লাইট ডিনার উইথ লাইভ মিউজিক। গানের সুরে সুরে নৌশভোজ আর সান্ধ্যভ্রমণ। ভেজ, ননভেজ, ডেজার্টের আইটেম থরে থরে বিভিন্ন ডিশে সাজানো।


[খাওয়া দাওয়ায় এতোই ব্যস্ত ছিলাম যে ছবি তোলার কথা মনেই ছিল না। খাওয়া দাওয়ার একদম শেষমুহুর্তে তোলা ছবি]
যার যত খুশি পেট ভরে, মন ভরে খাও আর উপভোগ করো সামনে উপস্থিত শিল্পীর পরিবেশনায় সঙ্গীত, নদীর দু'পাশের রাতের আলো ঝলমলে ব্যাংকক শহর।

এ যেন বিয়ে বাড়ী। আমরা সকলে বিয়ের যাত্রী। বাদ্য বাজানা বাজছে, ভরপুর খানা পিনা চলছে। রিভার ক্রজের ভিতরে যেমন আলোয় উজ্জ্বল তেমনি Chao Praya নদীর দুইপাশের স্থাপত্যগুলোও রঙিন আলোয় আলোকিত।


রিভার ক্রজে বসেই ব্যাংককের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশিল্প আর আধুনিক স্থাপত্যের সাথে পরিচয় হয়ে যাবে। পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করতে স্থাপত্যভবনগুলোর আলোসজ্জার মাধ্যমে তা আরো বর্ণিলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ব্যাংককের মূল আকর্ষণ ডন মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির, প্রাচীন রাজধানীর ব্যাং খুনপ্রোম প‌্যালাস, আকাশচুম্বী পাঁচ তারকা হোটেলের আলোক প্রতিবিম্ব নদীর বুকে আরেকটা ভাসমান আলোর প্রাসাদ তৈরি করেছে।


Chao Praya নদীর মৃদমন্দ হাওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে সুস্বাদু খাবার খেতে খেতে উপস্থিত শিল্পীর গানের সুরে মনভোলানো রোমান্টিক পরিবেশ। রিভার ক্রজের এই আনন্দময় সন্ধ্যার স্মৃতি অনেকদিন মনে থাকবে।


আর মনে থাকবে কাঁচা আমের স্বাদ। রিভার ক্রজে হরেকপদের খাবারের মধ্যে কেন যে কাঁচা আমটাই সবচেয়ে সুস্বাদু লাগলো। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা হয়তো কাঁচা পেপে। মুখে দিয়ে বুঝলাম। আম। থাই আম বোধহয়। কাঁচা আম, মিষ্টি স্বাদ। আমাদের দেশের আমগুলো থেকে স্বাদটা সম্পূর্ণই অন্যরকম। কাঁচা আম কাঁচাই খেয়ে ফেললাম। কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আমের ডিশে এসে দেখি আম নাই। অন্যরাও আমার মতো কাঁচাই খেয়ে ফেলেছে! (কাঁচা কথাটা বিশেষভাবে উল্লেখ করলাম এই জন্য যে এদের খাবারগুলো অধিকাংশই সিদ্ধ বা অর্ধসিদ্ধ। দেখে মনে হয়ে একদম কাঁচা।)

থাইল্যান্ডে অল্প এই কয়দিনে ঘোরাঘুরি ভালোই হয়েছে, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে যারা একটু সমস্যার ভিতরে যাচ্ছিলেন তারা রিভার ক্রজের খাবারে পেটে আগামী দুইদিনের রসদ জমিয়ে ফেলেছেন আমি নিশ্চিত। শুধু একটা ডিজে পার্টির আকাঙ্খা বাদ ছিল। পাতায়া ব্যাংককে ডিজে পার্টি তো কোন ব্যাপারই না। কিন্তু নাইটক্লাবে যেয়ে নাচা-গানায় অংশগ্রহণে অনেকের সংস্কারে বাঁধে। তাই বলে থাইল্যান্ডে এসে ডিজে পার্টি হবে না। রিভার ক্রজে সব আয়োজন সম্পন্নই ছিল অপেক্ষা শুধু অংশগ্রহণকারীর। শুরুটা আমরাই করলাম। ধীরে ধীরে উপস্থিত প্রায় সব ভ্রমনার্থীরাও আমাদের সাথে যোগ দিল।

যারাকোমর দুলিয়ে নাচে অংশগ্রহণ করলো না তারা অন্তত দর্শক সেজে হাত তালি দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করলো। নাচে গানে এতোটাই মশগুল যে কখন আবার রিভার ক্রজ তীরে তরী ভিড়িয়েছে টেরই পাইনি। তীরে তরী ভিড়ানোর সাথেই সাথেই আগত ভ্রমনার্থীদের ধণ্যবাদ জানিয়ে সুমিষ্ট ভাষায় বিদায় নিল রিভার ক্রজ ক্রুর দল। আমরাও বিদায় নিলাম রিভার ক্রজ থেকে। শুভ বিদায় Chao Praya প্রিন্সেস রিভার ক্রজ।
সাফারি ওয়ার্ল্ড

দুই তরুনী বাঘ কোলে করে বসে আছে। ঈর্ষাতুর চোখে আমি তরুনী দুটির দিকে তাকিয়ে থাকি। সারাজীবন চিড়িয়াখানায় বাঘকে খাচায় বন্দি থাকতে দেখে এসেছি। আর ব্যাংককের এই সাফারি ওয়ার্ল্ডে এসে দেখলাম যে বাঘ মানুষের কোলে কোলে ঘুরছে!
ব্যাংককের এই সাফারি ওয়ার্ল্ডে এরকম নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা আমাকে উপহার দিল। খুব সহজেই এই সাফারি ওয়ার্ল্ডে পরিপূর্ণ বিনোদনে একটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। আজ এই সাফারি ওয়ার্ল্ডের গল্পই বলবো।
সকাল দশটার দিকে আমরা দলবল মিলে সাফারি ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করি। প্রবেশের আগেই সাফারি ওয়ার্ল্ডের ম্যাপটা নিতে ভুলি না। কারণ সাফারি ওয়ার্ল্ড আয়তনে অনেক বড়। ম্যাপ অনুযায়ী চললে খুব সহজেই সবকিছু খুঁজে পেতে সুবিধা হবে। তাছাড়া ম্যাপের জন্য আলাদা পয়সা খরচ করতে হচ্ছেনা। তাই টিকিট কাউন্টারে যেয়ে ম্যাপটার কয়েক কপি নিয়ে নিলাম। যদি একটা হারিয়ে যায়!

সাফারি ওয়ার্ল্ডের শুরুতেই ম্যারিন পার্ক। পাখিদের রাজ্য। পৃথিবীর সব রকম পাখিদের মিলনমেলা। এই পাখির রাজ্যে লম্বা লেজবিশিষ্ট বাহারি রঙের পালকে সজ্জিত টিকা পাখির ন্যায় ঠোটের ম্যাকাও পাখি আমাকে বেশি মুদ্ধ করলো।


[ম্যাকাও পাখি]
(ইত্যাদিতে একটা পর্বে হানিফ সংকেত এই ম্যাকাও পাখির খাচার সামনে দাড়িয়ে সাফারি ওয়ার্ল্ডের বর্ণনা দিয়েছিল। তখনই ইচ্ছা যেগেছিল, ইস আমি যদি যেতে পারতাম। আজ সেই ইচ্ছা পূরণের দিন)
ম্যারিন পার্ক থেকে একটু সামনে এগোতে দেখা গেল পরমাসুন্দরী এক রমনী ছাতা মাথায় বসে আছে। রমনীর সাজসজ্জা এমনই আকর্ষণীয় যে ওই পথে যে পথিকই যায় তার ছাতাতলে বসে একটু বিশ্রাম লয়।

[ছাতার তলে এক ক্লান্ত পথিক]
আমিও তাই করলাম। রমনীর ছাতাতলে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হঠাৎ আবিস্কার করলাম আমি দলছুট হয়ে গেছি। আমার আশেপাশে পরিচিত কেউ নাই। আমাকে একা ফেলে যে যার মতো যেদিকে খুশি হাটা শুরু করেছে। বাঙালীর এই এক সমস্যা। বেশি সময় ঐক্য ধরে রাখতে পারে না!
কী আর করা একা একা এলোমেলো হয়ে ঘুরতে লাগলাম। সাদা ভাল্লুক (পোলার বিয়ার)-এর খাচার সামনে কিছু সময় দাড়িয়ে থাকলাম। তার গম্ভীর হাটাচলা দেখছি।

হঠাৎ আশেপাশে মানুষদের ভিতরে চাঞ্চল্য লক্ষ্য করলাম। ব্যাপারখানা কী? সবাই যেদিকে ছুটছে কোন কিছু চিন্তাভাবনা না করে আমিও সেদিকে হাটা শুরু করলাম। অন্যদের অনুসরণ করে একটা গ্যালারীর ভিতরের ঢুকে গেলাম। গ্যালারী দর্শকে পরিপূর্ণ। ঠায় নাই, ঠায় নাই অবস্থা। গ্যালারীর মাথায় কোনরকমে দাড়িয়ে পড়লাম। বক্সিং শো শুরু হয়ে গেছে। এখন বসার জায়গা খোজা বৃথা। দুই ওরাংওটাং বক্সিং রিংয়ের ভিতর একজন আরেকজনকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে তাদের ভিতর খন্ডযুদ্ধ বেধে যায়। আরেক ওরাংওটাং রেফারি মহাশয় হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় খন্ডযুদ্ধ রদ হয়। খেলা আবার শুরু। কিন্তু এ কী? এক ওরাংওটাং প্রতিপক্ষকে চরমভাবে পরাস্ত করেছে। প্রতিপক্ষ এখন মাটিতে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের সুর ভেসে আসে। ডাক্তার ওরাংওটাং গলায় স্টেথিস্কপ্ পেচিয়ে বক্সিং রিং এ হাজির। পিছনে স্ট্রেচার নিয়ে আরো দুই ওরাংওটাং। মনমুগ্ধকর এক শো। শো শেষ হলো। দর্শক গ্যালারী ছাড়তে শুরু করেছে। আমিও তাদের পিছুনি। কিন্তু মুগ্ধতা আমার পিছু ছাড়ে না। ওরাংওটাংকে দিয়ে এমন চিত্রনাট্যের বাস্তবায়ন করা যেতে পারে আমার ধারনায় ছিল না। সারাজীবন বানর আর সাপের খেলা দেখে এসেছি। আজ ওরাংওটাং-এর ছলাকলা দেখলাম এবং মুগ্ধ হলাম

[ওরাংওটাং শো]
সাফারি ওয়ার্ল্ডে এভাবে একটার পর একটা পশুপাখির খেলা চলতে থাকে। দ্বিতীয় শো টা ছিল সিলায়ন-এর। প্রতিটি শো-ই আলাদা গল্প বলে, উপস্থাপনার ঢং-ও আলাদা। সিলায়ন শো তে দেখা গেল জাহাজের ক্যাপ্টেন ও তার দলের কলাকৌশল। যথারীতি গ্যালারী পরিপূর্ণ। বিদেশী পর্যটক যেমন আছে, তেমন স্থানীয়দের উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য। স্কুলের পোশাকে একদল স্থানীয় স্কুলপড়ুয়া মেয়ে গ্যালারীর একটা অংশ দখল করে নিয়েছে।
(দর্শকে পূর্ণ গ্যালারী)
ভাগ্যক্রমে আমিও বসার জায়গা পেয়ে গেছি। শো শুরু হলো। প্রথম দুইটা সিলায়ন দর্শকের সামনে উপস্থিত হলো। উপস্থাপকদের নির্দেশনা অনুসারে তারা বলের নানা কৌশল দেখিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে।


তবে সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার, সম্পূর্ণ উপস্থাপনায় থাই ভাষায়। গ্যালারীর অর্ধেক জুড়েই বিদেশী পর্যটক। নিশ্চিত তাদের কেউই থাইভাষা জানেনা অথবা হাতে গোনা কয়েকজন থাইভাষা জেনে থাকতে পারে। এই বিপুল সংখ্যক দর্শকদের ভাষার ব্যাপারে অজ্ঞ রেখেই তারা তাদের নিজস্ব ভাষাকেই প্রাধান্য দিল। (ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি ইংরেজী ভাষা শিক্ষা ছাড়া উপায় নাই। এখনও কর্মজীবনে দেখি, যারা একটু ইংরেজী ভাষাটা ভালো রপ্ত করেছে, তারা কর্মক্ষেত্রে ভালো করছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এসে জানলাম নিজের ভাষাটাকে সর্ব্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েই সবকিছু অর্জন করা যায়। অন্য ভাষার জন্য সময় নষ্ট না করে যদি সেই সময়টা সৃজনশীল কাজে ব্যয় করা যায়, তাহলে তার ফলাফল আরও ভালো পাওয়া যায়।) উপস্থাপকের মুখের ভাষা বুঝতে না পারলেও মিউজিকের সুর আর সিলায়নের নৈপুট্য দর্শকদের পরিপূর্ণ বিনোদন উপহার দিল।
সাফারি ওয়ার্ল্ড আয়তনে এতো বড় যে একটি দিনের কিছু অংশে সম্পূর্ণ ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। আমরা সম্পূর্ণ ঘুরে দেখতে পারিও নাই। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল অল্প সময়ে যতগুলো পারা যায় এই পশুপাখির খেলা উপভোগ করা। আমার দেখা তৃতীয় শো ছিল ওয়েস্টার্ন কাউবয় স্ট্যান্ট শো। ওয়েস্টার্ন মুভি সবাই তো কম বেশি দেখেছি। ওয়েস্টার্ন মুভি মানেই কাউবয় হ্যাট, গোলাগুলি। আমার সামনে এক জীবন্ত সিনেমা মঞ্চায়িত হচ্ছে।

আমি শোর মাঝামাঝি সময়ে উপস্থিত হয়েছি। আগে কি হয়েছিল জানিনা। আমি যখন গ্যালারীতে এসে বসলাম তখন প্রচন্ড গোলাগুলি চলছে। একপক্ষ আরেকপক্ষকে গুলি ছুড়ছে। টারজানের মতো দড়ি বয়ে স্থান পরিবর্তন করছে। চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না যখন দেখলাম বোমা মেড়ে আস্ত ঘর উড়িয়ে দেওয়া হলো। শিল্প আর বিজ্ঞানের সংমিশ্রনে অনবদ্য একটা শো। সবই পূর্বপরিকল্পিত। স্টান্টম্যানদের নৈপুনতা, বিজ্ঞানসম্মত সেট ডিজাইন পর্দার ওয়েস্টার্ন মুভিকে বাস্তবে এনে ফেলে।
ওয়েস্টার্ন কাউবয় স্ট্যান্ট শো শেষ করে বের হচ্ছি, দেখি গ্যালারীর বহির্গমন দরজায় আমাদের গাইড দাড়িয়ে। আমাদের জঙ্গল ক্রজের রাস্তা দেখিয়ে দিল। জঙ্গল ক্রজে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। (এতোকক্ষন আমাদের দলবল সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। খাবার সময় দেখি কোথা থেকে যেন আবার এক হয়ে গেল) ঘরির কাটা একটার কখন ছুয়েছে টেরই পাই নাই। সাফারি ওয়ার্ল্ডে ছোট বড় সত্যিকার গাছগাছলির জঙ্গল রয়েছে। কিন্তু যার নাম জঙ্গল ক্রজ করা হয়েছে সেটা আসলে প্লাস্টিকের বৃক্ষরাজির সমাবেশে কৃত্রিম জঙ্গল। আর জঙ্গলের ভিতরে সারি সারি টেবিল-চেয়ার, খাবার সাজানো।


একটা অংশে ইন্ডিয়ান খাবার আর অন্য অংশে থাই বা এজাতীয় খাবার। আমরা খেলাম ইন্ডিয়ান খাবার। ইন্ডিয়ান খাবার মানেই নান, আলুর লেবড়া বা এজাতীয় কিছু আর সঙ্গে চিকেন ফ্রাই। কিছু ফ্রুট আইটেম ছিল। ফলের ভিতর জামরুলের স্বাদটা এখনও জিভে লেগে আছে। থাই জামরুল আমাদের দেশের জামরুল থেকে আকারে দুই-তিন গুন বড়। রসে টসটসে এবং প্রচন্ড মিষ্টি। অন্য খাবার না খেয়ে জামরুল দিয়েই দু্পুরের খাবারের কাজটা শেষ করলাম।

দুপুরের খাবার শেষ করেই আমরা ডলফিন শোর গ্যালারীতে এসে বসলাম। এই শোর জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। সাফারি ওয়ার্ল্ডের এই শো টিভিতে বহুবার দেখা হয়েছে। আজ সেই শো সরাসরি দেখতে যাচ্ছি। পছন্দমতো বসার জায়গা খুঁজে পেতে শো শুরুর অনেক আগেই গ্যালারীতে এসে বসে রইলাম। ডলফিনগুলো ভেলকী দেখালো। বল আর রিং এর নানা কৌশলতো দেখালোই, সেই সাথে ড্রাইভ, ডলফিন সঙ্গীত...। ডলফিন শোর নান্দিকতা আমার লেখায় ঔভাবে ফুটিয়ে তোলা আমার পক্ষে সম্ভব না।

[চোখ জোড়ানো, মন মাতানো, অসাধারণ ডলফিন ড্রাইভ]
ডলফিন শো শেষ হলে মনে হতেই পারে ইস যদি ডলফিনগুলোর সাথে একটা ছবি তোলা যেত? শুধু ডলফিন কেন সিলায়ন, ওরাংওটাং, ওয়েস্টার্ন কাউবয় যার সাথেই ইচ্ছা আপনি ছবি তুলতে পারেন। শুধু পকেটের পয়সা খরচ করতে হবে। ব্যাংককের মানুষগুলো মনে হয় মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে। মানুষ যা চাই এরা তাই দেওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছে। শুধু একটু থাইবাথ খরচ করলেই আপনার মনেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে যাবে।

আমি বিনা খরচে একটা ইচ্ছা পূর্ণ করলাম। সাফারি ওয়ার্ল্ডে একটা স্পটের নাম মিনি ওয়ার্ল্ড। মিনি ওয়ার্ল্ডের সম্পূর্ণটায় আলাদাভাবে ঘেরা। ঢুকবো না ঢুকবো না করেই মিনি ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করলাম। টিভিতে দেখেছি খাবার হাতে নিয়ে দাড়ালে পাখি উড়ে এসে হাতে বসে। মিনি ওয়ার্ল্ডে দেখা গেল অনেকেই খাবার হাতে নিয়ে রঙিন পাখিগুলোকে ডাকছে। পাখি সবার হাতে বসছে না। অনেকের ভিতরে একজনকে সে বাছাই করছে। তার হাতে উড়ে বসছে। আর অন্যরা তাকে দেখে ঈর্ষান্বিত হচ্ছে। আমিও খাবার হাতে নিয়ে ঘুরছি। এতোভাবে পাখিগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। কিন্তু এখানে উনারায় রাজা। উনাদের মর্জী। ঘুরে ঘুরে যাকে মনে ধরছে তার হাতে সে উড়ে বসছে। হাতে বসে খাবার খাচ্ছে। সে কি সুন্দর ছবি তুলছে। নিশ্চয় এই ছবি তার ফেসবুকে চলে যাবে। তার কমেন্টের পর কমেন্ট। একটা পাখিরও কি দয়া হয় না।

যখন চলে আসবো ভাবছি তখনই একটা পাখি আমার হাতে এসে বসলো। আহ! কী আনন্দ। গর্বে আমার বুক ফুলে গেল। ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে গেলাম। আমি তখন সেলিব্রেটি। ঈর্ষাতুর চোখে অন্যরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তার হাতটা আমার হাতের কাছে বাড়িয়ে দিচ্ছে। দয়াপরবশত পাখিটা যদি তার হাতে এসে বসে। অন্যের হাতে সে বসল না। কিছুক্ষণবাদে পাখিটি আমার হাত থেকে উড়াল দিল। আমারও ফেসবুকের ছবি হইয়া গেছে। মিনি ওয়ার্ল্ডে আর কাজ নাই। বিদায়।
সাফারি ওয়ার্ল্ড থেকে চির বিদায় নিলাম না। আমরা মাইক্রোতে উঠলাম। এবার আমাদের সত্যিকারের চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হলো। আমাদের দেশে এতোদিনে দেখে এসেছি, পশু পাখি খাচায় থাকে আর মানুষ পশুপাখির খাচার সামনে দাড়িয়ে বিমুল আনন্দ উপভোগ করে। এখানে দেখা গেল উল্টো নিয়ম।

পশু পাখি মুক্ত আকাশের নিচে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবে আর মানুষ গাড়ির ভিতর স্বচ্ছ কাচের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রাখবে। মাইক্রোরভিতরে বন্দি হয়ে একে একে আমরা বাঘ-সিংহ আরও অন্যান্য পশুপাখির চরণভুমিতে বিচরন করলাম। ক্লান্ত দুপুরে বাঘমামারা চুপচাপ আমাদের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ও এই খাচায় বন্দি মানুষগুলো আমাদের দেখে ধণ্য হতে এসেছে।

মহারাজ সিংহ এখন একটু বিশ্রাম করছেন। উটপাখি আর মরুভুমির উটকে একসাথে গলা জড়াজড়ি করে থাকতে দেখে বেস মজা পাইলাম।

[উটপাখি আর মরুর উট]
কেনাকাটা
হুমায়ুন আহমেদের কোন এক ভ্রমণ গল্পে পড়েছিলাম, একবার নাটকের শুটিং-এ তার দলবল নিয়ে থাইল্যান্ডে গেছেন। ওখানকার সাবানগুলো দেখে সবাই এতটাই মুগ্ধ যে যার কাছে যত বাথ ছিল সব বাথ দিয়ে শুধু সাবানই কিনে ব্যাগ ভর্তি করেছে। স্বভাবতই আমি থাইল্যান্ডে যেয়ে সেই সাবানগুলো খুঁজতে থাকি। আমাকে খুববেশি কষ্ট করতে হয়নি। স্ট্রীটসপগুলোতেই মনোহর সাবানের দেখা মেলে। এগুলো স্থানীয়দের হাতে তৈরি সাবান। লাল,নীল, হলুদ নানা রঙের তারকাকৃত, ত্রিভুজাকৃতি, চতুর্ভুজাকৃত নানা আকারে নানা সুবাসের সাবান পাওয়া যায়। প্রথম দেখায় সাবানকে সাবান মনে হয় না। দেখে মনে হবে মোমের শোপিস অথবা চকলেট। সুপারশপ গুলো থেকে ফুটপাতের দোকানের সাবানগুলোর তুলনামূলক দাম কম। বলাবাহুল্য, আমিও ব্যাগভর্তি সাবান কিনেছিলাম। আরেকটা কারণ স্যুভেনিয়র পণ্য হিসেবে সাবানগুলো সস্তা। আর কিনেছিলাম চকলেট। রকমারী ক্যান্ডি এখানে সুলভ মূল্যে কিনতে পাওয়া যায়।

থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় সবাই পরামর্শ দিয়েছিল, যা কেনার ব্যাংকক থেকেই কিনতে। এখানে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম। তাই কেনাকাটা ব্যাংকক থেকে করবো ঠিক করে দুইদিন পাতায়ায় মনের আনন্দে ঘুরেছি। ডলারগুলোও বাথে কনভার্ট করেনি। পাতায়া ঘুরে ব্যাংককে এসে আবিস্কার করলাম ব্যাংককে পাতায়া থেকে ডলার প্রতি প্রায় ১ বাথ কম। যেহেতু উপায় নেই, তাই কিঞ্চিত ঘাটতি দিয়েই বাকি ডলারগুলো বাথে কনভার্ট করে নিলাম। এখন কেনাকাটার পালা। পকেট থেকে লিষ্ট বের করে ভিমড়ি খাবার যোগাড়। ফেরার প্লেনে উঠার সময় হয়ে গেল অথচ লিষ্টের কিছুই কেনা হয়নি।

সাফারি ওয়ার্ল্ড ভ্রমণ শেষে আমরা যখন প‌্যান্টিপ প্লাজার সামনে নামিয়ে দিল তখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। ব্যাংককের দিন আর রাতের জীবনযাত্রা দিন-রাতের মতোই আলাদা। সন্ধ্যা নামতে নামতেই অফিস-আদালত, বড় বড় শপিং মলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। রাতযত বাড়তে থাকে বারগুলোর দরজায় লোভনীয় বিজ্ঞাপনেন নিয়নআলো আরও বেশি প্রসারিত হয়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বারবণিতাদের ভিড় বাড়তে থাকে, শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ফুটপাত ভ্রাম্যমান/অস্থায়ী দোকানগুলোর দখলে চলে যায়। আমি যখন শপিং কমপ্লেক্সে প্রবেশ করলাম তখন দোকানগুলো বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার মাথা ঝিমঝিম করা শুরু করলো। বাধ্য হয়ে সামনে যা পছন্দ তাই হুড়মুড় করে কিনতে লাগলাম। ফুটপাত থেকেও কিছু জিনিস কিনেছিলাম। এদের ফুটপাতের পণ্যের মান খারাপ না। পুরানো ফ্যাশানের পোশাকগুলো পাইকারীতে ফুটপাতে বিক্রি হয়। আমাদের সঙ্গীরা হাতঘড়ি, টি-শার্ট, জুতা, মেয়েদের চামড়ার ব্যাগ কিনে দুই হাত ভর্তি করে ফেলল। কেনাকাটার জন্য থাইল্যান্ড খুবই ভালো দেশ। একটু সময় নিয়ে কেনাকাটা করলে, ভালো দামাদামী করতে পারলে থাইল্যান্ড থেকেই প্রাণভরে কেনাকাটা করতে পারবেন। পণ্যের মূল্যমান আমাদের দেশের প্রায় সমান। সবচেয়ে বড় ব্যাপার বিখ্যাত ব্রান্ডের পণ্যগুলো সুলভমূল্যে কেনা যায়। আমি ১টেরাবাইটের একটা হার্ডডিস্ক বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিনহাজার টাকা কমে কিনতে পারলাম। আমার এক সহসঙ্গী এলসিডি টিভি আর হোম থিয়েটার কিনেছিল। ভ্যাট-ট্যাক্স সহ সব খরচ বাদে প্রায় ষাট হাজার টাকা মতো লাভ করে। ব্যাংককের ফুটপাতের প্রায় সব দোকানদের হাতে আইফোন আর স্মার্টফোনের ব্যবহার দেখে অনুমান করা যায় এখানে মোবাইলের দামও অনেক কম।
ব্যাংককের ফ্লোটিং মার্কেটে সুস্বাদু ফল বিক্রি হয়। কিন্তু সময়ের অভাবে ফ্লোটিং মার্কেটে যাওয়া হয়ে উঠেনি। তাই ফ্লোটিং মার্কেটের অভিজ্ঞতা লিখতে পারলাম না।
ভাষা
ভাষা বিড়ম্বনা কাকে বলে থাইল্যান্ডে এসে হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছি। এরা না জানে ইংরেজী ভাষা, না জানে বাংলা। জানে শুধু থাই ভাষা। ওদের কথা আমরা বুঝি না। আমাদের কথা তারা বোঝে না। তারপরও ভাষা আসলে মনের ভাব প্রকাশে বাধা হতে পারে না। একটি উদাহরণ দিই। তাহলে বুঝতে পারবেন। ভাষা ছাড়াও কিভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়।
কেনাকাটা করছি। কোন জিনিস পছন্দ হলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হাউ মাচ (এইটার অর্থ ওরা এতদিনে বুঝে গেছে?) সে ক্যালেকুলেটর বের করলো। ক্যালকুলেটর টিপে জানালো, ১০০ বাথ। আমিও ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রেস করলাম, ৭০ বাথ। সে আবারও ক্যালকুলেটরের সাহায্যে জানালো, ৮০ বাথ। এইভাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আমরা দরদাম করে একটা সমঝোতায় আসতে সক্ষম হই। থাইল্যান্ডের ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে ঝা চকচকে শপিং মল গুলোতে তাই ক্যালকুলেটর একটা অন্যতম বিক্রয় মাধ্যম।
ট্রাফিক জ্যাম
এতিদন আমার ধারণা ছিল ট্রাফিক জ্যামে আমরাই সেরা ব্যাংককে এসে জানতে পারলাম ট্রাফিক জ্যামে ব্যাংককও কোন অংশ কম নেই। আর হবেই বা না কেন। সমগ্র থাইল্যান্ডের এক তৃতীয়াংশ লোকই এই রাজধানী শহরে বাস করে। অর্থনৈতিকভাবে খুব অল্প সময়ে ব্যাংকক উন্নতি করায় এখানকার মানুষের জীবনযাত্রারও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় প্রতিটা পরিবারই নিজস্ব পরিবহনের মালিকবনে গেছেন। ফলাফল, ব্যাংকক শহরে পর্যাপ্ত রাস্তা, উড়ালসেতু, ফ্লাইওভার, গণপরিবহন, স্কাইট্রেন থাকা সত্বেত্ত তা নিজস্ব পরিবহনের ভীড়ে পর্যাপ্তও অপর্যাপ্ত। থাইল্যান্ডে ট্রাফিক যথেষ্ট কড়া। এরা লালবাতি, হলুদবাতি দেখে গাড়ি চালায়। ওভারটেক করে না। ফাকা রাস্তায় লালবাতি জ্বলা থাকলে গাড়ি দাড়িয়ে যায়। আর হলুদ বাতির অপেক্ষায় থাকে। ঠিক কত সময় সিগন্যালে দাড়িয়ে থাকতে হবে তা সিগন্যাল লাইটের পাশের সাইডস্ক্রীনে কাউন্ট ডাউন হতে থাকে। এতকিছুর পরেও ট্রাফিক জ্যামের অভিশাপ থেকে ব্যাংকক মুক্ত হতে পারে নি। তবে মধ্যরাতের পর ব্যাংককের রাস্তায় চলাফেরা করে বেশ মজা পাওয়া যায়। তখন ট্রাফিক জ্যাম থাকে না। টুকটুকে (আমাদের দেশের বাটারিচালিত অটো রিকশার মতো এক প্রকার পরিবহন) বসে পক্ষীরাজের মতো উড়তে উড়তে ব্যাংককের রাতের রাস্তা মাতানো দারুন উপভোগ্য।
[ব্যাংকক শহর]
পাতায়া শহরে ব্যাংককের তুলনায় চলাফেরা করে আরাম। শহরটা মূলত পর্যটনকেন্দ্রিক। স্থানীয়দের থেকে পর্যটকদের সংখ্যায় এখানে বেশী। শিল্প-কারখানার প্রভাব এখানে নেই। তাই গাড়ীর ভীড়ও নেই। এখানে বাইক ভাড়া পাওয়া যায়। ইচ্ছা করলে আপনি বাইকভাড়া করে শহরটা ঘুরে দেখতে পারেন।

লেগুনা টাইপের তবে আমাদের দেশের লেগুনা থেকে অনেক আধুনিক একপ্রকার গাড়ী শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা সবসময় চলাচল করে। অল্প খরচে এই গাড়ীতে সারা শহরটা ঘুরে দেখা যায়। আর আছে স্পেশাল দোতাআলা টুরিস্ট বাস। এই বাসে চড়ার মজাই আলাদা।
থাই নারী-পুরুষ
আমার পাঁচদিনের অভিজ্ঞতায় যেটা দেখেছি, থাই নারীরাই থাইল্যান্ডের চালিকাশক্তি। দোকান-পাট, রেস্তোরা, বার, আতিথেয়তা সর্বত্রই থাই নারীরা পরিচালনা করছে।রাস্তাঘাটে যে পরিমাণ থাই নারী চোখে পড়ে সে পরিমাণ থাই পুরুষের দেখা মেলে না। অন্য সব পেশা বাদ দিয়ে থাই পুরুষরা শুধু গাড়ীর ড্রাইভার আর দালালী পেশাকেই পুরুষোচিত পেশা হিসেবে ধারণ করছে। অন্য সবক্ষেত্রেই থাই নারীয়া সব। থাই নারীরা নিজেই পণ্য হচ্ছে আবার তারাই সকল কর্ম পরিচালনা করছে।

থাইল্যান্ডে প্রচুর হিজড়া চোখে পড়বে। তারা অন্যদের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আমাদের দেশের মতো সমাজের হেয় শ্রেণী হিসেবে গণ্য হয় না।
খাবার-দাবার
আমরা পাঁচদিনের ট্যুর প‌্যাকেজে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। খাবার প‌্যাকেজের ভিতরে অন্তর্ভুক্ত। তাই পাঁচদিন প্রায় সববেলায় হোটেলে খাবার খেতে হয়েছে। তিন তারক-চার তারকা এই হোটেলগুলো সকলদেশের মানুষের খাদ্যভাস বিবেচনায় সার্বজনিন খাবার মেনু সেট করে।


তাই হোটেলের খাবারগুলোতে আসলে দেশীয় খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না। দেশীয় খাবারের স্বাদ নিতে হলে স্থানীয় রেস্তোরায় ঢু মারতে হবে। আমাদের সেই সুযোগ হয়ে উঠেনি অথবা বলা যায় সেই সুযোগ তৈরি করার সৎসাহস কেউ দেখায় নি। আমাদের দেশের ভ্রাম্যমান চটপটি-ফুচকা, মাংসের চাপের দোকানের মতো ওদেশে রাস্তায় রাস্তায় প্রচুর ভ্রাম্যমান দোকান দেখলাম যেখানে শকুরের মাংস আর কী সব হাবিজাবি দেদারচ্ছে বিক্রি হচ্ছে। সত্যি বলতে এগুলো খাবারের রুচি হয়নি। পাতায়া সৈকতে ২০ বাথ দিয়ে ডাবের পানি খেয়েছিলাম। এমন মিষ্টি ডাবের পানি আমি আমার লাইফে খাইনি।

তবে আফসোস রয়ে গেল, ডাবের ভিতরে জমা শাশ না খাওয়ার। ডাবের শাশ যে সুস্বাদু খাবার ওরা এইটা জানেই না। বহুবার বললাম, দা দিয়ে ডাবটা দ্বিখন্ডিত করে দিতে। কিন্তু ডাবওয়ালা আমার কথা কানে না দিয়ে বার বার ডাস্টবিন দেখিয়ে দিলো। বুকের ভিতরে হাহাকার জমাট বেধে ডাবটা ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করলাম।
ফিরে আসার সময় প্লেন তিনঘন্টা লেট। শুনে আমার তো মহাখুশি। আরও কিছু সময় ঘোরাঘুরির সময় পাওয়া গেল। প্লেন ডিলে হওয়াতে প্রত্যেকেই ২০০ বাথ করে লাঞ্চ কুপন দেওয়া হলো। ২০০ বাথের সাথে আরো ৪৫বাথ যোগ করে সুবর্নভুমি এয়ারপোর্টে বসে নুডুলস খেলাম। নুডুলসটা শুধু সেদ্ধ, চিংড়ি, লতা-পাতা যেগুলো দিয়েছিল একদম কাঁচা। অভ্যাস নাই তো, একটু কষ্ট হয়, তবে খাওয়া যায়। স্বাদ খারাপ না।

[থাই নুডুলস]
আমার সহসঙ্গী বেশি ভাব দেখাতে যেয়ে স্যুপ অর্ডার দিলো। স্যুপ খাবার জন্য দুইটা কাঠি ধরায় দিলো। এই কাঠি দিয়ে তরল স্যুপ কিভাবে খায়?

[দুইকাঠিতে স্যুপ খাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চলছে]
খাবার ভিতরে থাইল্যান্ডে সবচেয়ে সস্তা খাবার হলো এ্যালকোহলযুক্ত পানিয়। একটা বিয়ার ক্যান ২৬ বাথ আর হাফ লিটার মিনারেল ওয়াটার ৪৩ বাথ। আপনি তাহলে কোনটা খাবেন? এখানে বিভিন্ন স্বাদের জুস পাওয়া যায়। কয়েক স্বাদের জুস খেয়ে দেখেছি। স্বাদ ভালো।
শেষ করছি নাসির ভাইয়ের বাংলা খাবারের অভিজ্ঞতা দিয়ে। ব্যাংককে থাকাকালীন দুইবেলা নাসির ভাইয়ের বাংলা খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আসলে আমরা বাঙালী, গরম ভাতা আর ডাল ছাড়া আমাদের পেট ভরে কিন্তু মন ভরে না। নানা স্টেশন থেকে হোটেল অ্যাম্বেসেডর-এর পাশেই নাসির ভাইয়ের বাংলা খাবারের দোকান।

বাংলা খাবারের ঘ্রান শুনেই আমার খুশিতে বাকবাকুম। ধোয়া উঠা ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, গরু ভুনা, মুরগীর ঝোল; আহ জগতের সেরা খাবার। পেট ভরে খেলুম আর নাসির ভাইকে বারং বার ধণ্যবাদ জ্ঞাপন করলুম। সবচেয়ে বড় কথা পরিচিতি পরিবেশে বাংলায় কথা বলার মানুষ পাওয়া গেল। গর্দভ থাইবাসীরা না পারে ইংরেজী না বাংলা। এই কয়দিন চ্যাঙ ব্যাঙ শুনতে শুনতে হাপিয়ে উঠেছিলাম।
শেষকথা
ধারাবাহিকভাবে লেখাটির আজ এখানেই পরিসমাপ্তি। তবে শেষ করার আগে শুধু এইটুকুই বলি, থাই্ল্যান্ড সুন্দর তারচেয়েও সুন্দর আমার বাংলাদেশ। আমার দেশের সেন্টমার্টিনের যে সৌন্দর্য তার সাথে পাতায়া সৈকতের কোন তুলনা হয় না। বান্দরবানের নীলগিরির প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্য্য অতুলনীয়। প্রাকৃতিকভাবে আমরা যে সম্পদ পেয়েছি এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ আর একটু সাজিয়ে তুলতে পারলে পর্যটনশিল্পে আমরা যেকোন দেশকেই হার মানাতে পারি। আমার এর আগেও ভুটান, নেপাল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এসব দেশ ভ্রমণে আমার মনে হয়েছে, এতো অল্প খরচে প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য্য আর কোথায় উপভোগ করা সম্ভব নয়। 
লেখকঃ আলোকিত পৃথিবী