ঢাকা টু ব্যাংকক

[আকাশ থেকে ব্যাংকক শহর]
ইমিগ্রেশনের শক্ত গেড়ো কোন রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পার হয়ে গেলাম। সাধারণত দেখা যায়, এয়ারপোর্টে কোথাও না কোথাও গিট্টু লাগে। হয় ফ্লাইট ডিলে অথবা বোর্ডিং পাসে সমস্যা বা ইমিগ্রেশনে শক্ত গেড়ো। এবার কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই ঠিক একটায় বাংলাদেশ বিমান আমাদের নিয়ে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। ছোটবেলা থেকে বিমালবালাদের রুপের যে অপরুপ বর্ণনা শুনে এসেছি বাংলাদেশ বিমানে তার ছায়াও মেলে না। বিমানবালাদের কড়া মেকাপে বয়স ঢাকা আপ্রাণ চেষ্টা দেখে মায়াই লাগে। আহারে বেচারীরা ! টলটলে চেহারার বিমানবালা মুখে তার সদা মিষ্টি হাসি না পেলাম অন্তত সুন্দর ব্যবহার তাদের কাছে আসা করতেই পারি। ব্যবহারে তারা প্রাইমারি স্কুলের কড়া মেজাজের হেডমিস্ট্রেস। কথা বলেন ধমকের সুরে, এই যে খাবারটা ধরেন। বিমান আকাশে উড্ডয়নের পরপর খাবার এলো। পুরাই বাঙালী খাবার। ভাত, মাংস, সবজি, ফিন্নি, কোকাকোলা আর চা। পেট পুরেই খেলুম। আবার কবে বাঙালী খাবার খেতে পারি তার তো ঠিক না। থাই্ল্যান্ডে কেমন ধারার খাবার অপেক্ষা করছে কে জানে? খাওয়া পর্ব শেষ হতে না হতেই টয়লেটে বিশাল লাইন পরে গেল। প্রথমে ভাবলাম বাংলাদেশ বিমানের অবদান। পরে বোঝাগেল এসবই আদমব্যবসায়ী কারসাজি। বিমানে মালয়েশিয়াগামী প্রায় পশ্চাশজনের শ্রমিকের একটা দল উঠেছে। তারা ব্যাংকক হয়ে মালয়েশিয়া যাবে। আশ্চর্যের ব্যাপার মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের কারোরই পাসপোর্ট নেই। ভুয়া পাসপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হয়েছে। সেই পাসপোর্ট প্লেন-এ উঠেই ছিড়ে ফেলল। এক দালালকে দেখলাম সবাইকে নতুন আরেকটা পাসপোর্ট দিল। যে পাসপোর্টে সবার নাম পরিচয় চেঞ্জ। কামালের হয়ে গেল জামাল, পিতার নাম আক্কাসের এর পরিবর্তে বক্কার। এমনকি নিজের চেহারার সাথে পাসপোর্টের ছবির কোন মিল নাই। মালয়েশিয়া শ্রমিকের সবাই নিরক্ষর। নতুন পাসপোর্টে কী আছে কেউই পড়তে পারে না। এই পাসপোর্ট নিয়ে এরা কিভাবে মালয়েশিয়া যাবে আল্লাহই জানে। এরা নাকি একেকজনে দালালকে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছে। এখন দালালের খেলার পুতুল। যখন যা বলছে তাই করছে। দালালের নির্দেশে পুরানো পাসপোর্ট ছিড়ে কমোডে ফেলছে। কমোডের ব্যবহার হয়তো এদের জানা নেই। ফলাফল কমোডে পাসপোর্টের জ্যাম বেধেছে। বিমান ক্রুরা এমনিতেই সবসময় ত্যক্ত বিরক্ত থাকে এখন পুরাই ফায়ার। প্লেনে উঠেছি না ছয় নম্বর বাসে এই মুহুর্তে বলা মুশকিল। প্লেন জার্নিতে কখনই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। মাথায় বেশ চাপ লাগে। কানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়। আজকে আদমব্যবসায়ীদের কর্মকান্ড দেখতে দেখতে সময়টা খুব দ্রুতই কাটলো। স্থানীয় সময় সোয়া চারটায় আমরা সুভর্নভুমি বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম।

[ব্যাংককের মাটিতে বাংলাদেশ বিমানের প্রতিবিম্ব]
গ্রিনিচমিন সময় অনুসারে থাইল্যান্ড বাংলাদেশ থেকে একঘন্টা এগিয়ে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী থাইল্যান্ড সময় অনুসারে হবে। তাই ঘড়ির কাটাটা থাইল্যান্ড সময় অনুসারে বদলে নিলাম। সুভর্নভুমি বিমানবন্দরে পা দিয়ে চোখ ধাধিয়ে গেল। ঝকঝকে চকচকে মেঝে। কিছুদূর পরপরই এস্কেলটর। বাংলাদেশ এস্কেলটরগুলো এক ফ্লোর থেকে উপরের ফ্লোরে নিতে ব্যবহার করা হয়। এখানে দেখলাম এরা হাটার বদলে এস্কেলটর ব্যবহার করে। আপনি অনেকদূর থেকে কষ্ট করে থাইল্যান্ড এসেছেন আপনার হাটার কষ্ট কিছুটা উপশমের জন্য ইমিগ্রেশন লাইন পর্যন্ত এস্কেলটরের ব্যবস্থা রয়েছে। এস্কেলটর পা রাখলে এস্কেলটর আপনাকে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইমিগ্রেশনের সামনে বিশাল লাইন। একই সময়ে সুভর্নভূমির বুকে অনেকগুলো প্লেন অবতরণ করেছে। বিভিন্ন দেশের নানা বর্ণের মানুষ, নানা রকমের পোশাক, ভাষা আমার চারপাশে ভীড় জমাচ্ছে। সামনের কয়েকদিন অপরিচিত শব্দের চ্যাংব্যাং শব্দ শুনতে হবে। ইমিগ্রেশনের লাইনে দাড়িয়ে তার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভাষা বিড়ম্বনা প্রথম অভিজ্ঞতা হলো ইমিগ্রেশন দাড়িয়েই। ইমিগ্রেশন অফিসারকে অ্যারাইভাল কার্ড আর পাসপোর্ট দিয়ে সামনে দাড়িয়েছি। ইমিগ্রেশন অফিসার ইংরেজি অথবা থাই ভাষা ব্যা ব্যা জাতীয় কিছু বলল। আমি কিছুই না বুঝে বোকার মতো দাড়িয়ে রইলাম। উনি আবারও ব্যা ব্যা জাতীয় কিছু বলল এবং হাতের ইশারা করলো। হাতের ইশারায় বুঝলাম, উনি পিছনে সরে ক্যামেরার সামনে দাড়াতে বলছে। আর মুখে বলছিল, 'ব্যাক'। এমনি থাই উচ্চারণ যে প্রথমে কিছুই বুঝবার পারি নাই। এক মিনিটেই ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ হয়ে গেল। এবার লাগেজ সংগ্রহের পালা। লাগেজের পঁচিশটা বুথ। কোনটায় বাংলাদেশ বিমানের লাগেজ কে জানে? কেউ একজন বলল ১৬ নম্বর কাউন্টারে বাংলাদেশ বিমানের লাগেজ পাওয়া যাচ্ছে। ১৬ নম্বর কাউন্টারে লাগেজ ঠিক সময়ে হাজির হলো।

[যে যার লাগেজ বুঝে পেয়েছে। সবার মনে আনন্দ ধরে না]
সুভর্নভূমির সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রথমবারের মতো ব্যাংককের মাটিতে পা রাখলাম। প্রথমবারের মতো সাদা হাতির দেশে।
ব্যাংকক টু পাতায়া

সুর্ভনভূমি বিমানবন্দরের বাইরে আমাদের জন্য মাইক্রোবাস অপেক্ষা করছিল। ব্যাংকক থেকে আমরা এখন সরাসরি পাতায়া চলে যাবো। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার। আমরা নয়জন পাতায়ার উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসে উঠে বসলাম। প্রতিটা মাইক্রোবাসে ড্রাইভারসহ ১০জন বসা যাবে। দশ জন মানে দশ জনই। এগারজন ঠাসাঠাসা উঠবে তা হবে না। থাইল্যান্ডে ট্রাফিক আইন অনেক কড়া। এরা লাল বাতি নীল বাতির প্রতি অনেকবেশি নির্ভরশীল। ড্রাইভারসাহেব আমাদের নয়জনকে নিয়ে পাতায়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। একেই বল হাইওয়ে রাস্তা। চার চার আটলেনের প্রশস্ত রাস্তা। গাড়ী ছুটছে ঘন্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার বেগে। হাইওয়ে রাস্তায় কোন বাঁক নেই। নাক বরাবর সোজা সরলরেখায় পাতায়া শহরের অভিমূখে চলে গেছে । একটা ফ্লাইওভারে উপর আরেকটা ফ্লাইওভার চলে গেছে উদ্দেশ্য একটা রাস্তায় কোন বাঁক থাকবে না। ভাবখানা এমন হাইওয়ে রোড যেকোন মূল্যে সরলরেখায় থাকতে হবে। পাতায়া শহরের ঢোকার আগমুহুর্তে রাস্তা সামান্য বাঁক নিছে, তার আগমুহুর্ত পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হাইওয়ে রাস্তা সরলরেখায় টানা হয়েছে। পাতায়া যাওয়া পথেই থাইল্যান্ডে প্রথম সূযাস্ত দেখলাম। রক্তিম সূর্য ধূসর মাঠে অস্ত গেল।

হাইওয়ে রাস্তার দুইপাশে ফাঁকা মাঠ। কোথাও কোথাও আমবাগান, কলাবাগান দেখে অবাক হবেন না। কখনও রাস্তার পাশে ছোট্ট টিলাও চোখে পড়বে। হাইওয়ে রাস্তার সবই ঠিক আছে শুধু বিরক্তকর বিষয় এখানে দিকনির্দেশনাগুলো সবই থাইভাষায় লেখা। থাইভাষা জানি না তাই গাড়ী আদ্য পাতায়া যাচ্ছে না ড্রাইভার সাহেব অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বোঝার উপায় নেই। আমি ক্লান্তিতে একটু চোখ বুজেছিলাম। মাইক্রোবাসের অন্যদের হুল্লোড়ে চোখ মেলে দেখি আমাদের মাইক্রোবাস শহরে প্রবেশ করেছে।

রাস্তার দু'পাশে দোকানের সারি। শহর জুড়ে নিয়ন আলোর ঝলকানি। স্বল্পবসনা নারী। ড্রাইভার সাহেব বিনোদন বাড়িয়ে দিতে বলিল, 'কী লেডি লাগবে?' শুনিয়ে ছেলেদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো। এভাবে সরাসরি লেডির প্রস্তাব পাতায়া শহরে ঢোকার সাথে সাথেই পেয়ে যাবে ছেলেরা ভাবে নি। কে যেন বলছিল, থাইল্যান্ডের সব গাড়ীর ড্রাইভারই পেশায় দালাল। কথাটা সত্য, পরবর্তীতে তার প্রমাণ আমরা বহুবার পেয়েছি।
(চলবে...)
ব্যাংকক টু পাতায়া

সুর্ভনভূমি বিমানবন্দরের বাইরে আমাদের জন্য মাইক্রোবাস অপেক্ষা করছিল। ব্যাংকক থেকে আমরা এখন সরাসরি পাতায়া চলে যাবো। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার। আমরা নয়জন পাতায়ার উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসে উঠে বসলাম। প্রতিটা মাইক্রোবাসে ড্রাইভারসহ ১০জন বসা যাবে। দশ জন মানে দশ জনই। এগারজন ঠাসাঠাসা উঠবে তা হবে না। থাইল্যান্ডে ট্রাফিক আইন অনেক কড়া। এরা লাল বাতি নীল বাতির প্রতি অনেকবেশি নির্ভরশীল। ড্রাইভারসাহেব আমাদের নয়জনকে নিয়ে পাতায়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। একেই বল হাইওয়ে রাস্তা। চার চার আটলেনের প্রশস্ত রাস্তা। গাড়ী ছুটছে ঘন্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার বেগে। হাইওয়ে রাস্তায় কোন বাঁক নেই। নাক বরাবর সোজা সরলরেখায় পাতায়া শহরের অভিমূখে চলে গেছে । একটা ফ্লাইওভারে উপর আরেকটা ফ্লাইওভার চলে গেছে উদ্দেশ্য একটা রাস্তায় কোন বাঁক থাকবে না। ভাবখানা এমন হাইওয়ে রোড যেকোন মূল্যে সরলরেখায় থাকতে হবে। পাতায়া শহরের ঢোকার আগমুহুর্তে রাস্তা সামান্য বাঁক নিছে, তার আগমুহুর্ত পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হাইওয়ে রাস্তা সরলরেখায় টানা হয়েছে। পাতায়া যাওয়া পথেই থাইল্যান্ডে প্রথম সূযাস্ত দেখলাম। রক্তিম সূর্য ধূসর মাঠে অস্ত গেল।

হাইওয়ে রাস্তার দুইপাশে ফাঁকা মাঠ। কোথাও কোথাও আমবাগান, কলাবাগান দেখে অবাক হবেন না। কখনও রাস্তার পাশে ছোট্ট টিলাও চোখে পড়বে। হাইওয়ে রাস্তার সবই ঠিক আছে শুধু বিরক্তকর বিষয় এখানে দিকনির্দেশনাগুলো সবই থাইভাষায় লেখা। থাইভাষা জানি না তাই গাড়ী আদ্য পাতায়া যাচ্ছে না ড্রাইভার সাহেব অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বোঝার উপায় নেই। আমি ক্লান্তিতে একটু চোখ বুজেছিলাম। মাইক্রোবাসের অন্যদের হুল্লোড়ে চোখ মেলে দেখি আমাদের মাইক্রোবাস শহরে প্রবেশ করেছে।

রাস্তার দু'পাশে দোকানের সারি। শহর জুড়ে নিয়ন আলোর ঝলকানি। স্বল্পবসনা নারী। ড্রাইভার সাহেব বিনোদন বাড়িয়ে দিতে বলিল, 'কী লেডি লাগবে?' শুনিয়ে ছেলেদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো। এভাবে সরাসরি লেডির প্রস্তাব পাতায়া শহরে ঢোকার সাথে সাথেই পেয়ে যাবে ছেলেরা ভাবে নি। কে যেন বলছিল, থাইল্যান্ডের সব গাড়ীর ড্রাইভারই পেশায় দালাল। কথাটা সত্য, পরবর্তীতে তার প্রমাণ আমরা বহুবার পেয়েছি।
ওয়াকিং স্ট্রীট

রাত্রের খাবার শেষে আমরা গেলাম ওয়াকিং স্ট্র্রীট। ওয়াকিং স্ট্রীট নাম শুনেই বুঝছেন হাটাহাটি করার রাস্তা। সন্ধ্যার পরে রাত দুইটা পর্যন্ত এই রাস্তায় কোন যান চলে না। সবাই হাটে আর নয়নভরে উপভোগ করে রাস্তার দুই পাশের বর্ণিল জগত। বাইরের জগত, পর্দারর আড়ালের জগত। পাতায়া সৈকতের পাশেই প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে ওয়াকিং স্ট্রীটের আধিপত্য। বিনোদন ভরপুর রঙিন জগত। ওয়াকিং স্ট্রীট রাস্তায় নেমে প্রথমেই ভিমড়ি খেলাম। কই এলাম রে বাবা ! রাস্তার দুইপাশে বারের দোকান সারি সারি। দোকানের সামনে কামুকি ভঙ্গিমায় স্বল্পবসনের নারীরা আগন্তুকদের দিকে তাকিয়ে মোহময় হাসি দিচ্ছে। কেউ যদি সেই হাসিতে সম্মোহিত হয়। তার জন্য কালো পর্দা ঢাকা বারে অপেক্ষা করছে আরো মোহনীয় জগত।

[ওয়াকিং স্ট্রীটের লাস্যময়ী নারীরা]
হলিউডের সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখেছি। লাস ভেগাসের রঙিন আলোচ্ছটা এই পাতায়াতেই পাওয়া যাবে ভাবিনি। এখানে মদ, নারী, যৌনতা কোন ব্যাপারই না। ওয়াকিং স্ট্রীট জুড়েই সারি সারি বারবনিতারা নিজেদের বিপননের জন্য তৈরি হয়ে আছে। প্রতি দশমিটার পর পর দালালরা আপনার সামনে হাজির হবে। হাতে প্লাকার্ড। চিৎকার করে আগন্তকদের আহবান জানাচ্ছে। *** শো দেখার জন্য। কালো পর্দারর আড়ালে কী শো চলছে বারের সামনে দাড়ানো নারীদের ভঙ্গিমায় কিছুটা আন্দাজ করা যায়।

[নাইট ক্লাব]
পর্দার বাইরের দৃশ্যও কম উপভোগ্য নয়। ভোক্তাদের আকর্ষণে তাদের আয়োজনও ব্যপক। বারের দোকানে বসে মনের আনন্দে অ্যালকোহল পান করুন আর হাত ছোয়ালেই পাওয়া যায় এমন দূরত্বে উপভোগ করুন স্বল্পবসনা নারীদের উদ্দ্যম নৃত্য। অবশ্য একে নৃত্য না বলে জিমন্যাস্টিকের কসরতই বলাই বেশি মাননসই। ছোট মঞ্চে রড ধরে স্বল্পবসনারা শরীরকে নানা ভঙ্গিমায় কষ্টকরভাবে ঘুরাচ্ছে। দেখে মায়ায় হয়। আহা বেচারীরা !

শুধু পানীয়র জন্যই আপনাকে পয়সা খরচ করতে হবে। এতোকাছে বসে এই যে স্বল্পবসনা নারীদের নৃত্য দেখেছেন তার জন্য কোন পয়সা খরচ না করলেও চলে। এইসব কিছু যদি আপনার কাছে অশ্লীল মনে হয় তাহলে না হয় নির্ভেজাল সঙ্গীতই শুনন। অথবা ড্যান্স পার্টিতে যোগ দিন। অথবা রেস্তোরায় বসে সামুদ্রিক মাছ খেতে সন্ধ্যাটা উপভোগ করুন। ওয়াকিং স্ট্রীট কেউ এসে নিরাশ নাহয় তার সব ব্যবস্থায় এখানে করা আছে। যার যেমন খুশি মনভরে বিনোদন নিন। ইচ্ছা হলে পয়সা খরচ করুন, না করতে চাইলেও কেউ আপনাকে জোড় করবে না। বিনোদনকেই এখানে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে। বিনোদনের নামে কেউ যাতে হেনস্তা না হয় সে ব্যাপারে এরা বেশ সচেতন।
[ওয়াকিং স্ট্রীটের রাস্তায় এক ভিক্ষুক। ভ্যাম্পায়ার সেজে এসেছে]
ওয়াকিং স্ট্রীটে হাটতে হাটতেই দেখলাম স্ট্রীট ম্যাজিক শো, স্ট্রীট ড্যান্স। জীবনে প্রথমবার। থাইল্যান্ডে অনেককিছুই ফার্স্ট টাইম ইন মাই লাইফ হয়ে আছে।
ওয়াকিং স্ট্রীটে হাটতে হাটতে মনে হচ্ছিল আহ্ কী সুন্দর আলোঝলমলে পৃথিবী। কোথাও কোন দূঃখ নেই, কারও মনে কোন কষ্ট নেই। আনন্দই জীবন। জীবন মানেই আনন্দ। ওয়াকিং স্ট্রীটে সন্ধ্যার পরে রাত, রাত থেকে মধ্য রাত কিভাবে যে পেরিয়ে যায়....
সানবাথ
বাংলায় অর্থ দাড়ায় সূর্যস্নান। নেংটি পরে অথবা না পরে সূর্যের আলোর নিচে সাদা চামড়া রোদে পুড়িয়ে কালো করার ব্যর্থ চেষ্টায় সূর্যস্থান।
এই সূর্যস্নান প্রথমবারের মতো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলাম পাতায়ায় আমাদের প্রথমদিন সকালে। সেদিন পাতায়ার আকাশে ঝকঝকে রোদ। এত মূল্যবান রোদ এক মুহুর্ত বৃথা যেতে দিবো না এমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কতিপয় নেংটি পরিহিত সাদা চামড়ার নর-নারীকে দেখা গেল হোটেলের সুইমিংপুলে সকালবেলায়ই আয়েশিভঙ্গিতে সূর্যস্নানে মগ্ন। সুইমিংপুলে নরদের থেকে নারীদের উপস্থিতি বেশি। সচরাচর নারীরায় একটু বেশি রুপ সচেতন কিনা!
হোটেলের লিফট থেকে নেমে বাদিকে চোখ পড়তেই হঠাৎ থমকে গেলাম। গতকাল রাতে হোটেলে উঠেছি তাই রাতের আধারে দেখতে পারা যায়নি। এখন এই ঝকঝকে দিনের আলোয় হোটেলের সুইমিংপুলটা ঝিলমিল করছে। দেখে মনে হয় মার্বেল পাথরের তৈরি। আয়তনে যেমন বড় তেমনি বেশ খোলামেলা। সুইমিংপুলের পাশে ঘুড়েবেড়ানো অথবা বিশ্রাম নেবার অথবা সানবাথ করার, যাই বলেন, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। সাতসকালেই সেই সুব্যবস্থার যথার্থ ব্যবহার সচেষ্ট সাদা চামড়ার নর-নারীরা।
সূর্যস্নান দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা মনকে যে পুলকিত করেছিল। সময়ের সাথে সাথে সেই পুলকভাবটা ম্লান হয়ে গেল। পাতায়া সৈকত, কোরাল আইল্যান্ডে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। এখানে এইটাই স্বাভাবিক। সাদা চামড়ার এই মানুষগুলো বহু দূর থেকে এখানে এসেছে প্রাণভরে রোদের আলো শরীরে মাখামাখি করতে। এমন ঝলমলে আকাশ, রোদ এদের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। শরীরে প্রতিটি কোষই এই স্বপ্নিল আলোর স্পর্শ পেতে চায়

চোখে রোদচশমা। হাতে বই অথবা কানে হেডফোন। প্রায় নগ্ন হয়ে নির্লিপ্তভাবে ঘন্টার পর ঘন্টার এরা কিভাবে খোলা আকাশের নিচে সময় কাটায় মনে কৌতুহল জাগায়। সত্যি বলছি, প্রথম প্রথম হা করে তাকিয়ে ছিলাম। অতি উৎসাহী বাঙলার সন্তানেরা সূর্যস্নান দৃশ্যগুলো ডিজিটাল ক্যামেরার মেমরি কার্ডে সংরক্ষণ করতে লাগলো। কিন্তু সূর্যস্নানরতরা নির্বিকার। তাদের ভাবের কোন পরিবর্তন হলো না। তালি যেমন এক হাতে বাজে না তেমনি যাদের ছবি এত আগ্রহভরে তোলা হচ্ছে তাদের যদি কোন ভাবান্তর না হয় তাহলে সেই কাজে মজাটা কোথায়। তাই বাঙালী সন্তানেরাও অল্পসময়ের মধ্যে উৎসাহ হারিয়ে ফেলল। সানবাথ না আসুন প্রকৃতি দেখি।
পাতায়া সৈকত

পাতায়া সৈকতে এসে মনটায় ভালো হয়ে গেল। এই সেই বিখ্যাত পাতায়া সৈকত? এইখানেই বড় বড় সিনেমার স্যুটিং হয়? আরে এইটা কোন সমুদ্র সৈকত হলো। বাংলাদেশ থেকে যখন আসি তখন মাথায় কত পরিকল্পনা ছিল। সমুদ্র সৈকতে ফুটবল খেলবো না ভলিবল না বিচ ক্রিকেট? খেলাধুলা তো দূরে থাক এতই অপরিসর সমুদ্রসৈকত যে পাশাপাশি হাটার যায়গাও নেই।

[দিনের আলোয় পাতায়া সৈকত]

[রাতের আলোয় পাতায়া সৈকত]
দুইজন মানুষ পাশাপাশি হাটার যায়গা রেখে ছোট্ট সমুদ্রসৈকতের বাকি অংশ সূর্যস্নানের জন্য আরাম কেদারার দখলে। পাতায়া সৈকতে এসে এই কথা ভেবে ভালো লাগছিল যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের তুলনায় পাতায়া সমুদ্রসৈকত কিছুই না। কক্সবাজার সমুদ্রে যে বিশাল ঢেউ, সমুদ্রের গর্জন রোমাঞ্চ জাগায়, সেই ঢেউ, মনমাতানো সমুদ্রের গর্জন পাতায়া সমুদ্র সৈকতে নেই। আমাদের যে সুবিস্তৃত বেলাভুমি তার পাশে ঝাউবনের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এরা কল্পনাও করতে পারে না। দুঃখের বিষয় আমরা সেই ঝাউবন কেটে বিনাশ করছি, সৈকতের যায়গা দখল করে বড় বড় হোটেল-মোটেল তৈরি করছি। আর এরা এদের যতসামান্য প্রাকৃতিক দানকেই দুই হাত ভরে সাজিয়ে রাখছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে আমরা অনেক এগিয়ে কিন্তু আমাদের মানসিক দৈন্যতা আমাদেরকে হ্যাচকা টানে নিচে নামিয়ে দেয়। সমুদ্রের তীর ঘেষেই পাতায়া শহর গড়ে উঠেছে। পর্যটন হোটেলগুলো সমুদ্রের কাছাকাছিই। তাই বলে এরা সমুদ্রের বুকে আঘাত দেয়নি। সমুদ্রকে তার আপন খেয়ালে চলতে দিয়ে তার তীর ঘিরে গড়ে তুলেছে জনপদ।

আনন্দ করতে এসে কেউ যাতে নিরান্দের শিকার না হয়, কারও বুকে শোকের ছায়া নেমে আসে তার জন্য যথেষ্ট সতর্কব্যবস্তা এরা করে রেখেছে। সমু্দ্রে গোসলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় যায়গা নির্দিষ্ট করা আছে। আমাদের দেশে যেইটা হয়, প্রতিবছরই কক্সবাজার সমুদ্রে নেমে কয়েকজন না ফেরার দেশে পারি জমায়। পাতায়া কর্তৃপক্ষ চাই না এমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক। অবশ্য কক্সবাজার সমুদ্রে কিছুদূর পর পর বিপদজনক গিরিখাদ এখানে তেমনটা নাই অথবা আছে। আমরা জানি না। কারণ এরা সমুদ্রের সব যায়গায় নামার জন্য অনুমতি দেয় নি। সমুদ্রে নামার যায়গা নির্ধারিত করে দিয়েছে। সেই যায়গায় আপনি নামলে বিপদমুক্ত থাকবেন।

পাতায়া সমুদ্রসৈকত নিয়ে আর তেমন কিছু বলবার নেই। পাতায়ার মূল আকর্ষণ কোরাল আইল্যান্ড। অপ্রকৃতির অকৃপণ দান বলতে যেমনটি বোঝায় কোরাল আইল্যান্ডে তেমন সৌন্দর্য্য পর্যটকদের অভিভূত করে। তাই পাতায়া সমুদ্র ছেড়ে ঘুরে আসা যাক কোরাল আইল্যান্ড থেকে।
কোরাল আইল্যান্ড

স্পীডবোটে আধাঘন্টায় ... সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হয় কোরাল আইল্যান্ডে। সমুদ্রের মাঝখানে সবুজ পাহাড়সন্নিবেশিত নয়নাভিরাম দ্বীপ। স্পীডবোটে কোরাল আইল্যান্ডে যাবার অভিজ্ঞতাটা দারুন। সমুদ্রের নীলজল চিরে দূরন্তবেগে আমাদের স্পীডবোট কোরাল আইল্যান্ডের পানে ছুটে চলে। এখানকার স্পীডবোটগুলো আকারে বড় এবং দূরন্তগামী। একেকটা স্পীডবোটে পঁচিশজন উঠতে পারে। পঁচিশজন মানে পঁচিশজনই। এরা ছাব্বিশজন কখনই উঠাবে না। এতবড় স্পীডবোটে পঁচিশজন মাত্র! আমাদের দেশে হলে পশ্চাশ নির্বিঘ্নে উঠতে পারতো! স্পীডবোটে উঠেও অনেকনিয়ম কানুন। চুপচাপ বসে থাকতে হবে। এমনকি দাড়ানো যাবে না। আমরা বাঙালী বসে থাকার জাত! ফলাফল যা হলো মাঝ সমুদ্রের স্পীডবোট ড্রাইভার হুট করে স্পীডবোট বন্ধ করে দিল। কী ব্যাপার? কী সমস্যা? স্পীডবোটে কয়েকজন দাড়িয়ে ছবি তুলছে। তারা না বসা পর্যন্ত স্পীডবোট চালু হলো না। চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব না এইটা স্পীডবোট ড্রাইভার বেটা তো বুঝবে না। দূর থেকেই পাতায়ার সৌন্দর্য্য বেশি ভালো লাগে। ঝকঝকে নীল আকাশে, আকাশের নিচে চকচকে নীল জল, পাতায়া সমুদ্রসৈকতের পাশেই মাথা উচুকরে দাড়ানো আকাশ ছোয়া অট্টালিকা।

[ঐ দূরে পাতায়া শহর]
ক্যামেরা নিয়ে আসছি কী খাপ বন্দি রাখার জন্য। তোদের দেশে ঘুড়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা যদি ক্যামেরাবন্দি না করতে পারি তাহলে আসলাম কেন? এতসব নির্বোধ স্পীডবোট ড্রাইভাররে বোঝানো গেল না। তাই শুয়ে, বসে, ক্রলিং করে যতটুকু পারা যায় সমুদ্রভ্রমণের অভিজ্ঞতা ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করলাম। কোরাল আইল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নিঃসন্দেহে পাতায়া সমুদ্র সৈকতকে হার মানায়। কোরাল আইল্যান্ডের পানি গাঢ় নীল, স্বচ্ছ, এতটাই স্বচ্ছ যে পানির নিচে মাছের ঝাক দেখা যায়। পাতায়া সৈকতের মতো এখানকার সমুদ্রসৈকত ছোট নয় যথেষ্ট বড়। আরামসে ফুটবল খেলা যায়। কিন্তু কোথায় খেলা? কিসের খেলা? কোরাল আইল্যান্ডে নেমেই বাঙালীরা স্বভাবতই ছত্র ভঙ্গ হয়ে গেল। যে যেদিকে পেরেছে দৌড় দিছে। এমন প্রকৃতিতে কাউকে কী ধরে রাখা যায়?

নানাদেশের পর্যটকে টইটম্বুর কোরাল আইল্যান্ডের সৈকত। পশ্চিমারা যেমন এসেছে, ভারতীদের সংখ্যাও অনেক, থাইদেশটা যেহেতু অনেক বড় তাই স্বদেশীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। শুধু কালো চামড়া মানুষই চোখে পড়লো না। নানাবর্ণের মানুষ তাই পোশাক-আচারেও বৈচিত্রে ভরপুর কোরাল আইল্যান্ডের এই ছোট দ্বীপটি। প্রকৃতির সানিধ্যে এসে প্রকৃতির সাথেই মিশে যেতে হবে এমন ধারণায় পশ্চিমারা বিকিনিকিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
স্বদেশী থাইদের পাওয়া গেল ঝলমলে রঙের পোশাকে। তাদের বিকিনিকিও ঝলমলে রঙের।

ভারতীয় আর বাঙালীরা পোশাক খূলবে কী খুলবে না এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ঘোরাঘোরি করতে দেখা গেল।
ট্যুর গাইড আমাদের বলে দিয়েছে ঠিক একটায় ছাতার নিচে (আমাদের বসার জন্য নির্ধারিতস্থান) উপস্থিত হতে হবে। প্রথমদিনেই বুঝে গেছি, একটা মানে একটা পাঁচ হতে পারে কিন্তু একটা দশ কখনই নয়। সমুদ্রের জলে মাত্রই গলা পর্যন্ত ডুবেয়েছি এর ভিতরেই একটা বেজে গেল। সময় কী এখানে দ্রুত গতিতে এগোয়? ভেবেছিলাম, একদম পাহাড়ের মাথায় উঠবো। নিচ থেকে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের মাথায় মানুষের জটলা। নিশ্চয়ই ওইখানে প্রকৃতির অপার্থিব কোন সৌন্দর্য্য লুকিয়ে আছে। পাহাড়ের ওপাশে অন্যকোন সৈকত হয়তো আছে। মনের মাঝে এমন হাজারো হয়তোর জন্ম নিয়ে ঠিক একটায় ছুটতে ছুটতে ছাতার নিচে হাজির হলাম। সেই সকাল থেকে দেখছি সাদা চামড়ার মানুষগুলো কী আলস্য ভঙ্গিতে সূর্যস্নান করছে। সৈকতের তীরে নানা ভঙ্গিমায় বিকিনিকি পরিহিত কয়েকজন সুন্দরী মডেলকে দেখা গেল ফটোস্যুটে ব্যস্ত।

কেউ কেউ মহিষের মতো গলা পানিতে শরীর ঢুবিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কারও কোন তাড়া নেই। যত তাড়া ভারতীয় আর আমরা বাঙালীদের। হুড়োহুড়ি করে কোনরকমে নীল জলে ঢুব দিয়ে, ত্যাড়াব্যাকা করে দাড়িয়ে ফটাফট ছবি তুলে দে দৌড়। দুপুরের খানার জন্য লাইনে দাড়িয়ে গেল। কোরাল আইল্যান্ডে আমরা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের খাবার খেলাম। একদম বাঙালী খাবার। ভাত, মুরগীল ঝোল, ডাল, আলূর ডোম। আমার কাছে ডালটাই যা একটু খাবারযোগ্য মনে হলো। আর কোন খাবারেই কোন স্বাদ পেলাম না। এমনকি পানিটাও বিস্বাদ। খাবার শেষতো ট্যুর গাইডের দায়িত্ব শেষ। আমাদেরকে কোনরকমে স্পীডবোটে উঠিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। দুপুরের খাবারের পর পর আমাদের স্পীডবোটে উঠে পড়তে হলো। কোরাল আইল্যান্ড যতই সুন্দর হোক, এক কোরাল আইল্যান্ডে পরে থাকলে তো চলবে না। পাতায়া শহর জুড়েই দর্শনীয় অনেককিছুই রয়েছে। কিন্তু আমাদের হাতে অফুরন্ত সময় নেই। যতসামান্য সময়টা যতটুকু কাজে লাগানো যায়, তাই কোরাল আইল্যান্ডে অল্প সময়ে দারুন মুহুর্ত কাটিয়ে ফিরে এলাম পাতায়া শহরে।
[আকাশ থেকে ব্যাংকক শহর]
ইমিগ্রেশনের শক্ত গেড়ো কোন রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পার হয়ে গেলাম। সাধারণত দেখা যায়, এয়ারপোর্টে কোথাও না কোথাও গিট্টু লাগে। হয় ফ্লাইট ডিলে অথবা বোর্ডিং পাসে সমস্যা বা ইমিগ্রেশনে শক্ত গেড়ো। এবার কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই ঠিক একটায় বাংলাদেশ বিমান আমাদের নিয়ে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। ছোটবেলা থেকে বিমালবালাদের রুপের যে অপরুপ বর্ণনা শুনে এসেছি বাংলাদেশ বিমানে তার ছায়াও মেলে না। বিমানবালাদের কড়া মেকাপে বয়স ঢাকা আপ্রাণ চেষ্টা দেখে মায়াই লাগে। আহারে বেচারীরা ! টলটলে চেহারার বিমানবালা মুখে তার সদা মিষ্টি হাসি না পেলাম অন্তত সুন্দর ব্যবহার তাদের কাছে আসা করতেই পারি। ব্যবহারে তারা প্রাইমারি স্কুলের কড়া মেজাজের হেডমিস্ট্রেস। কথা বলেন ধমকের সুরে, এই যে খাবারটা ধরেন। বিমান আকাশে উড্ডয়নের পরপর খাবার এলো। পুরাই বাঙালী খাবার। ভাত, মাংস, সবজি, ফিন্নি, কোকাকোলা আর চা। পেট পুরেই খেলুম। আবার কবে বাঙালী খাবার খেতে পারি তার তো ঠিক না। থাই্ল্যান্ডে কেমন ধারার খাবার অপেক্ষা করছে কে জানে? খাওয়া পর্ব শেষ হতে না হতেই টয়লেটে বিশাল লাইন পরে গেল। প্রথমে ভাবলাম বাংলাদেশ বিমানের অবদান। পরে বোঝাগেল এসবই আদমব্যবসায়ী কারসাজি। বিমানে মালয়েশিয়াগামী প্রায় পশ্চাশজনের শ্রমিকের একটা দল উঠেছে। তারা ব্যাংকক হয়ে মালয়েশিয়া যাবে। আশ্চর্যের ব্যাপার মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের কারোরই পাসপোর্ট নেই। ভুয়া পাসপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হয়েছে। সেই পাসপোর্ট প্লেন-এ উঠেই ছিড়ে ফেলল। এক দালালকে দেখলাম সবাইকে নতুন আরেকটা পাসপোর্ট দিল। যে পাসপোর্টে সবার নাম পরিচয় চেঞ্জ। কামালের হয়ে গেল জামাল, পিতার নাম আক্কাসের এর পরিবর্তে বক্কার। এমনকি নিজের চেহারার সাথে পাসপোর্টের ছবির কোন মিল নাই। মালয়েশিয়া শ্রমিকের সবাই নিরক্ষর। নতুন পাসপোর্টে কী আছে কেউই পড়তে পারে না। এই পাসপোর্ট নিয়ে এরা কিভাবে মালয়েশিয়া যাবে আল্লাহই জানে। এরা নাকি একেকজনে দালালকে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছে। এখন দালালের খেলার পুতুল। যখন যা বলছে তাই করছে। দালালের নির্দেশে পুরানো পাসপোর্ট ছিড়ে কমোডে ফেলছে। কমোডের ব্যবহার হয়তো এদের জানা নেই। ফলাফল কমোডে পাসপোর্টের জ্যাম বেধেছে। বিমান ক্রুরা এমনিতেই সবসময় ত্যক্ত বিরক্ত থাকে এখন পুরাই ফায়ার। প্লেনে উঠেছি না ছয় নম্বর বাসে এই মুহুর্তে বলা মুশকিল। প্লেন জার্নিতে কখনই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। মাথায় বেশ চাপ লাগে। কানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়। আজকে আদমব্যবসায়ীদের কর্মকান্ড দেখতে দেখতে সময়টা খুব দ্রুতই কাটলো। স্থানীয় সময় সোয়া চারটায় আমরা সুভর্নভুমি বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম।
[ব্যাংককের মাটিতে বাংলাদেশ বিমানের প্রতিবিম্ব]
গ্রিনিচমিন সময় অনুসারে থাইল্যান্ড বাংলাদেশ থেকে একঘন্টা এগিয়ে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী থাইল্যান্ড সময় অনুসারে হবে। তাই ঘড়ির কাটাটা থাইল্যান্ড সময় অনুসারে বদলে নিলাম। সুভর্নভুমি বিমানবন্দরে পা দিয়ে চোখ ধাধিয়ে গেল। ঝকঝকে চকচকে মেঝে। কিছুদূর পরপরই এস্কেলটর। বাংলাদেশ এস্কেলটরগুলো এক ফ্লোর থেকে উপরের ফ্লোরে নিতে ব্যবহার করা হয়। এখানে দেখলাম এরা হাটার বদলে এস্কেলটর ব্যবহার করে। আপনি অনেকদূর থেকে কষ্ট করে থাইল্যান্ড এসেছেন আপনার হাটার কষ্ট কিছুটা উপশমের জন্য ইমিগ্রেশন লাইন পর্যন্ত এস্কেলটরের ব্যবস্থা রয়েছে। এস্কেলটর পা রাখলে এস্কেলটর আপনাকে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইমিগ্রেশনের সামনে বিশাল লাইন। একই সময়ে সুভর্নভূমির বুকে অনেকগুলো প্লেন অবতরণ করেছে। বিভিন্ন দেশের নানা বর্ণের মানুষ, নানা রকমের পোশাক, ভাষা আমার চারপাশে ভীড় জমাচ্ছে। সামনের কয়েকদিন অপরিচিত শব্দের চ্যাংব্যাং শব্দ শুনতে হবে। ইমিগ্রেশনের লাইনে দাড়িয়ে তার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভাষা বিড়ম্বনা প্রথম অভিজ্ঞতা হলো ইমিগ্রেশন দাড়িয়েই। ইমিগ্রেশন অফিসারকে অ্যারাইভাল কার্ড আর পাসপোর্ট দিয়ে সামনে দাড়িয়েছি। ইমিগ্রেশন অফিসার ইংরেজি অথবা থাই ভাষা ব্যা ব্যা জাতীয় কিছু বলল। আমি কিছুই না বুঝে বোকার মতো দাড়িয়ে রইলাম। উনি আবারও ব্যা ব্যা জাতীয় কিছু বলল এবং হাতের ইশারা করলো। হাতের ইশারায় বুঝলাম, উনি পিছনে সরে ক্যামেরার সামনে দাড়াতে বলছে। আর মুখে বলছিল, 'ব্যাক'। এমনি থাই উচ্চারণ যে প্রথমে কিছুই বুঝবার পারি নাই। এক মিনিটেই ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ হয়ে গেল। এবার লাগেজ সংগ্রহের পালা। লাগেজের পঁচিশটা বুথ। কোনটায় বাংলাদেশ বিমানের লাগেজ কে জানে? কেউ একজন বলল ১৬ নম্বর কাউন্টারে বাংলাদেশ বিমানের লাগেজ পাওয়া যাচ্ছে। ১৬ নম্বর কাউন্টারে লাগেজ ঠিক সময়ে হাজির হলো।
[যে যার লাগেজ বুঝে পেয়েছে। সবার মনে আনন্দ ধরে না]
সুভর্নভূমির সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রথমবারের মতো ব্যাংককের মাটিতে পা রাখলাম। প্রথমবারের মতো সাদা হাতির দেশে।
ব্যাংকক টু পাতায়া
সুর্ভনভূমি বিমানবন্দরের বাইরে আমাদের জন্য মাইক্রোবাস অপেক্ষা করছিল। ব্যাংকক থেকে আমরা এখন সরাসরি পাতায়া চলে যাবো। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার। আমরা নয়জন পাতায়ার উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসে উঠে বসলাম। প্রতিটা মাইক্রোবাসে ড্রাইভারসহ ১০জন বসা যাবে। দশ জন মানে দশ জনই। এগারজন ঠাসাঠাসা উঠবে তা হবে না। থাইল্যান্ডে ট্রাফিক আইন অনেক কড়া। এরা লাল বাতি নীল বাতির প্রতি অনেকবেশি নির্ভরশীল। ড্রাইভারসাহেব আমাদের নয়জনকে নিয়ে পাতায়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। একেই বল হাইওয়ে রাস্তা। চার চার আটলেনের প্রশস্ত রাস্তা। গাড়ী ছুটছে ঘন্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার বেগে। হাইওয়ে রাস্তায় কোন বাঁক নেই। নাক বরাবর সোজা সরলরেখায় পাতায়া শহরের অভিমূখে চলে গেছে । একটা ফ্লাইওভারে উপর আরেকটা ফ্লাইওভার চলে গেছে উদ্দেশ্য একটা রাস্তায় কোন বাঁক থাকবে না। ভাবখানা এমন হাইওয়ে রোড যেকোন মূল্যে সরলরেখায় থাকতে হবে। পাতায়া শহরের ঢোকার আগমুহুর্তে রাস্তা সামান্য বাঁক নিছে, তার আগমুহুর্ত পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হাইওয়ে রাস্তা সরলরেখায় টানা হয়েছে। পাতায়া যাওয়া পথেই থাইল্যান্ডে প্রথম সূযাস্ত দেখলাম। রক্তিম সূর্য ধূসর মাঠে অস্ত গেল।
হাইওয়ে রাস্তার দুইপাশে ফাঁকা মাঠ। কোথাও কোথাও আমবাগান, কলাবাগান দেখে অবাক হবেন না। কখনও রাস্তার পাশে ছোট্ট টিলাও চোখে পড়বে। হাইওয়ে রাস্তার সবই ঠিক আছে শুধু বিরক্তকর বিষয় এখানে দিকনির্দেশনাগুলো সবই থাইভাষায় লেখা। থাইভাষা জানি না তাই গাড়ী আদ্য পাতায়া যাচ্ছে না ড্রাইভার সাহেব অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বোঝার উপায় নেই। আমি ক্লান্তিতে একটু চোখ বুজেছিলাম। মাইক্রোবাসের অন্যদের হুল্লোড়ে চোখ মেলে দেখি আমাদের মাইক্রোবাস শহরে প্রবেশ করেছে।
রাস্তার দু'পাশে দোকানের সারি। শহর জুড়ে নিয়ন আলোর ঝলকানি। স্বল্পবসনা নারী। ড্রাইভার সাহেব বিনোদন বাড়িয়ে দিতে বলিল, 'কী লেডি লাগবে?' শুনিয়ে ছেলেদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো। এভাবে সরাসরি লেডির প্রস্তাব পাতায়া শহরে ঢোকার সাথে সাথেই পেয়ে যাবে ছেলেরা ভাবে নি। কে যেন বলছিল, থাইল্যান্ডের সব গাড়ীর ড্রাইভারই পেশায় দালাল। কথাটা সত্য, পরবর্তীতে তার প্রমাণ আমরা বহুবার পেয়েছি।
(চলবে...)
ব্যাংকক টু পাতায়া
সুর্ভনভূমি বিমানবন্দরের বাইরে আমাদের জন্য মাইক্রোবাস অপেক্ষা করছিল। ব্যাংকক থেকে আমরা এখন সরাসরি পাতায়া চলে যাবো। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার। আমরা নয়জন পাতায়ার উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসে উঠে বসলাম। প্রতিটা মাইক্রোবাসে ড্রাইভারসহ ১০জন বসা যাবে। দশ জন মানে দশ জনই। এগারজন ঠাসাঠাসা উঠবে তা হবে না। থাইল্যান্ডে ট্রাফিক আইন অনেক কড়া। এরা লাল বাতি নীল বাতির প্রতি অনেকবেশি নির্ভরশীল। ড্রাইভারসাহেব আমাদের নয়জনকে নিয়ে পাতায়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। একেই বল হাইওয়ে রাস্তা। চার চার আটলেনের প্রশস্ত রাস্তা। গাড়ী ছুটছে ঘন্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার বেগে। হাইওয়ে রাস্তায় কোন বাঁক নেই। নাক বরাবর সোজা সরলরেখায় পাতায়া শহরের অভিমূখে চলে গেছে । একটা ফ্লাইওভারে উপর আরেকটা ফ্লাইওভার চলে গেছে উদ্দেশ্য একটা রাস্তায় কোন বাঁক থাকবে না। ভাবখানা এমন হাইওয়ে রোড যেকোন মূল্যে সরলরেখায় থাকতে হবে। পাতায়া শহরের ঢোকার আগমুহুর্তে রাস্তা সামান্য বাঁক নিছে, তার আগমুহুর্ত পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হাইওয়ে রাস্তা সরলরেখায় টানা হয়েছে। পাতায়া যাওয়া পথেই থাইল্যান্ডে প্রথম সূযাস্ত দেখলাম। রক্তিম সূর্য ধূসর মাঠে অস্ত গেল।
হাইওয়ে রাস্তার দুইপাশে ফাঁকা মাঠ। কোথাও কোথাও আমবাগান, কলাবাগান দেখে অবাক হবেন না। কখনও রাস্তার পাশে ছোট্ট টিলাও চোখে পড়বে। হাইওয়ে রাস্তার সবই ঠিক আছে শুধু বিরক্তকর বিষয় এখানে দিকনির্দেশনাগুলো সবই থাইভাষায় লেখা। থাইভাষা জানি না তাই গাড়ী আদ্য পাতায়া যাচ্ছে না ড্রাইভার সাহেব অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বোঝার উপায় নেই। আমি ক্লান্তিতে একটু চোখ বুজেছিলাম। মাইক্রোবাসের অন্যদের হুল্লোড়ে চোখ মেলে দেখি আমাদের মাইক্রোবাস শহরে প্রবেশ করেছে।
রাস্তার দু'পাশে দোকানের সারি। শহর জুড়ে নিয়ন আলোর ঝলকানি। স্বল্পবসনা নারী। ড্রাইভার সাহেব বিনোদন বাড়িয়ে দিতে বলিল, 'কী লেডি লাগবে?' শুনিয়ে ছেলেদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো। এভাবে সরাসরি লেডির প্রস্তাব পাতায়া শহরে ঢোকার সাথে সাথেই পেয়ে যাবে ছেলেরা ভাবে নি। কে যেন বলছিল, থাইল্যান্ডের সব গাড়ীর ড্রাইভারই পেশায় দালাল। কথাটা সত্য, পরবর্তীতে তার প্রমাণ আমরা বহুবার পেয়েছি।
ওয়াকিং স্ট্রীট

রাত্রের খাবার শেষে আমরা গেলাম ওয়াকিং স্ট্র্রীট। ওয়াকিং স্ট্রীট নাম শুনেই বুঝছেন হাটাহাটি করার রাস্তা। সন্ধ্যার পরে রাত দুইটা পর্যন্ত এই রাস্তায় কোন যান চলে না। সবাই হাটে আর নয়নভরে উপভোগ করে রাস্তার দুই পাশের বর্ণিল জগত। বাইরের জগত, পর্দারর আড়ালের জগত। পাতায়া সৈকতের পাশেই প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে ওয়াকিং স্ট্রীটের আধিপত্য। বিনোদন ভরপুর রঙিন জগত। ওয়াকিং স্ট্রীট রাস্তায় নেমে প্রথমেই ভিমড়ি খেলাম। কই এলাম রে বাবা ! রাস্তার দুইপাশে বারের দোকান সারি সারি। দোকানের সামনে কামুকি ভঙ্গিমায় স্বল্পবসনের নারীরা আগন্তুকদের দিকে তাকিয়ে মোহময় হাসি দিচ্ছে। কেউ যদি সেই হাসিতে সম্মোহিত হয়। তার জন্য কালো পর্দা ঢাকা বারে অপেক্ষা করছে আরো মোহনীয় জগত।

[ওয়াকিং স্ট্রীটের লাস্যময়ী নারীরা]
হলিউডের সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখেছি। লাস ভেগাসের রঙিন আলোচ্ছটা এই পাতায়াতেই পাওয়া যাবে ভাবিনি। এখানে মদ, নারী, যৌনতা কোন ব্যাপারই না। ওয়াকিং স্ট্রীট জুড়েই সারি সারি বারবনিতারা নিজেদের বিপননের জন্য তৈরি হয়ে আছে। প্রতি দশমিটার পর পর দালালরা আপনার সামনে হাজির হবে। হাতে প্লাকার্ড। চিৎকার করে আগন্তকদের আহবান জানাচ্ছে। *** শো দেখার জন্য। কালো পর্দারর আড়ালে কী শো চলছে বারের সামনে দাড়ানো নারীদের ভঙ্গিমায় কিছুটা আন্দাজ করা যায়।

[নাইট ক্লাব]
পর্দার বাইরের দৃশ্যও কম উপভোগ্য নয়। ভোক্তাদের আকর্ষণে তাদের আয়োজনও ব্যপক। বারের দোকানে বসে মনের আনন্দে অ্যালকোহল পান করুন আর হাত ছোয়ালেই পাওয়া যায় এমন দূরত্বে উপভোগ করুন স্বল্পবসনা নারীদের উদ্দ্যম নৃত্য। অবশ্য একে নৃত্য না বলে জিমন্যাস্টিকের কসরতই বলাই বেশি মাননসই। ছোট মঞ্চে রড ধরে স্বল্পবসনারা শরীরকে নানা ভঙ্গিমায় কষ্টকরভাবে ঘুরাচ্ছে। দেখে মায়ায় হয়। আহা বেচারীরা !

শুধু পানীয়র জন্যই আপনাকে পয়সা খরচ করতে হবে। এতোকাছে বসে এই যে স্বল্পবসনা নারীদের নৃত্য দেখেছেন তার জন্য কোন পয়সা খরচ না করলেও চলে। এইসব কিছু যদি আপনার কাছে অশ্লীল মনে হয় তাহলে না হয় নির্ভেজাল সঙ্গীতই শুনন। অথবা ড্যান্স পার্টিতে যোগ দিন। অথবা রেস্তোরায় বসে সামুদ্রিক মাছ খেতে সন্ধ্যাটা উপভোগ করুন। ওয়াকিং স্ট্রীট কেউ এসে নিরাশ নাহয় তার সব ব্যবস্থায় এখানে করা আছে। যার যেমন খুশি মনভরে বিনোদন নিন। ইচ্ছা হলে পয়সা খরচ করুন, না করতে চাইলেও কেউ আপনাকে জোড় করবে না। বিনোদনকেই এখানে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে। বিনোদনের নামে কেউ যাতে হেনস্তা না হয় সে ব্যাপারে এরা বেশ সচেতন।

[ওয়াকিং স্ট্রীটের রাস্তায় এক ভিক্ষুক। ভ্যাম্পায়ার সেজে এসেছে]
ওয়াকিং স্ট্রীটে হাটতে হাটতেই দেখলাম স্ট্রীট ম্যাজিক শো, স্ট্রীট ড্যান্স। জীবনে প্রথমবার। থাইল্যান্ডে অনেককিছুই ফার্স্ট টাইম ইন মাই লাইফ হয়ে আছে।
ওয়াকিং স্ট্রীটে হাটতে হাটতে মনে হচ্ছিল আহ্ কী সুন্দর আলোঝলমলে পৃথিবী। কোথাও কোন দূঃখ নেই, কারও মনে কোন কষ্ট নেই। আনন্দই জীবন। জীবন মানেই আনন্দ। ওয়াকিং স্ট্রীটে সন্ধ্যার পরে রাত, রাত থেকে মধ্য রাত কিভাবে যে পেরিয়ে যায়....
সানবাথ
বাংলায় অর্থ দাড়ায় সূর্যস্নান। নেংটি পরে অথবা না পরে সূর্যের আলোর নিচে সাদা চামড়া রোদে পুড়িয়ে কালো করার ব্যর্থ চেষ্টায় সূর্যস্থান।

এই সূর্যস্নান প্রথমবারের মতো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলাম পাতায়ায় আমাদের প্রথমদিন সকালে। সেদিন পাতায়ার আকাশে ঝকঝকে রোদ। এত মূল্যবান রোদ এক মুহুর্ত বৃথা যেতে দিবো না এমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কতিপয় নেংটি পরিহিত সাদা চামড়ার নর-নারীকে দেখা গেল হোটেলের সুইমিংপুলে সকালবেলায়ই আয়েশিভঙ্গিতে সূর্যস্নানে মগ্ন। সুইমিংপুলে নরদের থেকে নারীদের উপস্থিতি বেশি। সচরাচর নারীরায় একটু বেশি রুপ সচেতন কিনা!
হোটেলের লিফট থেকে নেমে বাদিকে চোখ পড়তেই হঠাৎ থমকে গেলাম। গতকাল রাতে হোটেলে উঠেছি তাই রাতের আধারে দেখতে পারা যায়নি। এখন এই ঝকঝকে দিনের আলোয় হোটেলের সুইমিংপুলটা ঝিলমিল করছে। দেখে মনে হয় মার্বেল পাথরের তৈরি। আয়তনে যেমন বড় তেমনি বেশ খোলামেলা। সুইমিংপুলের পাশে ঘুড়েবেড়ানো অথবা বিশ্রাম নেবার অথবা সানবাথ করার, যাই বলেন, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। সাতসকালেই সেই সুব্যবস্থার যথার্থ ব্যবহার সচেষ্ট সাদা চামড়ার নর-নারীরা।
সূর্যস্নান দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা মনকে যে পুলকিত করেছিল। সময়ের সাথে সাথে সেই পুলকভাবটা ম্লান হয়ে গেল। পাতায়া সৈকত, কোরাল আইল্যান্ডে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। এখানে এইটাই স্বাভাবিক। সাদা চামড়ার এই মানুষগুলো বহু দূর থেকে এখানে এসেছে প্রাণভরে রোদের আলো শরীরে মাখামাখি করতে। এমন ঝলমলে আকাশ, রোদ এদের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। শরীরে প্রতিটি কোষই এই স্বপ্নিল আলোর স্পর্শ পেতে চায়

চোখে রোদচশমা। হাতে বই অথবা কানে হেডফোন। প্রায় নগ্ন হয়ে নির্লিপ্তভাবে ঘন্টার পর ঘন্টার এরা কিভাবে খোলা আকাশের নিচে সময় কাটায় মনে কৌতুহল জাগায়। সত্যি বলছি, প্রথম প্রথম হা করে তাকিয়ে ছিলাম। অতি উৎসাহী বাঙলার সন্তানেরা সূর্যস্নান দৃশ্যগুলো ডিজিটাল ক্যামেরার মেমরি কার্ডে সংরক্ষণ করতে লাগলো। কিন্তু সূর্যস্নানরতরা নির্বিকার। তাদের ভাবের কোন পরিবর্তন হলো না। তালি যেমন এক হাতে বাজে না তেমনি যাদের ছবি এত আগ্রহভরে তোলা হচ্ছে তাদের যদি কোন ভাবান্তর না হয় তাহলে সেই কাজে মজাটা কোথায়। তাই বাঙালী সন্তানেরাও অল্পসময়ের মধ্যে উৎসাহ হারিয়ে ফেলল। সানবাথ না আসুন প্রকৃতি দেখি।
পাতায়া সৈকত
পাতায়া সৈকতে এসে মনটায় ভালো হয়ে গেল। এই সেই বিখ্যাত পাতায়া সৈকত? এইখানেই বড় বড় সিনেমার স্যুটিং হয়? আরে এইটা কোন সমুদ্র সৈকত হলো। বাংলাদেশ থেকে যখন আসি তখন মাথায় কত পরিকল্পনা ছিল। সমুদ্র সৈকতে ফুটবল খেলবো না ভলিবল না বিচ ক্রিকেট? খেলাধুলা তো দূরে থাক এতই অপরিসর সমুদ্রসৈকত যে পাশাপাশি হাটার যায়গাও নেই।
[দিনের আলোয় পাতায়া সৈকত]
[রাতের আলোয় পাতায়া সৈকত]
দুইজন মানুষ পাশাপাশি হাটার যায়গা রেখে ছোট্ট সমুদ্রসৈকতের বাকি অংশ সূর্যস্নানের জন্য আরাম কেদারার দখলে। পাতায়া সৈকতে এসে এই কথা ভেবে ভালো লাগছিল যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের তুলনায় পাতায়া সমুদ্রসৈকত কিছুই না। কক্সবাজার সমুদ্রে যে বিশাল ঢেউ, সমুদ্রের গর্জন রোমাঞ্চ জাগায়, সেই ঢেউ, মনমাতানো সমুদ্রের গর্জন পাতায়া সমুদ্র সৈকতে নেই। আমাদের যে সুবিস্তৃত বেলাভুমি তার পাশে ঝাউবনের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এরা কল্পনাও করতে পারে না। দুঃখের বিষয় আমরা সেই ঝাউবন কেটে বিনাশ করছি, সৈকতের যায়গা দখল করে বড় বড় হোটেল-মোটেল তৈরি করছি। আর এরা এদের যতসামান্য প্রাকৃতিক দানকেই দুই হাত ভরে সাজিয়ে রাখছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে আমরা অনেক এগিয়ে কিন্তু আমাদের মানসিক দৈন্যতা আমাদেরকে হ্যাচকা টানে নিচে নামিয়ে দেয়। সমুদ্রের তীর ঘেষেই পাতায়া শহর গড়ে উঠেছে। পর্যটন হোটেলগুলো সমুদ্রের কাছাকাছিই। তাই বলে এরা সমুদ্রের বুকে আঘাত দেয়নি। সমুদ্রকে তার আপন খেয়ালে চলতে দিয়ে তার তীর ঘিরে গড়ে তুলেছে জনপদ।

আনন্দ করতে এসে কেউ যাতে নিরান্দের শিকার না হয়, কারও বুকে শোকের ছায়া নেমে আসে তার জন্য যথেষ্ট সতর্কব্যবস্তা এরা করে রেখেছে। সমু্দ্রে গোসলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় যায়গা নির্দিষ্ট করা আছে। আমাদের দেশে যেইটা হয়, প্রতিবছরই কক্সবাজার সমুদ্রে নেমে কয়েকজন না ফেরার দেশে পারি জমায়। পাতায়া কর্তৃপক্ষ চাই না এমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক। অবশ্য কক্সবাজার সমুদ্রে কিছুদূর পর পর বিপদজনক গিরিখাদ এখানে তেমনটা নাই অথবা আছে। আমরা জানি না। কারণ এরা সমুদ্রের সব যায়গায় নামার জন্য অনুমতি দেয় নি। সমুদ্রে নামার যায়গা নির্ধারিত করে দিয়েছে। সেই যায়গায় আপনি নামলে বিপদমুক্ত থাকবেন।

পাতায়া সমুদ্রসৈকত নিয়ে আর তেমন কিছু বলবার নেই। পাতায়ার মূল আকর্ষণ কোরাল আইল্যান্ড। অপ্রকৃতির অকৃপণ দান বলতে যেমনটি বোঝায় কোরাল আইল্যান্ডে তেমন সৌন্দর্য্য পর্যটকদের অভিভূত করে। তাই পাতায়া সমুদ্র ছেড়ে ঘুরে আসা যাক কোরাল আইল্যান্ড থেকে।
কোরাল আইল্যান্ড

স্পীডবোটে আধাঘন্টায় ... সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হয় কোরাল আইল্যান্ডে। সমুদ্রের মাঝখানে সবুজ পাহাড়সন্নিবেশিত নয়নাভিরাম দ্বীপ। স্পীডবোটে কোরাল আইল্যান্ডে যাবার অভিজ্ঞতাটা দারুন। সমুদ্রের নীলজল চিরে দূরন্তবেগে আমাদের স্পীডবোট কোরাল আইল্যান্ডের পানে ছুটে চলে। এখানকার স্পীডবোটগুলো আকারে বড় এবং দূরন্তগামী। একেকটা স্পীডবোটে পঁচিশজন উঠতে পারে। পঁচিশজন মানে পঁচিশজনই। এরা ছাব্বিশজন কখনই উঠাবে না। এতবড় স্পীডবোটে পঁচিশজন মাত্র! আমাদের দেশে হলে পশ্চাশ নির্বিঘ্নে উঠতে পারতো! স্পীডবোটে উঠেও অনেকনিয়ম কানুন। চুপচাপ বসে থাকতে হবে। এমনকি দাড়ানো যাবে না। আমরা বাঙালী বসে থাকার জাত! ফলাফল যা হলো মাঝ সমুদ্রের স্পীডবোট ড্রাইভার হুট করে স্পীডবোট বন্ধ করে দিল। কী ব্যাপার? কী সমস্যা? স্পীডবোটে কয়েকজন দাড়িয়ে ছবি তুলছে। তারা না বসা পর্যন্ত স্পীডবোট চালু হলো না। চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব না এইটা স্পীডবোট ড্রাইভার বেটা তো বুঝবে না। দূর থেকেই পাতায়ার সৌন্দর্য্য বেশি ভালো লাগে। ঝকঝকে নীল আকাশে, আকাশের নিচে চকচকে নীল জল, পাতায়া সমুদ্রসৈকতের পাশেই মাথা উচুকরে দাড়ানো আকাশ ছোয়া অট্টালিকা।
[ঐ দূরে পাতায়া শহর]
ক্যামেরা নিয়ে আসছি কী খাপ বন্দি রাখার জন্য। তোদের দেশে ঘুড়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা যদি ক্যামেরাবন্দি না করতে পারি তাহলে আসলাম কেন? এতসব নির্বোধ স্পীডবোট ড্রাইভাররে বোঝানো গেল না। তাই শুয়ে, বসে, ক্রলিং করে যতটুকু পারা যায় সমুদ্রভ্রমণের অভিজ্ঞতা ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করলাম। কোরাল আইল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নিঃসন্দেহে পাতায়া সমুদ্র সৈকতকে হার মানায়। কোরাল আইল্যান্ডের পানি গাঢ় নীল, স্বচ্ছ, এতটাই স্বচ্ছ যে পানির নিচে মাছের ঝাক দেখা যায়। পাতায়া সৈকতের মতো এখানকার সমুদ্রসৈকত ছোট নয় যথেষ্ট বড়। আরামসে ফুটবল খেলা যায়। কিন্তু কোথায় খেলা? কিসের খেলা? কোরাল আইল্যান্ডে নেমেই বাঙালীরা স্বভাবতই ছত্র ভঙ্গ হয়ে গেল। যে যেদিকে পেরেছে দৌড় দিছে। এমন প্রকৃতিতে কাউকে কী ধরে রাখা যায়?
নানাদেশের পর্যটকে টইটম্বুর কোরাল আইল্যান্ডের সৈকত। পশ্চিমারা যেমন এসেছে, ভারতীদের সংখ্যাও অনেক, থাইদেশটা যেহেতু অনেক বড় তাই স্বদেশীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। শুধু কালো চামড়া মানুষই চোখে পড়লো না। নানাবর্ণের মানুষ তাই পোশাক-আচারেও বৈচিত্রে ভরপুর কোরাল আইল্যান্ডের এই ছোট দ্বীপটি। প্রকৃতির সানিধ্যে এসে প্রকৃতির সাথেই মিশে যেতে হবে এমন ধারণায় পশ্চিমারা বিকিনিকিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

ভারতীয় আর বাঙালীরা পোশাক খূলবে কী খুলবে না এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ঘোরাঘোরি করতে দেখা গেল।
ট্যুর গাইড আমাদের বলে দিয়েছে ঠিক একটায় ছাতার নিচে (আমাদের বসার জন্য নির্ধারিতস্থান) উপস্থিত হতে হবে। প্রথমদিনেই বুঝে গেছি, একটা মানে একটা পাঁচ হতে পারে কিন্তু একটা দশ কখনই নয়। সমুদ্রের জলে মাত্রই গলা পর্যন্ত ডুবেয়েছি এর ভিতরেই একটা বেজে গেল। সময় কী এখানে দ্রুত গতিতে এগোয়? ভেবেছিলাম, একদম পাহাড়ের মাথায় উঠবো। নিচ থেকে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের মাথায় মানুষের জটলা। নিশ্চয়ই ওইখানে প্রকৃতির অপার্থিব কোন সৌন্দর্য্য লুকিয়ে আছে। পাহাড়ের ওপাশে অন্যকোন সৈকত হয়তো আছে। মনের মাঝে এমন হাজারো হয়তোর জন্ম নিয়ে ঠিক একটায় ছুটতে ছুটতে ছাতার নিচে হাজির হলাম। সেই সকাল থেকে দেখছি সাদা চামড়ার মানুষগুলো কী আলস্য ভঙ্গিতে সূর্যস্নান করছে। সৈকতের তীরে নানা ভঙ্গিমায় বিকিনিকি পরিহিত কয়েকজন সুন্দরী মডেলকে দেখা গেল ফটোস্যুটে ব্যস্ত।
কেউ কেউ মহিষের মতো গলা পানিতে শরীর ঢুবিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কারও কোন তাড়া নেই। যত তাড়া ভারতীয় আর আমরা বাঙালীদের। হুড়োহুড়ি করে কোনরকমে নীল জলে ঢুব দিয়ে, ত্যাড়াব্যাকা করে দাড়িয়ে ফটাফট ছবি তুলে দে দৌড়। দুপুরের খানার জন্য লাইনে দাড়িয়ে গেল। কোরাল আইল্যান্ডে আমরা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের খাবার খেলাম। একদম বাঙালী খাবার। ভাত, মুরগীল ঝোল, ডাল, আলূর ডোম। আমার কাছে ডালটাই যা একটু খাবারযোগ্য মনে হলো। আর কোন খাবারেই কোন স্বাদ পেলাম না। এমনকি পানিটাও বিস্বাদ। খাবার শেষতো ট্যুর গাইডের দায়িত্ব শেষ। আমাদেরকে কোনরকমে স্পীডবোটে উঠিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। দুপুরের খাবারের পর পর আমাদের স্পীডবোটে উঠে পড়তে হলো। কোরাল আইল্যান্ড যতই সুন্দর হোক, এক কোরাল আইল্যান্ডে পরে থাকলে তো চলবে না। পাতায়া শহর জুড়েই দর্শনীয় অনেককিছুই রয়েছে। কিন্তু আমাদের হাতে অফুরন্ত সময় নেই। যতসামান্য সময়টা যতটুকু কাজে লাগানো যায়, তাই কোরাল আইল্যান্ডে অল্প সময়ে দারুন মুহুর্ত কাটিয়ে ফিরে এলাম পাতায়া শহরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন