বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৪

পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা ‘সোসং’ ও ‘কোয়াসং’

নাইক্ষ্যংছড়ি
পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় অনাবিষ্কৃত এবং লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা দুটি ঝর্ণা আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব ঝর্ণা দেখলে সৌন্দর্যপিপাসুরা মুগ্ধ হবেন এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
মনোমুগ্ধকর এ দুটি ঝর্ণার সংবাদ পেয়ে অনেকে ছুটে যাচ্ছেন পাহাড় ঘেরা নাইক্ষ্যংছড়ির জারুলিয়াছড়িতে। এ দুটি ঝর্ণা অনেকের কাছেই অপরিচিত।
ঝর্না দুটির মধ্যে একটির উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট ও অপরটি ২০ ফুট। উচু খাড়া পাহাড় হতে ঝর্ণার পানি শো শো শব্দ করে নিচের দিকে পতিত হচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির গাছপালা আর জঙ্গলে ঝর্নার চারপাশ আচ্ছাদিত হয়ে আছে। সেগুলো যেন সবুজের সমারোহ। সেই সাথে পাখির কিচির-মিচির বনের নিস্তব্ধতাকে জাগিয়ে রাখে সারাক্ষণ।
ঝর্না দুটির পাশ দিয়ে রয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন সুড়ঙ্গ। গভীর বন ও তেমন প্রচারণা না থাকায় এ স্থানটিতে স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের খুব বেশি আনাগুনা থাকে না। নাইক্ষ্যংছড়ি গয়াল ফার্ম কিংবা মধ্যম চাকপাড়া হতে ঝর্নায় যাওয়ার একমাত্র উপায় পায়ে হাটা। যাওয়ার পথে কোন ভয় নেই।
ঝর্না দুটি দেখতে যাওয়া কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মানস মহাজন নিলু এ প্রতিবেদককে জানান, পাহাড়ী অঞ্চলের সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি ঝর্ণা দুটি তাদের মুগ্ধ করেছে। তারা প্রথমে ঝর্না দুটির কথা বিশ্বাস না করলেও স্বচোক্ষে দেখার পর বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককে পর্যটনের সম্ভাবনাময়ী ঝর্নায় ঘুরতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এছাড়াও সোমবার এ প্রতিবেদক উল্লেখিত ঝর্না দুটি পরিদর্শন করেন।
    
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ঝর্না অবলোকন করেই ফিরে আসবেননা কিন্তু; এখানে রয়েছে পার্বত্য তিন জেলার মধ্যেকার সুদৈর্ঘ্য ঝুলন্ত সেতু (উপবন পর্যটন লেক)। পাহাড়ী কৃত্রিম বাধঁ (লেক) এর মাঝখান দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের তৈরী করা ঝুলন্ত সেতু আর সবুজের সমারোহ নিসন্দেহে আপনার হৃদয় মন ছুয়ে যাবে। এখানে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে সময় কাটাতে পারেন।
ইতিমধ্যেই এ উপবন পর্যটন কেন্দ্রে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকে ঘুরে গেছেন। আবার চলচিত্র ও টেলিফিল্মও তৈরী হয়েছে অকৃত্রিম সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি উপবন পর্যটন লেকে।
এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়িতে রয়েছে দেশের বৃহত্তর গয়াল প্রজনন খামার। যেখানে পাহাড়ী গরু, ছাগল, মোরগ, হরিণ সংরক্ষণ ও প্রজনন করার প্রকল্প রয়েছে। এর বাইরে যদি হাতে অতিরিক্ত সময় থাকে তা হলে আশারতলী গ্রামে চা বাগান, দ্বিতীয় মালেশিয়া শহর হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া বাইশারীর বৃহত্তর রাবার শিল্প এবং রামু উপজেলা হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বুক চিরে চলে যাওয়া সাড়ে তিনশ বছরের ঐতিহ্য ধারণ করা ঐতিহাসিক শাহ সুজা সড়ক যা আপনার ভ্রমনে নতুন মাত্র যোগ করবে। আর দেরি কেন সময় পেলেই ঘুরে আসুন নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যটন স্পট গুলো।

যেভাবে যাবেন:
বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে বাসে করে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা সদরের বাইপাস অথবা রামু চৌমুহনী নামতে হবে। সেখান থেকে অটো সিএনজি, মাইক্রো কিংবা চাঁদের গাড়ি করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর। তারপর স্থানীয় কারো সহযোগিতা নিয়ে রিক্সা যোগে নাইক্ষ্যংছড়ি গয়াল ফার্ম (গয়াল প্রজনন খামার) এর উপর দিয়ে প্রায় ১কি:মি পায়ে হেটে অথবা মধ্যম চাকপাড়ার মাঝখান দিয়ে প্রায় ৩কি:মি পায়ে হেটে গন্তব্য স্থল জারুলিয়াছড়ি চাকমাঘোনা এলাকায় সোসং ও কোয়াসং ঝর্ণায় চলে যেতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থা:
পর্যটকদের থাকার জন্য নাইক্ষ্যংছড়িতে পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বিশ্রামাগার (রেষ্ট হাউস) রয়েছে। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি বাজারে রাত্রী যাপনের জন্য রয়েছে হোটেল।

খাওয়ার ব্যবস্থা:
ভ্রমনে বের হলে অধিকাংশ মানুষই খাওয়া দাওয়ার কথা ভুলে যায়। তারপরও দিন শেষে কিছু একটা পেটে দিতে হয়। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ সম্মুখে ভাই ভাই রেষ্টুরেন্ট আল আমিন রেষ্টুরেন্ট সহ অসংখ্য ছোট খাবার দোকান রয়েছে।
এসব হোটেলে প্রতি বেলায় জনপ্রতি খেতে ১৫০/২০০টাকার মত খরচ হয়। তবে তরতাজা মাছ, মাংস, সবজি পাওয়া যায় এসব হোটেলে। ফরমালিন যাতীয় কোন দ্রব্য এখানে নেই বললেই চলে। খাওয়ার খরচ একটু কমাতে হলে যেতে হবে অন্যান্য ছোট হোটেলে।

আবুল বাশার নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান)। ০৬ আগস্ট ২০১৪


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন