বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০১৫

নবাবি শহর লখনউ

কাজে অকাজে প্রায় প্রতি বছর দুই বা ততোধিক বার ভারত এ যাওয়া হয়।প্রতিবারই চেষ্টা থাকে কাজের জন্য যেখানে যাওয়া তার বাইরেও দুই একটা স্থান ঘুরে আসার।।একবার হঠাৎ করেই প্লান করলাম যদি সময় পাই তাহলে একবার লখনৌ ঘুরে আসব।ভারতের উত্তরপ্রদেশের রাজধানী হল লখনৌ।এই শহর কে বলা হয় তেহজিব এর শহর আর নওয়াব ওয়াজেদ আলি শাহ এর শহর।তেহজিব শব্দের আভিধানিক অর্থ হল আদবকায়দা।এই শহরের অধিবাসীরা মনে হয় অনেক ওয়েল ম্যানারড।
যাই হোক সেদিন ছিল বুধবার। আমরা কোলকাতায় সারাদিন যে কাজগুলো ছিল তা ঝটপট শেষ করে ফেললাম কেননা সন্ধ্যায় আমাদের ট্রেন।  আশফাক ভাই আগেই আমাদের টিকেট এর ব্যাবস্থা করে রেখেছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার মধ্যে আমরা হাওড়া ষ্টেশন এ পৌঁছলাম। সুদীর্ঘ বাইশ ঘন্টার যাত্রা।
ট্রেন এ ভ্রমণ আমার সবসময় অনেক ভাল লাগে ।ভারতে ট্রেন ভ্রমণে আরও অনেক মজা পাই কারন দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে মজা করে অনেক কিছু দেখতে দেখতে অনেকটা পথ পাড়ি দেয়া যায়। সন্ধ্যা ছয়টা বিশ  মিনিটের ট্রেন কিছুটা দেরি করেই ঢুকল প্লাটফর্মে । পৌনে সাত টার দিকে আমরা ট্রেন এ উঠলাম।   ট্রেন এর নাম দুন এক্সপ্রেস।  আমি মাহমুদা আপা আর দুই জোড়া বয়স্ক দম্পতি এই ছয় জন এক কুপে। এখানেই পরিচয় মায়া মাসির সাথে। অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা মায়া চৌধুরী। একজন মানুষ যে সারাক্ষন কত কথা বলতে পারে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম না। উনারা যাচ্ছিলেন বারাণস এ বিশ্বনাথ এর মন্দির দর্শনে। উনার হাজারো প্রশ্নের মাঝে সবচেয়ে বেশিবার করা প্রশ্ন ছিল আচ্ছা বলতো  এন জি ও কি ? আজকাল অনেকেই বলে আমি বুঝি না ।এরপর আমাদের দুই জনের প্রয়াস তাকে এই বিষয়ে বুঝানোর। উনি বার বার বলছিলেন  ইশ তোরা অনেক ভালো রে ,তোরা এখানেই থেকে যা। আসলে ভদ্রমহিলা আমাদের ডাক নাম শুনে ভেবেছিলেন আমরা বুঝি সনাতন ধরমালম্বি। যাই হোক ভুল ভাঙ্গানোর পরেও উনি বার বার বলছিলেন বুঝলি রে , বাবা বিশ্বনাথ তোদের  মিলিয়ে দিয়েছেন।  রাতের খাওয়া সেরে সবাই যে যার বার্থে উঠে শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙল দুই আঙ্কেল এর তর্ক  শুনে।ঘুম থেকে উঠেই আমি জানালা দিয়ে চোখ মেলে দিলাম । এর মাঝে মায়া মাসি আর উনার বর নেমে গেছেন। মজার ব্যাপার হল আমাদের সহযাত্রী অপর দম্পতি ভেবেছিলেন উনারা আমাদের বাবা মা।
http://i.imgur.com/zjqdz40.jpg

বান্ধবগড়,আমেথি পেরিয়ে আমরা ছুটছি লখনৌ এর পথে ।

http://i.imgur.com/WiLgqrr.jpg
বান্ধবগড় নামটা খুব চেনা চেনা লাগছিল । তারপর মনে হল আমি একটা হিন্দি ভৌতিক নাটক দেখেছিলাম “বান্ধবগড় কি রাজকুমার” । রাজকুমারটা ভ্যাম্পায়ার ছিল ।
বাতাসের গতিতে ট্রেন টা হু হু করে ছুটছে , দুই পাশে গাছপালা আর অবারিত সবুজ ক্ষেত পিছনে ফেলে ।
           
প্রায় জনমানব শূন্য এক ষ্টেশন এ দেখলাম অনেক গুলো শালিক মনের আনন্দে হেটে বেড়াচ্ছে।
http://i.imgur.com/lWtd4pw.jpg
কখনও দল বেঁধে  ঘুরছে , আবার কখনও বা একা একা ।
http://i.imgur.com/UyvhVqm.jpg
বেলা বারোটা নাগাদ আমরা পৌঁছলাম লখনৌ ষ্টেশন এ ।
লখনউ স্টেশন মোটামুটি পরিচ্ছন্ন আর  হাওড়ার মত অত ভিড়ভাট্টা নেই।
http://i.imgur.com/cGqBr3E.jpg
ষ্টেশন এর সামনে অনেক রিকশা আর অটো দাঁড়ানো ছিল আমরা একজনের সাথে কথা বলে ঠিক করলাম  যে আমরা কোলকাতা থেকে এসেছি  সে আমাদের ভালো হোটেল এ পৌঁছে দেবে।এখানে এরকম ভাবেই পর্যটকরা হোটেল ঠিক করে যদি না আগে থেকেই বুকিং দেয়া থাকে।
লখনৌ মুসলিম প্রধান এলাকা এবং রাস্তায় চলতে গিয়ে বুঝলাম কেন এই শহর কে নওয়াব ওয়াজেদ আলি শাহ এর শহর বলা হয়।
http://i.imgur.com/VFaOiXY.jpg
শহরের প্রায় বেশিরভাগ দোকান,শপিংমল বা হোটেল এ নওয়াব ওয়াজেদ আলি শাহ এর প্রতিকৃতি টানানো রয়েছে।
অটো চালক আমাদের নিয়ে এল হোটেল সিমলা প্যালেস এ। মাঝারি মানের বেশ পরিচ্ছন্ন দুই তারকা হোটেল। চেক ইন এর সময় ঘটলো এক মজার ঘটনা ।ম্যানেজার ভেবেছিল আমরা ইন্ডিয়ান আর সে অনুযায়ী রুম ভাড়া ঠিক হয়ে গেল কিন্তু যখন আই কার্ড  চাইলো আর আমরা দিলাম পাসপোর্ট বেচারা তো খুব ই অবাক।কেমন ধরা খেল।এ ব্যাপারটা কোলকাতা ছাড়া অন্য জায়গায় প্রায়ই ঘটে আর আমরাও বেশ মজা পাই। কোলকাতায় বাংলা বললেই বুঝে ফেলে আমরা বাংলাদেশি।
চেক ইন করে আমরা গোসল সেরে খাবার অর্ডার করলাম । এখানে, মানে এই হোটেল এ মাছ মাংস পাওয়া যায় না।তাই ভেজ লাঞ্চ  করলাম ।মশলা আর পনির এর ব্যাবহার একটু  বেশিই মনে হোল তারপর ও খাবারের স্বাদ চমৎকার।   
আমাদের হাতে যেহেতু সময় খুব কম তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সেদিন একটু কেনাকাটা করবো আর আশপাশ টা ঘুরে দেখব। হোটেল থেকে বেরিয়েই গেলাম গৌতমবুদ্ধা মার্গ এ চিকন এর দোকান গুলোতে । লখনৌ বিখ্যাত তার চিকন এর কাজ এর জন্য।

http://i.imgur.com/Kxq420W.jpg
বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরলাম।চমৎকার হাতের কাজ।অনেক গুলো দোকান ঘুরে আমরা গেলাম এক ফ্যাক্টরি তে।ওখানে চমৎকার সব পোশাকের বাহার। দোতালায় শো রুম আর নিচে  গোডাউন।
http://i.imgur.com/iNBQuNN.jpg

অনেক দেহাতী /গ্রাম্য মহিলা কে দেখলাম বস্তা ভরে কাজ করা কাপড় নিয়ে এসেছে।পরে জানলাম এরা সবাই আশেপাশের গ্রামের বউ ঝি। এরা কাপড় নিয়ে  যায় ,কাজ শেষ হলে বুঝিয়ে দিয়ে পারিশ্রমিক নিয়ে যায়।
অনেক দোকান ঘুরে কিছু কেনাকাটা করে  রাতের খাবার খেয়ে ফিরলাম হোটেল এ।হোটেল গেটে দেখা মিলল সেই অটো ওয়ালার যে কিনা আমাদের ষ্টেশন থেকে নিয়ে এসেছিল।ওর সাথে কথা বলে ঠিক করলাম পরেরদিন সে আমাদের সকাল সন্ধ্যা ঘুরাবে আর সব শেষে স্টেশন  এ পৌছে দিবে। পরের দিন সকাল বেলা ব্যাগ প্যাক করে আমরা চেক আউট করলাম আর ব্যাগগুলো  রেখে দিলাম হোটেল কতৃপক্ষের জিম্মায়। কারন আমরা ফিরব বিকালে আর সন্ধ্যা বেলায় চলে যাব স্টেশনে। তাই কয়েক ঘন্টার জন্য একদিনের টাকা দেবার কোন মানেই হয় না।
অটো ওয়ালা সকাল সকাল হাজির হোটেলের গেটে। নাস্তা না করেই বের হলাম ।প্রথমেই সে আমাদের নিয়ে গেল এক রেস্তোরায় সেখানে আমরা পরোটা সবজী আর লখনৌ এর বিখ্যাত মিস্টি দিয়ে নাস্তা করলাম।চা খেয়ে আবার অটোতে গিয়ে বসলাম।
আমাদের অটো ড্রাইভার এর নাম পরমিত কাউর, সে পাঞ্জাব থেকে এখানে এসেছে জীবিকার খোঁজে। অক্টোবর এর মাঝামাঝি সময়ে কটকটা রোদ ! অনেক গরম লাগলেও ঘাম হচ্ছিলো না। সমুদ্র থেকে দূরে বলেই আদ্রতা কম। রাস্তাগুলো মোটামুটি পরিচ্ছন্নই বলা যায়। আমরা প্রথমে গেলাম বড় ইমাম বাড়ায়।
http://i.imgur.com/8KspOD0.jpg
 
প্রবেশ দরওয়াজাটা অনেক বড় । সামনে বাগান । বাগানে নানা রকম গাছপালা । ঘাস দেখে মনে হচ্ছিল সবুজ গালিচা পাতা। বাগানের ওপাশে ইমামবাড়া ।
http://i.imgur.com/Eohnst1.jpg
 
এখানে প্রচুর দর্শনার্থী ভীড় করে আছে। বিশাল এলাকা জুড়ে এই স্থাপনাটি নির্মাণ  করা হয়েছে। ১৭৮৪ সালে নওয়াব আসাফ উদ দউলা এই ইমাম বাড়া টি নির্মাণ করেন।  এখানে রয়েছে  আসফ উদ দউলা মসজিদ।প্রচুর লোকসমাগম হয় এখানে।অনেকেই এসেছেন অবসর সময় কাটানোর জন্য।

http://i.imgur.com/WswrKnb.jpg
অনেকক্ষণ  থেকে তিনটা ছোট ছেলেমেয়ে আমাদের সাথে সাথে ঘুরছিল । ওদের একটা ছবি তুলে দিলাম  এবং  ওরাও ওদের মোবাইল এ আমাদের ছবি তুলে নিল।ভীষন মজা লাগছিল , যদিও কটকটা গরমে জান পেরেশান ।
http://i.imgur.com/hhIACuU.jpg

এরপর আমরা মসজিদ কে পিছনে রেখে এগিয়ে গেলাম এবং  মুল ভবনের ভিতরে প্রবেশ করলাম। কি বিশাল হল রুম!!
http://i.imgur.com/0J2wuzJ.jpg
একজন গাইড ছিলেন আমাদের সাথে। তিনি সব কিছু বর্ণনা করতে করতে আমাদের ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন ।বিশাল ভবনের ভিতরেই আছে নাওয়াব আসাফ উদ দউলার কবর আর পাগড়ি ।
 
http://i.imgur.com/hSOS6Hk.jpg
এখানে অনেকগুলো তাজিয়া আছে যা কিনা মহরম মাসে তাজিয়া মিছিলের সময় বের করা হয়।
   
http://i.imgur.com/eLINXrN.jpg
এরপর গাইড আমাদের নিয়ে গেলেন  উপরতালায়। বিশাল  ভবন  চক মিলানো দালানের এর এক মাথায় দেয়াশলাই এর কাঠি জ্বালালে অন্য প্রান্তের মানুষের কাছে মনে হয় যেন কেউ কানের কাছে জ্বালালো। গাইড আমাদের কাঠি  জ্বালিয়ে  শোনালেন আর বললেন এখান থেকেই নাকি সেই প্রবাদের উদ্ভব  হয়েছে যে, দিওয়ার ও কো ভি কান হোতা হ্যাঁয় মানে দেয়ালের ও কান আছে।   
http://i.imgur.com/M7wKVHl.jpg
এত বড় ভবন যেন ভেঙ্গে না যায় সেইজন্য  অনেক গুলো দেয়াল তুলে ভার এর ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে তৈরি হয়েছে ভুলভুলাইয়া। যেখান থেকে  গাইড এর সাহায্য ছাড়া বেরনো প্রায় অসম্ভব।
          http://i.imgur.com/Bt15EmF.jpg
এই জায়গায় গিয়ে আমার না খালি অক্ষয় কুমার এর কথা মনে পড়ছিল ............ tongue_smile tongue_smile tongue_smile
এরপর আমরা উঠে  গেলাম ছাদে যদিও প্রখর রোদ তারপরও  বাতাস বেশ জোরেই প্রবাহিত হচ্ছিলো আর ভালই লাগছিল।
http://i.imgur.com/4kIQia1.jpg
ওখান থেকে শহরের চমৎকার একটা দৃশ্য  দেখা যায়।পাশ দিয়ে বয়ে চলা গোমতি নদীটিও দেখা যাচ্ছিলো। দূর থেকে পুরো শহরটাকেই দারুন লাগছিলো ।
       http://i.imgur.com/toxmjvY.jpg


       
অনেকক্ষণ ছাদে বসে থেকে নিচে নেমে গেলাম বাগানে । হরেক রকম ফুল আর গাছের সমাহার সেখানে ।
http://i.imgur.com/Di2Tlvb.jpg

এরপর সেখান থেকে বের হয়ে আমরা গেলাম বড় বাউলি (স্টেপ ওয়েল) দেখার জন্য । বাউলি মানে কুয়া ।
http://i.imgur.com/e7hqRmv.jpg

ফটকের বাইরে গাইড কাম দারওয়ান ঝিমাচ্ছিল ।
                   
http://i.imgur.com/7wHecTF.jpg

বাইরে থেকে দেখে মনে হয় যেন গাছপালা ঘেরা এক বাগান।কিন্তু সিড়ি দিয়ে নেমে গেলেই প্রাসাদের ভিতর প্রবেশ করা যায়। শত্রুর চোখ কে ফাকি দেবার জন্য এই ব্যাবস্থা ।
http://i.imgur.com/J8stvxp.jpg

আমরা সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম প্রাসাদের ভিতর। গাইড বললেন দেখেন শত বছরের পুরান সি সি ক্যামেরা ।সত্যি আশ্চর্য জনক ভাবে তৈরি এই কুয়া বা বাউলি। বাইরে থেকে কেউ ভিতরে প্রবেশ করলেই তার প্রতিবিম্ব দেখা যায় বাউলি বা কুয়ার পানিতে।
http://i.imgur.com/1fOp2uQ.jpg
তাই পাহারাদার এর চোখ ফাঁকি দিয়ে কারোই ভিতরে প্রবেশের  সুযোগ নাই।
কিন্তু এখানেও দেখলাম দর্শনার্থীরা পানির খালি বোতল চিপস এর প্যাকেট ইত্যাদি পানিতে ফেলে এর সৌন্দর্য নষ্ট করছে। পুরো জায়গাটাই ভারি সুন্দর।আমরা সব দেখে বের হয়ে আসলাম। বেরনোর সময় গেটের কাছে কিউরিও শপ গুলোতে একটু ঢুঁ মারলাম।
http://i.imgur.com/FnBp2J1.jpg
এক জায়গায় দেখি মেলা ভীড়। পরে দেখি ওদের বিখ্যাত যোগ গুরু বাবা রামদেব।     
http://i.imgur.com/KBmhBJR.jpg
এই স্থাপনা গুলো সরকারি ভাবে সংরক্ষিত ।
বড় ইমাম বাড়া থেকে বের হয়ে আমরা  রওয়ানা দিলাম  ছোট ইমামবাড়ায় ।  এখানে রাস্তাঘাট বেশ পরিস্কার আর ভিড় অনেক কম ।
http://i.imgur.com/4r4tgg0.jpg

যাত্রা পথে দেখলাম বেশ সুদৃশ্য মসজিদ ।
http://i.imgur.com/bL6qmVD.jpg
এর পর এসে থামলাম  ছোট ইমামবাড়ার গেটে ।

http://i.imgur.com/p2NCCan.jpg

এইটি  নির্মাণ করেছেন আসফ উদ দউলার ভাগ্নে।

http://i.imgur.com/e8YPp0i.jpg
                   
প্রধান ফটক দিয়ে ভিতরে ঢুকেই দেখি বায়ু প্রবাহের দিক নির্দেশক ।অনেক সুন্দর একটা পাখি।

http://i.imgur.com/882At4e.jpg
   
বাতাসের দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সাঁই সাঁই করে ঘুরছে।এখানেও অনেক মানুষজন বেড়াতে এসেছে।হাতের বা পাশে একটা মসজিদ কে রেখে আমরা সোজা  এগিয়ে গেলাম। এই ইমামবাড়ায় চমৎকার ক্যালিগ্রাফি দেখলাম।
http://i.imgur.com/8hRuUAI.jpg
             
অনেকেই এসেছে সময় কাটানোর জন্য আবার আপনার এইস্থান কে ডেটিং স্পটও মনে হতে পারে।

http://i.imgur.com/CD6K7U4.jpg
বের হবার সময় দেখে নিলাম শাহী গোসল খানা ।
http://i.imgur.com/33WngZc.jpg
এখান থেকে বের হয়ে আমরা রওয়ানা দিলাম নতুন লখনৌ অর্থাৎ গোমতি নগর এর দিকে ।পথে পড়লো বিখ্যাত রুমি দরওয়াজা ।

http://i.imgur.com/bznrAn6.jpg
http://i.imgur.com/GTQeCZD.jpg

এবার আমাদের গন্তব্য গোমতী নগর। যত সামনে যাচ্ছি রাস্তাঘাট তত পরিষ্কার আর চওড়া পাচ্ছি।
http://i.imgur.com/amUzXJ6.jpg
লখনউ শহর কলকাতা আর ঢাকার মতই দু ভাগে বিভক্ত । নতুন আর পুরাতন লখনউ। স্বভাবতই নতুন লখনউ অনেক পরিকল্পিত । পথেই গাড়ি থামিয়ে দেখে নিলাম মন্দির।
http://i.imgur.com/Yw4EkOe.jpg

খুব ছিমছাম আর পরিছন্ন ।মানুষজন নেই বললেই চলে।
http://i.imgur.com/kJjmBsK.jpg

এরপর সোজা  চললাম  গোমতী নগর এর দিকে । এটা উত্তর প্রদেশের মুখ্য মন্ত্রী মায়াবতি আধুনিক উপ শহর তৈরি করেছেন। পথে অনেক কিছু দেখার মত থাকলেও সেখানে নামার সময় ছিল না ,তাই অটোতে বসেই টুকটাক ছবি তোলার চেস্টা করলাম।

http://i.imgur.com/ZC84mHM.jpg

এরপর হাজির হলাম গোমতী নদীর তীরে গোমতী পার্ক আর মিউজিয়াম ।

http://i.imgur.com/uCr6KnN.jpg

এই স্থাপনা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।অনেকটা মালায়শিয়ার পুত্রাজায়ার আদলে তৈরি। 

http://i.imgur.com/nqMdbdI.jpg
উঁচু উঁচু স্তম্ভ আর হাতির ভাস্কর্যের ছড়াছড়ি ।ওখানে আগত লোকজনের সাথে আলাপ করে জানলাম যে উত্তর প্রদেশের মুখ্য মন্ত্রি মায়াবতির নির্বাচনী প্রতীক হাতি আর তাই এখানে হাতির এত কদর।

http://i.imgur.com/c8rXpZT.jpg
তবে স্থাপনাটা সত্যি দেখার মত। অনেকক্ষণ বসে বসে দেখলাম মানুষজনের আনাগোনা আর শ্রমিকদের ধোয়া মোছা ।

http://i.imgur.com/58GzhDb.jpg
এরপর এখানেই যে বাবা আম্বেদকর মিউজিয়াম আছে তার ভিতরে গেলাম।ভিতরটাও বেশ বড় ।  ভিতরে মায়াবতি আর আম্বেদকরের আবক্ষ মূর্তি ।
http://i.imgur.com/rPEzCSd.jpg
এছাড়াও অই অঞ্চলের জীবন যাত্রা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাস্কর্যের মাধ্যমে ।
http://i.imgur.com/Gq0mILF.jpg

হঠাত মনে হল আমাদের তো আজকেই রওয়ানা হতে হবে তাই তাড়াতাড়িবের হয়ে চলে গেলাম টুন্ডা/টুন্ডে কাবাব এ। সারা লখনৌ এ এর সুনাম ।
আর তাছাড়া  ততক্ষনে পেটের ভিতর ইদুর দৌড় শুরু হয়ে গেছে। খাওয়া শেষে মিস্টি পান মুখে দিয়ে হোটেল আর সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ নিয়ে সোজা স্টেশন এ।

http://i.imgur.com/p7rOxfb.jpg
আকাল তাখত এ আমাদের টিকেট আগেই কাটা ছিল। পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে লখনৌ হয়ে কোলকাতা যায় এই ট্রেন । রাত আটটা পনেরোর ট্রেন প্রায় তিন ঘন্টা লেট করে  এগারোটায় আসলো । ততক্ষণে ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি ।  এই ট্রেন এ ভ্রমণ আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় এক ঘটনা। টক ঝাল আর একটু মিস্টি। সে গল্প না হয় আর একদিন বলব । আবার সুদীর্ঘ ২৬/২৭ ঘন্টার যাত্রা শেষে কোলকাতায় ফিরলাম। লেট করার কারনে অন্যদের চলার সময় থেমে থেমে আসতে হয়েছে তাই সময় লেগেছে বেশি ।
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে সস্তায় মনে হয় ভারতে ভ্রমন করা যায় । বাস ট্রেন প্লেন সব পথেই ভ্রমণ করা যায় ।তাই সময় পেলে ঘুরে আসতেই পারেন এই সুন্দর শহর লখনৌ এ। তবে আমাদের মত এত অল্প সময় না নিয়ে হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে যাওয়াই উত্তম।

Rubaiya Nasreen (Mily)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন