মূল লেখার লিংক

পৃথিবীর মানচিত্রে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশ ব্রুনাই খুব পরিচিত নয় এমন ধারণা অনেকেই করে থাকেন। তবে অনেক দিক দিয়েই এ দেশটির কথা উল্লেখ করা যায়।
ব্রুনাইএর বর্তমান সুলতানি শাসকবর্গের প্রায় ৬০০ বছরের নিরবিচ্ছিন্ন শাসনামলের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। সে সময়ের ব্রুনাইয়ের আর্থ-সামাজিক পটভূমিতে কেমন ছিল জীবিকার্জনের চিত্রটি? এরকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই কিছু অভিজ্ঞতা ও প্রকাশিত তথ্যের সমন্বয়ে এই লেখা। উদ্দেশ্য ছোট্ট, শান্তিময়, সবুজ বনানী ঘেরা সুশাসিত জনপদ ব্রুনাইয়ের একটি দিকের কথা তুলে ধরা। নদীমাতৃক গ্রাম বাংলার সঙ্গে কিছু মিল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয় যা এ লেখার আর একটি কারণ হতে পারে ।
কয়েক বছর আগে পেশাগত কারণে দু’দিনের এক সরকারি সফরে ব্রুনাইয়ে আসার সুযোগ হয়েছিল। সফরসূচিসিতে ছিল ‘জলভাসি গ্রাম সফর’। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ত্রিশ হাজারের বেশি অধিবাসীর বাস এই ‘জলভাসি গ্রামে’। প্রেক্ষিতটা কেভিন কস্টনারের ‘water world’ ছবির মতো না হলেও চারপাশে পানি, নীচেও পানি, তার মধ্যে জীবনভর বংশ পরম্পরায় বসবাস, বেশ আকৃষ্ট করল। তখন জানা ছিল না যে পরবর্তীতে আরো বেশিদিন ধরে এই জনপদের ও তার অধিবাসীদের সম্মন্ধে অধিক জানার সুযোগ হবে।
ষোড়শ শতকের বিখ্যাত পরিব্রাজকদের তালিকায় ফার্দিন্যান্ড ম্যাগেলান বেশ ওপরেই স্থান পেয়েছেন। তিনি সমুদ্রপথে এ অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন। ১৫২১ সালের জুলাই মাসে তিনি ব্রুনাই সুলতানাতে পৌঁছেছিলেন। তার ভ্রমণ কাহিনীর লিপিকার ইতালিয় আন্তোনিও পিগাফেতা সে সময়ের ব্রুনাই এর এরকম বর্ণনা দিয়েছিলেন “শুধু সুলতান ও তার পদস্থ পারিষদদের বাসস্থান বাদ দিলে পুরো শহরটি যেন সামুদ্রিক লোনা জলরাশির ওপর ভাসছে। প্রায় পঁচিশ হাজার বসতবাড়ি সম্বলিত এই ছোট্ট জলভাসি জনপদে তার পণ্যসামগ্রী নিয়ে ব্রুনাই নারীর বিচরণ সবখানে। ভূমি থেকে লম্বা খুঁটির ওপর প্রায় পুরোটাই কাঠের তৈরি তাদের বাড়ি। জোয়ার এলে তারা জীবিকার্জনের জন্য নৌকায় পসরা সাজিয়ে ব্যবসার খোঁজে বেরিয়ে পড়ে – এ পাড়া সে পাড়া, এ খাঁড়ি সে খাঁড়ি, নদীর এ পাড় থেকে সে পাড়।”
স্থানীয় ব্রুনাই মালয় ভাষায় এ জলভাসি গ্রামের নাম “কাম্পুং আয়ার’। ‘কাম্পুং’ অর্থ ‘গ্রাম’ আর ‘আয়ার’ মানে ‘জল’। পিগাফেতার বর্ননা থেকে ধারণা করা যায় ব্রুনাই সুলতানি শাসনামলের সমসাময়িক এই কাম্পুং আয়ার যার অবস্থিতি বর্তমানের কোতাবাতুর (আধুনিক ব্রুনাইয়ের অংশ একটি প্রাচীন জনপদ) কাছে ব্রুনাই নদীর মুখে। ব্রুনাইয়ের রাজধানী বান্দার সেরি বেগাওয়ানের বুক চিরে এই নদী সমুদ্রে পতিত হচ্ছে। আশির দশকেও ভোরবেলা ব্রুনাই নদীর পাড়ে সাম্পান নৌকার ভিড় দেখা যেত। স্থানীয় ভাষায় এ নৌকার নাম ‘বিদার’ – চালক ও বিক্রেতা এক ব্রুনাই রমনী তার পসরাসহ ব্রুনাই নদী ও কাম্পুং আয়ার এর চারপাশে ব্যবসার খোঁজে চলেছে। এই ভাসমান হাটের প্রবর্তক ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় সুলতান ‘সুলতান আহমদ’, যার আরেক নাম ‘পাতেহ বারবাই’।
এইসব প্রাচীন পসারিণীদের বলা হতো ‘পাদিয়ান’। কাম্পুং আয়ারের সব বাসিন্দাদের দৈনন্দিন পণ্য-সামগ্রীর চাহিদা মেটাতো এরা, বিদার থেকে সরবরাহ করত পছন্দের জিনিস -তৈজস, মশলা, শাকসব্জী, ফল ইত্যাদি। সেই সময়ের ব্রুনাইয়ে অকর্ষিত ভূমিতে এতবড় বাজার স্থাপন সম্ভব মনে না হওয়ায় সুলতান আহমাদ এই ভাসমান বাজারের প্রবর্তন করেন। আধুনিক ব্রুনাইএর স্বাধীন অস্তিত্ব ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি। তার পর থেকে বেশ দ্রুতই পাদিয়ানদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। আজ আর তাদের দেখা যায় না। কিন্তু পাদিয়ানদের স্ব-নির্ভর মানসিকতা ও ব্যবসায়িক ব্যুতপত্তিকে অনেকেই আজকের ব্রুনাই রমনীর কর্মচাঞ্চল্য ও ব্যবসা-উদ্যোগের ভিত্তি বলে মনে করেন। সে সময়ের ব্রুনাইয়ের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক বেশ আকর্ষণীয়।
১৯০৬ সালের দিকে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ স্থলে বসতি স্থাপনের উদ্দেশে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। আর তাই কাম্পুং আয়ার এর বাসিন্দাদের স্থলে বাস করতে উৎসাহ দেয়া হয়। এই নতুন বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতেই সদ্য পত্তনকৃত স্থল এলাকার স্থানে স্থানে ছোট ছোট বাজার-হাট গড়ে উঠতে থাকে। সেই ছোট হাট-বাজার আজও ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন স্থানে ‘তামু’ নামে বিদ্যমান। সম্ভবতঃ মালয় শব্দ ‘তেমু’(যার অর্থ দেখা করা) থেকে ‘তামু’ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। হাট-বাজারে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত হবার ব্যাপারটি যে আমাদের দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির বাইরেও কতটা আগে থেকেই বিস্তৃত তার প্রমাণ এখানে মেলে। ধারণা করা হয় এসব হাট-বাজার চালু হবার কারণে পাদিয়ানদের ব্যবসা সংকুচিত হতে শুরু করে এবং কালক্রমে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এক পেশার আবির্ভাবে আরেক পেশা বিলুপ্তির বিষয়টি বিরল নয়। এখানেও তাই দেখা গেল।
এ অঞ্চলের বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য কিনে পাদিয়ানদের কাছে মোটা লাভে বিক্রি করত যে ব্যবসায়ীরা তাদের বলা হতো ‘পেংগালু’। ক্রমে ক্রমে শহরের বিস্তার আর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ‘পেংগালুরা তাদের পণ্য সরাসরি ‘তামু’গুলিতে সরবরাহ করতে শুরু করে। এতে পাদিয়ানদের লভ্যাংশটিও তারা পকেটস্থ করার সুযোগ পেয়ে যায়। দূর্বল পাদিয়ানদের ইতিহাস এভাবেই শেষ হয়ে যায়। উল্লেখ্য ‘পেংগালু’রা সবাই ছিল পুরুষ।
প্রথম তামুটি ব্রুনাইয়ের ঠিক কোন জায়গায় গড়ে উঠেছিল তা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে তোলা একটি ছবি থেকে বোঝা যায়। ঐ জায়গাটিতে এখন গড়ে তোলা হয়েছে বর্তমানের “Brunei Waterfront”। কিছুদিন আগে এই Waterfront একটি বিশেষ প্রজেক্টের মাধ্যমে খুব মনোরম দর্শনীয় একটি পর্যটন স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
ব্রুনাইয়ের যুবরাজ বড় রাজকুমার এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আধুনিক ব্রুনাইয়ের প্রত্যন্ত নিরক্ষীয় বনরাজি ও দীর্ঘ প্রাকৃতিক সমুদ্রতট ছাড়া আর যে ক’টি দর্শনীয় স্থান বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তার অন্যতম হলো ‘কাম্পুং আয়ার’। সম্প্রতি ঐ বিশেষ প্রজেক্টের ফসল হিসেবে তাতে যোগ হয়েছে ‘কালচারাল ভিলেজ’। তার পরই আসে শহরের বিভিন্ন স্থানের দু’ একটি ‘তামু’। আজো ভোরের ঝির ঝির সামুদ্রিক বাতাসে লম্বা প্রাতঃভ্রমণের পর অনেক ব্রুনাইবাসী স্বাস্থসেবী বা হোটেলবাসী পর্যটককে ‘তামু কিয়াংগে’ তে সদ্য প্রস্তুত ‘কেক লাপিস’, ‘কুয়ে’ বা ‘ডুরিয়ান’ কিনতে দেখা যায়। ‘বাজু কুরুং’(ব্রুনাইয়ের মহিলাদের পোশাক) পরিহিতা বিক্রেতা ব্রুনাই রমনীটি যে কোনো এক পাদিয়ানের উত্তরসূরী নয় তা কিন্তু হলফ করে বলা যাবে না।

পৃথিবীর মানচিত্রে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশ ব্রুনাই খুব পরিচিত নয় এমন ধারণা অনেকেই করে থাকেন। তবে অনেক দিক দিয়েই এ দেশটির কথা উল্লেখ করা যায়।
ব্রুনাইএর বর্তমান সুলতানি শাসকবর্গের প্রায় ৬০০ বছরের নিরবিচ্ছিন্ন শাসনামলের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। সে সময়ের ব্রুনাইয়ের আর্থ-সামাজিক পটভূমিতে কেমন ছিল জীবিকার্জনের চিত্রটি? এরকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই কিছু অভিজ্ঞতা ও প্রকাশিত তথ্যের সমন্বয়ে এই লেখা। উদ্দেশ্য ছোট্ট, শান্তিময়, সবুজ বনানী ঘেরা সুশাসিত জনপদ ব্রুনাইয়ের একটি দিকের কথা তুলে ধরা। নদীমাতৃক গ্রাম বাংলার সঙ্গে কিছু মিল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয় যা এ লেখার আর একটি কারণ হতে পারে ।
কয়েক বছর আগে পেশাগত কারণে দু’দিনের এক সরকারি সফরে ব্রুনাইয়ে আসার সুযোগ হয়েছিল। সফরসূচিসিতে ছিল ‘জলভাসি গ্রাম সফর’। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ত্রিশ হাজারের বেশি অধিবাসীর বাস এই ‘জলভাসি গ্রামে’। প্রেক্ষিতটা কেভিন কস্টনারের ‘water world’ ছবির মতো না হলেও চারপাশে পানি, নীচেও পানি, তার মধ্যে জীবনভর বংশ পরম্পরায় বসবাস, বেশ আকৃষ্ট করল। তখন জানা ছিল না যে পরবর্তীতে আরো বেশিদিন ধরে এই জনপদের ও তার অধিবাসীদের সম্মন্ধে অধিক জানার সুযোগ হবে।
ষোড়শ শতকের বিখ্যাত পরিব্রাজকদের তালিকায় ফার্দিন্যান্ড ম্যাগেলান বেশ ওপরেই স্থান পেয়েছেন। তিনি সমুদ্রপথে এ অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন। ১৫২১ সালের জুলাই মাসে তিনি ব্রুনাই সুলতানাতে পৌঁছেছিলেন। তার ভ্রমণ কাহিনীর লিপিকার ইতালিয় আন্তোনিও পিগাফেতা সে সময়ের ব্রুনাই এর এরকম বর্ণনা দিয়েছিলেন “শুধু সুলতান ও তার পদস্থ পারিষদদের বাসস্থান বাদ দিলে পুরো শহরটি যেন সামুদ্রিক লোনা জলরাশির ওপর ভাসছে। প্রায় পঁচিশ হাজার বসতবাড়ি সম্বলিত এই ছোট্ট জলভাসি জনপদে তার পণ্যসামগ্রী নিয়ে ব্রুনাই নারীর বিচরণ সবখানে। ভূমি থেকে লম্বা খুঁটির ওপর প্রায় পুরোটাই কাঠের তৈরি তাদের বাড়ি। জোয়ার এলে তারা জীবিকার্জনের জন্য নৌকায় পসরা সাজিয়ে ব্যবসার খোঁজে বেরিয়ে পড়ে – এ পাড়া সে পাড়া, এ খাঁড়ি সে খাঁড়ি, নদীর এ পাড় থেকে সে পাড়।”
স্থানীয় ব্রুনাই মালয় ভাষায় এ জলভাসি গ্রামের নাম “কাম্পুং আয়ার’। ‘কাম্পুং’ অর্থ ‘গ্রাম’ আর ‘আয়ার’ মানে ‘জল’। পিগাফেতার বর্ননা থেকে ধারণা করা যায় ব্রুনাই সুলতানি শাসনামলের সমসাময়িক এই কাম্পুং আয়ার যার অবস্থিতি বর্তমানের কোতাবাতুর (আধুনিক ব্রুনাইয়ের অংশ একটি প্রাচীন জনপদ) কাছে ব্রুনাই নদীর মুখে। ব্রুনাইয়ের রাজধানী বান্দার সেরি বেগাওয়ানের বুক চিরে এই নদী সমুদ্রে পতিত হচ্ছে। আশির দশকেও ভোরবেলা ব্রুনাই নদীর পাড়ে সাম্পান নৌকার ভিড় দেখা যেত। স্থানীয় ভাষায় এ নৌকার নাম ‘বিদার’ – চালক ও বিক্রেতা এক ব্রুনাই রমনী তার পসরাসহ ব্রুনাই নদী ও কাম্পুং আয়ার এর চারপাশে ব্যবসার খোঁজে চলেছে। এই ভাসমান হাটের প্রবর্তক ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় সুলতান ‘সুলতান আহমদ’, যার আরেক নাম ‘পাতেহ বারবাই’।
এইসব প্রাচীন পসারিণীদের বলা হতো ‘পাদিয়ান’। কাম্পুং আয়ারের সব বাসিন্দাদের দৈনন্দিন পণ্য-সামগ্রীর চাহিদা মেটাতো এরা, বিদার থেকে সরবরাহ করত পছন্দের জিনিস -তৈজস, মশলা, শাকসব্জী, ফল ইত্যাদি। সেই সময়ের ব্রুনাইয়ে অকর্ষিত ভূমিতে এতবড় বাজার স্থাপন সম্ভব মনে না হওয়ায় সুলতান আহমাদ এই ভাসমান বাজারের প্রবর্তন করেন। আধুনিক ব্রুনাইএর স্বাধীন অস্তিত্ব ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি। তার পর থেকে বেশ দ্রুতই পাদিয়ানদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। আজ আর তাদের দেখা যায় না। কিন্তু পাদিয়ানদের স্ব-নির্ভর মানসিকতা ও ব্যবসায়িক ব্যুতপত্তিকে অনেকেই আজকের ব্রুনাই রমনীর কর্মচাঞ্চল্য ও ব্যবসা-উদ্যোগের ভিত্তি বলে মনে করেন। সে সময়ের ব্রুনাইয়ের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক বেশ আকর্ষণীয়।
১৯০৬ সালের দিকে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ স্থলে বসতি স্থাপনের উদ্দেশে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। আর তাই কাম্পুং আয়ার এর বাসিন্দাদের স্থলে বাস করতে উৎসাহ দেয়া হয়। এই নতুন বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতেই সদ্য পত্তনকৃত স্থল এলাকার স্থানে স্থানে ছোট ছোট বাজার-হাট গড়ে উঠতে থাকে। সেই ছোট হাট-বাজার আজও ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন স্থানে ‘তামু’ নামে বিদ্যমান। সম্ভবতঃ মালয় শব্দ ‘তেমু’(যার অর্থ দেখা করা) থেকে ‘তামু’ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। হাট-বাজারে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত হবার ব্যাপারটি যে আমাদের দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির বাইরেও কতটা আগে থেকেই বিস্তৃত তার প্রমাণ এখানে মেলে। ধারণা করা হয় এসব হাট-বাজার চালু হবার কারণে পাদিয়ানদের ব্যবসা সংকুচিত হতে শুরু করে এবং কালক্রমে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এক পেশার আবির্ভাবে আরেক পেশা বিলুপ্তির বিষয়টি বিরল নয়। এখানেও তাই দেখা গেল।
এ অঞ্চলের বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য কিনে পাদিয়ানদের কাছে মোটা লাভে বিক্রি করত যে ব্যবসায়ীরা তাদের বলা হতো ‘পেংগালু’। ক্রমে ক্রমে শহরের বিস্তার আর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ‘পেংগালুরা তাদের পণ্য সরাসরি ‘তামু’গুলিতে সরবরাহ করতে শুরু করে। এতে পাদিয়ানদের লভ্যাংশটিও তারা পকেটস্থ করার সুযোগ পেয়ে যায়। দূর্বল পাদিয়ানদের ইতিহাস এভাবেই শেষ হয়ে যায়। উল্লেখ্য ‘পেংগালু’রা সবাই ছিল পুরুষ।
প্রথম তামুটি ব্রুনাইয়ের ঠিক কোন জায়গায় গড়ে উঠেছিল তা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে তোলা একটি ছবি থেকে বোঝা যায়। ঐ জায়গাটিতে এখন গড়ে তোলা হয়েছে বর্তমানের “Brunei Waterfront”। কিছুদিন আগে এই Waterfront একটি বিশেষ প্রজেক্টের মাধ্যমে খুব মনোরম দর্শনীয় একটি পর্যটন স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
ব্রুনাইয়ের যুবরাজ বড় রাজকুমার এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আধুনিক ব্রুনাইয়ের প্রত্যন্ত নিরক্ষীয় বনরাজি ও দীর্ঘ প্রাকৃতিক সমুদ্রতট ছাড়া আর যে ক’টি দর্শনীয় স্থান বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তার অন্যতম হলো ‘কাম্পুং আয়ার’। সম্প্রতি ঐ বিশেষ প্রজেক্টের ফসল হিসেবে তাতে যোগ হয়েছে ‘কালচারাল ভিলেজ’। তার পরই আসে শহরের বিভিন্ন স্থানের দু’ একটি ‘তামু’। আজো ভোরের ঝির ঝির সামুদ্রিক বাতাসে লম্বা প্রাতঃভ্রমণের পর অনেক ব্রুনাইবাসী স্বাস্থসেবী বা হোটেলবাসী পর্যটককে ‘তামু কিয়াংগে’ তে সদ্য প্রস্তুত ‘কেক লাপিস’, ‘কুয়ে’ বা ‘ডুরিয়ান’ কিনতে দেখা যায়। ‘বাজু কুরুং’(ব্রুনাইয়ের মহিলাদের পোশাক) পরিহিতা বিক্রেতা ব্রুনাই রমনীটি যে কোনো এক পাদিয়ানের উত্তরসূরী নয় তা কিন্তু হলফ করে বলা যাবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন