মূল লেখার লিংক

কাস্তেল দেল ওভো, নাপোলি
১।
তুরিন যাবো। শুধু তুরিনই নয়, যাবো নাপোলি, যাবো পম্পেই। চার বছরের ইতালিবাসের পরেও এই দুটো বৃহত্তম নগরী দেখা হলনা, এই আফসোসের মাত্রা আর দীর্ঘ না করার জন্য এই পরিকল্পনা। তিনদিনের সফরে আল্পসের সাদা পর্বত চুড়া থেকে ভিসুভিয়াসের গোড়ালি পর্যন্ত ভ্রমন। সাতশো এগারো কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। টিকেট কেটে রেখেছি, দ্রুতগামী ট্রেন, ঘণ্টায় তিনশো কিলোমিটার গতি। বোলোনিয়া থেকে তুরিন দুঘণ্টায় পৌঁছে যাবো আর বোলোনিয়া থেকে নাপোলি তিন ঘণ্টা। তুরিনের উদ্দেশ্যে ভোরবেলা রওনা দিয়ে রাত্রে ফিরে আসব বোলোনিয়াতে আবার পরের দিন ভোরে বোলোনিয়া থেকে নাপোলির পথে যাত্রা। ইতালিতে বড়দিনের আশেপাশে টিকেট কাটলে বেশ সস্তায় তা পাওয়া যায় কারণ কেই বা বড়দিনেও ছুটে বেড়াবে ইতালির পথে পথে পর্যটক ছাড়া! তাই ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ ভোরে বাসা থেকে ক্যামেরার ব্যাগটি ঘাড়ে ঝুলিয়ে রওনা দিলাম তুরিনের পানে আর যথারীতি বেরুনোর সময় চাবির গোছা আর ক্যামেরার মেমোরি কার্ড রেখে এলাম বাসায়। চাবি ব্যাপার না, পরে রুমমেটদের কাছে পাওয়া যাবে, কিন্তু মেমোরি কার্ড এই ভোরে পাই কই, পেলাম স্টেশনের ভেতরের একটা দোকানে, দশ ইউরো গচ্চা দিয়ে! আল্পস পর্বত দেখতে যাই, এইসব ছোটখাটো ব্যাপার ধর্তব্যের মাঝে আনা যাবেনা বিধায় হক মাওলা!
আল্পস পর্বতের কোল জুড়ে বয়ে যাওয়া পো নদীর ধারে গড়ে উঠেছে তুরিন নগরী। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে রোমানরা এখানে একটি মিলিটারি ক্যাম্প নির্মাণ করেন। তারপর ধীরে ধীরে এখানে তাঁরা গড়ে তোলেন রোমান নগরী যার ছিটেফোঁটা আজও দৃশ্যমান। ইতালি যখন ১৮৬০ সালে রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন ১৮৬০ থেকে ১৮৬৪ এই পাঁচ বছর তুরিন ছিল ইতালির রাজধানী। তুরিন শিল্পাঞ্চল হিসেবে প্রখ্যাত। বিশেষ করে এখানে গড়ে উঠেছে বড়ো আকারের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি। এইজন্য এই শহরকে ইতালির ডেট্রয়েটও বলা হয়ে থাকে। ইতালির ফিয়াত, লাঞ্চিয়া এবং আলফা রোমেও গাড়ির জন্ম স্থান ছাড়াও এইসব গাড়ি নির্মাতার প্রধান কারখানা রয়েছে এখানেই।তুরিন শহরে ইতালির সবচাইতে সফল ফুটবল ক্লাব ও ওল্ড লেডি হিসেবে পরিচিত জুভেন্টাস ফুটবল ক্লাবের অবস্থান। তুরিন শহরের জাদুঘরগুলির মধ্যে সবচাইতে খ্যাতিমান হচ্ছে ইজিপ্সিয়ান জাদুঘর, যেখানে কায়রো জাদুঘরের পরে সবচাইতে অধিক সংখ্যক দুর্লভ ইজিপ্সিয়ান নিদর্শন রক্ষিত আছে।
তুরিন যখন পৌঁছুলাম, যথারীতি মন খারাপ করা কুয়াশা, ধুসর আকাশ জুটল কপালে। ডিসেম্বরে বেড়ানোর এই এক ঝক্কি, অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া, হঠাৎ হঠাৎ করে শীতের নীল আকাশ উধাও। চরম বিরক্তি সহকারে আবহাওয়াকে দুয়ো দিতে দিতে নামলাম ষ্টেশনে। তুরিনের স্টেশনটা বিশাল তবে নির্মানাধীন বিধায় খাবারের দোকান টোকান নেই। পৌঁছুলাম সকাল দশটায়, নাস্তার জন্য চোঁ চোঁ করছে পেট। অবশেষে স্টেশন থেকে পড়িমরি করে একটা ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে গিললাম ব্রিয়শ সাথে প্রিয় কাফে এসপ্রেসো। তারপর হাঁটা ধরলাম। চিনিনা যেহেতু কিছুই, আর সাথে মানচিত্রও নেই, কাজেই পথচারীকে নগর কেন্দ্রের কথা জিজ্ঞেস করতেই উনি পথ দেখিয়ে দিলেন আর বললেন, “হাঁটুন সোজা পথে এক কিলোমিটার, পৌঁছে যাবেন!” ইতালিতে দেখেছি অনেক বড় শহরেই স্টেশন থেকে একটা বিশাল আকারের সড়ক নগর কেন্দ্রে গিয়ে পৌছায়। পর্যটকদের জন্য এইটা বেশ বড় একটা সুবিধে। আর পথচারী ইতালিয়ান হলে তাঁরা সাগ্রহে পথ চিনিয়ে দেয়, এর ব্যাতিক্রম আজ পর্যন্ত ছোট কিংবা বড়ো কোনও শহরেই দেখিনি। যাই হোক, ক্যামেরা বের করে পটাপট ছবি তুলতে থাকলাম। তুরিনের বাড়িঘরগুলো কেমন অন্যরকম। ইতালির অন্য সব শহরে যেমন রঙ বেরঙের বাড়ির দেখা মেলে, এখানে তেমন দেখলাম না, বেশীরভাগ বাড়িই সাদা কিংবা অফ সাদা আর সড়কের দুই ধারে বাড়িগুলোও প্রকাণ্ড কিসিমের। প্যারিসের কথা মনে পড়ে গেল। রাস্তার দুই পাশেই অনেক কৃত্রিম ঝর্ণা দেখলাম। সিংহের, বাঘের, মানুষের মুখ দিয়ে পানি বেরুচ্ছে, স্থাপনাগুলি যারপরনাই সুন্দর। এই ঝর্ণাগুলি রাত্রে আরও ভালো লাগে, রঙ বেরঙের আভায় সজ্জিত থাকে এগুলি। যাই হোক হাঁটাপথে আধ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম নগরকেন্দ্রে। এত বিশাল কেন্দ্র দেখে তো মাথা পুরা ঘুরতে লাগলো। মাথা বেশী ঘোরার আগেই মাথা ঠিক করার জন্যে কাছেই দেখলাম একটা তথ্য অফিস, কিন্তু প্রচণ্ড ভিড় দেখে আর ঢোকার সাহস করলাম না। কেন্দ্রে চোখ ভরে দেখতে লাগলাম পালাজ্জো মাদামে আর পালাজ্জো রেয়ালে, দুই রাজবাড়ীর অবস্থানই কাছাকাছি, দুটোই চোখ ধাঁধানো সুন্দর আবার দুটোই জাদুঘর, ঢুকতে পয়সা লাগবে বিধায় বাদ, এর চাইতে ক্যামেরার শাটার টেপা ভালো। কিন্তু ভারি আবহাওয়া বলে ছবি তোলার কাজটা সন্ধ্যের জন্য মুলতবি ঘোষণা করে চললাম মোল আন্তোনেল্লিনার কাছে।
মোল আন্তোনেল্লিনা তুরিন নগরীর শোভা। এটি তুরিনের একটি ল্যান্ডমার্ক স্থাপনা। তুরিন এবং মোল অনেকটা প্যারিস আর আইফেল টাওয়ারের মতই একে অপরের পরিপূরক। এত উঁচু টাওয়ার ইউরোপেই বিরল। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮৬৩ সালে এবং শেষ হয় ১৮৮৯ সালে। এটি নির্মাণ করেন প্রখ্যাত স্থপতি আলেজান্দ্রো আন্তোনেল্লি আর তাঁরই নামানুসারে এটির নাম রাখা হয় মোল আন্তোনেল্লিনা। কেন্দ্র থেকে কাছে হওয়ায় হেঁটেই পৌঁছে গেলাম মোলের ভেতর। ১৬৭ মিটার উঁচু মোল আন্তোনেল্লিনা এখন ইতালির জাতীয় চলচ্চিত্র জাদুঘর। কালক্রমে এই টাওয়ার এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ জাদুঘর। চলচ্চিত্র সংক্রান্ত হেন জিনিষ নেই যা এখানে নেই, শুধু মুফতে সিনেমা দেখা ছাড়া। কিন্তু এখানে সময় খরচ করা যাবেনা আর তাছাড়া প্রবেশমূল্য ছয় ইউরো হওয়ায় ওখানে ঢোকার চাইতে মোলের ভেতর লিফটে করে এর চুড়ায় পৌঁছানোটা সহজ মনে করলাম। চার ইউরো খরচ করে উঠলাম মোলের শীর্ষে। এখানে থেকে দেখলাম আল্পসের সাদা সাদা পর্বত চুড়া, দেখলাম তুরিন নগরী। কিন্তু কুয়াশা দিয়ে ঢাকা ছিল বিধায় ভালমতন কিছুই দৃশ্যমান হলনা, অগত্যা কিছু ছবি তুলে রওনা দিলাম সুপেরগার পানে।
সুপেরগা হল তুরিন নগরীর কাছেই এক পাহাড়চূড়া যেখানে একটি প্রাচীন গির্জা রয়েছে আবার একই সাথে তুরিন নগরীর অসাধারন ল্যান্ডস্কেপ নাকি সেখান থেকেই দেখা যায় ভাল। কাজেই যেতে হবে সুপেরগা। কিন্তু যাব কিভাবে? ভরসা পেলাম মোলের নিচেই থাকা আরেক তথ্য কেন্দ্রে। ওরাই বলে দিল কোন বাসে যেতে হবে সেখানে, তবে বাস যাবে পাহাড়ের নীচ পর্যন্ত তারপর টয় ট্রেনে করে সুপেরগা। তাই সই। বাসে করে সুপেরগা স্টেশনে পৌঁছে টয় ট্রেনের জন্য নয় ইউরো দিয়ে টিকেট কেটে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সময়মতন ট্রেনে চেপে বসে একটু একটু করে ওপরে ওঠার সময় তুরিন শহরের অসাধারণ দৃশ্য দেখে বুঝলাম আমি একদম ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছেছি। সুপেরগার গির্জাটা অপূর্ব সুন্দর, এইটা বলতেই হবে। আর এখান থেকে তুরিন নগরী সহ আল্পসের যে দৃশ্য দেখলাম তা এক কথায় অতুলনীয়। যদিও পুরো শহর ছিল কুয়াশায় ঢাকা, তারপরেও আবছা তুরিন, আবছা পো নদী, অদৃশ্যপ্রায় মোল সাথে আল্পসের সাদা চুড়াগুলো মন কেড়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। বিশালাকার গির্জার শীর্ষে ওঠা যায়, তুরিনের প্যানোরামা নাকি আরও সুন্দর সেইখানেও। তিন ইউরো খরচ করে এক সরু সিঁড়ি বেয়ে ওঠা হল গির্জার শীর্ষে। এইবার আমার বাকরুদ্ধ হবার পালা। তুরিন নগরীর এত সুন্দর শোভা আর কোনভাবে দেখা হয়তো সম্ভব ছিলনা! একদম সুর রিয়েল এক অভিজ্ঞতা!
এইবার সময় এল তুরিনের রোমান অংশ দেখার। সুপেরগা থেকে আবার নগর কেন্দ্রে পৌঁছার বাস ধরলাম। তবে এইবার কেন্দ্র চিনতে একটু বেগ পেতে হল। বাসে উঠেছিলাম তো ঠিকঠাক তবে অচেনা শহরহেতু নামলাম কেন্দ্র থেকে খানিক দূরে, তাই হাঁটতে হল বেশ খানিকটা পথ। কারন আমি মূলত দেখব পোরতা পালাতিনে। তবে হেঁটে হেঁটে পরিশ্রান্ত এই দেহমনের সকল ক্লান্তি মুছে গেল তখন যখন পালাতিনের কাছে গিয়ে পৌছুলাম। হাল্কা রোদের সন্ধান মিলল অবশেষে আর রোমান টাওয়ার থেকে শুরু করে তাদের নির্মিত সকল স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ লাল রঙের হওয়ায় দেখলাম পুরো রোমান জোন যেন এক অপূর্ব রঙ ধারণ করেছে। আমার তুরিন নগরী আসার একটা অন্যতম কারণ ছিল এই পালাতিনে টাওয়ার। কারন এটিই হল রোমানদের নির্মিত সবচেয়ে প্রাচীন রক্ষণ স্তম্ভ এবং শহরে পৌঁছানোর দুয়ার। সময়ের ব্যাবধানে আশেপাশের সকল স্থাপনা ধ্বংসাবিশেষ হিসেবে পরিণত হলেও পোরতা পালাতিনে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির সকল বাধা তুচ্ছ করে।
পোরতা পালাতিনের পাশেই নগর কেন্দ্রের মূল গির্জা অথবা দুয়োমো, যা দেখে একটু হতাশই হয়েছিলাম কেননা অন্য সব বড় শহরের দুয়োমোগুলি হয় এক একটি প্রকাণ্ড স্থাপনা, তুরিনের দুয়োমো তুলনামুলকভাবে অনেক ছোট মনে হল। আর স্থাপনা হিসেবে এমন আহামরি কিছু মনে হলনা। যাই হোক, সন্ধ্যে হয়ে এল, এইবার কেন্দ্রে ফেরার পালা। আর কেন্দ্রে আসতেই নগরীর আলোকসজ্জা দেখে চক্ষু এক্কেবারে ছানাবড়া হবার যোগাড়। এ যেন এক বিপুল ও বিচিত্র আয়োজন, একেক রাস্তায় একেক রকমের আলোকসজ্জা। কেন্দ্রে ব্যাপক মানুষের ভিড় দেখলাম। আর মাত্র দুইদিন পরেই নাতালে অথবা বড়দিন, তাই বোধহয় কেন্দ্র লোকে লোকারণ্য হয়ে রয়েছে। তুরিন নগরীর সবকিছুই দেখলাম সাজানো গোছানো, নিয়ন্ত্রিত, শৃঙ্খলিত। পরিপাটি, নিখুঁত ও পরিচ্ছন্ন। কোথায় কোনও গ্যাঞ্জাম কিংবা তাড়াহুড়ো দেখলাম না। বাসে করে স্টেশনে যাবার আগে মনের সাধ মিটিয়ে ছবি তুললাম আর শেষ বারের মতন দেখে নিলাম অপূর্ব তুরিন নগরী।
২।
নাপোলি যাবার আগ্রহ ছিল বরাবরই ষোল আনা, যেদিন থেকে ইতালিতে পা দিয়েছি। এতদিন না যাবার একটা বড় কারণ ছিল খরচ। বোলোনিয়া থেকে ওখানে যাবার জন্য নেই কোনও রায়ান এয়ার এর মতন সাশ্রয়ী উড়োজাহাজ, অতএব ট্রেন একমাত্র ভরসা। কিন্তু ট্রেন ভাড়াও এত বেশী যে ওই ভাড়ায় একই খরচে ইউরোপের যেকোনো বড় শহরে ঘুরে আসা যায়। তবে বড়দিনের ছুটি এবং বড়দিন উপলক্ষে একটা সাশ্রয়ী ট্রেন টিকেট পেয়ে সাথে সাথে যাবার জন্যে রেডি হয়ে গেলাম।
নাপোলিতে কি আছে এই প্রশ্নটি করার আগে কি নেই তা জানতে চাওয়া ভালো। নাপোলিতে পাহাড় আছে, পর্বত আছে, জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি আছে, সাগর আছে, বন্দর আছে, পিজ্জা আছে, মজাদার সব পেস্ট্রি আছে, মানুষের ভিড় আছে, কোলাহল আছে, উদ্দামতা আছে, উল্লাস আছে, কান্না আছে, দ্বন্দ্ব আছে। ট্রেন থেকে নেমে প্রথম এই শহরে পা দিলে কেমন চেনা এক বাতাবরনের কথা মনে হয়, মনে হয় অতি চেনা একটা জায়গায় এসে পড়েছি। ট্রাফিকের কোনও নিয়ম নীতি নেই, মানুষজন দেদারসে রাস্তা পার হচ্ছে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, যে যেভাবে পারছে এগিয়ে যাচ্ছে, এই শহরে যেন নিজেকে খুঁজে পেলাম, মনে হল আমি বুঝি এখানে অনাহুত নই। এই শহরের এক অদ্ভুত নিমন্ত্রনের সুর আছে, কতশত বাঙালি মুখ ঘুরে বেড়াচ্ছে, নোংরা কাদা দিয়ে ঘেরা চারপাশ, পিজ্জার দোকান থেকে দোকানি ডাকছে, বাড়িঘরের কার্নিশ থেকে রঙ বেরঙের জামাকাপড় শুকোনোর জন্য ঝুলছে। রাস্তায় দাঁড়ালেই পাহাড়ের দেখা মিলছে, দূর থেকে স্টিমারের ধ্বনি ভেসে আসছে- এ যেন এক বিচিত্র কোলাহল মুখর জায়গা, শব্দ-রঙ-দৃশ্য সবই এখানে ভিন্ন এক চিত্রের সন্ধান দেয়। কোথায় সেই তুরিনের নিপুন শৃঙ্খলা আর কোথায় এই বিশৃঙ্খল কিন্তু প্রানবৈচিত্রে ভরপুর নাপোলি!
নাপোলিতে রাত্রে থাকার বন্দোবস্ত পাকা করে এসেছি আগেই, হোটেলে থাকব এক রাত্রি, পরের দিন রাত্রিতে বোলোনিয়া ফেরা, এর মাঝে একটি পুরো দিন রেখেছি শুধু নগর কেন্দ্রে ঘোরাফেরার জন্য আর একটি দিন পম্পেই যাব বলে। সকাল সাতটায় বোলোনিয়া থেকে রওনা দিয়ে সকাল দশটায় নাপোলি স্টেশনে নেমে এত ভীড় দেখে ভিরমি খেয়েছি ঠিকই তবে সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখি পেট সকালের নাস্তার জন্যে ব্যাকুল হয়ে আছে। কাজেই ঢুকে গেলাম স্টেশনের কাছেই একটি ক্যাফেটেরিয়ায়। সেখানে একটা ব্রিয়শ আর কাফে খেয়ে অমৃতের স্বাদ পেলাম যেন। দামও অনেক অনেক শস্তা, উত্তরের যে কোনও শহরের চাইতে। তারপর আধ ঘণ্টা ধরে চলল হোটেল খোঁজা, অবশেষে মিলে গেল আমার হোটেল। সেখানে লাগেজ রেখে রওনা দিলাম কেন্দ্রের দিকে, ট্রাম বাসের ব্যাবস্থা বুঝতে পারলাম না বিধায় দিলাম হাঁটা যা থাকে কপালে। তবে হাঁটতে গিয়ে দেখি বিপত্তির শেষ নেই, বড়দিনের আগে পুরো শহর একেবারে মানুষে পরিপূর্ণ। একে তো হাঁটা চলা কঠিন তার ওপর ট্রাফিক আইনের কিছুই বুঝতে পারছিনা, কিন্তু হন্টন থামালাম না। এগিয়ে যেতে থাকলাম গন্তব্যের দিকে, কেন্দ্রে যেতে হবে, আজ এটাই একমাত্র কাজ।
মেজাজ যথারীতি খারাপ চরম বাজে আবহাওয়ার কারণে, সেই একই কুয়াশা, রোদের দেখা নেই। তবে তাই বলে ক্যামেরার শাটার টেপা বন্ধ নেই। পুরো সড়কের দুই ধার জুড়ে বসে গেছে অস্থায়ী স্ট্রিট মার্কেট যার বেশিরভাগ বিক্রেতা আমাদের বাংলাদেশের, তারা মূলত বিক্রি করছেন খেলনা, টুপি, হাতব্যাগ এবং সান গ্লাস। এছাড়া পিতলের নানান আইটেম সাজিয়ে রেখেছেন অনেকে, অনেকে বিক্রি করছেন স্কার্ফ। সেইসব দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি। অবশেষে পৌঁছুলাম ক্যাসেল দেল নুয়োভো তে। প্রকাণ্ড এক দুর্গ, দুর্গের ভেতর প্রবেশ মূল্য ৬ ইউরো। ঢুকলাম ভেতরে, একটু হতাশই হলাম, ভেবেছিলাম হয়ত দুর্গের মাথায় উঠতে দেবে, দিলে আমি নাপোলির বন্দরের একটা ভাল দৃশ্য পাব, সেই আশায় যেহেতু গুড়েবালি কাজেই সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে এলাম আর কেন্দ্রের দিকে হাঁটতে থাকলাম, এর মাঝে দেখা মিলল নাপোলির কেন্দ্রীয় থিয়েটার। হাঁটতে হাঁটতে আরেকটি জিনিস খেয়াল করলাম যে নাপোলির এই পুরনো অংশে সবকিছুই প্রকাণ্ড, প্রবল, বিশাল। পুরনো ভবনগুলি কেমন ছাল ওঠা, ইতালির অন্য শহরের মতন হয়ত নিয়মিত যত্ন নেয়া হয়না বলেও মনে হচ্ছিল। কেন্দ্রটাও মনে হল খানিক বিমর্ষ। যদিও এটি ব্যাপক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত তবে মিলান কিংবা ফ্লোরেন্স এমনকি বোলোনিয়ার কেন্দ্রের চাইতেও কম আকর্ষণীয় মনে হয়েছে আমার। পালাজ্জো রেয়ালে আর দুয়োমোর মাঝে অনেক স্পেস থাকার কারণেও এমনটা মনে হতে পারে অবশ্য। আর রাতের আলোকসজ্জাও অনেকখানি মলিন এখানে। কেন্দ্রের মুল গির্জা অথবা দুয়োমোর স্থাপত্য অবশ্য চোখ জুড়ানো আবার তার ঠিক পেছনেই পাহাড় দারুণ একটা কনট্রাস্ট এনে দিয়েছে। কেন্দ্র ধরে আরেকটু এগিয়ে গেলে বন্দর, বন্দরে ভেড়ানো জেটি, ছোট নৌকো, অসাধারণ সুন্দর কাস্তেল দেল ওভো এবং দৃশ্যমান ভিসুভিয়াস। শহরের ঠিক এই প্রান্তে এসে নাপোলির সত্যিকারের সৌন্দর্য চোখ ভরে উপভোগ করা গেল। সারাদিনের সকল ধকল যেন এক লহমায় দূর হয়ে গেল। ওখানে একটি দোকানে দুর্দান্ত পিজ্জা খেয়ে দীর্ঘসময় সাগরপারেই কাটিয়ে দিয়ে রাত্রে ফিরে এলাম হোটেলে, সারাদিনের অবসাদে রাজ্যের ঘুম নেমে এল চোখে।
পরেরদিন ভোরে গোসল সেরে একটু চাঙ্গা হয়ে হোটেলের ব্রেকফাস্ট সেরে পম্পেই পানে রওনা দিলাম। বড়দিনে রাস্তাঘাটে তেমন মানুষ নেই, বাস-ট্রাম বন্ধ, কিন্তু পম্পেই যাবার ট্রেন চলবে, প্রথম ট্রেনটাই ধরলাম। ধীরে ধীরে ট্রেন ছুটে চলল পম্পেই এর দিকে আর সামনে দিগন্ত জুড়ে ভিসুভিয়াস। এ দৃশ্য মন থেকে মুছে ফেলা কঠিন। বড়দিন বলে কোনও রকম ভিড় নেই আর টিকেট বিক্রেতা দেখলাম অসম্ভব বিরক্ত। বড়দিনে ছুটি মেলেনি বলে রাজ্যের বিরক্ত পারলে আমার দিকে ছুঁড়ে মারে! পম্পেই এর সব দেখলাম একে একে অনেক সময় নিয়ে, পম্পেই নগরীতেই কেটে গেল সারাদিন। ভেবেছিলাম দ্রুত ফিরে আসব, অবাক হয়ে দেখলাম যে আমার নিজেরই সেখান থেকে আসতে ইচ্ছে করছিলনা। অতীতের নিঃশ্বাস থেকে বুঝি আমিও মুক্তি পাচ্ছিলাম না। ভিসুভিয়াসের কোলে নাপোলি এবং পম্পেই দর্শন সারা জীবনের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে রইল।
তুরিনের ছবি।
ক) তুরিন শহরের আরকেড। এই আরকেড দেখলাম পুরো নগর জুড়েই বিস্তৃত।

খ) একটি বাড়ির অন্দরমহলের চিত্র

গ) আরকেদের ওপর সিলিঙে নানান কারুকাজ

ঘ) তুরিনের তিপিকাল ভবন

ঙ) পালাজ্জো মাদামে

চ) মোল আন্তনেল্লিনা থেকে দেখা তুরিন নগরী

ছ) সুপেরগা চার্চ

জ) সুপেরগা চার্চের ভেতরে শীর্ষে ওঠার সিঁড়ি

ঝ) সুপেরগা থেকে দেখা আল্পস পর্বত, তুরিন নগরী ও পো নদী

ঞ) কুয়াশার চাদরে ঢাকা তুরিনের আঁকাবাঁকা পাহাড়

ট) মোল আন্তনেল্লিনা

ঠ) পোরতা পালাতিনে

ড) দুয়োমো, তুরিন

ঢ) পোরতা পালাতিনের পাশেই এই পালাজ্জো দেখেছি, নাম মনে নেই

ণ) বড়দিনের অনন্য আলোকসজ্জা

ত) শহর জোড়া আলোর মেলা

থ) পালাজ্জো রেয়ালে

দ) পালাজ্জো মাদামের একাংশ

ধ) নগর কেন্দ্রের আরেকটি বিশালাকার ভবন, দূরে মোল।

ন) সাঁঝবেলার রোমান নগরী

প)পালাতিনের সামনে একটি ভাস্কর্য

নাপোলির ছবিসমূহ
ক) কাস্তেল দেল নুয়োভো

খ) কাস্তেল দেল নুয়োভোর ভেতরে একটি ঘরের সিলিং

গ) কাস্তেল দেল নুয়োভো

ঘ) পালাজ্জো তিয়েত্রো, নাপোলির কেন্দ্রীয় থিয়েটার

ঙ) অনন্য গালেরিয়া উম্বেরতো

চ) গালেরিয়া উম্বেরতোর ভেতর

ছ)কাস্তেল দেল ওভোর জানালা দিয়ে দেখা নাপোলি নগরী

জ)কাস্তেল দেল ওভো

ঝ) নাপোলির কেন্দ্রে পালাজ্জো রেয়ালে

ঞ) বন্দর নগরে সাগরপারের ভাস্কর্য

ট) নাপোলি বন্দর

ঠ) দুয়োমো অফ নাপোলি

ড) কাস্তেল দেল ওভো

ঢ) গালফ অফ নাপোলি

ণ) নাপোলি শহরে ঢোকার একটি গেট

ত) নাপোলি শহর

থ) রঙ চটা নাপোলির গতানুগতিক ঘরবাড়ী

দ) পাখির চোখে দেখা নাপোলি

ধ) পিয়াজ্জা গারিবাল্দি

ন) নাম না জানা একটি চার্চের ভেতর

প) পুনশ্চ কাস্তেল দেল ওভো

পম্পেই চিত্র
ক) সুপ্রভাত পম্পেই

খ) পম্পেই ১

গ) পম্পেই ২

ঘ) পম্পেই ৩

ঙ) পম্পেই ৪

চ) পম্পেই ৫

ছ) পম্পেই ৬

জ) পম্পেই ৭

ঝ) পম্পেই ৮

ঞ) পম্পেই ৯

ট) পম্পেই ১০

ঠ) পম্পেই ১১

ড) পম্পেই ১২

ঢ) পম্পেই ১৪

ণ) পম্পেই ১৫


কাস্তেল দেল ওভো, নাপোলি
১।
তুরিন যাবো। শুধু তুরিনই নয়, যাবো নাপোলি, যাবো পম্পেই। চার বছরের ইতালিবাসের পরেও এই দুটো বৃহত্তম নগরী দেখা হলনা, এই আফসোসের মাত্রা আর দীর্ঘ না করার জন্য এই পরিকল্পনা। তিনদিনের সফরে আল্পসের সাদা পর্বত চুড়া থেকে ভিসুভিয়াসের গোড়ালি পর্যন্ত ভ্রমন। সাতশো এগারো কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। টিকেট কেটে রেখেছি, দ্রুতগামী ট্রেন, ঘণ্টায় তিনশো কিলোমিটার গতি। বোলোনিয়া থেকে তুরিন দুঘণ্টায় পৌঁছে যাবো আর বোলোনিয়া থেকে নাপোলি তিন ঘণ্টা। তুরিনের উদ্দেশ্যে ভোরবেলা রওনা দিয়ে রাত্রে ফিরে আসব বোলোনিয়াতে আবার পরের দিন ভোরে বোলোনিয়া থেকে নাপোলির পথে যাত্রা। ইতালিতে বড়দিনের আশেপাশে টিকেট কাটলে বেশ সস্তায় তা পাওয়া যায় কারণ কেই বা বড়দিনেও ছুটে বেড়াবে ইতালির পথে পথে পর্যটক ছাড়া! তাই ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ ভোরে বাসা থেকে ক্যামেরার ব্যাগটি ঘাড়ে ঝুলিয়ে রওনা দিলাম তুরিনের পানে আর যথারীতি বেরুনোর সময় চাবির গোছা আর ক্যামেরার মেমোরি কার্ড রেখে এলাম বাসায়। চাবি ব্যাপার না, পরে রুমমেটদের কাছে পাওয়া যাবে, কিন্তু মেমোরি কার্ড এই ভোরে পাই কই, পেলাম স্টেশনের ভেতরের একটা দোকানে, দশ ইউরো গচ্চা দিয়ে! আল্পস পর্বত দেখতে যাই, এইসব ছোটখাটো ব্যাপার ধর্তব্যের মাঝে আনা যাবেনা বিধায় হক মাওলা!
আল্পস পর্বতের কোল জুড়ে বয়ে যাওয়া পো নদীর ধারে গড়ে উঠেছে তুরিন নগরী। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে রোমানরা এখানে একটি মিলিটারি ক্যাম্প নির্মাণ করেন। তারপর ধীরে ধীরে এখানে তাঁরা গড়ে তোলেন রোমান নগরী যার ছিটেফোঁটা আজও দৃশ্যমান। ইতালি যখন ১৮৬০ সালে রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন ১৮৬০ থেকে ১৮৬৪ এই পাঁচ বছর তুরিন ছিল ইতালির রাজধানী। তুরিন শিল্পাঞ্চল হিসেবে প্রখ্যাত। বিশেষ করে এখানে গড়ে উঠেছে বড়ো আকারের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি। এইজন্য এই শহরকে ইতালির ডেট্রয়েটও বলা হয়ে থাকে। ইতালির ফিয়াত, লাঞ্চিয়া এবং আলফা রোমেও গাড়ির জন্ম স্থান ছাড়াও এইসব গাড়ি নির্মাতার প্রধান কারখানা রয়েছে এখানেই।তুরিন শহরে ইতালির সবচাইতে সফল ফুটবল ক্লাব ও ওল্ড লেডি হিসেবে পরিচিত জুভেন্টাস ফুটবল ক্লাবের অবস্থান। তুরিন শহরের জাদুঘরগুলির মধ্যে সবচাইতে খ্যাতিমান হচ্ছে ইজিপ্সিয়ান জাদুঘর, যেখানে কায়রো জাদুঘরের পরে সবচাইতে অধিক সংখ্যক দুর্লভ ইজিপ্সিয়ান নিদর্শন রক্ষিত আছে।
তুরিন যখন পৌঁছুলাম, যথারীতি মন খারাপ করা কুয়াশা, ধুসর আকাশ জুটল কপালে। ডিসেম্বরে বেড়ানোর এই এক ঝক্কি, অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া, হঠাৎ হঠাৎ করে শীতের নীল আকাশ উধাও। চরম বিরক্তি সহকারে আবহাওয়াকে দুয়ো দিতে দিতে নামলাম ষ্টেশনে। তুরিনের স্টেশনটা বিশাল তবে নির্মানাধীন বিধায় খাবারের দোকান টোকান নেই। পৌঁছুলাম সকাল দশটায়, নাস্তার জন্য চোঁ চোঁ করছে পেট। অবশেষে স্টেশন থেকে পড়িমরি করে একটা ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে গিললাম ব্রিয়শ সাথে প্রিয় কাফে এসপ্রেসো। তারপর হাঁটা ধরলাম। চিনিনা যেহেতু কিছুই, আর সাথে মানচিত্রও নেই, কাজেই পথচারীকে নগর কেন্দ্রের কথা জিজ্ঞেস করতেই উনি পথ দেখিয়ে দিলেন আর বললেন, “হাঁটুন সোজা পথে এক কিলোমিটার, পৌঁছে যাবেন!” ইতালিতে দেখেছি অনেক বড় শহরেই স্টেশন থেকে একটা বিশাল আকারের সড়ক নগর কেন্দ্রে গিয়ে পৌছায়। পর্যটকদের জন্য এইটা বেশ বড় একটা সুবিধে। আর পথচারী ইতালিয়ান হলে তাঁরা সাগ্রহে পথ চিনিয়ে দেয়, এর ব্যাতিক্রম আজ পর্যন্ত ছোট কিংবা বড়ো কোনও শহরেই দেখিনি। যাই হোক, ক্যামেরা বের করে পটাপট ছবি তুলতে থাকলাম। তুরিনের বাড়িঘরগুলো কেমন অন্যরকম। ইতালির অন্য সব শহরে যেমন রঙ বেরঙের বাড়ির দেখা মেলে, এখানে তেমন দেখলাম না, বেশীরভাগ বাড়িই সাদা কিংবা অফ সাদা আর সড়কের দুই ধারে বাড়িগুলোও প্রকাণ্ড কিসিমের। প্যারিসের কথা মনে পড়ে গেল। রাস্তার দুই পাশেই অনেক কৃত্রিম ঝর্ণা দেখলাম। সিংহের, বাঘের, মানুষের মুখ দিয়ে পানি বেরুচ্ছে, স্থাপনাগুলি যারপরনাই সুন্দর। এই ঝর্ণাগুলি রাত্রে আরও ভালো লাগে, রঙ বেরঙের আভায় সজ্জিত থাকে এগুলি। যাই হোক হাঁটাপথে আধ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম নগরকেন্দ্রে। এত বিশাল কেন্দ্র দেখে তো মাথা পুরা ঘুরতে লাগলো। মাথা বেশী ঘোরার আগেই মাথা ঠিক করার জন্যে কাছেই দেখলাম একটা তথ্য অফিস, কিন্তু প্রচণ্ড ভিড় দেখে আর ঢোকার সাহস করলাম না। কেন্দ্রে চোখ ভরে দেখতে লাগলাম পালাজ্জো মাদামে আর পালাজ্জো রেয়ালে, দুই রাজবাড়ীর অবস্থানই কাছাকাছি, দুটোই চোখ ধাঁধানো সুন্দর আবার দুটোই জাদুঘর, ঢুকতে পয়সা লাগবে বিধায় বাদ, এর চাইতে ক্যামেরার শাটার টেপা ভালো। কিন্তু ভারি আবহাওয়া বলে ছবি তোলার কাজটা সন্ধ্যের জন্য মুলতবি ঘোষণা করে চললাম মোল আন্তোনেল্লিনার কাছে।
মোল আন্তোনেল্লিনা তুরিন নগরীর শোভা। এটি তুরিনের একটি ল্যান্ডমার্ক স্থাপনা। তুরিন এবং মোল অনেকটা প্যারিস আর আইফেল টাওয়ারের মতই একে অপরের পরিপূরক। এত উঁচু টাওয়ার ইউরোপেই বিরল। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮৬৩ সালে এবং শেষ হয় ১৮৮৯ সালে। এটি নির্মাণ করেন প্রখ্যাত স্থপতি আলেজান্দ্রো আন্তোনেল্লি আর তাঁরই নামানুসারে এটির নাম রাখা হয় মোল আন্তোনেল্লিনা। কেন্দ্র থেকে কাছে হওয়ায় হেঁটেই পৌঁছে গেলাম মোলের ভেতর। ১৬৭ মিটার উঁচু মোল আন্তোনেল্লিনা এখন ইতালির জাতীয় চলচ্চিত্র জাদুঘর। কালক্রমে এই টাওয়ার এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ জাদুঘর। চলচ্চিত্র সংক্রান্ত হেন জিনিষ নেই যা এখানে নেই, শুধু মুফতে সিনেমা দেখা ছাড়া। কিন্তু এখানে সময় খরচ করা যাবেনা আর তাছাড়া প্রবেশমূল্য ছয় ইউরো হওয়ায় ওখানে ঢোকার চাইতে মোলের ভেতর লিফটে করে এর চুড়ায় পৌঁছানোটা সহজ মনে করলাম। চার ইউরো খরচ করে উঠলাম মোলের শীর্ষে। এখানে থেকে দেখলাম আল্পসের সাদা সাদা পর্বত চুড়া, দেখলাম তুরিন নগরী। কিন্তু কুয়াশা দিয়ে ঢাকা ছিল বিধায় ভালমতন কিছুই দৃশ্যমান হলনা, অগত্যা কিছু ছবি তুলে রওনা দিলাম সুপেরগার পানে।
সুপেরগা হল তুরিন নগরীর কাছেই এক পাহাড়চূড়া যেখানে একটি প্রাচীন গির্জা রয়েছে আবার একই সাথে তুরিন নগরীর অসাধারন ল্যান্ডস্কেপ নাকি সেখান থেকেই দেখা যায় ভাল। কাজেই যেতে হবে সুপেরগা। কিন্তু যাব কিভাবে? ভরসা পেলাম মোলের নিচেই থাকা আরেক তথ্য কেন্দ্রে। ওরাই বলে দিল কোন বাসে যেতে হবে সেখানে, তবে বাস যাবে পাহাড়ের নীচ পর্যন্ত তারপর টয় ট্রেনে করে সুপেরগা। তাই সই। বাসে করে সুপেরগা স্টেশনে পৌঁছে টয় ট্রেনের জন্য নয় ইউরো দিয়ে টিকেট কেটে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সময়মতন ট্রেনে চেপে বসে একটু একটু করে ওপরে ওঠার সময় তুরিন শহরের অসাধারণ দৃশ্য দেখে বুঝলাম আমি একদম ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছেছি। সুপেরগার গির্জাটা অপূর্ব সুন্দর, এইটা বলতেই হবে। আর এখান থেকে তুরিন নগরী সহ আল্পসের যে দৃশ্য দেখলাম তা এক কথায় অতুলনীয়। যদিও পুরো শহর ছিল কুয়াশায় ঢাকা, তারপরেও আবছা তুরিন, আবছা পো নদী, অদৃশ্যপ্রায় মোল সাথে আল্পসের সাদা চুড়াগুলো মন কেড়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। বিশালাকার গির্জার শীর্ষে ওঠা যায়, তুরিনের প্যানোরামা নাকি আরও সুন্দর সেইখানেও। তিন ইউরো খরচ করে এক সরু সিঁড়ি বেয়ে ওঠা হল গির্জার শীর্ষে। এইবার আমার বাকরুদ্ধ হবার পালা। তুরিন নগরীর এত সুন্দর শোভা আর কোনভাবে দেখা হয়তো সম্ভব ছিলনা! একদম সুর রিয়েল এক অভিজ্ঞতা!
এইবার সময় এল তুরিনের রোমান অংশ দেখার। সুপেরগা থেকে আবার নগর কেন্দ্রে পৌঁছার বাস ধরলাম। তবে এইবার কেন্দ্র চিনতে একটু বেগ পেতে হল। বাসে উঠেছিলাম তো ঠিকঠাক তবে অচেনা শহরহেতু নামলাম কেন্দ্র থেকে খানিক দূরে, তাই হাঁটতে হল বেশ খানিকটা পথ। কারন আমি মূলত দেখব পোরতা পালাতিনে। তবে হেঁটে হেঁটে পরিশ্রান্ত এই দেহমনের সকল ক্লান্তি মুছে গেল তখন যখন পালাতিনের কাছে গিয়ে পৌছুলাম। হাল্কা রোদের সন্ধান মিলল অবশেষে আর রোমান টাওয়ার থেকে শুরু করে তাদের নির্মিত সকল স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ লাল রঙের হওয়ায় দেখলাম পুরো রোমান জোন যেন এক অপূর্ব রঙ ধারণ করেছে। আমার তুরিন নগরী আসার একটা অন্যতম কারণ ছিল এই পালাতিনে টাওয়ার। কারন এটিই হল রোমানদের নির্মিত সবচেয়ে প্রাচীন রক্ষণ স্তম্ভ এবং শহরে পৌঁছানোর দুয়ার। সময়ের ব্যাবধানে আশেপাশের সকল স্থাপনা ধ্বংসাবিশেষ হিসেবে পরিণত হলেও পোরতা পালাতিনে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির সকল বাধা তুচ্ছ করে।
পোরতা পালাতিনের পাশেই নগর কেন্দ্রের মূল গির্জা অথবা দুয়োমো, যা দেখে একটু হতাশই হয়েছিলাম কেননা অন্য সব বড় শহরের দুয়োমোগুলি হয় এক একটি প্রকাণ্ড স্থাপনা, তুরিনের দুয়োমো তুলনামুলকভাবে অনেক ছোট মনে হল। আর স্থাপনা হিসেবে এমন আহামরি কিছু মনে হলনা। যাই হোক, সন্ধ্যে হয়ে এল, এইবার কেন্দ্রে ফেরার পালা। আর কেন্দ্রে আসতেই নগরীর আলোকসজ্জা দেখে চক্ষু এক্কেবারে ছানাবড়া হবার যোগাড়। এ যেন এক বিপুল ও বিচিত্র আয়োজন, একেক রাস্তায় একেক রকমের আলোকসজ্জা। কেন্দ্রে ব্যাপক মানুষের ভিড় দেখলাম। আর মাত্র দুইদিন পরেই নাতালে অথবা বড়দিন, তাই বোধহয় কেন্দ্র লোকে লোকারণ্য হয়ে রয়েছে। তুরিন নগরীর সবকিছুই দেখলাম সাজানো গোছানো, নিয়ন্ত্রিত, শৃঙ্খলিত। পরিপাটি, নিখুঁত ও পরিচ্ছন্ন। কোথায় কোনও গ্যাঞ্জাম কিংবা তাড়াহুড়ো দেখলাম না। বাসে করে স্টেশনে যাবার আগে মনের সাধ মিটিয়ে ছবি তুললাম আর শেষ বারের মতন দেখে নিলাম অপূর্ব তুরিন নগরী।
২।
নাপোলি যাবার আগ্রহ ছিল বরাবরই ষোল আনা, যেদিন থেকে ইতালিতে পা দিয়েছি। এতদিন না যাবার একটা বড় কারণ ছিল খরচ। বোলোনিয়া থেকে ওখানে যাবার জন্য নেই কোনও রায়ান এয়ার এর মতন সাশ্রয়ী উড়োজাহাজ, অতএব ট্রেন একমাত্র ভরসা। কিন্তু ট্রেন ভাড়াও এত বেশী যে ওই ভাড়ায় একই খরচে ইউরোপের যেকোনো বড় শহরে ঘুরে আসা যায়। তবে বড়দিনের ছুটি এবং বড়দিন উপলক্ষে একটা সাশ্রয়ী ট্রেন টিকেট পেয়ে সাথে সাথে যাবার জন্যে রেডি হয়ে গেলাম।
নাপোলিতে কি আছে এই প্রশ্নটি করার আগে কি নেই তা জানতে চাওয়া ভালো। নাপোলিতে পাহাড় আছে, পর্বত আছে, জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি আছে, সাগর আছে, বন্দর আছে, পিজ্জা আছে, মজাদার সব পেস্ট্রি আছে, মানুষের ভিড় আছে, কোলাহল আছে, উদ্দামতা আছে, উল্লাস আছে, কান্না আছে, দ্বন্দ্ব আছে। ট্রেন থেকে নেমে প্রথম এই শহরে পা দিলে কেমন চেনা এক বাতাবরনের কথা মনে হয়, মনে হয় অতি চেনা একটা জায়গায় এসে পড়েছি। ট্রাফিকের কোনও নিয়ম নীতি নেই, মানুষজন দেদারসে রাস্তা পার হচ্ছে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, যে যেভাবে পারছে এগিয়ে যাচ্ছে, এই শহরে যেন নিজেকে খুঁজে পেলাম, মনে হল আমি বুঝি এখানে অনাহুত নই। এই শহরের এক অদ্ভুত নিমন্ত্রনের সুর আছে, কতশত বাঙালি মুখ ঘুরে বেড়াচ্ছে, নোংরা কাদা দিয়ে ঘেরা চারপাশ, পিজ্জার দোকান থেকে দোকানি ডাকছে, বাড়িঘরের কার্নিশ থেকে রঙ বেরঙের জামাকাপড় শুকোনোর জন্য ঝুলছে। রাস্তায় দাঁড়ালেই পাহাড়ের দেখা মিলছে, দূর থেকে স্টিমারের ধ্বনি ভেসে আসছে- এ যেন এক বিচিত্র কোলাহল মুখর জায়গা, শব্দ-রঙ-দৃশ্য সবই এখানে ভিন্ন এক চিত্রের সন্ধান দেয়। কোথায় সেই তুরিনের নিপুন শৃঙ্খলা আর কোথায় এই বিশৃঙ্খল কিন্তু প্রানবৈচিত্রে ভরপুর নাপোলি!
নাপোলিতে রাত্রে থাকার বন্দোবস্ত পাকা করে এসেছি আগেই, হোটেলে থাকব এক রাত্রি, পরের দিন রাত্রিতে বোলোনিয়া ফেরা, এর মাঝে একটি পুরো দিন রেখেছি শুধু নগর কেন্দ্রে ঘোরাফেরার জন্য আর একটি দিন পম্পেই যাব বলে। সকাল সাতটায় বোলোনিয়া থেকে রওনা দিয়ে সকাল দশটায় নাপোলি স্টেশনে নেমে এত ভীড় দেখে ভিরমি খেয়েছি ঠিকই তবে সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখি পেট সকালের নাস্তার জন্যে ব্যাকুল হয়ে আছে। কাজেই ঢুকে গেলাম স্টেশনের কাছেই একটি ক্যাফেটেরিয়ায়। সেখানে একটা ব্রিয়শ আর কাফে খেয়ে অমৃতের স্বাদ পেলাম যেন। দামও অনেক অনেক শস্তা, উত্তরের যে কোনও শহরের চাইতে। তারপর আধ ঘণ্টা ধরে চলল হোটেল খোঁজা, অবশেষে মিলে গেল আমার হোটেল। সেখানে লাগেজ রেখে রওনা দিলাম কেন্দ্রের দিকে, ট্রাম বাসের ব্যাবস্থা বুঝতে পারলাম না বিধায় দিলাম হাঁটা যা থাকে কপালে। তবে হাঁটতে গিয়ে দেখি বিপত্তির শেষ নেই, বড়দিনের আগে পুরো শহর একেবারে মানুষে পরিপূর্ণ। একে তো হাঁটা চলা কঠিন তার ওপর ট্রাফিক আইনের কিছুই বুঝতে পারছিনা, কিন্তু হন্টন থামালাম না। এগিয়ে যেতে থাকলাম গন্তব্যের দিকে, কেন্দ্রে যেতে হবে, আজ এটাই একমাত্র কাজ।
মেজাজ যথারীতি খারাপ চরম বাজে আবহাওয়ার কারণে, সেই একই কুয়াশা, রোদের দেখা নেই। তবে তাই বলে ক্যামেরার শাটার টেপা বন্ধ নেই। পুরো সড়কের দুই ধার জুড়ে বসে গেছে অস্থায়ী স্ট্রিট মার্কেট যার বেশিরভাগ বিক্রেতা আমাদের বাংলাদেশের, তারা মূলত বিক্রি করছেন খেলনা, টুপি, হাতব্যাগ এবং সান গ্লাস। এছাড়া পিতলের নানান আইটেম সাজিয়ে রেখেছেন অনেকে, অনেকে বিক্রি করছেন স্কার্ফ। সেইসব দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি। অবশেষে পৌঁছুলাম ক্যাসেল দেল নুয়োভো তে। প্রকাণ্ড এক দুর্গ, দুর্গের ভেতর প্রবেশ মূল্য ৬ ইউরো। ঢুকলাম ভেতরে, একটু হতাশই হলাম, ভেবেছিলাম হয়ত দুর্গের মাথায় উঠতে দেবে, দিলে আমি নাপোলির বন্দরের একটা ভাল দৃশ্য পাব, সেই আশায় যেহেতু গুড়েবালি কাজেই সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে এলাম আর কেন্দ্রের দিকে হাঁটতে থাকলাম, এর মাঝে দেখা মিলল নাপোলির কেন্দ্রীয় থিয়েটার। হাঁটতে হাঁটতে আরেকটি জিনিস খেয়াল করলাম যে নাপোলির এই পুরনো অংশে সবকিছুই প্রকাণ্ড, প্রবল, বিশাল। পুরনো ভবনগুলি কেমন ছাল ওঠা, ইতালির অন্য শহরের মতন হয়ত নিয়মিত যত্ন নেয়া হয়না বলেও মনে হচ্ছিল। কেন্দ্রটাও মনে হল খানিক বিমর্ষ। যদিও এটি ব্যাপক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত তবে মিলান কিংবা ফ্লোরেন্স এমনকি বোলোনিয়ার কেন্দ্রের চাইতেও কম আকর্ষণীয় মনে হয়েছে আমার। পালাজ্জো রেয়ালে আর দুয়োমোর মাঝে অনেক স্পেস থাকার কারণেও এমনটা মনে হতে পারে অবশ্য। আর রাতের আলোকসজ্জাও অনেকখানি মলিন এখানে। কেন্দ্রের মুল গির্জা অথবা দুয়োমোর স্থাপত্য অবশ্য চোখ জুড়ানো আবার তার ঠিক পেছনেই পাহাড় দারুণ একটা কনট্রাস্ট এনে দিয়েছে। কেন্দ্র ধরে আরেকটু এগিয়ে গেলে বন্দর, বন্দরে ভেড়ানো জেটি, ছোট নৌকো, অসাধারণ সুন্দর কাস্তেল দেল ওভো এবং দৃশ্যমান ভিসুভিয়াস। শহরের ঠিক এই প্রান্তে এসে নাপোলির সত্যিকারের সৌন্দর্য চোখ ভরে উপভোগ করা গেল। সারাদিনের সকল ধকল যেন এক লহমায় দূর হয়ে গেল। ওখানে একটি দোকানে দুর্দান্ত পিজ্জা খেয়ে দীর্ঘসময় সাগরপারেই কাটিয়ে দিয়ে রাত্রে ফিরে এলাম হোটেলে, সারাদিনের অবসাদে রাজ্যের ঘুম নেমে এল চোখে।
পরেরদিন ভোরে গোসল সেরে একটু চাঙ্গা হয়ে হোটেলের ব্রেকফাস্ট সেরে পম্পেই পানে রওনা দিলাম। বড়দিনে রাস্তাঘাটে তেমন মানুষ নেই, বাস-ট্রাম বন্ধ, কিন্তু পম্পেই যাবার ট্রেন চলবে, প্রথম ট্রেনটাই ধরলাম। ধীরে ধীরে ট্রেন ছুটে চলল পম্পেই এর দিকে আর সামনে দিগন্ত জুড়ে ভিসুভিয়াস। এ দৃশ্য মন থেকে মুছে ফেলা কঠিন। বড়দিন বলে কোনও রকম ভিড় নেই আর টিকেট বিক্রেতা দেখলাম অসম্ভব বিরক্ত। বড়দিনে ছুটি মেলেনি বলে রাজ্যের বিরক্ত পারলে আমার দিকে ছুঁড়ে মারে! পম্পেই এর সব দেখলাম একে একে অনেক সময় নিয়ে, পম্পেই নগরীতেই কেটে গেল সারাদিন। ভেবেছিলাম দ্রুত ফিরে আসব, অবাক হয়ে দেখলাম যে আমার নিজেরই সেখান থেকে আসতে ইচ্ছে করছিলনা। অতীতের নিঃশ্বাস থেকে বুঝি আমিও মুক্তি পাচ্ছিলাম না। ভিসুভিয়াসের কোলে নাপোলি এবং পম্পেই দর্শন সারা জীবনের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে রইল।
তুরিনের ছবি।
ক) তুরিন শহরের আরকেড। এই আরকেড দেখলাম পুরো নগর জুড়েই বিস্তৃত।

খ) একটি বাড়ির অন্দরমহলের চিত্র

গ) আরকেদের ওপর সিলিঙে নানান কারুকাজ

ঘ) তুরিনের তিপিকাল ভবন

ঙ) পালাজ্জো মাদামে

চ) মোল আন্তনেল্লিনা থেকে দেখা তুরিন নগরী

ছ) সুপেরগা চার্চ

জ) সুপেরগা চার্চের ভেতরে শীর্ষে ওঠার সিঁড়ি

ঝ) সুপেরগা থেকে দেখা আল্পস পর্বত, তুরিন নগরী ও পো নদী

ঞ) কুয়াশার চাদরে ঢাকা তুরিনের আঁকাবাঁকা পাহাড়

ট) মোল আন্তনেল্লিনা

ঠ) পোরতা পালাতিনে

ড) দুয়োমো, তুরিন

ঢ) পোরতা পালাতিনের পাশেই এই পালাজ্জো দেখেছি, নাম মনে নেই

ণ) বড়দিনের অনন্য আলোকসজ্জা

ত) শহর জোড়া আলোর মেলা

থ) পালাজ্জো রেয়ালে

দ) পালাজ্জো মাদামের একাংশ

ধ) নগর কেন্দ্রের আরেকটি বিশালাকার ভবন, দূরে মোল।

ন) সাঁঝবেলার রোমান নগরী

প)পালাতিনের সামনে একটি ভাস্কর্য

নাপোলির ছবিসমূহ
ক) কাস্তেল দেল নুয়োভো

খ) কাস্তেল দেল নুয়োভোর ভেতরে একটি ঘরের সিলিং

গ) কাস্তেল দেল নুয়োভো

ঘ) পালাজ্জো তিয়েত্রো, নাপোলির কেন্দ্রীয় থিয়েটার

ঙ) অনন্য গালেরিয়া উম্বেরতো

চ) গালেরিয়া উম্বেরতোর ভেতর

ছ)কাস্তেল দেল ওভোর জানালা দিয়ে দেখা নাপোলি নগরী

জ)কাস্তেল দেল ওভো

ঝ) নাপোলির কেন্দ্রে পালাজ্জো রেয়ালে

ঞ) বন্দর নগরে সাগরপারের ভাস্কর্য

ট) নাপোলি বন্দর

ঠ) দুয়োমো অফ নাপোলি

ড) কাস্তেল দেল ওভো

ঢ) গালফ অফ নাপোলি

ণ) নাপোলি শহরে ঢোকার একটি গেট

ত) নাপোলি শহর

থ) রঙ চটা নাপোলির গতানুগতিক ঘরবাড়ী

দ) পাখির চোখে দেখা নাপোলি

ধ) পিয়াজ্জা গারিবাল্দি

ন) নাম না জানা একটি চার্চের ভেতর

প) পুনশ্চ কাস্তেল দেল ওভো

পম্পেই চিত্র
ক) সুপ্রভাত পম্পেই

খ) পম্পেই ১

গ) পম্পেই ২

ঘ) পম্পেই ৩

ঙ) পম্পেই ৪

চ) পম্পেই ৫

ছ) পম্পেই ৬

জ) পম্পেই ৭

ঝ) পম্পেই ৮

ঞ) পম্পেই ৯

ট) পম্পেই ১০

ঠ) পম্পেই ১১

ড) পম্পেই ১২

ঢ) পম্পেই ১৪

ণ) পম্পেই ১৫

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন