শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

আটপৌরে ঘোরাঘুরি – ইয়ুংফ্রাউইয়োক, রোন গ্লেসিয়ার এবং গ্রিমসেল পাস

মূল লেখার লিংক
IMG_5591
ঘোরাঘুরি আমরা বেশ ভালো পাই। আমরা বলতে আমি, আমার গিন্নি আর এক বছর বয়েসি কন্যাটি। পৌণে ছয় এর পুত্র ঘুরতে যাবার কথা শুনলেই মুখ গোমরা করে ল্যাচা মেরে বসে পড়তে চায়, ঘুরে ঘুরে পাথর গাছপালা পানি দেখার চাইতে ইউটিউবে কার্টুন দেখা তার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক। বেশিরভাগ দিনে তাকে ধমক দিয়ে কিংবা টেনে হিঁচড়ে বাড়ির বার করতে হয় এবং সেইসব দিনগুলোতে অবধারিত ভাবে কানের কাছে সারাক্ষণ বাজতে থাকে, বাসায় যাব, বাসায় যাব। আমরা বলি, বাবা, সবসময় বাসায় বসে থাকলে কিন্তু তোমার শিকড় গজিয়ে যাবে, চেয়ারের সাথে আটকে থাকে হবে সারাজীবন। ছেলে ভয় পেয়ে কিছুক্ষণের জন্য থামে, তারপর যে কে সেই।
এইসব নিয়েই চলছে আমাদের অনিয়মিত, অপরিকল্পিত, ষোল আনা বাঙালি ঘোরাঘুরি। হয়ত সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক করলাম, আজকে একটু দূরে কোথাও যাব। বাচ্চা কাচ্চা খাইয়ে স্ট্রলার গাড়িতে তুলে দিই ছুট। নতুন জায়গায় যাবার চেষ্টা করি প্রায়ই, মাঝে মাঝে চেনা জায়গাতেই ফিরে ফিরে আসি। অবশ্য যা দেখি তাই ভালো লাগে। আমরা সমতল দেশের মানুষ, কোথাও একটু উঁচু নিচু দেখলেই মন আহা উঁহু করে। আবার চলতে চলতে এমন কিছু জায়গার দেখা পেয়ে যাই, যা যে কোন মানুষের ভালো লাগতে বাধ্য।
কয়েকদিন আগে গেছিলাম টপ অফ ইউরোপ বলে খ্যাত ইউংফ্রাউইয়োক রেল স্টেশনে। এটাকে অবশ্য পুরোপুরি অপরিকল্পিত ভ্রমণ বলা যাবে না। ইন্টারনেটে কিছু খোঁজখবর করছিলাম অনেক আগে থেকেই। টিকেটের কত দাম, কোথা থেকে যাওয়া যায়, গেলে কি কি দেখা যাবে, বিনোদনের কি কি ব্যবস্থা আছে ইত্যাদি তথ্য দেয়া ছিল এই ওয়েবসাইটে। এছাড়া টপ অফ ইউরোপ বিষয়ে সচলেই কিছুদিন আগে লিখেছিলেন জনাব ঈয়াসীন, এখানে
যারা এই জায়গার ব্যাপারে অবগত নন, তাদের জন্য বলছি, এটা সাধারণ কোন রেল স্টেশন নয়। সুইজারল্যান্ডের দুটি বিখ্যাত পর্বত চূড়া ইয়ুংফ্রাউ এবং মঙ্ক এর মাঝে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৪৫৪ মিটার উচ্চতায় এটাকে তৈরী করা হয়েছে, রেলপথ গেছে আইগার এবং মঙ্ক পর্বতের গা ফুটো করে টানেল বানিয়ে। এটি ইউরোপের উচ্চতম রেল স্টেশন, তৈরী করা শুরু হয়েছিলো ১৮৯৬ সালে, ষোল বছর লেগেছে কাজ শেষ হতে। একশ বছর আগে বানানো এই স্থাপনা নিঃসন্দেহে সেই সময়ের অন্যতম ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাচিভমেন্ট। এই প্রকল্পের পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন অ্যাডলফ গুইয়ার জেলার, যিনি অবশ্য তাঁর কর্মযজ্ঞের ফলাফল দেখে যেতে পারেননি।
বেশিরভাগ জায়গাতে আমরা গাড়িতে করেই যাই, এটার বেলায় ঠিক করলাম ট্রেনে যাব। গোল্ডেন পাস বলে অত্যন্ত চমৎকার একটা রেলওয়ে লাইন আছে, যেটা আল্পসের মাঝ দিয়ে একে বেঁকে ইন্টারলাকেন হয়ে লুক্রেন পর্যন্ত চলে গেছে। ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউইয়োকের ট্রেন ছাড়ে, কাজেই গোল্ডেন পাসে চড়লে গন্তব্যে যাবার পাশাপাশি নতুন একটা জায়গা দেখা হয়ে যাবে। একজনের ট্রেনের টিকেটের হিসাব করা যাক (এই সেকশনটা যারা বেড়াতে আসতে চান তাদের জন্য লিখছি)
রনো (আমার বাসা) থেকে মন্ট্রু (গোল্ডেন পাসের শুরু) – ১২ ফ্রাঁ (৩৫ মিনিট)
মন্ট্রু থেকে ইন্টারলাকেন ওয়ানওয়ে – ৫১ ফ্রাঁ (৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট)
ইন্টারলাকেন থেকে টপ অফ ইউরোপ রিটার্ন – ১৯৮ ফ্রাঁ (৪ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট + যতক্ষণ আপনি ওপরে থাকেন)
ইন্টারলাকেন থেকে বার্ন – ৫৪ ফ্রাঁ (৫৪ মিনিট)
বার্ন থেকে রনো – ৩৪ ফ্রাঁ (১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট)
মোট – ৩৪৯ ফ্রাঁ
হিসাবটা একটু ঘাবড়ে যাবার মত হলেও কিছু ডিসকাউন্ট সুবিধা আছে। যদি আপনার একটি হাফ ফেয়ার কার্ড থাকে, তবে পুরো ভাড়াটাকে ২ দিয়ে ভাগ করে ফেলতে পারেন, হয়ে গেলো ১৭৪.৫ ফ্রাঁ। (এক বছর মেয়াদি হাফ ফেয়ার কার্ডের দাম ১৭৫ ফ্রাঁ, এক মাস মেয়াদি কার্ডের দাম ১২০ ফ্রাঁ। এই সময়কালে সুইজারল্যান্ডের সমস্ত ট্রেন, বোট, কেবল কার, ফানিকিউলারে আপনার জন্য ৫০% মূল্যহ্রাস প্রযোজ্য হবে)। এখান থেকে আরও ১৭ ফ্রাঁ খরচ কমানো যাবে, যদি আপনি ভেঙ্গে ভেঙ্গে টিকেট না কিনে একটি ডে কার্ড কিনে ফেলেন (শুধুমাত্র হাফ ফেয়ার কার্ড থাকলে কেনা যাবে, ৭১ ফ্রাঁ দাম, এক দিনের জন্য আনলিমিটেড ট্রেন ট্রাভেল)।
টাকার কচকচানি বাদ দিয়ে ভ্রমণে ফেরা যাক। যেহেতু খুবই লম্বা জার্নি, একটু সকালে বের হওয়া উচিত। কিন্তু ঘুম থেকে জেগে শিশুদের তৈরী করে বেশি সকালে বের হওয়া সহজ নয়। তাছাড়া মন্ট্রুতে গোল্ডেন পাস ট্রেনের সময়সূচী একটা ফ্যাক্টর। সকাল পৌণে ন’টায় যে ট্রেন তার কোচগুলো পুরনো, কিন্তু পৌণে দশটার ট্রেন নতুন কোচ, বড় বড় কাঁচ দিয়ে সাজানো। নামটাও গালভরা, গোল্ডেন পাস প্যানোরামিক। মিস করব কেন?
ঠিক করলাম, ৯টা ৪ মিনিটের ট্রেন ধরব বাসার পাশের স্টেশন থেকে। তারপর পরিকল্পনা মোতাবেক বিশাল এক চক্কর দিয়ে বাড়ি ফিরব। বিধি বাম। পুত্রকে মানিয়ে কন্যার স্ট্রলার ঠেলে ঠেলে স্টেশনে পৌঁছাতে মিনিট খানেক লেট করে ফেললাম, আমাদের চোখের সামনে দিয়ে মন্ট্রু যাবার ট্রেন ঝিক ঝিক করে চলে গেল। নিখুঁত টাইমিং, সুইস ট্রেন প্রায় কখনোই দেরি করে না। এখন কোন উপায়েই আর পৌণে দশটার গোল্ডেন পাস ধরা যাবে না। এত মন খারাপ হল বলার নয়। কানে ধরলাম, টায়ে টায়ে আর কখনো বেরোব না, দরকার হলে আধা ঘণ্টা স্টেশনে বসে থাকব, তবুও………
রুট প্ল্যান চেঞ্জ। বার্ন হয়ে ইন্টারলাকেন, আবার বার্ন থেকেই রনো, নো গোল্ডেন পাস (ফেরার সময় গোল্ডেন পাসের শেষ ট্রেনটি পাওয়া যায় সাড়ে পাঁচটায়, কিন্তু আমরা তখনো ওপরে থাকব)। সবকিছু ঠিক থাকলে ১২.৫৪ তে ইন্টারলাকেন পৌঁছচ্ছি, ১.০৫ এর ট্রেনে টপ অফ ইউরোপের দিকে যাত্রা শুরু করব। যাত্রার খুঁটিনাটি এই ছবিতে পাওয়া যাবে।
jungfrauregion_small
ছবি ১: এক নজরে ইয়ুংফ্রাউ রেজিয়ন (অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নেয়া)
দুই লেকের মাঝখানের জায়গাটার নাম ইন্টারলাকেন। শহরের নামের অর্থ নিশ্চয়ই আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। দূরে সবচেয়ে উঁচু যে মাথাটা দেখা যাচ্ছে, সেটাই হল ইয়ুংফ্রাউ শৃঙ্গ। তার বামে আছে আরও দুই বিশালবপু পর্বত, মঙ্ক আর আইগার। ইন্টারলাকেন ওস্ট নামের স্টেশন থেকে লাল দাগ (রেল লাইন) শুরু হয়ে মাঝে দুভাগ হয়ে গেছে, একভাগ লাউটারব্রুনেন আর অন্যভাগ গ্রিন্ডারওয়াল্ডের দিকে। দুটো পথ আবার এসে মিলেছে ক্লাইনে শাইডেগ স্টেশনে। তার একটু পর থেকেই সোজা পর্বত ফুঁড়ে উর্ধ্বপানে ইয়ুংফ্রাউইয়োকের দিকে চলে গেছে টানেল আর রেললাইন। তীর দেখানো জায়গাটায় এসে পথ শেষ। এর পর থেকে শুধুই পায়ে হেঁটে এদিক ওদিক যাওয়া চলবে, ইচ্ছা হলে ইয়ুংফ্রাউয়ের চূড়া পর্যন্ত।
যা বলছিলাম, সবকিছু ঠিক থাকলে ১২.৫৪ তে ইন্টারলাকেন ওস্টে পৌঁছব। নিজের মাতব্বরির জন্য পারলাম না। কথায় বলে, অল্পবিদ্যা ভয়ংকর। ফরাসী ভাষায় OUEST মানে হচ্ছে পশ্চিম, EST মানে হচ্ছে পূর্ব। যেহেতু আমরা জার্মানভাষী এলাকায় যাচ্ছি, একটু নাম বদল হবে এটাই স্বাভাবিক। ধরেই নিলাম, INTERLAKEN OST হচ্ছে জার্মান ভাষার পশ্চিম ইন্টারলাকেন, INTERLAKEN EST হবে পূর্ব ইন্টারলাকেন। কাজেই ট্রেন যখন এসে INTERLAKEN WEST স্টেশনে থামল, আমরা তাড়াহুড়ো করে গাট্টি বোঁচকা, স্ট্রলার নিয়ে নেমে গেলাম। জার্মান ভাষায় পশ্চিম কে যে WEST আর পূর্বকে OST বলে সেটা কেমন করে জানব? কাজেই নেমে ধরা খেলাম। ট্রেন সুন্দর করে চলে গেল, আর কাউন্টার থেকে জানলাম পরের ট্রেন চব্বিশ মিনিট পরে। ১ টা ০৫ এর ট্রেনটাও ফসকে গেল। ইন্টারলাকেন ওস্টে যখন আসলাম, তখন প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছি। আরও এক ঘণ্টা লেট। ওপরে উঠে দেখব কি ঘোড়ার ডিম? সময়ই তো নেই।
এই দুর্যোগময় মুহুর্তে আশার আলো দেখালো একজন স্টেশন কর্মী। আমাদের টিকেট হচ্ছে INTERLAKEN OST – GRINDERWALD – JUNGFRAUJOCH – GRINDERWALD – INTERLAKEN OST
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, এই যে পাঁচ মিনিট পর লাউটারব্রুনেন এর ট্রেনটা ছাড়ছে, সেটায় কি আমরা যেতে পারব? সে গম্ভীর মুখে ছোট করে জবাব দিল, ইয়া। ব্যাস, আমরাও চড়ে বসলাম সাথে সাথে। লাউটারব্রুনেন নেমে ট্রেন বদল করতে হবে। সাধারণ রেলপথের বদলে এখানে আছে কগ হুইল রেইল, যার কাজই হচ্ছে গিয়ারের দাঁত বসিয়ে ট্রেনকে ওপরে তোলা বা নীচে নামানো।
ট্রেনে উঠে দেখি, টিকেট চেকার আসছে। গ্রিন্ডারওয়াল্ডের টিকেট নিয়ে লাউটারব্রুনেন থেকে চড়ছি কেন, এই প্রশ্নের জবাবে ভীষণ অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, এই ট্রেন টপ অফ ইউরোপে যাচ্ছে না? আমার ভয়ানক বিস্মিত চেহারা দেখেই কিনা, সে আর কথা না বাড়িয়ে মেঘস্বরে বলল, ক্লাইনে শাইডেগ নেমে ট্রেন বদল করবে। হেসে মনে মনে বললাম, জ্বী, আমি জানি।
অনেক বকবক করে ফেলেছি। বাচালতা বন্ধ করে ছবির গল্পে চলে যাই।
IMG_5462
ছবি ২: লাউটারব্রুনেন এর জলপ্রপাত, যাত্রা হলো শুরু
IMG_5484
ছবি ৩: চলতি পথে এমন অনেক ঝর্ণা দেখা যাবে
IMG_5494
ছবি ৪: মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই লাউটারব্রুনেন এত নীচে চলে গেছে দেখে ভয় পেলাম। দুই ঘণ্টায় তাহলে কতখানি ওপরে উঠব? অনেক দূরে একটু আগের জলপ্রপাত দেখা যাচ্ছে
IMG_5496
ছবি ৫: আরেক দফা লাউটারব্রুনেন। পেছনে কি মেঘ? ভুল
IMG_5503
ছবি ৬: প্রথম স্টেশনে চলে এসেছি। এই পর্যন্ত সম্ভবতঃ সহজেই গাড়িতে আসা যায়
IMG_5506
ছবি ৭: মহাশয়ের প্রথম দর্শন, বেরসিক তারের হাত থেকে কোথাও নিস্তার নেই
IMG_5512
ছবি ৮: ওয়েঙগেন কে পেছনে ফেলে এসেছি
IMG_5513
ছবি ৯: চারদিকে কেবল কার, চেয়ার লিফট ইত্যাদির ছড়াছড়ি। ইয়ুংফ্রাউ ছাড়াও ছোটখাটো আরও অনেক চূড়ায় ওঠানামার ব্যবস্থা আছে। এরকম একটি চেয়ারলিফট স্টেশন
IMG_5519
ছবি ১০: কাছে চলে আসছি। চোখে দৃশ্যটাকে যতখানি অলৌকিক লাগে, ক্যামেরায় তার সহস্রাংশও নয়। ছবি তোলার হাত ভাল না থাকার প্রভাব নব্বই শতাংশ
IMG_5527
ছবি ১১: এই বরফ চূড়াটিকে প্রথমে সবচেয়ে উঁচু মনে হচ্ছিলো। এখন আর তা লাগছে না
IMG_5528
ছবি ১২: আরও কাছে। রোমাঞ্চ কেবলই বাড়ছে
IMG_5542
ছবি ১৩: উচ্চতার পার্থক্যটা এখন পরিষ্কার।
IMG_5544
ছবি ১৪: আইগার এর টানেল থেকে নেমে আসছে ট্রেন। শাটার স্পীড ৪০০০ থাকায় কেমন কালো এসেছে ছবিটা। মনে হচ্ছে কালো মেঘে ঢেকে গেছে চারপাশ
IMG_5549
ছবি ১৫: আইসমীয়ার গ্লেসিয়ার। এখানে ট্রেন দশ মিনিট মত থামে। পাহাড়ের মাঝখানে জানালা কেটে যাত্রীদের দেখবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে
IMG_5550
ছবি ১৬: আরেক দফা আইসমীয়ার গ্লেসিয়ার
IMG_5555
ছবি ১৭: স্টেশনের বাইরে প্রতিষ্ঠাতার ছোট প্রতিকৃতি
IMG_5567
ছবি ১৮: এবার আমরা স্টেশনের ওপরে অবজার্ভেশন বিল্ডিং এর বারান্দায় চলে এসেছি। এটার নাম স্ফিংস। স্টেশন থেকে একটু হেঁটে লিফটে করে আসতে হয়। বেশ উঁচু। দূরে দেখা যাচ্ছে সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় গ্লেসিয়ার আলেশ কে।
IMG_5568
ছবি ১৯: স্ফিংস থেকে তোলা স্টেশন লেভেলে থাকা স্নো ফান জোনের ছবি। লম্বামত দেখতে জিনিসটা হচ্ছে একটা কাঁচঘেরা টানেল, রাবার টিউবে চড়ে পিছলে নেমে আসা যায় ভেতর দিয়ে। ওপরে ফিরতে হবে অবশ্য হেঁটে
IMG_5574
ছবি ২০: স্নো ফান জোনে নেমে এসেছি। অনেক আমোদের ব্যবস্থা আছে এখানে। যেমন বুকে দড়ি বেঁধে স্টিলের তারে ঝুলতে ঝুলতে চলে যাওয়া। একজন রওনা দিচ্ছে, আরও অনেকে লাইনে
IMG_5575
ছবি ২১: গেল
IMG_5576
ছবি ২২: বহুদূর যেতে হবে……
IMG_5582
ছবি ২৩: আলেশ গ্লেসিয়ারের ওপরিভাগ
IMG_5591
ছবি ২৪: স্নো ফান জোনের পেছনে মঙ্ক পর্বত
IMG_5616
ছবি ২৫: আলপাইন সেনসেশন। স্নো ফান জোন থেকে আইস প্যালেসে যাবার আগে ছোট্ট এই অ্যানিমেটেড অবজেক্ট দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পাহাড়ের জীবনযাত্রা দেখানো আছে ছোট ছোট অংশে
IMG_5622
ছবি ২৬: আইস প্যালেসে যাবার আগে করিডোরের দেয়ালে অনেক পেইন্টিং চোখে পড়ে। কেউ একজন উঁচু কোন পাহাড়ে চড়ে তিন বন্ধুকে দেখছে দূর থেকে। কে এই ভদ্রলোক? জানি না
IMG_5624
ছবি ২৭: দুর্গম আল্পসকে পোষ মানানোর চেষ্টা চলছে অনেক আগে থেকে। পলকা সেতুগুলো একটা নমুনা
IMG_5625
ছবি ২৮: একজন অভিযাত্রী আহত হয়ে পড়ে আছে। সঙ্গীরা সেবা শুশ্রূষা করে চলেছে
IMG_5629
ছবি ২৯: ক্লাইনে শাইডেগ। কত সালের চেহারা এটা? জানি না
IMG_5636
ছবি ৩০: হাতুড়ি আর গাঁইতি শাবল দিয়ে খনন কাজ চলছে
IMG_5637
ছবি ৩১: আইগারকে খোঁড়া শুরু হয়েছে। মেমরা এসেছেন উদ্বোধন করতে?
IMG_5638
ছবি ৩২: হাতে টেনে পাথর খোঁড়া হচ্ছে, অবিশ্বাস্য!
IMG_5639
ছবি ৩৩: গুরুতর আহত কিংবা নিহত শ্রমিকদের স্মরণে নামফলক। সবই ইটালির লোক। সুইসরা কি অংশ নিতে ভয় পেয়েছিলো?
IMG_5646
ছবি ৩৪: ক্লাইনে শাইডেগ থেকে দেখা গ্রিন্ডারওয়াল্ড। লাউটারব্রুনেন দিয়ে উঠেছিলাম, এইদিক দিয়ে নামছি। কিন্তু স্বীকার করতেই হবে, এই দিকের রাস্তাটা ওইদিকের তুলনায় একেবারে পানসে
IMG_5650
ছবি ৩৫: আইগারের কোল ঘেঁষে নেমে গেছে রেলপথ। গ্রিন্ডারওয়াল্ড এখনও বেশ দূরের পথ, বাড়ি ফিরে যেতে ঘণ্টা চারেকের বেশি লাগবে।
আমরা লেক জেনেভার উত্তর তীরে থাকি। জায়গাটা অর্ধচন্দ্রাকৃতি লেকের ঠিক মাঝামাঝি, পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে অতি বিখ্যাত জেনেভা শহর, পূর্ব প্রান্তে মন্ট্রু (এটা আমার বাঙালি উচ্চারণ, আমার ফ্রেঞ্চ কলিগের উচ্চারণে, MONTREUX = মনথখ্রো)। দক্ষিণ দিক বাদ দিয়ে আমার বাসার তিনদিকে পঞ্চাশ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের সব এলাকা মোটামুটি ঘুরে ফেলেছি, কখনো গ্রীষ্মে, কখনো শীতে। আজকাল আর তাই সহজে মন ভরে না, ইচ্ছে করে দূরে দূরান্তে যেতে।
লোকেশন বাছাই করতে আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং কার্যকর সঙ্গী গুগল ম্যাপস। অসাধারণ এই অ্যাপ্লিকেশনের জন্য গুগলকে আমি সকাল বিকাল ধন্যবাদ জানাই। অফিসের বিরক্তিকর মিটিংগুলোতে সুযোগ পেলেই ম্যাপ খুলে বসে থাকি, আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এদিক সেদিক দেখি।
30-09-2013 12-36-04
ছবি ০ – যেখানে যেতে চাই
বেশ কিছুদিন ধরে আমার নজর কেড়েছিলো পাহাড়ি একটা এলাকা। রাস্তা ঘুরে ঘুরে ওপরে উঠে গেছে এটা দেখতে কেন জানি বেশ রোমাঞ্চকর লাগে। এখানে ম্যাপের গায়ে সেইরকম অনেকগুলো ভাঁজ দেখা যাচ্ছে। গত পর্বে লিখেছিলাম ইয়ুংফ্রাউইয়োকের কথা। এটা তার পূর্ব দিকে, আমার বাসস্থান থেকে সোয়া দু’শো কিমি দূরে। ওপরের ছবিতে দেখে যা মনে হচ্ছে, জায়গাটা ঠিক তাই, বেশ দুর্গম (!) এবং উঁচু, চারিদিকের সবুজের মাঝখানে নিজের সাদা রঙ নিয়ে সগর্বে দণ্ডায়মান। চার চারটা গিরিপথ বা পাস কিছু পর্বতকে চক্রাকারে ঘিরে রেখেছে, দৈর্ঘ্যে মোটামুটি একশ বিশ কিলোমিটার। এরকম একটা জায়গা ঘরের কোণে পড়ে আছে ভাবা যায়? গুগল বলছে পুরোটা একবার ঘুরে আসতে মাত্র দুই ঘণ্টারও কম সময় লাগবে। একটু আগে দুর্গমের পাশে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন এজন্যই দিয়েছি। সুইসরা তাদের বেশিরভাগ এলাকাকে এমনভাবে পোষ মানিয়ে ফেলেছে, কোনকিছুকেই আর অগম্য বলার উপায় নেই। যেখানেই যাওয়া যাক না কেন, যত উঁচুতেই ওঠা হোক না কেন, রাস্তা কিংবা রেললাইন অথবা বিকল্প যান (কেবল কার, ফানিকিউলার, চেয়ারলিফট ইত্যাদি) একটা কিছু পাওয়া যাবেই।
ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখি, এটা মোটামুটি বিখ্যাত এলাকা, সুইজারল্যান্ড এবং ফ্রান্সের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রোন নদীর জন্ম এই চক্রের কেন্দ্রে থাকা রোন গ্লেসিয়ার থেকেই। মনে পড়ে গেল জনাব মাহমুদ জেনেভা কর্তৃক রচিত এই লেখাটির কথা। এটা পড়ে রোন গ্লেসিয়ার দেখার একটা তীব্র ইচ্ছে হয়েছিল, এবার সেটি এক নতুন মাত্রা পেলো। রথ দেখা কলা বেচা দুটোই মনে হচ্ছে হয়ে যাবে এই যাত্রায়।
গাড়ি নিয়ে যাব, কাজেই এবার টাইমটেবল নিয়ে ভাবনা নেই। একসময় গেলেই হল। তবে গ্রীষ্মকাল ফুরিয়ে আসছে, আজকাল সাড়ে সাতটা বাজতেই ঝপ করে সন্ধ্যা নেমে পড়তে চায়, বেশি দেরী করা ঠিক হবে না।
বিভিন্ন ঝামেলা চুকিয়ে বেরোতে অবশ্য পৌনে বারোটা বেজে গেল। যাত্রার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বাচ্চারা কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে উঠলে হাইওয়ের পাশে একটা পেট্রল স্টেশনে গাড়ি থামালাম। গাড়ি পার্ক করে দশ কদম সামনে এগোতেই সুন্দর একটা জলাশয় ভেসে উঠল চোখের সামনে। সবুজাভ স্বচ্ছ জলে মাছেরা ঘোরাঘুরি করছে দেখে আমরা এতই মুগ্ধ হয়ে উঠলাম যে মনে হলো আজ আর বেশি দূরে গিয়ে কাজ নেই, এখানেই থেকে যাই। ঘন্টাদেড়েক এখানে কাটাবার পরে মুগ্ধতা কিছু কমে এলে আবার রোন গ্লেসিয়ারের পথে উঠে গেলাম। গিয়েই ছাড়ব আজকে। পৌঁছাতে বিকেল পাঁচটা বেজে যাবে, কি আর করা!
IMG_6685
ছবি ১ – মুগ্ধতার লেক
IMG_6686
ছবি ২ – লেকের অন্যপাশে ওয়াইল্ড ওয়েস্টের থীমে একটা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, নাম ওয়েস্টার্ন সিটি। সময় ছিলো না ভেতরে যাবার, অন্য কোন দিন আসা যাবে।
IMG_6687
ছবি ৩ – ওয়েস্টার্ন সিটিতে যাবার সাঁকো
IMG_6666
ছবি ৪ – পান্নাসবুজ পানিতে মাছেদের ঘোরাঘুরি। শাটার স্পীড কম থাকলে মাছ আসে না, তাই ছবিটা একটু অনুজ্জ্বল।
আমাদের যাত্রাপথে পরবর্তী উল্লেখযোগ্য শহর হচ্ছে ব্রিগ। ইটালির সীমান্তে অবস্থিত এই শহর থেকেই মুলতঃ রোন নদী ফুলে ফেঁপে উঠেছে আশেপাশের পাহাড়ের বরফ গলা পানিতে, তার আগে আগে এটা বড়সড় পাহাড়ী ঝর্ণা ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্রিগ থেকে দক্ষিণে মিলানের দিকে চলে গেছে বিখ্যাত সিমপ্লন পাস, যেটার গল্প আরেকদিন হয়তো বলব, এই পথে আমরা গেছি তিন চার বার। আর উত্তর পূর্ব দিকে চলে গেছে ফুরকা পাস, যেটা রোন গ্লেসিয়ারের কাছাকাছি গ্রিমসেল পাসে গিয়ে মিশেছে। ফুরকা পাস (২৪২৭ মি), গ্রিমসেল পাস (২১৬৫ মি), সাস্টেন পাস (২২২৪ মি) আর সেইন্ট গোথার্ড পাস (২১০৬ মি) এই চার গিরিপথবন্ধু হাত ধরাধরি করে ঘিরে রেখেছে আল্পসের একটা অংশকে, যার কথা আগেই বলেছি।
ব্রিগ থেকেই মোটামুটি রাস্তা একটানা ওপরে ওঠা শুরু করেছে। মাঝে একটা জায়গা অনেকখানি সমতল, সেখানে দেখলাম বেশ কিছু শহর গড়ে উঠেছে একটু পরপর, আর এদিক সেদিক ছোট ছোট গ্রাম তো আছেই। বাড়িগুলো বেশিরভাগই কাঠের, বারান্দা আর জানালা রং বেরংয়ের ফুল দিয়ে সাজানো। রাস্তার দুই পাশে উঁচু উঁচু সব পাহাড়, গাছপালা দিয়ে ভরা, সবুজের এমন কোন শেড বেই, যা এখানে পাওয়া যাবে না। শরৎকাল চলে আসাতে কিছু গাছের পাতায় রঙ ধরেছে, সামনে তা আরো ভয়ংকর সুন্দর রূপ নেবে। যেসব পাহাড় অংশতঃ ন্যাড়া, সেগুলো থেকে মাঝে মাঝেই ক্ষীণ থেকে মাঝারি ধারায় বেরিয়ে আসা ঝর্ণার দেখা পাওয়া যাচ্ছে। সব দেখে মনে হয়, আহা! পৃথিবীতে স্বর্গ বলে যদি কিছু থেকে থাকে তো সেটা এখানেই।
IMG_6744
ছবি ৫ – ব্রিগ যাবার পথ, গাছ আর ফসলী ক্ষেতের সমারোহ চারদিকে
IMG_6764
ছবি ৬ – ব্রিগের পরে পাহাড়ী ঝর্ণা
IMG_6771
ছবি ৭ – পথের একপাশে সুইস গ্রাম, প্রত্যন্ত বলে সুবিধাবঞ্চিত নয় মোটেই। বিদ্যুৎ আছে, পাকা সড়ক আছে, নিশ্চিতভাবে বিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা আছে। আর চারপাশে অদ্ভুত সুন্দর প্রকৃতি তো আছেই। নাগরিক সুবিধাগুলি এমনভাবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা থাকে যে, সুইজারল্যান্ডের যে কোন অংশে একই মানের জীবনযাপন করা সম্ভব। ঈর্ষান্বিত না হয়ে পারা যায় না। আমাদের দেশে কি কখনো এমন সাম্যাবস্থা আসবে?
IMG_6781
ছবি ৮ – ফুরকা পাস এখানে সমতল। মাঝারি গতিতে আমরা ছুটে চলেছি গন্তব্যের দিকে (দূরে, ঐ পাহাড়সারির পেছনে কোথাও)
IMG_6786
ছবি ৯ – গ্রাম, নাকি শহর?
IMG_6790
ছবি ১০ – গ্লেসিয়ারে যাবার আগে শেষ বড় শহর মুয়েনস্টার গেশিনেন।
IMG_6795
ছবি ১১ – বাড়িগুলো সব ফুলে ফুলে শোভিত
IMG_6797
ছবি ১২ – জনৈক ব্যক্তি তার আহত ঘোড়াকে কাঁধে করে দুর্গম পথে চলেছে। নিশ্চয়ই কোন সাহসী বীরপুরুষের স্মরণে এই ভাস্কর্য। চলন্ত গাড়ি থেকে একটার বেশি স্ন্যাপ নেয়া সম্ভব হয় নি। আমাদের অবশ্য তাড়াও ছিলো।
IMG_6801
ছবি ১৩ – ছোট্ট শহর ওবারগমস। এখান থেকে গাড়ি ট্রেনে তুলে ফুরকাকে বাইপাস করা যায় একটা লম্বা টানেলের মাধ্যমে। আমাদের সে ইচ্ছে নেই মোটেই…………
IMG_6818
ছবি ১৪ – ওবারগমস পার হবার পরেই আবার পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা শুরু হয়ে গেছে। দুই তিনটা বাঁক ঘোরার পরে চোখের সামনে যে দৃশ্য ভেসে উঠল সেটাকে আমার ক্লান্ত মস্তিষ্ক প্রথমে চিনতে পারেনি একেবারেই। ম্যাপে দেখা গ্রিমসেল পাস এখন চোখের সামনে। একটা পাহাড় বেয়েই প্রায় খাড়া উঠে গেছে একেবেঁকে। আরো কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়াবার ইচ্ছা ছিলো। দুই পাহাড়ের মাঝে সরু প্যাসেজ দিয়ে এমন হুড়হুড় করে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, টেকা গেলো না।
IMG_6822
ছবি ১৫ – ফেলে আসা পথ। রেললাইন সহ এই টানেলটি এখন পরিত্যক্ত। ওবারগমসের টানেল হবার আগে এখান দিয়েই ট্রেন চলাচল করত।
IMG_6825
ছবি ১৬ – গ্রিমসেল পাস এবং ফুরকা পাস এসে মিশেছে গ্লাতচ গ্রামে। সেখান থেকে ডানে ঘুরতেই উন্মুক্ত হল ফুরকা পাসের উঁচু অংশ। এবার আর চিনতে ভুল হয় নি। দূরে দেখা যাচ্ছে বেলভেডেয়ার হোটেল, যেটার গোড়ায় রোন গ্লেসিয়ারের বর্তমান অবস্থান
IMG_6830
ছবি ১৬ক – আরেকটু কাছে থেকে তোলা ছবি দেয়ার লোভ সামলানো গেলো না
IMG_6835
ছবি ১৭ – রাস্তা একশো আশি ডিগ্রী ঘুরে যাওয়ায় গ্রিমসেল পাস ডানে চলে এসেছে।
IMG_6837
ছবি ১৮ – আবারো লোভ
IMG_6847
ছবি ১৯ – একটা টিপিক্যাল বাঁক। রাস্তাগুলো যে এতো খাড়া উঠে গেছে, পাশে থেকে না দেখলে বোঝা যায় না
IMG_6848
ছবি ২০ – আর মাত্র দুইটা বাঁক ঘুরলেই গন্তব্য
IMG_6866
ছবি ২১ – পৌঁছে গেছি। নীচে দেখা যাচ্ছে ফুরকা আর গ্রিমসেল পাস, মাঝে তীরবেগে বয়ে যাওয়া রোন নদী। দূরে হামাগুড়ি দেয়ার মত করে ভেসে ভেসে এগিয়ে আসছে গাঢ় সাদা একটা মেঘ। আমি প্রায় চিমটি কেটেই ফেলেছিলাম হাতে। স্বপ্ন দেখছি নাকি?
IMG_6873
ছবি ২২ – কি আশ্চর্য! একটা মারমট। দুই পায়ে ভর দিয়ে মিনতি জানাচ্ছে এর তার কাছে, যদি কিছু খাবার পাওয়া যায়। এই ভদ্রমহিলা বিস্কুট দিয়েছিলেন।
IMG_6874
ছবি ২৩ – এবার একজনের পা চেপে ধরেছে বজ্জাতটা। কিছু পাবে না বোধহয়। ভদ্রলোকের কাছে কোন খাবার নেই।
IMG_6878
ছবি ২৪ – আজব দেশ, এখানে পার্কিং লটেও ঝর্ণা মেলে
IMG_6888
ছবি ২৫ – নদীর ধারা এখান থেকে শুরু, কিভাবে ছবি তুললে পানির প্রবাহটা ঠিকমতো আসতো বুঝতে পারি নি। কারো বিশেষজ্ঞ মন্তব্য পাওয়া গেলে খুশি হই।
IMG_6891
ছবি ২৬ – উৎস থেকে শুরু করে গ্লাতচ পর্যন্ত রোনের প্রবাহ
IMG_6894
ছবি ২৭– এই ক্ষুদ্রাকৃতি হ্রদ থেকেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। পানির ওপরে ভাসছে বিশালকায় বরফের চাঁই। গ্লেসিয়ার অবশ্য দেখা যাচ্ছে না। সেটা একটু আড়ালে
IMG_6896
ছবি ২৮ – গ্লেসিয়ারের ওপরিভাগ। পতাকা ওড়ানো ওই অবজার্ভেশন এরিয়ায় গেলে দেখা যাবে শেষ প্রান্তটি। অবশ্যই নির্ধারিত ফি সাত ফ্রাঁ এর বিনিময়ে।
IMG_6926
ছবি ২৯ – অবজার্ভেশন এরিয়ায় যাবার কোন ইচ্ছে দেখা যাচ্ছে না পুত্রের ভেতর। ক্রমাগত ডাকাডাকি অগ্রাহ্য করে প্রিয় চকোলেট চিপস বিস্কুট খাচ্ছে আনমনে। পেছনে স্যুভেনির শপ।
IMG_6943
ছবি ৩০ – অবশেষে দেখা মিলল গলন্ত গ্লেসিয়ারের। বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে নীচে যাওয়া সম্ভব নয় বলে দূর থেকে দেখেই মন ভরাতে হলো
IMG_6945
ছবি ৩১ – এইবারে পুরো গ্লেসিয়ার দেখা যাচ্ছে। নীচে ক্যানভাস দিয়ে ঢাকা এলাকাটার নীচে আছে গ্লেসিয়ার খুঁড়ে বানানো টানেল, সামনের দিকে কাঠের সাঁকো। আগ্রহীরা ইচ্ছে করলে ভেতরে গিয়ে দেখে আসতে পারে।
IMG_6971
ছবি ৩২ – ফেরার পথে রোনের পাহাড়ী অংশের একটা ক্লোজ আপ। এটি সহ বেশিরভাগ ছবির ফটো ক্রেডিট আমার স্ত্রীর। কাঁচা ড্রাইভার বলে গাড়ি চালাবার সময় আমাকে স্ট্রিক্টলি রাস্তার দিকে চোখ রাখতে হয়, এই সময়টায় আমার চোখের কাজ করে তার হাতের ক্যামেরাটি।
খুব দ্রুত সন্ধ্যা নেমে আসছে, আমাদেরকে ফিরতে হবে। যে পরিকল্পনা করে এসেছিলাম তার কিছুটা মাত্র করা হয়েছে, চারটি পাস ঘুরে আসা আজকে মোটামুটি অসম্ভব। কিন্তু একটি কাজ অন্ততঃ করা যায়। আবার ব্রিগের পথে না গিয়ে গ্রিমসেল পাস দিয়ে ফেরা যায় ইন্টারলাকেন হয়ে। সময় একটু বেশি লাগবে, তা লাগুক। নতুন জায়গা দেখা তো হবে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন