শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

জাঙ্গল ট্রেকিং- রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য

মূল লেখার লিংক
P1100530
মাস দুয়েক আগে ট্রেকিং করতে গিয়েছিলাম রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রানী অভয়ারন্যে দুই সঙ্গী সহ। অফিসের এক ঘেয়েমি কাজ আর জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে ঢাকার বাইরে যাবার জন্য প্রানটা ত্রাহি ত্রাহি করছিলো। চট জলদি যাওয়া যায় এমন একটি জায়গা খুজতে গিয়ে হঠাৎ মাথায় এলো এ জায়গাটির কথা। বছর দশেক আগে বেশ ক’বার যেতে হয়েছিলো একাডেমিক প্রয়োজনে, জীব-বৈচিত্রের উপর একটি গবেষনা কাজের জন্য। যারা জাঙ্গল ট্রেকিং আর ওয়াইল্ড লাইফ পছন্দ করেন তাদের জন্য অল্প খরচে চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা হতে পারে। যাহোক দেড় দিনের ট্রেকিংয়ে বনের ভিতর ব্যাপক ঘুরাঘুরি, জানা অজানা গাছ-গাছালি, বাহারি অর্কিড আর ওয়াইল্ড লাইফ দেখে দারুন কিছু সময় কেটেছে। ছবি দেখার আগে চলুন এই অভয়ারন্য সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই-
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খুব কাছে এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়র পথে এর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। হবিগঞ্জ জেলা বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের তিনটি বিট: কালেঙ্গা, রেমা আর ছনবাড়ী নিয়ে এই অভয়ারণ্য গঠিত।
এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রানীর অভয়ারণ্য। বনের প্রকৃতি অনুযায়ী এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এটির আরো সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে এই অভয়ারণ্যের আয়তন ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভাল অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম। তবে নির্বিচারে গাছ চুরি ও বন ধ্বংসের কারণে এ বনভূমির অস্তিত্বও বর্তমানে হুমকির মুখে।
এই অভয়ারণ্য বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। বর্তমানে এই বনে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা-লতাগুল্ম পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখির জন্য এই বন সুপরিচিত এবং এদের মধ্যে রয়েছে — ভীমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙা, ঈগল, চিল প্রভৃতি।
এই বনে তিন প্রজাতির বানরের বাস, এগুলো হল: কুলু, রেসাস ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর। তাছাড়া এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি একমাত্র এ বনেই পাওয়া যায়। বন্যপ্রানীর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য আরও রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, বন্যশুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ইত্যাদি। কোবরা, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা প্রভৃতি সহ এ বনে আঠারো প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়। জানা যায় ৬০ এর দশকে এই বনে চিতাবাঘ আর বেঙ্গল টাইগারের ভালো বিচরন ছিলো। (তথ্যসুত্র- উইকি, নিসর্গ প্রজেক্টের বুকলেট)
ঢাকা থেকে এই অভয়ারন্যে দু ভাবে যাওয়া যায়, শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে চুনারুঘাট থেকে অথবা শ্রীমঙ্গল থেকে। চুনারুঘাট থেকে যাওয়া তুলনামুলক ভাবে সহজ আর সময় ও কম লাগে। যেতে হবে ঢাকা হবিগঞ্জ কিংবা ঢাকা সিলেটের বাসে। চুনারুঘাট দিয়ে যেতে হলে নামতে হবে শায়েস্তাগঞ্জ বাইপাসে। সেখান থেকে শেয়ারের (অথবা রিজার্ভ) সিএনজি ট্যাক্সিতে চুনারুঘাট, সময় ১৫ মিনিট। চুনারুঘাট থেকে অভয়ারন্যের প্রবেশ পথ পর্যন্ত সিএনজি সার্ভিস আছে অনিয়মিত যদিও, সময় লাগে আধা ঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট। তবে রিজার্ভ নিয়ে গেলেই ভালো, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া নিবে। শ্রীমঙ্গল থেকে যেতে হলে গাড়ী রিজার্ভ করে যেতে হবে, সময় লাগে দেড় থেকে দু ঘন্টার মতো। শ্রীমঙ্গল শহরে থাকার জন্য চলনসই মানের হোটেল আছে। এছাড়া টি বোর্ডের রিসোর্টে ও থাকার ভালো বন্দোবস্ত আছে। অভয়ারন্যে রাতে থাকার জন্য বনের প্রবেশ মুখে বন বিভাগের বিট অফিসের লাগোয়া নিসর্গ প্রজেক্টের ইকো ফ্রেন্ডলি কটেজ আছে। দু রুমের কটেজ, ৫-৬ জন থাকা যায়। বাংলোর কেয়ারটেকার ফরমায়েশ অনুযায়ী রান্না করে দেয়। খাবারের দাম রিজনেবল, মানসম্মত ও। বনে ঘোরাঘুরির জন্য নিসর্গের ট্রেনিংপ্রাপ্ত গাইড আছে, বেশ নলেজেবল, পারিশ্রমিক সারাদিন ট্রেকিংয়ের জন্য ৬০০ টাকা, খুব বেশি না। ট্রেকিং করার জন্য বেশ কটি ট্রেইল আছে এ অভয়রান্যে, এক ঘন্টা, দেড় ঘন্টা, তিন ঘন্টা আর সীমান্তবর্তী রেমা বিটে গিয়ে ফিরতে হলে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রেক করতে হবে। বর্ষাকালে যেতে পারলে বনের পুর্নাঙ্গ রূপ দেখা যায় কিন্তু জোকের খুব উপদ্রব থাকে, ইচ্ছে মত কামড়েছে আমাদেরকে। যারা আরো ইভেন্ট যোগ করতে চান তারা অদুরেই সাতছড়ি অভয়ারন্যে কিংবা লাউয়াছড়া অভয়ারন্যে ও ট্রেকিং করতে পারেন। আরো আছে চা বাগানের ভিতর দিয়ে ড্রাইভ করে মাধবপুর লেক দর্শন এবং সদ্য আবিস্কৃত হাম হাম জলপ্রপাত ট্রেকিং যা এডভেঞ্চারপ্রিয়দের ভালো লাগবে অবশ্যই । বলে রাখা ভালো নিসর্গ প্রজেক্ট হচ্ছে বাংলাদেশের প্রটেক্টেড ফরেষ্ট রক্ষা ও এর যথাযত ব্যাবস্থাপনার জন্য ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্ট আর ইউএসএইডের একটি যৌথ উদ্যোগ। এবার তাহলে আমার আনাড়ি হাতে পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় তোলা নট সো গুড ছবি দেখি-
P1100406
তিন ঘন্টার ট্রেইল পথ-
P1100616
বনের শুরু-
P1100308
সীমান্ত এই দিকে-
P1100415
সেগুন গাছে আলো আধারির খেলা-
P1100321
অবজার্ভেটরী টাওয়ার-
P1100324
অবজার্ভেটরী থেকে দৃশ্যমান বনের ক্যানপি লাইন-
P1100330
P1100336
বনের ভিতরে ছোট্ট এক লেক-
P1100344
P1100349
P1100379
বাহারি পাতা-
P1100359
পত্রশুন্য গাছ-
P1100423
সেগুন গাছে অর্কিডের বাসা-
P1100426
টম কাকার কুটির (ফরেষ্ট ভিলেজারদের মক্তব)-
P1100419
বনের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা ঝিরি-
P1100432
পরগাছা অর্কিড লতা-
P1100396
P1100521
P1100519
সর্বনাশা ক্রিপার (ভিতরে মৃত গাছ)-
P1100520
P1100527
P1100563
P1100565
খন্ড খন্ড টিলা জুড়ে গহিন বন মাঝখানে ধান ক্ষেত-
P1100532
P1100530
অবশেষে রেসাস মাংকির দেখা-
P1100357
মুখ পোড়া হনুমান (কেপ্‌ড লেংগুর)-
P1100552
P1100622
P1100628
বক-
P1100579
জায়ান্ট স্কুইরেল (কাঠবিড়ালি), শুধু এই বনেই দেখা মেলে-
P1100513
রেড হুইসকার্ড বুলবুলি-
P1100597
মাছরাঙ্গা (কিংফিশার)-
P1100614
গ্রীন পিজিয়ন (অসম্ভব লাজুক এই পাখিটির ছবি তোলা দুস্কর)-
P1100578
বুনো ফুল-
P1100329
P1100381
P1100476
সাদা অর্কিড-
P1100382
P1100599
বর্নিল অর্কিড-
P1100604
P1100471
ছত্রাক-
P1100473
P1100582
P1100478
চারা গাছ হয়ে উঠার অপেক্ষায়-
P1100491
বুনো ফল-
P1100518
টি ইন্ডিকেটর গুল্ম (এই ফুল যেখানে দেখা যায় সেখানকার মৃত্তিকা চা চাষের উপযুক্ত বলে ধরা হয়)-
P1100583
গোবরে পদ্মফুল-
P1100619
বনের গহিনে হঠাৎ করেই দেখা মিললো লটকন ফল গাছের-
P1100591
অতঃপর গাইডকে গাছে তুলে দেয়া-
P1100594
বিশাল গাছে বিশাল মৌচাক-
P1100488
আরো ভালো করে দেখা যাক-
P1100489

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন