শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়

মূল লেখার লিংক
পরিচিত বহু লোকজনের মতে এ অধম মেয়ে হিসেবে তৃতীয় শ্রেণী [রান্নাবান্না পারে/ করে না,
মুরাদ টাকলা/সানি লিওনকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেয় না, শ্যাডো-লিবিষ্টিক মাখে না, কালেভদ্রে আইলাইনার লাগাতে গেলেও ছড়িয়ে ফেলে]
আর কলিগ/ টিম মেম্বার হিসেবে প্রথম শ্রেণীর।
মানুষ হিসেবে কেমন, হেইডা কেউ কয় না। এখনো হইনি বোধহয়।তবে যেকোন অর্থেই আমি ঘরকুনো। তিথী থাকে স্বগৃহে এবং খোমাখাতায়। জন্মদিন, মুসলমানি, গাত্রে হরিদ্রা, বিবাহ, শাহাদাতবার্ষিকী, বইপড়ুয়া কিংবা সচলাড্ডা– ওসবে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। চোখ টিপি
দেশের বাইরে যাইনি এখনো। কবে, কখন সে সুযোগ পাব ওপরওয়ালা জানে। দেশের ভেতরেও তেমন কোথাও নয়।
ভূগোল পড়তে বসে আজকালকার পুলাপান ত্যক্ত মুডে ভাবে দুইন্যার কোন জায়গাটাতে ঐ তারেক অণু এখনো যায়নি। আর আমি নীড়পাতায় তাকিয়ে ভাবি ক্যালরি না ক্যালগেরি কোথায় কোথায় যে ঘুরতে যায় কপাইল্যা লোকজন, আসলে ঐ রকি মাউন্টেন কতটুকু হাই? [উদাস ইমো]
হায়, মোর শকতি নাই উড়িবার…
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়, মোর শকতি নাহি উড়িবার...
নজরুল ভাই দেখি ভ্রমণ ব্লগ দিয়েছেন— ঘুরে এসেছিলাম সুন্দরবন, বান্দরবান, সিলেট। আম্মো তো এইসব জায়গায় একজীবনে গিয়েছিলুম। কক্সবাজার গিয়ে একবার কাটিয়েছিলাম পাক্কা তিরিশ দিন। তা নাহয় ছিল না ঝকমকে ডিএসএলআর [এখনো নেই], তা বলে কি তালিতাপ্পি দিয়ে দু- চার লাইন লেখার হক বর্তায় না? চোখ টিপি
সেজখালা থাকতেন খুলনায়। সে সুবাদে পয়লা সুন্দরবন ঘুরতে যাই যখন, আমার প্রিটেস্ট দরজায় নক করছে। ইংরেজি পড়তাম ইশকুলের ফজিলাতুন্নেসা ম্যাডামের কাছে। তিনি মেজাজে ছিলেন প্রায় কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেসার মতো। যাত্রাপথের টিকেট কেটে ফেলার পর যখন জানালাম– ম্যাম.. ইয়ে আমি না আগামি এক সপ্তাহ অ্যাবসেন্ট থাকব, বাঘিনী রণহুংকার দিয়ে বললেন– তবে রে হতচ্ছাড়ি! মেট্রিক ফৈক্ষার আর নেই দু’দিন বাকি, এখন তেনার হিউয়েন সাং হওয়ার শখ হয়েছে! যাও, গোলপাতা চিবিয়ে আসো গে। তোমার ভবিষ্যত অন্ধকার, এ আমি বলে দিলুম।
কথা ফলেছে। ‘আমার অতীত নেই, ভবিষ্যৎও নেই কোনখানে।’
নানা- নানী আর ছানাপোনা সমেত তিন বোনের পরিবার বাসের আদ্দেকটা বোঝাই করে রওনা হলো। আমার খালার ক্ষুদে ফ্ল্যাট ভরে গেল কোলাহলে। ছিমছাম ছোট্ট শহর খুলনা আর কিঞ্চিৎ অদ্ভুতুড়ে সব জায়গার নাম। সোনাডাঙ্গা, গোবরপোতা.. খাইছে
চট্টগ্রাম টু খুলনা একটানা বাসজার্নির ধকল সামলে উঠে পরেরদিন সকালে পয়লা মামার অফিসের গাড়িতে মংলা, তারপর লঞ্চ ভাড়া করে যাব সোঁদরবন
তখনো রূপসা সেতু হয়নি, নদী পার হতে হয় মনমাঝির টানা নৌকায়। আমরা মহাখুশি। আর নানিজান তারস্বরে তাঁর আদিগন্ত বিস্তৃত কালেকশনের সমস্ত দোয়াদরূদ পড়ে চলেছেন। কেউই সাঁতার জানি না। ডুবলে পুরো গুষ্টি একসঙ্গে ফিনিশ।
পরে দেখা গেল হিরণ পয়েন্ট, কটকা কোথাও গিয়েই বুড়ির যন্ত্রণায় হাত- পা ছড়ানোর উপায় নেই। খালি ক্যাঁচম্যাঁচ করছে– এই বুঝি কেউ হারিয়ে গেল, পড়ে ব্যথা পেল কিংবা বাঘে ধরে নিলো। হ, ব্যাটার তো আর কাম নেই.. ম্যানিকিউর- পেডিকিউর করা বাদ দিয়ে কাঁটাচামচ হাতে টুরিস্ট খেতে আসবে। হেহ।
তারপরের কাহিনী ধোঁয়া ধোঁয়া, মানে ডিটেইলস ভুইল্যা গেছি। বনের ভেতরের সৌন্দর্য ছিল অপার্থিব, বানর, পাখি আর হরিণ দেখেছি ম্যালা.. আর কুমিরও। তখন সদ্য কামিজে গড়সড় হচ্ছি, আন্ধার সবুজ কাপড় পরে গিয়েছিলাম.. যদিও ম্যালা মোটামাথার লোকজন চকচকে রঙের লুঙ্গিফতুয়াপাজামায় আর সিগারেট- রেডিওতে বন কাঁপাচ্ছিল… এইসব টুকটাক মনে আছে।
স্মৃতির বাকি অংশ লজ্জিত ভঙ্গিমায় ঝাপসা। ক্যামেরার ছবিগুলোও। নাহ, এ পাতে দেবার মতো সে নয়।
সিলেট গিয়েছিলাম সখী পরিবৃত হয়ে, শিক্ষাসফরে। সেমিস্টার তখন সবে পাঁচ, মনে কতো রঙ! তুমুল শীত পড়ছে সে বছর। রাত দশ কী এগারোটায় ট্রেন। ভাই আর মা লাগেজ আর বিস্তর উপদেশসমেত সময়মতো নামিয়ে দিয়ে গেলেন। ক্যাম্পাস টু স্টেশনে নেবে ইউনির বাস। গিয়ে দেখি ট্রেন লেট। তাও একেকজন উচ্ছাস রাখার জায়গা খুঁজে পাই না, এমন অবস্থা। আমার সাইনাসের ভয়াবহ সমস্যা আছে, শুরু হলো তুমুল ফ্যাঁচফ্যাঁচে হাঁচি। স্টেশনের এককোণে নেসক্যাফের স্টল। চলো সবাইইই… গ্রম কফি খাই।
একদিকে দেখি ২৭/২৮এর পুলা আর ১৭/১৮ বয়সের এক মেয়ে বেশ ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিতে বসা। হাতে ছোট্ট একটা ট্রাভেল ব্যাগ। আর পাশে একজন মোল্লা, মানে পোশাকি। ছুন্দরী সঙ্গী শ্যাওলা [আসল নাম কমু না ] তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করল– নির্ঘাৎ বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে এরা। আর ঐ হুজুর হলেন কাজি, বোধহয় বিয়ে পড়ানোর জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি, আমরা হতভম্ব। বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজীকে কেউ প্যাকেট করে ধরে নিয়ে যায়!
“বিউটিফুল” জিনিসটায় একটা “ফুল” আছেতো, দেখতে “সৌন্দর্য” মানুষগুলান তাই একটু “বোকা”ই হয়”— কথাটায় ধার আছে আসলে। হে হে।
আহ, সেই ট্রেন এলো রাতের সাড়ে বারোটায়। শীতে কাঁপতে কাঁপতে, খিদেয় অস্থির আর শাল-মাফলারে জবুথবু হয়ে ভারি সুটকেসখানা হ্যাঁচড়ানোর সময় রাগে একবার মনে হয়েছিল– ভ্রমণের গুষ্টি কিলাই। আম্মুউউউ, বাইত যামুগা…
যাক, অবশেষে শ্রীহট্ট পৌঁছলাম। সিলেট পুলিশলাইনের পাশের হোটেলের [নাম ভুলে গেছি] পুরোটা তখন দিন তিনেকের কড়ারে আমাদের দখলে। হৈ হৈ দশা।
আমরা সবচেয়ে জুনিয়র ব্যাচ। সে সুবাদে বড়সড় ভিআইপি (!) ইয়ো ইয়ো রুমটা [ইনক্লুডিং আ ড্রেসিং রুম + ব্যালকনি আর বাথটাবসমেত বাথরুম] ভাগে এলো। ওটা পরিণত হলো আমাদের হল কাম বল রুমে। সিনিয়র আফামনি একেকজনের গায়ে এতো তেল, সারাদিন ঘুরেটুরে এসে রাত জেগে দরজা আটকে ডিজে পাট্টি করে আবার। পুরোই বেশরিয়তী কাজকারবার। চোখ টিপি
‘শ্যাওলা’ আর ‘সামার ভ্যাকেশন’ একপাশে ফিসফিসিয়ে ফোনে বালকবন্ধুর সঙ্গে গপ্পো জোড়ে। আমি কাঠখোট্টা স্বভাবের দুব্বল মানুষ। কানে বালিশ চাপিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে প্রেমসে ঘুমাই। কী আছে জীবনে? হাসি
জননী আগেই বলেছিলেন– বাড়ির বাইরে গিয়ে খাওয়া নিয়ে খুঁতখুঁত করো না বাছা। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। হুঁ, সে আর বলতে। নয়তো কি আর আমার মতো (আজাইরা) নাক উঁচু চিড়িয়া দিব্যি সোনামুখ করে বুটের ডাল দিয়ে পরোটা খায়?
সে ভ্রমণের কোন দৃষ্টিনন্দন ফটো অ্যালবামে নেই। আছে গ্রুপছবি, তাতে আমি-ই নেই। আমার কাঁধে ছিল চারটা ক্যামেরা, তার মধ্যে একটা নিজের। লুকে ননস্টপ ইতংবিতং পোজ দেয় আর আমি তো সে আমল থেকেই খ্যাতিমান পোট্রেট ফটুগফুর, ক্লিক করতেই থাকি। বলে রাখা ভাল– কোন এক বিচিত্র কারণে আজীবন আমার প্রায় সব সখিই জুটেছিল দিল ধাক ধাক লেভেলের রূপবতী। দেঁতো হাসি
তেনাদের ছবি মেরামতির লাইগ্যা ফটুশপ লাগে না গো..
মাধবকুণ্ড থেকে যেদিন ফিরছি, বাস থামিয়ে গুরুদেবরা তখন থলে ভরে কমলা কিনছেন। আমি আর শ্যাওলা পাশের টঙে ঢুকে চা আর চুইংগামের ফরমায়েশ নিয়ে দাঁড়িয়ে স্থানীয় দুই পুলার কিচিরমিচির শুনি।
স্যার এগিয়ে এলেন– কী হে ইয়াং মার্কেটারস [আমাদের মেজর ছিল মার্কেটিং], কী দেখো?
: ইয়ে মানে স্যার, এট্টু সিলটি ভাষা শেখার ট্রাই করছি।
:- তাই? গ্রামের বাড়ি কোথায় তোমার?
: কুমিল্লায়। তবে জন্ম চট্টগ্রামেই।
:-আর শ্যাওলা তোমার?
: একই স্যার, কুমিল্লা।
:- চাটগাঁইয়া বলতে পারো?
: [মেনিবিল্লির মতো মিঁউ মিঁউ করে] না স্যার।
:- তৈলে? সারাজীবন একটা শহরে কাটিয়ে সে ভাষাটাই শিখলে না.. আর দু’দিনে শিখবে সিলেটি? দুৎ দুৎ।
শ্যাওলা বজ্জাতটা অন্যদিকে নিরীহ মুখ ফিরিয়ে আকাশ দেখছে তখন।
যাক, মেয়েটি তো রক্ষে পেল। আমি তথৈবচ!
২   …. …. …. … .. …
কত কী জানার আছে বাকি! দেখার, শোনার, বোঝার। এইটুকু একটা দেশ, তাও তো দেখিনি ঠিকমতো। আর লুকে নেপাল গিয়া মাথায় পাল আটকাইয়া পেলেন থেইক্যা লাফায়, হংকং গিয়া হাঙ্কিপাঙ্কি করে। শালার কপাল!
তা যামু-ই বা কার লগে? আমার পিতা- মাতা হার্টের রোগি আর দুঁদে কামলা। পারলৌকিক পাথেয় আর ইহলৌকিক স্বাচ্ছন্দ্য ব্যতীত আর কোন জমাখরচ নিয়ে তাগো দুই পয়সার মাথাব্যথাও নাই। জ্বিন না পরী, কোনটা আছর করসিল ক্যাঠায় জানে, সেন্টমার্টিনে নিয়ে পোড়াতেলে ভাজা রূপচাঁদা খাইয়ে এনেছিল একবার। সেও প্রায় আরবের উট চরানো আমলের কাহিনি।
তারপর কেটে গেছে কত মাস…
যেখানে আমার সব দুঃখ মেঘ হয়ে থাকে। আর তার মাঝে আমি না-মানুষ না-আমি হয়ে যাই…
সেজন্যে আমি কারো এদিক- সেদিক ঘুরে বেড়ানোর খবর পেলে বাংলা আর হিন্দিতে খুব করে শাপ দিয়ে দি। পেট কামড়াবে যখন, তখন বুঝবে ঠ্যালা। মুহুহুহু।
তা, গত ক’মাস আগের কতা গো। আপিস নামক গোয়ালঘরে ভেজা খড় জ্বেলে গাঁক গাঁক করে ধোঁয়া দিচ্ছিলাম একদিন।
বড়মামা ফোন করে বললেন– ঐ, নীলগিরি যাবি?
খুশিতে যে চিক্কুরটা দিলাম তার কাছে আর্কিমিডিসের ইউরেকাএএএ তুচ্ছ! নাদান বস তাঁর কামরায় পিয়নকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, রিফাত অমন চেঁচাল কেন, আবার ইঁদুর দেখেছে নাকি? ঐ মানে, ড্রয়ার থেকে ইঁদুর বেরিয়েছিল একদিন। আমার বাঁশফাটানো আর্তনাদে পাশের ডেস্কের কলিগ অ্যায়সা বিষম খেয়েছিলেন যে, সে কথা কহতব্য নয়। [ঘাড়গলা চুলকানোর ইমো]
ছুটি ম্যানেজ হলো বহুকষ্টে। তাও মোটে দু’দিনের। জালিম দুনিয়া।
সফরসঙ্গী সীমিত। ছোট বোন দ্যুতি, মামা-মামি, তাদের একমাত্র কন্যা কঙ্কাবতী, আর এক ভাগনি। নাম– ও পিয়া, ও পিয়া তুমি কোথায়। খাইছে
মালছামান গুছিয়ে নিলাম। প্রথমে গাড়িই ঠিক ছিল, আগেরদিন রাতে নানিবুড়ি ফের ফ্যাচাং লাগিয়ে দিলেন। পাহাড়ি অচেনা রাস্তা, সালাউদ্দিন (মামাদের ড্রাইভার) যদি অ্যাক্সিডেন্ট করে বসে! তো আর কী, বাসে ঝোলো।
আমাদের পথসঙ্গী ছিলো জনা সাতেকের এক ইয়াং হ্যানছাম গ্রুপ। সব পুলাদের ঠ্যাঙে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, পিঠে ব্যাকপ্যাক, মাথায় গামছার ফেটি আর গলায় ক্যানন- নিকন। বাউরে বাউ, কী ভাব!
আমি সস্তার গ্যালাক্সি ট্যাব থেকে (হুদাই) মিনিট পাঁচেক জিটক- জিমেইল গুঁতোগুঁতি করে বই পড়তে শুরু করলাম। মাদাম আগাথার জীবনী। হাসি
আমার অনুজাটি আবার ঈষৎ আরামপ্রিয় কিসিমের। আম্মাহুজুর বেশি পুতুপুতু করে মাথায় তুলে ফেলেছে আসলে। বাসা থেকে বাটার চপ্পল কিনতে নিউমার্কেট যেতেও সে হাত-পা এলিয়ে কুঁইকুঁই শুরু করে। পটিয়া পার হবার আগেই সে মামির ওপর মোটামুটি পুরো শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে নাক ডাকা শুরু করল। সিলেকশনেও অবশ্য কেরামতি আছে। মামিজান মোটাসোটা মানুষ। ঠেস দিতে সুবিধা। খাইছে
এগারোটায় চলতে শুরু করে পৌঁছলাম দুটোয়। ভয়াবহ কড়া বৈশাখি রোদ। মামি আবার পাঁড় মাইগ্রেনের রোগি। একবার বেতা উঠলে আর দেখতে হবে না।
থাকার হদিস বান্দরবান ক্যান্টনমেন্টে, সচল অতন্দ্র প্রহরীর প্রত্যক্ষ সাহায্যে।
এ বেলা তাঁকে আরেকদফা থ্যাঙ্কস। হাসি
ফ্রেশ হয়ে, একটু রেস্ট নিয়ে গেলাম স্বর্ণমন্দিরে। চমৎকার জায়গা। আমি বেকুব, না বুঝে তিন ইঞ্চি পেনসিল হিল পরে হাঁটা দিয়েছিলাম। আধাআধি গিয়ে বটুয়ার মতো ও জোড়াটাও হাতে ঝোলাতে হলো।
আসন্ন বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে সাজসজ্জা করা অলরেডি শুরু হয়েছে ওখানে। ক্যাংঝ্যাংঘ্যাং একটানা কেমন একটা বাজনা বেজেই চলেছে। সঙ্গীরা ফটোশুটে ব্যস্ত, আমি চেক-ইনে। সানসেট @গোল্ডেন টেম্পল– না দিলে হয় নাকি কন? চোখ টিপি
সন্ধ্যা নামার আগেই অতিথিদের বিদায় দেওয়া ভিক্ষুদের নিয়ম। অগত্যা যাত্রা স্থানীয় মার্কেটের দিকে। ভৈন- ভাগনি মুখে মাখার জন্য চন্দন কিনল, আমি ইনকা কিসিমের একটা মুখোশ কিনেই মহা খুশ! দেঁতো হাসি
সক্কাল আটটায় রওনা হতে হবে নীলগিরি। রাতেই জামাজুতা [এবার আর হিল নয়, ঠেকে শিখেছি] গুছিয়ে রেখে সাততাড়াতাড়ি ঘুম…
সকালে চোখ কচলাতে কচলাতে নাস্তা না করেই দৌড়। মাঝের রো’তে পিয়া, মামির গায়ে হেলান দিয়ে জিপ চলতে শুরু করার সাড়ে সাত মিনিটের মাথায় ঘুমিয়ে পড়া দ্যুতি আর পেছনের সিটে আমি আর কঙ্কা। হাতে একডজন কলা, পানির বোতল আর পাঁউরুটি।
আঁকাবাঁকা খাড়াই রাস্তা, ছাত্রজীবনে অর্থনীতির খাতায় আঁকা যাবতীয় ভার্টিক্যাল লাইনকে কৎবেল দেখিয়ে আরো খাড়া হয়… আমরা দু’বোন হেডফোন সমেত [ঐ জিনিস অবশ্য মুখে না, কানেই গোঁজা ছিল] বিমুগ্দ্ধ চোখে এদিক- সেদিক দেখতে দেখতে পাঁউরুটি চিবাই।
চিম্বুক পর্যন্ত যেতে যেতেই খেল খতম, পয়সা হজম। মানে খানাদানা সব শেষ।
দেখেন না, কঙ্কা কলা খুঁজতাসে… চোখ টিপি
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া...
আর নীলগিরি যাওয়ার রাস্তা দেখতে কেমন ছিল?
স্বর্গপথ কেমন হয় জানেন? সেটার কাছাকাছি। আর মেঘগুলো সব পাহাড় ছুঁয়ে থাকে এরকম করে— পুরাই জাইত্যা ধরা টাইপ না?
আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ...
আমরা সূর্যোদয় মিস করেছি, সূর্যাস্তও। পরেরবার আগেভাগে সব অ্যারেঞ্জ করে যেতে হবে। অন্তত এই কটেজে একরাত না থাকলে তো ভাই জীবনই বৃথা…
আর জোৎস্নারাতে কেমন যে লাগবে এই বারান্দায় বসে চাঁদ দেখতে! আহা আহা!
P
সুপ্রিয় সচলা সুপাশি অবশ্য অফার দিয়েছেন তিনি-আমি দোঁহে মিলে শিগগিরই যাওয়া হবে ওখানেই। কিন্তু যে জামানা আসছে, কাজটা কি ঠিক হবে?
বুঝেনই তো। চোখ টিপি
হুমম, শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি, চিম্বুক চষে চিমশে মুখ আর চার্জড আপ মন নিয়ে ফিরতে ফিরতে আরো কয়েক কুঁচি ছবিটবিও খিঁচেছিলুম বটে।
তয় ফটুগফুর সাজলে বাকিদের ওপর ফোঁপরদালালি ফলানোর ফাঁকে নিজের খ্যাঁদাবোঁচা মুখ বেঁচে যায় লেন্সের হাত থেকে।
ঐ মস্ত সুবিধে। দেঁতো হাসি
এ কুমারীও আমি নই কিন্তু, খুউপ খিয়াল কৈরা।
স্মৃতিফলকে গাঁথা কুমারী...
পরেরদিন মামার চেম্বার, আমার অফিস। খুকিত্রয়ের যথাক্রমে ইস্কুল, কলেজ, ইউনিতে ক্লাস।
অতএব ওঠো মুসাফির, বাঁধো গাঁটুরিয়া…
কার যেন একটা গান আছে না,– অনেকটা পথ হেঁটে এসে, হয়নি হাঁটা তোমার পাশে।
অনেক হলো তো, আর হাঁটা কি ঠিক হবে?
শবনমে একটা বয়েৎ পড়েছিলাম।
”ওয়াসিল্ হরফ্-ই- চুন্ ও চিরা বস্তে অস্তলব্
চূন রহ্ তমাম গশৎ জর্স বি- জবান শওদ।
কাফেলা যখন পৌঁছিল গৃহে মরুভূমি হয়ে পার..
সবাই নীরব। উটের গলায়ও ঘন্টা বাজে না আর।”
পুনশ্চ স্মৃতিপুর যাই।  হাতভর নৈবেদ্য, স্মৃতিময় অঞ্জলি....
ভ্রমণবন্দীনির এলা শীতনিদ্রায় যাওয়া ফরজ। বহুৎ তো বকলাম। হাসি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন