বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০১৪

বিস্ময় মাচু পিচু শহর!!!!

আজ আপনাদের শেয়ার করছি এক বিস্ময়ের শহরের কথা যেখানে কোন মানূষের বসবাস নেই ! আর এটাই এ শহরের প্রধান বিস্ময় বর্তমানে কিন্তু  “নতুন সপ্তাচর্য” হিসেবে স্থান পাওয়া এই শহরের পেছনে রয়েছে আরো দারুন সব ইতিহাস যা কিনা কয়েকশ বছর পর্যন্ত কারোর ই জানা ছিলনা, চলুন সেগুলিই আজ জানি।
নামকরনঃ
কেচুয়া ভাষায় মাচু পিকচু অর্থাৎ পুরোনো চূড়া -ই এর প্রথম নামকরন হয় পরবর্তীতে স্পেনীয় সংস্করনে একে মাচু পিচু বলেই নির্দেশিত করা হয়। এই শহরটি আমেরিকা আবিষ্কারের আগের সময়কার একটি ইনকা শহর, ইনকা হচ্ছে একটা সভ্যতা তথা এক উপজাতীর নাম। এটি পেরুর উরুগাম্ভা উপত্যাকার উপরে পর্বত চূড়ায় অবস্থিত! ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত নিদর্শন হিসেবে এটিকেই ধরা হয়।
ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত )ঃ
ইনকা সভ্যতার স্বর্ণযুগে ১৪৫০ সালের দিকে মাচু পিচু নির্মিত হয়। কিন্তু তার ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। আর এর কারন হিসেবে নানা রকম তথ্য প্রচলিত আছে। ধারনা করা হয় এই শহরের লোকজন গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে সবাই মারা গেছে তবে মহল বিশেষে এটি অনেকের কাছেই যুক্তিতর্কে গ্রহন যোগ্য নয়।
এই স্থান টিকে তীর্থস্থান হিসবেই অনেকে সীকৃতি দিয়েছেন আবার কেউ বলেন অবকাশযাপন কেন্দ্র, আবার কারো মতে এটা ভয়ঙ্কর অপরাধীদের আটক রাখার কয়েদখানা। ইনকা রাজধানী কুসকো থেকে মাত্র ৫০ মাইল দূরে এই দূর্গটি অবস্থিত হলেও স্প্যানিশরা কিন্তু কখনোই এটিকে খুঁজে পাইনি। তাই ইনকাদের অন্যান্য স্থানের মতো এটি স্প্যানিশদের হাতে ধ্বংস হয়নি। মাচু পিচু নির্মিত হয় ১৪৫০ সালের দিকে, আবার পরবর্তীতে ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি পরিত্যক্ত হয়। পুরো সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায় স্প্যানিশ দখলদারিত্বের কারনে। কয়েকশ বছর পর্যন্ত এর চারপাশের জঙ্গল একে লোকচক্ষুর আড়াল করে রেখেছিল। খুব কম মানুষই জানত এর অস্তিত্ব সম্পর্কে।
প্রথম সন্ধানঃ
১৯১১ সালের ২৪ জুলাই ইয়েল ইউনিভার্সিটির একজন প্রভাষক মার্কিন ঐতিহাসিক হাইরাম বিঙাম প্রথম এই শহরটির কথা বিশ্ববাসীকে জানান। যদিও পরে দাবি করা হয় যে তার আগেই একজন বিদেশী মিশনারি সেখানে পৌঁছেছিলেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে।
বিঙামের উদ্দেশ্য ছিলো মূলত স্পেনিশদের আক্রমনে পরাজিত ইনকাদের শেষ আশ্রয়স্থল খুঁজে বের করা। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি এই অজানা শহরের সন্ধান পেয়ে যান।
2011-07-07-17-29-39-070549500-untitled-88
১৯১৩ সালের এপ্রিলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি তাদের মাসিক ম্যাগাজিনের পুরোটাই মাচু পিচু নিয়ে তৈরী করে। এরপর থেকেই সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়।
বর্তমানে এটি পেরুর প্রধান পর্যটন কেন্দ্র, আর গোটা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮১ সালে মাচু পিচুর আশপাশের মোট ৩২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা ঘোষণা করা হয়।
মাচুপিচুর স্থাপত্য শিল্পঃ
মাচু পিচুর বেশির ভাগ স্থাপনাই ইনকা বাস্তুকলার ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ পদ্ধতিতে তৈরি। স্থাপনাগুলোর দেয়াল পাথর নির্মিত এবং জোড়া দেবার জন্য কোনওরকম সিমেন্ট জাতীয় পদার্থ বা চুন-সুরকির মিশ্রন এখানে ব্যবহার করা হয় নি। ইনকারা অ্যাশ্‌লার্‌ নামক এক পদ্ধতিতে এখানকার প্রাচির গুলো তৈরী করেন , এই পদ্ধতিতে পাথরের খণ্ড এমন নিখুঁত ভাবে কাটা হত যেন কোনওরকম সংযোগকারী মিশ্রণ ছাড়াই পাথরগুলো খাজে খাজে শক্তভাবে একটার ওপর আরেকটা বসে যায়। ইনকারা পাথরের এই নির্মাণ পদ্ধতিতে পৃথিবীর সেরাদের সেরা ছিল। তাদের নির্মিত পাথরের দেয়ালগুলোর জোড় এতই নিপুন যে একটা পাতলা ছুরির ফলাও সেগুলোর ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো যায় না।
মাচুপিচুর ইনকা দেয়াল
মাচুপিচুর ইনকা দেয়াল
শহরটিতে ১৪০ টি স্থাপনার মধ্যে রয়েছে কিছু মন্দির, পবিত্র স্থান, উদ্যান এবং আবাসিক ভবনসমূহ (আবাসিক ভবনগুলো খড়ের ছাউনি দেয়া ছিল), মাচু পিচুতে রয়েছে ১০০টিরও বেশি সিড়ি যার মধ্যে কিছু কিছু একটি মাত্র গ্রানাইট পাথরের খণ্ড কুদে তৈরি করা হয়েছে।
বিস্ময় ভরা সিড়িগুলো
বিস্ময় ভরা সিড়িগুলো
এখানে আরও রয়েছে প্রচুর সংখ্যক ঝরনা, যেগুলো পাথর কেটে তৈরি করা ছোট ছোট খালের মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত এবং এসব মূলতঃ সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, এই সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করে একটি পবিত্র ঝরনা থেকে পানি প্রতিটি বাড়িতে সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
প্রত্যেক বাড়িতে পানির ব্যবস্থা এভাবেই করা হয়েছিল
প্রত্যেক বাড়িতে পানির ব্যবস্থা এভাবেই করা হয়েছিল
1.1258595297.cool-building-in-machu-picchu-note-the-stone-w
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, মাচু পিচুর শহর ব্যবস্থা তিনটি বড় বিভাগে বিভক্ত ছিল, এগুলো হল:
  1. পবিত্র এলাকা
  2. জনসাধারণের এলাকা; এ দুটি শহরের দক্ষিণে অবস্থিত। এবং
  3. পুরোহিত ও অভিজাত শ্রেনীর এলাকা।
পবিত্র এলাকায় মাচু পিচুর প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদগুলো অবস্থিত, যেমন: ইন্তিউয়াতানা পাথর, সূর্য মন্দির এবং তিন জানালা ঘর। এসব স্থাপনা উৎসর্গ করা হয়েছিল ইন্তি, তাদের সূর্য দেবতা এবং মহান দেবতার প্রতি। জনসাধারণের এলাকার সাধারণ নিম্ন শ্রেনীর লোকজন বাসবাস করত। এই এলাকার স্থাপনা গুলোর মধ্যে রয়েছে গুদামঘর এবং বসত বাড়ি।অভিজাত এলাকায় সম্ভ্রান্ত শ্রেনীর থাকার জন্য একটি অংশ ছিল।
ইন্তিউয়ানা পাথর
ইন্তিউয়ানা পাথর
ইন্তিউয়াতানা নামক একটা পাথর ছিল এখানে ।স্থানীয় উপাখ্যান অনুসারে কোনও অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ যদি এই পাথরে তার কপাল ঘসে তাহলে আধ্যাত্মিক জগৎ দেখতে পাবে। ইন্তিউয়াতানা  পাথর দক্ষিণ আমেরিকার পূজিত পবিত্র পাথরগুলোর একটি। স্পেনীয়রা ২০ শতকের আগে এই পাথরটি খুঁজে পায় নি; ফলে এটি ইনকাদের অন্যান্য পবিত্র পাথরের মতো ধ্বংস হবার হাত থেকে বেঁচে যায়। এই পাথরগুলো এমন ভাবে স্থাপন করা হয় যাতে শীতকালে এগুলো সরাসরি সূর্যের দিকে নির্দেশ করে। একে “সূর্যের আকঁড়া বিন্দুও” বলা হয়, কেননা উপকথা অনুসারে এটি সূর্যকে তার জায়গায় আটকে রাখার উদ্দেশ্যে নির্মিত। ২১শে মার্চ ও ২১শে সেপ্টেম্বর, বছরে এই দুবার দিনের মাঝামাঝি সময়ে সূর্য ইন্তিউয়াতানা পাথরের একেবারে ওপরে থাকে; ফলে এর কোনও ছায়া তৈরি হয় না।
!!
ব্যস এতটুকুই জেনে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম, এর বাইরে অনেক তথ্য বাদ পড়ে আছে হয়ত, জ্ঞান এবং সময় সল্পতার কারনে উল্লেখ করতে পারিনি!! আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব ভালো লেগেছে এই শহরের স্তাপত্য গুলো! কি অদ্ভুত এবং দৃঢ় ভাবে নির্মান করেছিল ভবন গুলো যে আজ ও শতশত বছর পর সেগুলি অবিকৃত আছে তবে বহু বছর অযত্ন অবহেলায় থাকার পর যখন পর্যটনের আকর্ষনের বিশেষ কেন্দ্র হিসেবে এটি স্থান পায় তখন পুরোনো ইনকাদের আদলে শহরের বিভিন্ন স্থানে পুনর্নিমান করা হয়েছে।
SOURCE LINK

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন