বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০১৪

পটে আঁকা পাতায়া

থাইল্যান্ডে পর্যটকদের জন্য অন্যতম সেরা আকর্ষণ হল পাতায়া। এখানে দেখার মত আছে অনেক কিছুই। যদিও পাতায়া বিখ্যাত তার বিচ আর নাইট লাইফ অ্যাকটিভিটির জন্য কিন্তু এখানে এছাড়াও আছে অনেক আকর্ষণীয় স্থান।
সুবর্নভূমি বিমানবন্দর থেকে আমরা সোজা চলে গেলাম পাতায়া । ঝকঝকে মসৃণ রাস্তা । আগেই আমদের রিজার্ভেশন ছিল হোটেল বেভারলি হিলস প্লাজায় ।তাই সরাসরি ওখানেই গেলাম।
চমৎকার হোটেল ।যখন আমরা হোটেলে পৌঁছলাম তখন দুপুর তাই রুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ অর্ডার করলাম।টম ইয়াম গং সুপ, রাইস আর কারি । থাই খাবারের স্বাদ আসলেই অপূর্ব । পেট পুরে খেয়ে দিলাম এক ঘুম । ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেলাম আমরা চারজন । হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম গালফ অফ থাই এর তীরে ।

পানিতে পা ভেজাতে ভেজাতে ভাবছিলাম এই ঢেউ টাই হয়ত একটু আগেই এসেছে কক্সবাজার থেকে । দূরে দেখা যাচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার । সৈকত থেকে ফিরে আমরা ফুটপাথ ধরে হাঁটছিলাম ।প্রচুর পর্যটক রাস্তায় ।কিছুদুরে দেখি আমাদের রাস্তার ধারের চটপটির দোকানের মত দোকানে কি যেন বিক্রি হচ্ছে ।স্থানীয় রাই কিনছে বেশি ।কাছে গেলাম দেখার জন্য ভাব্লাম চটপটা কিছু হলে কিনব । কাছে আসছিলাম আর কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম । গিয়ে দেখি হরেক রকম পোকামাকড় ভাজা ।

হলিউডের সালমা হায়েক এর কথা মনে হল।উনি নাকি সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য পোকামাকড় খান। ইশ!!ভাবলেই গা গুলিয়ে উঠে।
তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে আসলাম ।সন্ধ্যা সন্ধ্যাই হোটেলে ফিরে গেলাম । পরের দিন সারাবেলা ঘুরার প্যাকেজ হোটেল থেকেই ঠিক করে ফেলাম ।
সকাল সকাল নাস্তা খেয়ে বের হয়ে পরলাম ।টুরিস্ট বাস অপেক্ষা করছিল ।প্রায় জনা বিশেক পর্যটক নিয়ে গাইড মিঃ পি রওয়ানা দিলেন মাদাম নং নুচ গার্ডেনে । বিশাল এলাকা জুড়ে এই ট্রপিক্যাল বাগানটি ।মাদাম নং নুচ নামে এক মহিলা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করেছেন এই দর্শনীয় বাগান টি ।

গুগল থেকে নেয়াঃ
প্রায় পাঁচশত একর জায়গা জুড়ে এই বাগান।

এই বাগানের আবার নয়টি ভাগ আছে ।ভাগ গুলো হল :
১# ফ্রেঞ্চ গার্ডেন

২# ইউরোপিয়ান গার্ডেন

৩# স্টোনএজ গার্ডেন

গুগল থেকে নেয়াঃ
৪# ক্যাকটাস এবং রসাল (সাকুলেন্ট) গার্ডেন

৫# ভ্যারিএগেশন প্লান্টস

৬# অ্যান্ট (পিঁপড়া ) টাওয়ার

৭# বাটারফ্লাই হিল

৮# অর্কিড গার্ডেন এবং ব্রমেলিয়াড প্রদর্শন(ডিসপ্লে) গার্ডেন

৯# ফ্লাওয়ার ভ্যালী ।

গুগল থেকে নেয়াঃ
হরেক রকম ফুল আর গাছপালা ঘেরা এই বাগান । অনেক মেধা আর পরিশ্রমের ফলে গড়ে উঠেছে এই দৃষ্টিনন্দন বাগানটি ।

এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হল পটারি । মাটির তৈরি পট বা ঘড়া দিয়ে গাড়ি ,হাতি, টুকটুক সব কিছু বানিয়েছে ।

সামনের চত্বরেই শিকলে বাধা জলজ্যান্ত বাঘমামা ।পঞ্চাশ বাথ এর বিনিময়ে তাকে ধরে ছবি তোলা যায় ।তবে আমরা কেউ ছবি তোলায় আগ্রহী ছিলাম না ।
অর্কিড এর বাগান পার হয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম ।গাইড মিঃ পি প্রতিটি জায়গার বর্ণনা দিতে দিতে দলবল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

চলার পথে থরে থরে সাজানো ফুলের মেলা ।

এখানে এলিফ্যান্ট শো হয় দর্শনার্থীদের জন্য । গ্যালারীতে গিয়ে বসে দেখলাম হাতিদের কসরত । দুই দলে ভাগ হয়ে ফুটবল ম্যাচ খেলছিল হাতি মহাশয়রা ।সে এক মজার খেলা ।

থাইল্যান্ড এর প্রতিটা দর্শনীয় স্থানেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় । পর্যটকদের সামনে তারা সেই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের দেশের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিকে তুলে ধরে । নং নুচ গার্ডেন ও এর বাতিক্রম না ।এখানেও সাংস্ক্রতিক অনুস্থান হয় ।আমরা সবাই গ্যালারীতে বসে দেখলাম ওদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ।

এরপর আমরা গেলাম হাতির পিঠে চড়ে পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখতে ।
আমার কাছে পুরো এলাকাটিকে মনে হল যেন পটে আঁকা ছবি ।
এত কালারফুল ,সবকিছুই প্রকৃতির রঙে রঙ্গিন । সবশেষে ওখান থেকেই হালকা খাবার খেয়ে বের হয়ে গেলাম জেমস গ্যালারী তে ।
জেমস গ্যালারী মূলত গহনার দোকান কিন্তু এখানেও প্রচুর পর্যটক আসে । শুধুমাত্র গহনা কেনার জন্য নয় বরং এখানে যে প্রদর্শনীটি হয় তা দেখার জন্য ।

জেমস গ্যালারীতে পৌঁছানোর পর ওরা আমাদের নিয়ে গেল একটা প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন রুম এ ।গিয়ে দেখি একটা খোলা টয় ট্রেন অপেক্ষা করছে। আমরা সহ আরও কয়েকজন দর্শনার্থী ওঠার পর ট্রেন চলতে শুরু করল গুহার ভিতর ।
লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো এর মাধ্যমে আর দুইপাশে ম্যানিকুইন এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হল খনি আর পাথর উত্তোলনের ইতিহাস । থাইল্যান্ড তার আমেথিস্ট খনির জন্য বিখ্যাত । কিভাবে এই পাথর উত্তলন করা হয় এবং আগের উত্তলন প্রক্রিয়া আর বর্তমান প্রক্রিয়া সব কিছুই দেখান হল । কিন্তু আফসোস এখানে ছবি তোলা নিষেধ । সব শেষে ট্রেন এসে থামল মুল শোরুমের দ্বারপ্রান্তে
ট্রেন থেকে নেমে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম । ইশ!! কত্তশত গহনা ! কি সুন্দর কারুকাজ আর কত বড়ই না শোরুমটা । আমার তো অনেক কিছু কিনতে ইচ্ছা হচ্ছিল বাট ...ট্যাঁকের জোর থাকলে তো ।
কি আর করা একজোড়া দুল কিনেই ক্ষান্ত দিলাম ।আবার আসিব ফিরে জেমস গ্যালারীর তীরে ...মনে মনে এমন একটা পণ করতে করতে বের হয়ে আসলাম ।
ততক্ষণে খিধেয় পেট চোঁ চোঁ করছে,তাই হোটেল এ ফিরে গেলাম দুপুরের খাবার খেতে ।
জেমস গ্যালারী থেকে হোটেল এ ফিরে গেলাম দুপুরের খাবার খেতে ।
দুপুরের খাবার খেয়ে অল্প একটু বিশ্রাম নিয়েই চলে গেলাম স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ এ ।
স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ এর প্রধান ফটকে নেমে যেতে হল ট্যাক্সি থেকে । টিকেট দেখিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম ।মুল স্থাপনাটা এখান থেকে খানিকটা দূরে আর এই পথটুকু ওঁরাই নিয়ে যায় ঘোড়ার গাড়ি করে ।

ঘোরার গাড়ি থেকে নেমে দূর থেকে দেখলাম স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ । আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম তার দিকে ।

এখান থেকে ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে নীচে । ওখানে একটা ছোট্ট জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে যার উপর কাঠের লগ ফেলা। চারপাশটায় কেমন বুনো বুনো ভাব ।

নামার পর দেখলাম সাইন বোর্ডে স্যাংচুয়ারি অফ ট্রুথ সম্পরকে লিখা । তারপর গেলাম মুল ভবনটায় ।

সম্পূর্ণ স্থাপনাটাই কাঠের তৈরি । হিন্দু আর বৌদ্ধ ধর্মের দেবদেবী হল এর মুল থিম ।

ঘুরে ফিরে আর সাগরের নির্মল বাতাস খেয়ে এসে বসলাম ওখানেই এক রেস্তরায় ।

আমি আগেই বলেছি থাইল্যান্ড এর প্রতিটি দর্শনীয় স্থানেই আছে কালচারাল শো ।

এ জায়গাও তার ব্যাতিক্রম না । খেতে খেতে দেখলাম ওদের নাচ আর এক বিশেষ ধরনের মারশাল আর্ট ।

সব শেষে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম । রাতে আপু জ্বর জ্বর বোধ করায় আমরা তিন জনেই গেলাম খাবার খেতে । তখন সন্ধ্যাই বলা চলে সাত কি সাড়ে সাত বাজে ।হাটতে হাঁটতে পাচ মিনিটে পৌঁছে গেলাম ওয়াকিং স্ট্রিট এ। ওখানেই ভাল ভাল রেস্তরাঁ আছে ।

কিন্তু ওই রাস্তায় হাটতে আমি খুব একটা স্বস্তি পাচ্ছিলাম না ।মনে হচ্ছিল তাড়াতাড়ি খেয়ে ভাগি । হাই বিটের মিউজিক আর অনেক পর্যটকের ভীর তবে কেউ কাউকে ধাক্কা দিচ্ছে না বা বিরক্ত করছে না ।
তারপরও দুই কিশোর কিশোরী কে নিয়ে ওখানে বেশিক্ষণ না থেকে ঝটপট ফিরে এলাম হোটেলে ।
পরের দিন আবার অন্য শহরের উদ্দেশে যাত্রা ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন