বুধবার, ২৮ মে, ২০১৪

স্টোরিয়া পোলস্কা

লিখেছেন: তানবীরা | আগস্ট ৬, ২০১১

অবশেষে বহুকাঙ্খিত সামার ভ্যাকেশন। ইউরোপের সামার, হায় ভগবান অবস্থা। বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে পুরো ইউরোপ জেরবার এবার। সস্তার প্লেনওয়ালারা টারমাক নেন না পয়সা বাঁচান। আগের দিনের মতো সিঁড়ি বেয়ে কাক ভেজা হয়ে উঠলাম প্লেনে। সুনীলের “মানুষ মানুষ” উপন্যাসের আনোয়ারাকে খুঁজতে খুঁজতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি। দুপুরবেলা বহুদিন পর একটা ন্যাপ নেয়া হলো। মেয়ের গুতানিতে উঠলাম, স্যান্ডউইচওয়ালি এসেছে। স্যান্ডউইচ খেতে খেতে আবার ঘুমিয়ে পড়ার দশা আমার। পোল্যান্ডের অর্থনৈতিক অবস্থা হল্যান্ডের তুলনায় বেশ খারাপ। অনেক পোলিশ স্যাঙ্গুইন ভিসার সুবিধার কারণে হল্যান্ডে জব করেন। সপ্তাহান্তে কিংবা মাসে মাসে তারা বাড়ি যান। আমাদের শহর থেকে কাজ করে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার মতো। প্লেনে অনেক পোলিশ মেয়ে আছে। ইষ্ট ইউরোপীয়ান মেয়েদের দেখলেই ওয়েষ্ট ইউরোপীয়ান মেয়েদের থেকে আলাদা করে চেনা যায়। এরা অনেক সুন্দর স্কার্ট বা ড্রেস পড়ে, জীন্স টিশার্ট টাইপ না। সাজে, দুল-চুড়ি-কাজল। আমার পাশের জন বারবার বলেই গেলেন, সৌন্দর্য আসলে কমনীয়তায়, নমনীয়তায়, লাবন্যে যা পূর্ব দিকে বিদ্যমান। পশ্চিমের মেয়েরা বড় বেশি রুক্ষ ইত্যাদি। এই আলোচনা শুনতে শুনতে কাহিল হয়ে প্রায় পৌনে দুঘন্টা উড়ে এন্ডহোভেন থেকে ওয়ারসাও পৌঁছলাম। ছোট প্লেনে বড্ড ঝাঁকুনি হয়। গা গুলাতে থাকে আর ইষ্ট নাম জপ করি, হায় ভগবান, সবার সামনে বমিতে ভাসিয়ে দিও না। কি ভাববে লোকে।
P1050100
হোটেল থেকে শহরের ভিউ
P1050406
ছবিতে ইষ্ট ইউরোপীয়ান ললনারা
ট্যাক্সি করে হোটেলে পৌঁছে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার চাঁদর টেনে বিছানায়। বাইরে টিপ টিপ ঝরেই যাচ্ছে। অনেকদিন পর এবার খাবো, ঘুমাবো এই প্ল্যানিং এ ছুটিতে গেছি। পৃথিবী ভর্তি দেখার জিনিসের যেহেতু শেষ নাই, দেখার চেষ্টা বৃথা তাই, ভেবে ঠিক করেছি এবার ছুটি মানে ছুটি। ল্যাপটপ ফেলে গেছি। সবকিছু প্রতিদিন টাইমলি, পার্ফেক্টলি করতে করতে বড্ড ক্লান্ত শরীর মন, কোনটাই আর চলছে না। এবার ব্রেক সব রুটিন থেকে। বই নিয়ে বিছানায় শুয়ে মনটা বিরক্তিতে ভরে গেল। যতো বয়স হচ্ছে, মুগ্ধতা কমছে সবকিছু থেকে। আগে সুনীল – সমরেশ – শংকর যতোটা মুগ্ধ করতেন, এখন আর করেন না। যদিও এই বইটি বেশ ইন্টারেষ্টিং, সুনীলের ডেইলি লাইফ থেকে লেখা। সুনীলের বউয়ের নাম স্বাতী জানলাম। অনেকটা বই জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশে সুনীলের বন্ধু অর্থ্যাৎ লেখক কবিদের কথা। কিন্তু নামের বানান এতো ভুল যে বিরক্তি হজম করা দায়। পশ্চিম বাংলার লোকেরা এটাযে ইচ্ছাকৃত করেন সে ব্যাপারে আমি প্রায় নিশ্চিত। বন্ধুদের সাথে চিঠি চালাচালি হয়, মেইল হয় আর নিলুফার না নিলোফার তা তারা জানেন না, আবার পাঁচশো পাতার উপন্যাস ফাঁদেন!
বেশিক্ষণ শুয়ে শুয়ে বইপড়া গেল না। বৃষ্টিতেই আশপাশ ঘুরে ডিনার সেরে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার প্ল্যান হলো। হোটেল থেকে ম্যাপ আর কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিয়ে ভিজতে ভিজতে বের হলাম। মেঘলা আকাশ বিকেলকে সন্ধ্যার রূপ দিয়ে দিয়েছে। আশপাশে হাটতে হাটতে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম। এতোবড় একটা হোটেল যদি আমাদের দেশে কোন আবাসিক এলাকায় হতো তাহলে ট্যাক্সি ড্রাইভার, গাড়ি, হকার এটা ওটার ভিড়ে মানুষের সেই এলাকায় বাস করা দায় হতো। আর এখানে না আছে কোন মানুষ না আছে শব্দ। ট্যাক্সি দরকার হলে হোটেল থেকে ফোন করলে ট্যাক্সি আসবে, দশ মিনিট হলো স্ট্যান্ডার্ড টাইম ট্যাক্সি পৌঁছনোর। বাকিটা ট্র্যাফিক আর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। হেঁটে খুঁজে যেয়ে ডে টিকেট কিনলাম তার পরের দিনের জন্য। এরপর ডিনার, পোলিশ কুজিন। কোথাও যাওয়ার আগে নেট ঘেটে সে দেশের ফুড, ট্যুরিষ্ট এ্যাট্রাকশন, কফি, শপিং, স্যুভেনীয়র ইত্যাদি সম্বন্ধে একটা ধারনা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এখানেও নোট করে নিয়ে গেছিলাম কিছু খাবারের নাম। তা থেকে ডামপ্লিং, ওসিপেক, ডাকরোষ্ট, চিকেন ইত্যাদি অর্ডার করা হলো। খেয়ে বেড়িয়ে দেখলাম বৃষ্টি থেমেছে আপাতত। পরিকল্পনা আবার বদলালাম। বের হলাম এবার “ওয়ারশাও ইন নাইট” দেখতে।
P1050115
ওসিপেক
P1050122
রোস্টেড ডাক ইন সুইট ক্যাবেজ সস
P1050124
চিকেন ইন আনানাস সস
যেকোন জায়গায় গেলে এটা আমার প্রিয় একটা জিনিস। শিখেছি প্যারিস গিয়ে। প্রতিটি শহরেই দিনের আর রাতের রুপ একেবারে আলাদা হয়। দিনের ব্যস্ত শহরকে রাতে প্রায় চেনাই যায়না বললে চলে। সারাদিন রোম ঘুরে সন্ধ্যায় হোটেলে ফেরার পথে আলোকজ্জল প্যান্থন Pantheon দেখে অবাক হয়ে আমি আমার হাতের লিষ্ট চেক করছিলাম, এটা কি করে বাদ পড়ল, এটাতো দেখিনি। মেয়ের বাবা হেসে আমাদের হাতের লিষ্ট, গাইড আর আমার চোখ এক করে দিয়ে বললেন, এই তোমার প্যান্থন, কলোসিয়াম যা সারাদিন ঘুরে দেখলে। অথচ রাতের নিকষ কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে স্থাপনার আলোকসজ্জা, একদম অন্যরকম করে ফেলে। সেই রাতেই ট্যাক্সি করে আবার বের হলাম রাতের রোম দেখতে। দেখতে দেখতে ছোটবেলায় পোষ্টারে পড়া লাইনদুটো মনে পড়ল আবার হেলেন কেলার বলেছিলন “The best and most beautiful things in the world cannot be seen or even touched. They must be felt with the heart.” রোমের সে রাত আমার মনে দাগ কেঁটে গেলো। ঘুরতে ঘুরতে আমার হদয় ভাষা হারিয়ে পরিপূর্ন হয়ে এলো। এরপর থেকে রাতের শহর আমার ভ্রমন তালিকার মাস্ট আইটেম। তবে সব শহরই যে সমানভাবে মুগ্ধ করে তা নয়। কিছু শহরের ওপর ডিপেন্ড করে কিছু আবার মুডের ওপর ডিপেন্ড করে।
P1050342
রাতের পোল্যান্ড
P1050257
P1050255
P1050140
পোলিশ ট্রাম বাসের রঙ দেখে ছোটবেলায় দেখা গায়ে হলুদের শাড়ির কথা মনে পড়ে গেলো

পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ব ভাবলেও গড়িমসি করে বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে বেড়োতে বেড়োতে বারোটা বেজে গেলো। নাস্তার টাইম চলে গেলো তাই ব্রাঞ্চ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। ব্রাঞ্চ করার জন্যে ট্রাম ধরে সিটি সেন্টারে গেলাম। বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবারের ছবি দেখে কোন রেষ্টুরেন্টে ঢুকবো তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। খাবার দাবার তুলনামূলকভাবে নেদারল্যান্ডসের থেকে বেশ সস্তা। একটি টার্কিস রেষ্টুরেন্টে শেষমেষ ঢোকা হলো। খেয়ে দেয়ে বের হয়ে আগে থেকেই ঠিক ছিল পুরনো ওয়ার্শাও দেখতে যাবো, কিন্তু ট্রাম খুঁজতে যেয়ে দেখলাম, ফাটাফাটি সামার সেল চলছে সেখানে। আর কি, ঢোকো দোকানে।
P1050135
পূর্ব ইউরোপের কাপড়ের ডিজাইন এবং ফ্রেবিক্স খুবই আলাদা পশ্চিম ইউরোপের চেয়ে। অনেক বেশি কালারফুল আর ডিজাইনগুলোর সাথে এশিয়ান ডিজাইনের অনেকটা মিল পাওয়া যায়। ভালো করে পরিপূর্ন শক্তি ব্যয় করে কাপড় জামা খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টায় লেগে গেলাম। পুরো মল ছিন্নভিন্ন করে যখন বের হলাম তখন বিকেল প্রায় পাঁচটা। কফির পিপাসায় অর্ধমৃত। বাইরে বেড়িয়ে আইস কাপোচিনো খেয়ে গেলাম পুরনো শহর দেখতে। ভিসটুলা (Vistula) কিংবা ভিসলা (Wisla) নদীর পাড়ে রাজার বাড়ি দেখতে যাবো। নদীর পাড় এতো সুন্দর করে বাঁধানো, আর নদীর ওপরে আছে নয়নাভিরাম সব সেতু, নদীর পাড় ছেড়েই যেতে ইচ্ছে করছিলো না। P1050187
নদীর পাড় থেকে একটু উঁচুতে উঠে গেলেই বিশাল বিরাট রাজার বাড়ি যা এখন খাঁ খাঁ করছে। শুধু নিরাপত্তারক্ষী আর দর্শনার্থীদের ভীড়। একদিন এখানে নিশ্চয় কতো আলো ঝলমল করেছে। কতো নহবত বেজেছে। আজ সব ইতিহাস। P1050174
P1050205
রাজার বাড়ির সামনে বিরাট চত্বর। সেখানে এখন বিভিন্ন দোকান, রেষ্টুরেন্ট, কনসার্ট এর আয়োজন। পর্যটকদের ভীড়ে গম গম করছে এলাকা। বিকেলের নরম রোদে চারপাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, মন এমনিতেই তরল হয়ে যায়। পুরো এলাকা জুড়েই আছে সুন্দর সুন্দর ইমারাত। গীর্জা, সেনাবাহিনীর অফিস, বিভিন্ন রাজকীয় কাজের জন্য পূর্বে ব্যবহৃত হতো সে ধরনের বাড়িঘরগুলো। আস্তে সুস্থে হেটে বেড়ালাম ডাউন টাউনের কাসেল স্কোয়ারে। P1050230
P1050244
ঘুরতে ঘুরতে পড়বিতো পর মালির ঘাড়ের মতো যেয়ে পড়লাম এক ভারতীয় রেষ্টুরেন্টের সামনে। খাবার সময়তো হয়েই গেছিলো। আর কি পেট পূজা সেরে নিয়ে আবার ট্রাম ধরে ফিরলাম হোটেলে। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে মেয়ের আবদার রাখতে বসলাম। প্রথমে লুডু তারপর তাস খেলতে। সাপলুডু খেলতে মেয়ের বিমলানন্দ। বারবার মই বেয়ে তিনি ফার্ষ্ট হয়ে যাচ্ছেন আর বাবা ঘর থেকে বেড়োতেই পারছেন না এক তুলে। পরে মায়ের সাথে রফা হলো বাবাকে বের হতে দেয়া হোক, এক উঠুক আর নাই উঠুক। মেয়ের আনন্দোজ্জ্বল চেহারা দেখে মনে মনে ভীষন কষ্ট পেতে লাগলাম। বাড়িতে কেনো সময় করে মেয়েকে নিয়ে খেলতে বসি না। এতো আনন্দ অবহেলায় ফেলে রেখে ফালতু কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকি।
এরপর তাস খেলা। মেয়ের জন্যে আমি একটা খেলা আবিস্কার করেছি। স্পেডট্রামের কিডস সংস্করন। যেই বিভাগের তাস সেই বিভাগের বড়টা যে দিতে পারবে সেই পাবে সেই দান। যে বেশি দান পাবে সেই উইনার। আমি একটু উঠে অন্যদিকে গেছি, সেই সুযোগে ওনি তাসের ভাগ থেকে বড় বড় সব তাস ওনার কাছে নিয়ে রেখেছেন। আর আমাকে দিয়েছেন সব দুই তিন চার। আমি ষড়যন্ত্র টের পেয়ে জিজ্ঞেস করতেই ওনি হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। টোমাকে হারতে হলো, মা আজকে। আমি বল্লাম হারতে হলে হারবো কিন্তু এটা কি কিছু জেতা হলো? খেলে জিতো। না তা হবে না। খেলা নেই ইমোশোন্যাল ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে হারাতে হবে। ঠিকাছে আমিই হেরে বাবা – মেয়ে তথা জগতের সব প্রাণীকে সুখী করে যাই।
পরদিনও একই অবস্থা। গড়িয়ে গড়িয়ে বারোটায় যেয়ে সিটি সেন্টারে পৌঁছলাম। আজকে মেয়ের পছন্দের ম্যাক হলো ব্রাঞ্চ। গাইড আর ম্যাপ দেখে ট্রাম বাস করে যেখানে পৌঁছলাম পরে আবিস্কার হলো সেটা ডাউন টাউন কাসেল স্কোয়ারের অন্যদিক। এপাশটাও দারুন। পুরনো দিনের রাজকীয় বিশাল সেসব আর্কিটেকচারের চার্মই আলাদা।
P1050282
P1050281
সেখানে বিস্তর ঘুরাঘুরি করে, কফি খেয়ে গেলাম শহরের একদম অন্যদিকে, ওয়ার্শাও এর দ্বিতীয় প্রাসাদ দেখতে। প্রাসাদ দেখে এবার খুবই হতাশ হলাম। এর থেকে আমাদের ধানমন্ডি লেকে সিড়ি নামিয়ে দেয়া সেই লাল গম্বুজের বাড়িটা অনেক পশ। তারপরও প্রাসাদের আশেপাশের বাগান, মাঠ, সেখানের কনসার্ট আর পরিবেশ মন খারাপ ভাবটা অনেকটাই পুষিয়ে দিলো। P1050314
P1050319
এবার সান্ধ্যভোজনের পালা। প্রত্যেক দেশেরই একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। সব রেস্টুরেন্টের লোকেরা যে দেশে থাকবে সে দেশের অরিজিন্যাল স্বাদের সাথে মিলিয়ে খাবার তৈরি করে। কোন দেশের চায়নীজ যে সত্যিকারের চায়নীজ স্বাদের আজো ধরতে পারলাম না। আজকের ডিনার ঠিক হলো ইটালীয়ান। পোল্যান্ডের ইটালিয়ান খাবারের স্বাদ তবুও পরিচিতই মনে হলো। তারমধ্যে স্প্যাগাটি ইন কন ক্রীম সস উইথ চিকেন আর মাশরুমটা ছিল অসাধারণ। P1050353
পরদিন ঘুম থেকে ওঠে দেখলাম আজ মেঘের কোলে ওয়ার্শাও। তাই তাড়াহুড়ার চেষ্টাও করলাম না। সকালে নাস্তা না খেয়ে একবারে দুপুরের খাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আগের দিন আসার সময় ভালো একটা গ্রীক গ্রীল রেস্টুরেন্ট সিলেক্ট করে এসেছি। কচ্ছপ গতিতে রেডি হয়ে গেলাম পেটপূজা দিতে। তারপর বিখ্যাত পোলিশ পোটারীর দোকানে। এতো সুন্দরের মাঝে গেলে হয় মন খারাপ। আর ভাবি কতো কিছু আজো দেখা আর জানার বাকি। আমাদের নকশী কাঁথার মতো ওদেরও নিজস্ব একটা প্যার্টান আছে পোটারী ডিজাইন করার। আগে শুধুই নীলে করতো। আজকাল
P1050390
P1050304
পোলিশরাও ফিউশন করছে তাই নীলের সাথে অন্য রঙ ব্যবহার করছে। যদিও প্রধান রঙ হিসেবে নীল থাকছে, বাকিগুলো সহকারী রঙ। আর ট্র্যাডিশন্যাল ডিজাইনের বাইরে অন্য ডিজাইনও নিচ্ছে। পোলিশ পোটারী সারা ইউরোপ জুড়েই খুব বিখ্যাত। ইউরোপের যেকোন ক্রীসমাস মার্কেটের অন্যতম প্রধান আকর্ষন থাকে পোলিশ পোটারী এবং অবশ্যই অন্য যেকোন হাতে বানানো জিনিসের মতো এটিরও বেশ দাম হয়। পোটারী দেখা শেষ হল পর কোনদিকে যাবো ভাবছি। বৃষ্টিতে কোন আরাম হচ্ছে না। তখন ঠিক করলাম, শহরের চারপাশ দেখবো। রুট দেখে চারটা বাসে কিংবা ট্রামে চড়ে শহরের চারপাশ দেখা যাক। এটি মেয়ের বাবার খুবই পছন্দের কাজ সবসময়। তো তাই হলো। P1050421
P1050131
উত্তর দক্ষিন পূর্ব পশ্চিম দেখা শেষ করে এসে আইসক্রীম পার্লার। আইসক্রীম খেয়ে গেলাম পোলিশ এম্বার দেখতে। পোল্যান্ডের বিখ্যাত পাথর, সমস্ত জুয়েলারী শপ ছেয়ে আছে এম্বারের গয়নায়। কি অদ্ভূদ তাদের কাটিং করেছে। কতো শত শেপে কেঁটে ডিজাইন করেছে। এবং অবশ্যই অনেক দামিতো বটেই। P1050388
সবশেষে আজ আমাদের পোল্যান্ডের লাষ্ট সাপার। আবার পোলিশ রেষ্টুরেন্ট। আবার কিছু ট্র্যাডিশনাল ডিস ট্রাই। তবে খাবার খুব ভালো। খেতে হলে যেতে হবে পোল্যান্ড। P1050402
কাল সকালে তাড়াতাড়ি উঠতেই হবে আজ বৃষ্টির জন্যে ক্যাথিড্র্যাল দেখতে যেতে পারিনি। আলসেমি আর গড়িমসিতে কাটলো দিনটি। সকালে ওঠে দেখলাম আবহাওয়া মোটামুটি চলে টাইপ। কিন্তু রাস্তায় বেড়িয়ে আক্কেল গুড়ুম। ইউরোপের প্রত্যেক দেশেই একটি “নো কার” ডে থাকে, কিংবা ম্যারাথন টাইপ কিছু থাকে যেদিন গাড়ি, বাস চলবে না। কোন পলিউশন হবে না। ওয়ার্শাও সেদিন সাইকেল রেসিং এর আয়োজন করেছে আর আমরা হাবার মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে। P1050412
পরে একে তাকে জিজ্ঞেস করে সিটি সেন্টার পর্যন্ত পৌঁছলাম। সেখানে যেয়ে দেখি কিছু দূর পাল্লার বাস যাচ্ছে। এদিকে সেদিক করে ভিলানোও ক্যাথিড্র্যাল পর্যন্ত পৌঁছেছি, কিন্তু আবার ফেরার তাড়া। নইলে নো কারের দিনে আমাদের নো ফ্লাইট হয়ে যাবে ফ্লাইট মিস করে। ক্যাথিড্র্যালটা বেশ সুন্দর ছিল যদিও মন ভরে দেখা হলো না। একে পৌঁছতে দেরী তার ওপর আবার সানডে প্রেয়ার এর ভীড়। যেকোন গরীব দেশের মতো ওয়ার্শাও এর লোকেরাও খুব ধর্ম ভীরু। কুসংস্কার দেখা গেলো এখানেও দানা বেঁধে আছে। কেউ মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে চার্চের বেদি পর্যন্ত যাচ্ছেনতো কেউ পয়সা দিয়ে হাই-টেক মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন। হাই-টেক মোমবাতিতে কয়েন দিলে এটি বাল্বের মতো জ্বলে। একটা নির্দিষ্ট সময় জ্বলে থাকে তারপর নিভে যায় তখন আবার অন্যজন কয়েন দিলে আবার জ্বলে। এগুলোকে ফিক্সড করে রাখা আছে সারি বেঁধে। ধর্মস্থান থেকে পয়সা কামাবার ফন্দীও ঠিক একই আমাদের মতো। P1050425
P1050428
বহু ঝুট ঝামেলা করে প্রায় নাকে মুখে দৌড়ে হোটেলে পৌঁছে স্যুটকেস নিয়ে ভোকাট্টা দৌড় নীচে। গাড়ি বন্ধ থাকলেও এয়ারপোর্টের ট্যাক্সি সার্ভিস চলছিল তাই রক্ষা। শেষ হলো সামার ভ্যাকেশন ২০১১। আবার সামনে রোদ ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা ..................
P1050227
তানবীরা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন