২০০৭ সাল। সেবার ঈদ এবং পুজার জন্যে বেশ বড় রকমের একটা ছুটির ফাদে পড়েছিলো
ভার্সিটি। সেটাকে কাজে লাগানোর জন্যে মনস্থির করি নানীবাড়ি যাবো। ভারতের
আসাম রাজ্যে আমার নানীবাড়ি। যাওয়াটা বিশাল ঝক্কির ব্যাপার। বাসায় সবাই মিলে
যাওয়ার বিল উত্থাপন করলাম। বিল আংশিকভাবে পাশ হলো। ভাইয়া-ভাবী বললো যাবে।
মিয়াভাই-ভাবী বললো হয়তো যাবে। আব্বা-আম্মা যাবে না। আমি আব্বাকে বললাম যে,
সবার সাথে ভিসার জন্যে লাইনে দাড়াবো নাকি একা দাড়াবো। আব্বা অন্যদের সাথে
লেজ না বাধার পরামর্শ দিলেন এবং আমাকে একাই ভিসার জন্যে দাঁড়িয়ে পড়তে
বললেন।
ভিসা কাহিনীঃ
সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে গুলশানে ইন্ডিয়ান অ্যামবাসিতে পৌছে গেলাম। গিয়ে দেখি মোটামুটি হাজারখানেক লোকের পিছনে আমাকে দাড়াতে হবে। পূজার কারণে ভয়াবহ ধরনের রাশ। কি আর করা? দাঁড়িয়ে পড়লাম। এর মাঝে দেখি এক পাবলিক এসে বলছে,
- সামনে দাড়াবেন নাকি?”
- কত?
- ৪০০ টাকা।
- নাহ।
- আপনি জায়গা দেখেন, তারপর পছন্দ হলে টাকা দিয়েন।
- জায়গা দেখেও টাকা দিতে পারবো না। দিলে বাসায় যাওয়ার ভাড়া থাকবে না। (বাসায় যাবার সিএনজি ভাড়া থাকবে না। সেটা অবশ্য উল্লেখ করি নাই।)
- কত দিতে পারবেন?
- ২০০ টাকা ম্যাক্সিমাম।
- ৩০০ দিয়েন।
- ভাই, পারলে না করতাম না। ৩০০ কেন, ৪০০ই দিতাম।
লোকটা কিছুক্ষণ চিন্তা করে আমাকে বললো, “আসেন আমার সাথে।” আমি লাইনে আমার পিছনের লোকটাকে আমার জায়গাটা দেখতে বলে অন্য লোকটার সাথে হাটা ধরলাম। গিয়ে দেখি মোটামুটি সামনের দিকে শ-খানেক লোকের পিছনে আরেকটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে দেখিয়ে প্রথম লোকটা আমাকে বললো,
- দেখেন, চলবে নাকি? এটা ছাড়া আর কোন জায়গা নাই এখন আমার কাছে।
আমি কোন কথা না বলে দুশো টাকা লোকটার হাতে গুজে দিলাম। দ্বিতীয় লোকটা লাইন থেকে বের হয়ে আমাকে জায়গা করে দিলো। আমি লোকটার জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলাম। সেদিন মোটামুটি দশটার মধ্যে ভিসার কাজ শেষ করে বের হতে পেরেছিলাম অ্যামবাসী থেকে। লাকি মি। ভাইয়া-ভাবীরা পরের দিন গিয়েছিলো ভিসার জন্যে। মোটামুটি ছয় ঘন্টার মত দাঁড়িয়ে থেকেও ভিসা পায়নি। উল্টো, মিয়াভাইয়ের পাসপোর্ট আটকিয়ে রেখে খুব হ্যারাস করেছিলো।
যাত্রা হলো শুরুঃ
আমার যাত্রার ব্যাপারে নানীবাড়িতে কাউকে কিছু জানানো হয় নাই। সারপ্রাইজ ভিজিট আরকি। রাত সাড়ে নয়টার শাহআলী পরিবহনে রওনা দিলাম। গন্তব্য বুড়িমারী। ড্রাইভার ব্যাটা আস্তে ধীরে চালিয়ে সকাল আটটার দিকে বুড়িমারীতে নামিয়ে দিলো। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বর্ডার খুলে দেয়। আমার পিঠে এক বিশাল ব্যাকপ্যাক। তাছাড়া আর কোন লাগেজ নাই। বুড়িমারী চেকপোস্টে বিডিআর কোন ঝামেলা করলো না। ভ্যাজাল বাধলো ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশনে। আমার সাথে যারা সেসময় ভারতে যাচ্ছিলো, সবার গন্তব্যই মোটামুটি পশ্চিমবঙ্গ অথবা মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসায় নেপাল। শুধুমাত্র আমারই গন্তব্য আসাম। সবই লিখে দিয়েছিলাম ফর্মে। এরপরও কোথায় যাবেন? কেন যাবেন? কার কাছে যাবেন? কিভাবে যাবেন? কি করেন? যার কাছে যাবেন সে কি করে? ব্লা ব্লা একের পর এক প্রশ্ন করেই গেলো। আমি ধৈর্য্য ধরে জবাব দিলাম সব প্রশ্নের। এর মাঝে আবার কাস্টমসে আমার লাগেজ চেক করতে চাইলে বললাম যে, আমার লাগজে কোন লক নাই। চেক করে নেন। ব্যাকপ্যাকের গিফট আইটেমসের মধ্যে অনেকগুলো শাড়ি আর সাবান ছিলো। সাবানগুলো দেখে এমন চোখ বানালো যেন আমি সাবান না, আরডিএক্স নিয়ে যাচ্ছি।
ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়া পেয়ে মানি এক্সচেঞ্জ গিয়ে কিছু রুপি কিনলাম। তারপর এক্সচেঞ্জের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- আচ্ছা ভাই, এখান থেকে মাথাভাঙ্গা যাবার বাস কোথা থেকে ছাড়ে?
- সামনেই একটা বাইপাস আচে। ওখান থেকে সুপার ধরে চলে যেতে পারবেন।
- আচ্ছা। বাইপাস পর্যন্ত কিভাবে যাবো? রিক্সা বা ভ্যান?
- না না, দাদা। রিক্সা-ভ্যান লাগবে না। হেটেই চলে যেতে পারবেন।
পিঠের এই বোঝা নিয়ে হাটা খুব কষ্টকর ব্যাপার। তাই দুরত্ব কম হওয়া স্বত্তেও একটা রিক্সা নিলাম। জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তের একটা ছিলো সেটা। কারণ রিক্সাতেই প্রায় মিনিট বিশেক লেগেছিলো বাইপাস পর্যন্ত পৌছাতে। মনে মনে গালি দিয়ে ব্যাটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম।
ছুপার সার্ভিসঃ
সুপারের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে সুপার ক্ষুদা পেয়ে গেলো। মনে পড়লো যে, সকাল থেকে নাস্তাই করা হয়নি। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে লুচি আর সবজি খেয়ে নিলাম। তারপর আবারও অপেক্ষা সুপারের জন্যে। কিন্তু যে বাস আসে, সেটাই নাকি সুপার না। অপেক্ষা করতে করতেই দেখি মোবাইলে তখনও নেটওয়ার্ক আছে। আমার ডিজুস দিয়ে বাসায় ফোন দিয়ে আম্মাকে টেনশন করতে মানা করলাম। তারপর আবারও অপেক্ষা। অবশেষে সুপার এলো। সুপার দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ! মিনিবাস আর রাইডারের মাঝামাঝি এক বাহন। তারউপরে কোন সিট খালি নাই। আগত্য লাগেজ মেঝেতে রেখে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রা। কিছুক্ষণ পরে মনে হলো রেস্টুরেন্টের লোকটা আমাকে ইচ্ছে করে এই লোকাল বাসে উঠিয়ে দিয়েছে সুপার বলে। কারণ রাস্তায় যেই হাত উঠাক না কেন, সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে তাদের উঠিয়ে নিচ্ছে। এটা আর যাই হোক, কোন সুপার সার্ভিস হতে পারেনা। এভাবে চলতে চলতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই একটু ঝিমুনী চলে এসেছিলো। হঠাত প্রচন্ড শব্দ করে সামনের গাড়ির সাথে সংঘর্ষ আর তাল সামলাতে না পেরে আমি সামনের বসে থাকা যাত্রীর কোলে ধরাশায়ী। হৈ হৈ করে উঠলো বাসের যাত্রীরা।
- সুয়োর ড্রাইভারটার কি ব্রেক নেই?
- আহা, ড্রাইভারকে দোষ দিচ্ছেন কেন দাদা? সামনের আহাম্মকটা হঠাত ব্রেক কষার কারণেইতো এটা হলো। সালার সব দোস ও ব্যাটার।
- একেতো আটআনা ভাড়া বাড়িয়েচে, তারওপর কিভাবে গাড়ি চালাচ্চে দেকেচেন দাদা? আমার নতুন সার্টটার পুরো দুটো বোতাম ছিড়ে গিয়েচে। এটার ক্ষতিপূরণ কে দিবে শুনি?
- সালাকে দুটো রামথাপ্পড় কসিয়ে দিন দাদা। কঠিন শিক্ষা হবে তাহলে।
কিছু উৎসাহী যাত্রী নেমে সামনের গাড়ির ড্রাইভারকে কঠিন শিক্ষার রামথাপ্পড় দেবার জন্যে নেমে গেলো। আমার পাচ্ছে রামকান্না। এমনিতেই সেই লেভেলের ছুপার সার্ভিস। তারউপর এভাবে মারামারি শুরু করলে আজকে আর আমার আসাম পৌছুতে হবেনা।
অবশেষে মাথাভাঙ্গাঃ
সামনের গাড়ির ড্রাইভারকে চড়-থাপ্পর মেরে দাদাদের জানে একটু শান্তি আসলো। তারা এসে আবার বাসে চেপে বসলো। বাস ছাড়লো। এবার ড্রাইভার সাহেব আর কোথাও থামলো না। মাথাভাঙ্গাতে এসে তবেই গাড়ি থামলো। আমি গাড়ি থামার সাথে সাথে ছিটকে বের হয়ে আসলাম। পাবলিককে জিজ্ঞেস করলাম কুচবিহারের গাড়ির ব্যাপারে।
পাবলিক আবারও আরেক সুপার সার্ভিসের কথা আমাকে বললো। আমি সাবধানে জিজ্ঞেস করলাম যে সুপার সার্ভিস ছাড়া অন্য কোন সার্ভিস আছে কিনা। তারা জানালো যে সুমো সার্ভিস আছে এবং সেটা রাস্তার অন্য পাশেই। এ কথা শুনে গলা শুকিয়ে গেলো। সুপার থেকে সুমো পালোয়ান! আল্লাহ জানে এবার কি অপেক্ষা করছে। রাস্তার অন্যপাড়ে গিয়ে দেখি জিপ সার্ভিস রয়েছে যেটাকে ওরা সুমো বলে জিপের ব্র্যান্ড-নেম অনুযায়ী। অপেক্ষা না করে ছাড়বো ছাড়বো করছে এমন একটা সুমোতে চেপে বসলাম আর তার আগে উপরের ক্যারিয়ারে ব্যাকপ্যাকটা ছুড়ে মারলাম। সুমোতে বসতে হলো আমাদের লেগুনার সিটগুলোর মত সাইড হয়ে। এ ধরনের সিটে বসলেই কেন জানি খুব অস্বস্তি লাগে। তারউপর সুমোর লিকলিকে শরীরের হাড়গিলে ড্রাইভারটা ড্রাইভ করা শুরু করলো লেগুনার ড্রাইভারগুলোর মতন। গা গুলায় বমি লাগা শুরু করলো। কোনমতে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকলাম, আর মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকলাম যেনো এই হরিবল জার্নিটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।
কুচবিহারঃ
প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে কুচবিহার পৌছে গেলাম। দুপুর প্রায় সোয়া দুইটা বাজে। গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালাম। গা তখনো গুলাচ্ছে। পেট খালি। এখান থেকে আমার আসামের ধুবরী জেলার বাস ধরতে হবে। কিন্তু তার আগে কিছু খাওয়া দরকার। একটা রিক্সা ডাক দিয়ে বাস টার্মিনালের আশেপাশের ভালো কোন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে বললাম। রিক্সা চলছে। বেশ কিছুক্ষণ চলার পরে দেখি একটা বড় লনওয়ালা প্রাসাদের সামনে এসে থামলো।
- নামুন। রাজবাড়ি চলে এসেচে।
ব্যাটার কথা শুনে মেজাজটা গেলো খিচড়ে। বললাম,
- এই, তুমি ফাইজলামী করো আমার সাথে? তামাশা করো? তোমারে বললাম রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে আর তুমি নিয়ে আসছো রাজবাড়িতে!
- কি বলচেন এসব? আমি কেন আপনার সাথে ফাজলামো করবো? আপনিইতো বললেন যে রাজবাড়ি চলো।
- কানের চিকিৎসা করাও। রেস্টুরেন্ট আর রাজবাড়ি কখনোই একরকম লাগেনা শুনতে। এখন বাস টার্মিনালের পাশে কোন রেস্টুরেন্টে নিয়ে চলো। রেস্টুরেন্ট, ঢাবা, হোটেল, খাওয়ার জায়গা, ইনন, সরাইখানা। বুঝতে পারছো?
- জ্বী। প্রথমে রাজবাড়ি না বলে রেস্টুরেন্ট বললেইতো হতো।
- হ, বাপ। ভুল হইছে। এখন চল। তাড়াতাড়ি চল।
টার্মিনালের উল্টো দিকের এক রেস্টুরেন্টে আসলাম অবশেষে। ভিতরে ঢুকে ভাত, ডাল, শাক আর মাছ দিয়ে খেয়ে নিলাম কোনমতে। তারপরও দেখি কেমন জানি লাগতেছে। বুঝলাম যে বর্ডারে খাওয়া লুচি আর সবজি কোন কারণে পেটে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন করেছে। গ্যাস রিলিজ করার জন্যে একটা ফার্মেসীতে ঢুকলাম এন্টাসিড কেনার জন্যে।
- ভাই, এন্টাসিড হবে?
- কিসের সিড?
- এন্টাসিড।
- নাহ। হবে না।
- এটাতো খুব কমন ওষুধ। আচ্ছা, অক্সিকোন হবে?
- অক্সিজেন??!!
- (কাঁদো কাঁদো হয়ে) নারে ভাই। আপনাদের এখানে গ্যাস হলে চুষে খাওয়া ট্যাবলেটকে কি নামে ডাকে আমি জানিনা। দয়া করে সেটা দেন, প্লিজ।
- গ্যাস্টিকের ওষুধ চাচ্চেন বলবেনতো।
ওষুধ হাতে পাবার সাথে সাথে সেটা মুখে চালান করে দিয়ে লোকটাকে শুকরিয়া বলে বেরিয়ে আসলাম। মিনিট পাচেকের মধ্যে কয়েকটা বড় বড় ঢেকুর ছেড়ে দারুন স্বস্তি বোধ করলাম।
অতঃপর ধুবরীর বাসঃ
টার্মিনাল ছিলো দুটো। একটা সরকারী এবং একটা বেসরকারী। সরকারীটাতে প্রথমে গেলাম আসামের গাড়ি ধরতে। এগুলোর চেহারাসুরত ভালো না হলেও সার্ভিস দারুণ। আগে একবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু বিধিবাম। দিনের একমাত্র সরকারী বাসটা ছেড়ে গিয়েছে ঘন্টাখানেক আগে। বাধ্য হয়ে বেসরকারী টার্মিনাল থেকে ধুবরীর একটা বাসে চেপে বসলাম। বড় বাসটা মোটামুটি খালি। যে দুই-একজন প্যাসেঞ্জার আছে তাদের মুখে ধুবরীর আঞ্চলিক ভাষা শুনে মূহুর্তেই বিল্লী থেকে শের বনে গেলাম। পাশের সিটের লোক আমার সাথে আলাপ শুরু করলো,
- (আমার ব্যাকপ্যাক দেখিয়ে)কুটি থেকি আসছেন? দিল্লী?
- না, ঢাকা।
- তাই নাকি? কোথায় যাবেন? (ভাষা চেঞ্জ)
- আঙ্কেল মুই এটিকার ভাষা মোটামুটি কবার পাং।
- হয় নাকি? খুব ভাল লাগিল শুনিয়া। ধুবরীত কায় আছে?
- মোর মামা, খালা সব ধুবরীত।
- হয় নাকি? ধুবরীত কুটি বাড়ি?
- বিদ্যাপাড়া।
- মোর বাড়ি ঝগড়ার পাড়।
লোকটার সাথে বেশ ভালো খাতির হয়ে গেলো। মাঝখানে ইফতারীর সময় দেখি লোকটা নেমে কিছু ছোলা-মুড়ি কিনে নিয়ে আসলো। আমিও ভাগ পেয়েছিলাম। সন্ধ্যার পরে গাড়ি গোলগঞ্জ পৌছালো। এ জায়গায় মাঝে মাঝে বাংলাদেশী নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। আমি তাড়াতাড়ি ডিজুস বের করলাম। দেখি নেটওয়ার্ক পাচ্ছে। বাসায় ফোন দিয়ে আশ্বস্ত করলাম যে আমি প্রায় পৌছে গিয়েছি এবং টেনশন করে যেন মামাদের ফোন দিয়ে আমার আসার ব্যাপারে কিছু জানানো না হয়।
এর প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পরে ধুবরীতে এসে নামলাম। একটা রিক্সা নিয়ে সোজা নানীবাড়ি। নানীবাড়ির বাইরে একটু দূরে রিক্সা থেকে নেমে দেখি, নিচে মেজো মামা আর এক কাজিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমাকে খেয়াল করে নাই। আমি হঠাত তাদের সামনে গিয়ে বিশাল এক সালাম দিলাম। আমার কাজিন দেখি খুব বেশি অবাক হয়ে, ডাঙ্গায় তোলা কাতল মাছের মত মুখ করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। মেজো মামা কিছু বললো না। শুধু দুই হাত বাড়িয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো, “আগে থেকে বললেতো তোকে বর্ডার থেকে নিয়ে আসতে পারতাম।
লিখেছেনঃ তার-ছেড়া-কাউয়া (তারিখঃ শনিবার, ২৯/০৯/২০১২ - ১৩:০৯)
ভিসা কাহিনীঃ
সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে গুলশানে ইন্ডিয়ান অ্যামবাসিতে পৌছে গেলাম। গিয়ে দেখি মোটামুটি হাজারখানেক লোকের পিছনে আমাকে দাড়াতে হবে। পূজার কারণে ভয়াবহ ধরনের রাশ। কি আর করা? দাঁড়িয়ে পড়লাম। এর মাঝে দেখি এক পাবলিক এসে বলছে,
- সামনে দাড়াবেন নাকি?”
- কত?
- ৪০০ টাকা।
- নাহ।
- আপনি জায়গা দেখেন, তারপর পছন্দ হলে টাকা দিয়েন।
- জায়গা দেখেও টাকা দিতে পারবো না। দিলে বাসায় যাওয়ার ভাড়া থাকবে না। (বাসায় যাবার সিএনজি ভাড়া থাকবে না। সেটা অবশ্য উল্লেখ করি নাই।)
- কত দিতে পারবেন?
- ২০০ টাকা ম্যাক্সিমাম।
- ৩০০ দিয়েন।
- ভাই, পারলে না করতাম না। ৩০০ কেন, ৪০০ই দিতাম।
লোকটা কিছুক্ষণ চিন্তা করে আমাকে বললো, “আসেন আমার সাথে।” আমি লাইনে আমার পিছনের লোকটাকে আমার জায়গাটা দেখতে বলে অন্য লোকটার সাথে হাটা ধরলাম। গিয়ে দেখি মোটামুটি সামনের দিকে শ-খানেক লোকের পিছনে আরেকটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে দেখিয়ে প্রথম লোকটা আমাকে বললো,
- দেখেন, চলবে নাকি? এটা ছাড়া আর কোন জায়গা নাই এখন আমার কাছে।
আমি কোন কথা না বলে দুশো টাকা লোকটার হাতে গুজে দিলাম। দ্বিতীয় লোকটা লাইন থেকে বের হয়ে আমাকে জায়গা করে দিলো। আমি লোকটার জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলাম। সেদিন মোটামুটি দশটার মধ্যে ভিসার কাজ শেষ করে বের হতে পেরেছিলাম অ্যামবাসী থেকে। লাকি মি। ভাইয়া-ভাবীরা পরের দিন গিয়েছিলো ভিসার জন্যে। মোটামুটি ছয় ঘন্টার মত দাঁড়িয়ে থেকেও ভিসা পায়নি। উল্টো, মিয়াভাইয়ের পাসপোর্ট আটকিয়ে রেখে খুব হ্যারাস করেছিলো।
যাত্রা হলো শুরুঃ
আমার যাত্রার ব্যাপারে নানীবাড়িতে কাউকে কিছু জানানো হয় নাই। সারপ্রাইজ ভিজিট আরকি। রাত সাড়ে নয়টার শাহআলী পরিবহনে রওনা দিলাম। গন্তব্য বুড়িমারী। ড্রাইভার ব্যাটা আস্তে ধীরে চালিয়ে সকাল আটটার দিকে বুড়িমারীতে নামিয়ে দিলো। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বর্ডার খুলে দেয়। আমার পিঠে এক বিশাল ব্যাকপ্যাক। তাছাড়া আর কোন লাগেজ নাই। বুড়িমারী চেকপোস্টে বিডিআর কোন ঝামেলা করলো না। ভ্যাজাল বাধলো ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশনে। আমার সাথে যারা সেসময় ভারতে যাচ্ছিলো, সবার গন্তব্যই মোটামুটি পশ্চিমবঙ্গ অথবা মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসায় নেপাল। শুধুমাত্র আমারই গন্তব্য আসাম। সবই লিখে দিয়েছিলাম ফর্মে। এরপরও কোথায় যাবেন? কেন যাবেন? কার কাছে যাবেন? কিভাবে যাবেন? কি করেন? যার কাছে যাবেন সে কি করে? ব্লা ব্লা একের পর এক প্রশ্ন করেই গেলো। আমি ধৈর্য্য ধরে জবাব দিলাম সব প্রশ্নের। এর মাঝে আবার কাস্টমসে আমার লাগেজ চেক করতে চাইলে বললাম যে, আমার লাগজে কোন লক নাই। চেক করে নেন। ব্যাকপ্যাকের গিফট আইটেমসের মধ্যে অনেকগুলো শাড়ি আর সাবান ছিলো। সাবানগুলো দেখে এমন চোখ বানালো যেন আমি সাবান না, আরডিএক্স নিয়ে যাচ্ছি।
ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়া পেয়ে মানি এক্সচেঞ্জ গিয়ে কিছু রুপি কিনলাম। তারপর এক্সচেঞ্জের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- আচ্ছা ভাই, এখান থেকে মাথাভাঙ্গা যাবার বাস কোথা থেকে ছাড়ে?
- সামনেই একটা বাইপাস আচে। ওখান থেকে সুপার ধরে চলে যেতে পারবেন।
- আচ্ছা। বাইপাস পর্যন্ত কিভাবে যাবো? রিক্সা বা ভ্যান?
- না না, দাদা। রিক্সা-ভ্যান লাগবে না। হেটেই চলে যেতে পারবেন।
পিঠের এই বোঝা নিয়ে হাটা খুব কষ্টকর ব্যাপার। তাই দুরত্ব কম হওয়া স্বত্তেও একটা রিক্সা নিলাম। জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তের একটা ছিলো সেটা। কারণ রিক্সাতেই প্রায় মিনিট বিশেক লেগেছিলো বাইপাস পর্যন্ত পৌছাতে। মনে মনে গালি দিয়ে ব্যাটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম।
ছুপার সার্ভিসঃ
সুপারের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে সুপার ক্ষুদা পেয়ে গেলো। মনে পড়লো যে, সকাল থেকে নাস্তাই করা হয়নি। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে লুচি আর সবজি খেয়ে নিলাম। তারপর আবারও অপেক্ষা সুপারের জন্যে। কিন্তু যে বাস আসে, সেটাই নাকি সুপার না। অপেক্ষা করতে করতেই দেখি মোবাইলে তখনও নেটওয়ার্ক আছে। আমার ডিজুস দিয়ে বাসায় ফোন দিয়ে আম্মাকে টেনশন করতে মানা করলাম। তারপর আবারও অপেক্ষা। অবশেষে সুপার এলো। সুপার দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ! মিনিবাস আর রাইডারের মাঝামাঝি এক বাহন। তারউপরে কোন সিট খালি নাই। আগত্য লাগেজ মেঝেতে রেখে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রা। কিছুক্ষণ পরে মনে হলো রেস্টুরেন্টের লোকটা আমাকে ইচ্ছে করে এই লোকাল বাসে উঠিয়ে দিয়েছে সুপার বলে। কারণ রাস্তায় যেই হাত উঠাক না কেন, সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে তাদের উঠিয়ে নিচ্ছে। এটা আর যাই হোক, কোন সুপার সার্ভিস হতে পারেনা। এভাবে চলতে চলতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই একটু ঝিমুনী চলে এসেছিলো। হঠাত প্রচন্ড শব্দ করে সামনের গাড়ির সাথে সংঘর্ষ আর তাল সামলাতে না পেরে আমি সামনের বসে থাকা যাত্রীর কোলে ধরাশায়ী। হৈ হৈ করে উঠলো বাসের যাত্রীরা।
- সুয়োর ড্রাইভারটার কি ব্রেক নেই?
- আহা, ড্রাইভারকে দোষ দিচ্ছেন কেন দাদা? সামনের আহাম্মকটা হঠাত ব্রেক কষার কারণেইতো এটা হলো। সালার সব দোস ও ব্যাটার।
- একেতো আটআনা ভাড়া বাড়িয়েচে, তারওপর কিভাবে গাড়ি চালাচ্চে দেকেচেন দাদা? আমার নতুন সার্টটার পুরো দুটো বোতাম ছিড়ে গিয়েচে। এটার ক্ষতিপূরণ কে দিবে শুনি?
- সালাকে দুটো রামথাপ্পড় কসিয়ে দিন দাদা। কঠিন শিক্ষা হবে তাহলে।
কিছু উৎসাহী যাত্রী নেমে সামনের গাড়ির ড্রাইভারকে কঠিন শিক্ষার রামথাপ্পড় দেবার জন্যে নেমে গেলো। আমার পাচ্ছে রামকান্না। এমনিতেই সেই লেভেলের ছুপার সার্ভিস। তারউপর এভাবে মারামারি শুরু করলে আজকে আর আমার আসাম পৌছুতে হবেনা।
অবশেষে মাথাভাঙ্গাঃ
সামনের গাড়ির ড্রাইভারকে চড়-থাপ্পর মেরে দাদাদের জানে একটু শান্তি আসলো। তারা এসে আবার বাসে চেপে বসলো। বাস ছাড়লো। এবার ড্রাইভার সাহেব আর কোথাও থামলো না। মাথাভাঙ্গাতে এসে তবেই গাড়ি থামলো। আমি গাড়ি থামার সাথে সাথে ছিটকে বের হয়ে আসলাম। পাবলিককে জিজ্ঞেস করলাম কুচবিহারের গাড়ির ব্যাপারে।
পাবলিক আবারও আরেক সুপার সার্ভিসের কথা আমাকে বললো। আমি সাবধানে জিজ্ঞেস করলাম যে সুপার সার্ভিস ছাড়া অন্য কোন সার্ভিস আছে কিনা। তারা জানালো যে সুমো সার্ভিস আছে এবং সেটা রাস্তার অন্য পাশেই। এ কথা শুনে গলা শুকিয়ে গেলো। সুপার থেকে সুমো পালোয়ান! আল্লাহ জানে এবার কি অপেক্ষা করছে। রাস্তার অন্যপাড়ে গিয়ে দেখি জিপ সার্ভিস রয়েছে যেটাকে ওরা সুমো বলে জিপের ব্র্যান্ড-নেম অনুযায়ী। অপেক্ষা না করে ছাড়বো ছাড়বো করছে এমন একটা সুমোতে চেপে বসলাম আর তার আগে উপরের ক্যারিয়ারে ব্যাকপ্যাকটা ছুড়ে মারলাম। সুমোতে বসতে হলো আমাদের লেগুনার সিটগুলোর মত সাইড হয়ে। এ ধরনের সিটে বসলেই কেন জানি খুব অস্বস্তি লাগে। তারউপর সুমোর লিকলিকে শরীরের হাড়গিলে ড্রাইভারটা ড্রাইভ করা শুরু করলো লেগুনার ড্রাইভারগুলোর মতন। গা গুলায় বমি লাগা শুরু করলো। কোনমতে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকলাম, আর মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকলাম যেনো এই হরিবল জার্নিটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।
কুচবিহারঃ
প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে কুচবিহার পৌছে গেলাম। দুপুর প্রায় সোয়া দুইটা বাজে। গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালাম। গা তখনো গুলাচ্ছে। পেট খালি। এখান থেকে আমার আসামের ধুবরী জেলার বাস ধরতে হবে। কিন্তু তার আগে কিছু খাওয়া দরকার। একটা রিক্সা ডাক দিয়ে বাস টার্মিনালের আশেপাশের ভালো কোন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে বললাম। রিক্সা চলছে। বেশ কিছুক্ষণ চলার পরে দেখি একটা বড় লনওয়ালা প্রাসাদের সামনে এসে থামলো।
- নামুন। রাজবাড়ি চলে এসেচে।
ব্যাটার কথা শুনে মেজাজটা গেলো খিচড়ে। বললাম,
- এই, তুমি ফাইজলামী করো আমার সাথে? তামাশা করো? তোমারে বললাম রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে আর তুমি নিয়ে আসছো রাজবাড়িতে!
- কি বলচেন এসব? আমি কেন আপনার সাথে ফাজলামো করবো? আপনিইতো বললেন যে রাজবাড়ি চলো।
- কানের চিকিৎসা করাও। রেস্টুরেন্ট আর রাজবাড়ি কখনোই একরকম লাগেনা শুনতে। এখন বাস টার্মিনালের পাশে কোন রেস্টুরেন্টে নিয়ে চলো। রেস্টুরেন্ট, ঢাবা, হোটেল, খাওয়ার জায়গা, ইনন, সরাইখানা। বুঝতে পারছো?
- জ্বী। প্রথমে রাজবাড়ি না বলে রেস্টুরেন্ট বললেইতো হতো।
- হ, বাপ। ভুল হইছে। এখন চল। তাড়াতাড়ি চল।
টার্মিনালের উল্টো দিকের এক রেস্টুরেন্টে আসলাম অবশেষে। ভিতরে ঢুকে ভাত, ডাল, শাক আর মাছ দিয়ে খেয়ে নিলাম কোনমতে। তারপরও দেখি কেমন জানি লাগতেছে। বুঝলাম যে বর্ডারে খাওয়া লুচি আর সবজি কোন কারণে পেটে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন করেছে। গ্যাস রিলিজ করার জন্যে একটা ফার্মেসীতে ঢুকলাম এন্টাসিড কেনার জন্যে।
- ভাই, এন্টাসিড হবে?
- কিসের সিড?
- এন্টাসিড।
- নাহ। হবে না।
- এটাতো খুব কমন ওষুধ। আচ্ছা, অক্সিকোন হবে?
- অক্সিজেন??!!
- (কাঁদো কাঁদো হয়ে) নারে ভাই। আপনাদের এখানে গ্যাস হলে চুষে খাওয়া ট্যাবলেটকে কি নামে ডাকে আমি জানিনা। দয়া করে সেটা দেন, প্লিজ।
- গ্যাস্টিকের ওষুধ চাচ্চেন বলবেনতো।
ওষুধ হাতে পাবার সাথে সাথে সেটা মুখে চালান করে দিয়ে লোকটাকে শুকরিয়া বলে বেরিয়ে আসলাম। মিনিট পাচেকের মধ্যে কয়েকটা বড় বড় ঢেকুর ছেড়ে দারুন স্বস্তি বোধ করলাম।
অতঃপর ধুবরীর বাসঃ
টার্মিনাল ছিলো দুটো। একটা সরকারী এবং একটা বেসরকারী। সরকারীটাতে প্রথমে গেলাম আসামের গাড়ি ধরতে। এগুলোর চেহারাসুরত ভালো না হলেও সার্ভিস দারুণ। আগে একবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু বিধিবাম। দিনের একমাত্র সরকারী বাসটা ছেড়ে গিয়েছে ঘন্টাখানেক আগে। বাধ্য হয়ে বেসরকারী টার্মিনাল থেকে ধুবরীর একটা বাসে চেপে বসলাম। বড় বাসটা মোটামুটি খালি। যে দুই-একজন প্যাসেঞ্জার আছে তাদের মুখে ধুবরীর আঞ্চলিক ভাষা শুনে মূহুর্তেই বিল্লী থেকে শের বনে গেলাম। পাশের সিটের লোক আমার সাথে আলাপ শুরু করলো,
- (আমার ব্যাকপ্যাক দেখিয়ে)কুটি থেকি আসছেন? দিল্লী?
- না, ঢাকা।
- তাই নাকি? কোথায় যাবেন? (ভাষা চেঞ্জ)
- আঙ্কেল মুই এটিকার ভাষা মোটামুটি কবার পাং।
- হয় নাকি? খুব ভাল লাগিল শুনিয়া। ধুবরীত কায় আছে?
- মোর মামা, খালা সব ধুবরীত।
- হয় নাকি? ধুবরীত কুটি বাড়ি?
- বিদ্যাপাড়া।
- মোর বাড়ি ঝগড়ার পাড়।
লোকটার সাথে বেশ ভালো খাতির হয়ে গেলো। মাঝখানে ইফতারীর সময় দেখি লোকটা নেমে কিছু ছোলা-মুড়ি কিনে নিয়ে আসলো। আমিও ভাগ পেয়েছিলাম। সন্ধ্যার পরে গাড়ি গোলগঞ্জ পৌছালো। এ জায়গায় মাঝে মাঝে বাংলাদেশী নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। আমি তাড়াতাড়ি ডিজুস বের করলাম। দেখি নেটওয়ার্ক পাচ্ছে। বাসায় ফোন দিয়ে আশ্বস্ত করলাম যে আমি প্রায় পৌছে গিয়েছি এবং টেনশন করে যেন মামাদের ফোন দিয়ে আমার আসার ব্যাপারে কিছু জানানো না হয়।
এর প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পরে ধুবরীতে এসে নামলাম। একটা রিক্সা নিয়ে সোজা নানীবাড়ি। নানীবাড়ির বাইরে একটু দূরে রিক্সা থেকে নেমে দেখি, নিচে মেজো মামা আর এক কাজিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমাকে খেয়াল করে নাই। আমি হঠাত তাদের সামনে গিয়ে বিশাল এক সালাম দিলাম। আমার কাজিন দেখি খুব বেশি অবাক হয়ে, ডাঙ্গায় তোলা কাতল মাছের মত মুখ করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। মেজো মামা কিছু বললো না। শুধু দুই হাত বাড়িয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো, “আগে থেকে বললেতো তোকে বর্ডার থেকে নিয়ে আসতে পারতাম।
লিখেছেনঃ তার-ছেড়া-কাউয়া (তারিখঃ শনিবার, ২৯/০৯/২০১২ - ১৩:০৯)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন