মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০১৪

মালয়েশিয়ায় নয় দিন - (পার্ট এক)

ঢাকা ও কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টঃ দুবাই ভিসা পেতে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পনা হলো মালয়েশিয়া সফরের। কোন রকমের ঝামেলা ছাড়াই অ্যাপ্লাই করার তেরো দিনের মাথায় ভিসা পেয়ে গেলাম। সফর সঙ্গী হচ্ছে আমার স্ত্রী, স্ত্রীর বড় বোন এবং তার স্বামী। ফ্লাইট ছিলো রাত সাড়ে নয়টায়। দিনটা ছিলো ঈদুল আযহার আগের শেষ বৃহঃস্পতিবার। আমরা প্রচন্ড জ্যামের ভয়ে বিকাল সোয়া পাঁচটায় বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

ঢাকার রাস্তা আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে জ্যাম ছাড়াই সাড়ে ছয়টার মধ্যে বিমানবন্দরে নিয়ে এলো। সিকিউরিটি চেক পার হয়ে চেক-ইন করতে গিয়ে দেখি তখনও চেক-ইন শুরুই হয়নি। যাই হোক চেক-ইন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আমরা লাইন ধরে চেক-ইন করে ফেললাম। প্রতিবার ইমিগ্রেশনে গিয়ে যেই ভুলটা করি সেটা সাফল্যের সাথে এবারও করলাম। এরাইভাল ফর্ম ফিলাপ না করেই ইমিগ্রেশনে গেলাম। অফিসার বিরক্ত হয়ে আবার ফরম ফিলাপ করতে পাঠালো। আমরা আবারও ফরম ফিলাপ করে গিয়ে ইমিগ্রেশন পার হলাম। কাউকে তেমন একটা কিছু জিজ্ঞেস না করলেও আমার আলাভোলা ক্রিমিনাল(!!) চেহারা দেখে মনেহয় অফিসারের সন্দেহ হয়েছিলো। আমাকে আগে কবে, কোন দেশে, কতদিনের জন্যে গিয়েছিলাম সব তারিখসহ জিজ্ঞেস করলো। সবকিছুর সাহি জাওয়াব দিয়ে পার পেয়ে গেলাম।

ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পরে সেতু ভাইয়ের (ভায়রা ভাই) দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী সবাই মিলে অ্যামেক্স গোল্ড কার্ডধারীদের হাইফাই লাউঞ্জে প্রবেশ করলাম। এটা ডিপার্চার এরিয়ার দোতলায়। সেখানে গিয়ে আয়েশ করে বসার পরে যখন কার্ড চেক করতে আসলো, তখন সেতু ভাই তার সিলভার-কার্ড বের করে দিলেন। সেটা দেখে খুব ভদ্রভাবে আমাদেরকে সেখান থেকে বের হয়ে যেতে বলা হলো। আমরা বেশ ভালো রকমের একটা ধরা খেয়ে, সেতু ভাইয়ের উপর গজর গজর করতে করতে সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। এসব ব্যাপারে সেতু ভাইয়ের দর্শন হলো, “আরে মিয়া বুঝলা না? চান্স নিয়া দেখলাম আরকি”। ভাগ্য ভালো যে, দেশের বাইরে যাওয়ার জন্যে পুরান পাসপোর্ট নিয়ে এসে চান্স নেয়ার চেষ্টা উনি করেন নাই। বাই দ্যা ওয়ে, ছোট্ট একটা ইনফো। কোন কার্ড না থাকলেও সেই ভিআইপি লাউঞ্জে বসা যাবে, তবে প্রতি ঘন্টায় আপনাকে গুণতে হবে পনেরশো টাকা। সেখানে ওয়েট করার পাশাপাশি আপনি ইচ্ছে মতন বুফে স্টাইলে খেতেও পারবেন।

আমরা বাইরে সাধারণ লাউঞ্জেই ওয়েট করতে থাকলাম। এয়ারপোর্টে লিঙ্ক-থ্রি এর লাইনের ওয়াইফাই দিয়েছে। বেশ ভালো। বছর দুয়েক আগে এটা ছিলো বলে মনে পড়েনা। আমাদের ফ্লাইট ছিলো মালিন্ডো এয়ারে। বাজেট এয়ার হওয়া স্বত্তেও নেটে এদের ফ্যাসিলিটিজ ঘেটে বেশ ভালো লেগেছিলো। কিন্তু আমাদের হতাশ করে বাংলাদেশ বিমানের মতন ফ্লাইট এক ঘন্টা লেট করলো। সাড়ে দশটায় যখন প্লেন আকাশে উড়াল দিলো, তখন আমরা সবাই ক্ষুধায় কাতর। শেষ ভাত খেয়েছিলাম দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে। সুমি আপুর (স্ত্রীর বড় বোন) আনা ভয়াবহ স্বাদের পটেটো বিস্কিটগুলোও সবাই সাবাড় করে দিয়েছে ততক্ষণে। সেতু ভাই আমার দিকে তাকায় করুণ মুখে বললো, “এই মিয়া, তুমি ঠিকমতন দেখসোতো? খাবারটাবার দেয়তো?”। আমি বললাম, “বাজেট এয়ার হয়ে যখন প্রতি সিটের পিছনে টিভি দিসে, তখন মনেহয় খাবারও দিবে। টেনশন নিয়েন না।” তখন অবশ্য ওনাকে বুঝতে দেই নাই যে, আমার সামনের টিভি স্ক্রীন কাজ করছে না। অবশেষে ফ্লাই করার ঘন্টাঘানেক পরে খাবার এলো। দুই পিস পুলি-পিঠা জাতীয় স্ন্যাকস, পানি, আর চকলেট। সেটাই আমরা গোগ্রাসে সাবাড় করে দিলাম।

প্রায় ঘন্টা তিনেক ফ্লাই করার পরে মালয়েশিয়ান সময় রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমরা কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলাম। একেবারে ঝকঝকে এয়ারপোর্ট। লোকজনের যাতে হাটতে কষ্ট না হয়, সেজন্যে কিছুদুর পর পর ক্যারিয়ার বেল্ট আছে। সেখানে উঠে বেশ কিছুদূর হাটা ছাড়াই চলে যাওয়া যায়। এয়ারপোর্টে নেমেই যেই দুইটা মালয় শব্দ শিখলাম তা হলো পিন্টু আর টান্ডাস। পিন্টু মানে গেট, আর টান্ডাস মানে হলো টয়লেট। এই এয়ারপোর্ট থেকে নয় ঘন্টা পরে দুপুর সাড়ে এগারোটার দিকে আমাদের ডোমেস্টিক ফ্লাইটে লাঙ্কাউয়ি যেতে হবে। শারজা এয়ারপোর্টে নেমে আমার স্ত্রীর সাথে যে বিষয় নিয়ে সমস্যা তৈরী হয়েছিলো, এবারও তা হলো। কোথায় যাবো? ট্রান্সফার ডেস্কে? নাকি ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ বেল্টে?

আমি বললাম যে, আমারদের ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ কালেক্ট করে তারপরে আবার চেক-ইন করতে হবে ডোমেস্টিক ফ্লাইটের জন্যে। কারণ টিকেটগুলো আলাদা আলাদা এবং কোথাও ট্রানজিট জাতীয় কথা লেখা নেই। সুমি আপু শুধুমাত্র আমার পক্ষে। বাকি দুইজন ট্রান্সফার ডেস্কে যাওয়ার পক্ষপাতী। যাই হোক, আমরা হার মেনে তাদের কথা অনুযায়ী সামনে এগোলাম। একজন ইমিগ্রেশন অফিসারকে সমস্যা জানালে সেও আমাদের ট্রান্সফার ডেস্কে যেতে বললো। আমরা উপরের তলায় বেশ দূরে ট্রান্সফার ডেস্কে গেলাম। সেখান থেকে আবার আমাদের ইমিগ্রেশনে পাঠালো। আমরা আবার ইমিগ্রেশনে ব্যাক করলাম। আমার কথাই সত্যে পরিণত হলো। আমরা ইমিগ্রেশন থেকে বের হয়ে লাগেজ বেল্ট থেকে লাগেজ কালেক্ট করে নিলাম।

প্রথমেই এয়ারপোর্টের ভিতর থেকে আমরা ডলার ভাঙ্গালাম। পরামর্শ হচ্ছে যে, যতটুকু দরকার ততটুকুই ভাঙ্গান। কারণ রেট খুবই খারাপ দেয়। এয়ারপোর্ট থেকে আর বের হলাম না। লাগেজসহ অ্যারাইভাল লাউঞ্জের অন্যপাশে চলে এলাম, আর দৌড়ে দৌড়ে বার্গার-কিং এ ঢুকে পড়লাম। পেট শান্ত করে আমি আর সেতু ভাই লোকাল ফ্লাইটের ডিপার্চার খুঁজে বের করতে বের হলাম। ভাবলাম যে মালিন্ডো এয়ারের অফিসে যাই। আমরা ছিলাম লেভেল-৩ এ। লেভেল-৪ এ মালিন্ডো এয়ারের অফিসে ঢুকেই নিজেদের এক ঝাক সুন্দরী এয়ারহোস্টেসের মধ্যে আবিষ্কার করলাম। অফিস কাউন্টারের অন্যপাশে বসা একজন লোক আমাদেরকে সেখানে দেখে কোনমতে বললো যে, “তোমরা ভুল জায়গায় এসেছো। ডিপার্চার লেভেল-৫ এ।” সেতু ভাইয়ের অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও তাকে জোর করে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসলাম। তারপর ডিপার্চার লাউঞ্জটা দেখে আসলাম উপর থেকে। এসময় কিছুক্ষণের জন্যে টার্মিনালের বাইরেও বের হয়েছিলাম। আমাদের এয়ারপোর্টের মতন এখানে বাইরে থেকে আবার ভিতরে ঢুকতে পাসপোর্ট বা টিকেট দেখানোর প্রয়োজন নেই। সেতু ভাই এসময় দারুণ একটা প্রস্তাব দিয়েছিলো। বললো, “আমরা যেভাবে কয়েকবার পুরা এয়ারপোর্ট চক্কর মারসি, তাতে ইজিলি পাবলিককে এয়ারপোর্টের ট্যুর দিয়ে টু-পাইস কামাই করে ফেলতে পারবো।” 





নিচে এসে দেখি তখনো ঘড়িতে মাত্র সকাল সাড়ে ছয়টা বাজে। ঘুমে আমাদের অবস্থা খারাপ। বসার জায়গাগুলো অলরেডী কিছু যাত্রী দখল করে ঘুম দিয়েছে। এয়ারপোর্টের ভিতরে মাঝে মাঝেই কিছু মাসাজ দেয়ার সিট আছে। সেগুলোতে গিয়ে বসলাম আমরা। সমস্যা হচ্ছে যে, টাকা না ঢুকিয়ে যদি সেগুলোর হাতলের উপর হাত রাখেন তাহলে কিছুক্ষণ পরেই কো কো করে সাইরেন বাজতে থাকে। তাই চেয়ারগুলো আরামদায়ক হওয়া স্বত্তেও বেশিক্ষণ আরাম করে বসে থাকা যায় না। কি আর করা সেগুলোর পাশেই সাধারণ বসার জায়গাগুলোর একটা দখল করলাম। তারপর সেখানে হাত-পা ছড়িয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর এয়ারপোর্টের বেরসিক অ্যানাউন্সমেন্টের যন্ত্রণায় কেউই ভালোমতন ঘুমাতে পারি নাই।
লাঙ্কাউয়ি আইল্যান্ডঃ
ঘন্টা তিনেক ঝিমানোর পরে সকাল দশটার দিকে আমরা সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপরে লাঙ্কাউয়ির লোকাল ফ্লাইটে চেকইন করলাম। ডিপার্চার লাউঞ্জের ভিতরে গিয়ে সেতু ভাইয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেলো। উনি ডিউটি-ফ্রী পারফিউম শপে ঢুকে সমানে নানা ব্র্যান্ডের পারফিউমের টেস্টার গায়ে মাখা শুরু করলেন। প্লেন ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে তাও উনি বের হচ্ছেন না। অবশেষে আমরা বহু কষ্টে তাকে সেখান থেকে বের করতে সক্ষম হলাম। উনি হাসিমুখে বললেন, “আরে মিয়া বুঝলা না, গোসল ছাড়াই গা থেকে কি সুন্দর ঘ্রাণ বের হবে ফ্রী ফ্রী। ব্যাপারটা খারাপ না। ”


  আমরা প্লেনে ওঠার আগে কিছুই খাই নাই। কারণ সবাই রাত সাড়ে চারটার দিকে ভরপেট খেয়েছি একবার। তাই ভাবলাম সকালের ব্রেকফাস্ট প্লেনে দেয়া হালকা খাবারেই সেরে ফেলবো। কিন্তু আমাদেরকে হতাশ করে এবারে দেয়া হলো শুধুমাত্র একটা বন রুটি আর পানি। ডোনাট সাইজের বন রুটির ভিতরে অবশ্য খেজুরের জেলি টাইপ কিছু একটা ছিলো। ফ্লাইটটা ছিলো মিনিট চল্লিশের। এজন্যেই মনেহয় এত হালকা খাবার। প্রথমবার আমি জানালার পাশে বসেছিলাম। রাত হওয়ায় বাইরে দেখার মতন কিছু ছিলো না। কিন্তু এবার দিন হলেও আমি বসলাম আইলের পাশে। আমার অন্যপাশে এক ইয়াং কাপল বসেছিলো। বাইরের দৃশ্য উপভোগ করার উপায় না থাকায় বসে বসে “জ্যাক দ্যা জায়ান্ট স্লেয়ার” প্রায় অর্ধেক দেখে ফেললাম। যখন লাঙ্কাউয়ি দ্বীপের উপরে পৌছালাম তখন সবাই আকাশ থেকে বাইরের সৌন্দর্য্য দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো, তখন আমি চেষ্টা করেও, পাশে বসা ইয়ং ছেলেটা আর তার হাফপ্যান্ট পরিহিত গার্লফ্রেন্ড/বউয়ের কারণে কিছুই দেখতে পারলাম না। তারা পুরো জানালা জুড়ে ফেভিকলের মতন চিপকে থাকলো। ভদ্রতা করে কিছু বলতেও পারলাম না। বিধিবাম।

লাঙ্কাউয়ি এয়ারপোর্টটা খুবই ছোট্ট একটা এয়ারপোর্ট। আমরা এয়ারপোর্ট থেকে বের হবার আগেই ট্যাক্সি কাউন্টার থেকে আমাদের গন্তব্যের জন্যে কুপন কিনে নিলাম। আমরা উঠেছিলাম ব্যারন রিসোর্টে যেটা পালাউয়ে অবস্থিত। ট্যাক্সি কুপনে খরচ হয়েছিলো ৩৬ রিঙ্গিত। কিছুটা কনফিউজড ছিলাম। কারণ নেটে দেখেছিলাম যে ২৮-৩০ রিঙ্গিত লাগে। কিন্তু পরে বুঝলাম যে, ওটা ট্যাক্সি ক্যাবের (কার) ভাড়া। আর আমাদের চারজনের জন্যে দেয়া হয়েছে ট্যাক্সি ভ্যান বা মাইক্রোবাস। কারণ ক্যাবে চারজনের লাগেজের জায়গা হতো না। ট্যাক্সিতে হোটেল পর্যন্ত যেতে প্রায় ঘন্টা আধা বা তার চেয়ে একটু বেশি সময় লেগেছিলো। লাঙ্কাউয়ির রাস্তাঘাট তেমন চওড়া না হলেও(সবচেয়ে মোটা রাস্তার একেক পাশে দুই লেন) ছবির মতন সুন্দর।


হোটেলে রিসেপশনে গিয়ে যখন আমি ফরমালিটিস সেরে ফেলছিলাম, তখন পিছনে অন্যরা দাঁড়িয়ে মালয় শব্দ টান্ডাস (টয়লেট) আর পিন্টু (গেট) নিয়ে হাসি-তামাসা করছিলো। কারণ সেতু ভাইয়ের এক মামা আছেন যার নাম নাকি পিন্টু। এসব মজার কথা শুনতে শুনতেই দেখি হঠাত এসব কথা বন্ধ, আর ওনারা অন্য কার সাথে জানি কথা বলা শুরু করেছেন। ঘুরে দেখি ওনারা আরও দুইজন মহিলা আর একজন লোকের সাথে কথা বলছেন। আমি ফরমালিটিস শেষ করা মাত্র সেতু ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, “এই তোমাকে আমার যেই মামার কথা বলেছিলাম, উনিও ফ্যামিলীসহ এই হোটেলে উঠেছেন। ” দুনিয়া এতোটা ছোট আগে জানতাম না! যেখানে পিন্টুর ভয়, সেখানেই রাত হয়!

আমাদের রুম ছিলো হোটেলের আরেক বিল্ডীং এ। মেইন বিল্ডিং এ না। হোটেলের এক পাশে সুইমিংপুল, আর তার পাশেই সমুদ্র। সেখানে বসা এবং খাওয়ার জায়গাও রয়েছে। প্রায় সবদিকেই পাহাড় দিয়ে ঘেরা। এক কথায় চারিদিকেই মনোরম দৃশ্যের সমাহার। কিন্ত রুমে ঢুকে টয়লেট দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। টয়লেটে সাবান, শ্যাম্পু কিছুই নাই। শুধুমাত্র লিকুইড হ্যান্ডসোপ মতান্তরে লিকুইড ফ্যানা আছে। সেতু ভাই হতবাক হয়ে বললেন, “এইটা নাকি থ্রিস্টার হোটেল। আরে, আমারেতো সিলেটের কায়কোবাদ হোটেলেও প্রতিদিন লাক্স সাবান দিতো!” আমরা কোনমতে ফ্রেশ হয়ে খেতে বের হলাম। যাওয়ার সময় রিসেপশনে গিয়ে বাথরুমে সাবান আর শ্যাম্পু দেয়ার কথা বলে গেলাম। কিন্তু এরা যে শুদ্ধভাবে ইংরেজী বললে কোনকিছু বোঝেনা তা পরের দুই দিনে সাবান-শ্যাম্পু না আসায় টের পেয়েছিলাম।


  হোটেল ছেড়ে একটু সামনে এগোলেই একটা বিল্ডিং এর নিচে অনেক চেয়ার চোখে পড়লো। লোকজন দেখি তিনটা ভিন্ন দোকান থেকে খাবার কিনে খাচ্ছে। দোকানগুলো অনেকটা আমাদের দেশের চটপটির দোকানের স্টাইলের বা বসুন্ধরা ফুডকোর্টের ছোট ফাস্টফুড দোকানের মতন। দোকানের সামনে বুফের মতন ৭-৮টা ট্রেতে বিভিন্ন আইটেম রাখা। আমরা সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে, “দাম কত রে বা?” কিন্তু যতই জিজ্ঞেস করি কেউই কোন সদুত্তর দেয় না। অবশেষে দোকানের মালিক গোছের একজন চাইনিজ/মালয়/ইন্দোনেশিয়ান লোক হাসিমুখে কিচিরমিচির করে ইংরেজীতে বললো, “হিয়ার উই ইত ফার্শট, দেন পে”। লোকটার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে একটা টেবিলে বসলাম। মুখে মিষ্টি কইরা কইতাসে, কিন্তু হালারপো যদি দাম রাখার সময় গলা কাইটা রাখে? আমাদের অবস্থা দেখে পাশের টেবিল থেকে এক ইয়াং ছেলে স্পষ্ট বাংলায় বললো, “এখানে প্লেটে পছন্দমতন খাবার তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করেন। ওরা পরে আপনার আইটেম দেখে বিল করে দিবে। ভয় পেয়েন না। খুব একটা বেশি বিল আসবেনা। ” ছেলেটাকে ধন্যবাদ দিয়ে আমরা খাবার নেয়ার জন্যে ঝাপিয়ে পড়লাম। আমি নিলাম ভাত, চিকেন কারী, একটা ফ্রাইড চিকেন পিস, কচি বাঁশের সবজি, আর একটা আস্তো মানচুরিয়ান রূপচাঁদা। বিল এসেছিলো মাত্র ৭ রিঙ্গিত বা ১৭৫ টাকা! কিভাবে সম্ভব আমি জানিনা। কারণ কক্সবাজারে একটা রূপচাঁদা দোপেয়াজার দামই ৩০০ টাকা। ভাত আর তরকারীর কথা বাদই দিলাম।


খাওয়াদাওয়া করে এসে একটা জম্পেশ ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙলো সাড়ে সাতটার দিকে। বাইরে তাকিয়ে দেখি যে সবেমাত্র সূর্য্য ডুবেছে। আমরা আবার রাত নয়টার দিকে বাইরে বের হলাম। এখানে রাত আটটা বাজলেই সবকিছু বন্ধ হওয়া শুরু করে দেয়। আমরা হাটতে হাটতে একটা হকার্স মার্কেট জাতীয় এলাকায় গেলাম। সেখানে ফুটপাথের একপাশে ডিজে মিউজিক বাজাচ্ছে, আর আরেকপাশে স্ট্রিট ফুডের সমাহার। আমরা সেখানে সসেজ, মালয় নুডলস, মালয় ভাতের কিউব, সাসলিক, সুইটকর্ন জুস, লেমন জুস খেলাম। এর মধ্যে দেশে এ-এন্ড-ডাব্লিউ আমাদের গলা কেটে ১১০ টাকায় যে রুট বিয়ার খাওয়ায়, সেটাও(হার্ব জুস) খেলাম মাত্র ১ রিঙ্গিত দিয়ে। আমাদের ৭ না ৮ ধরনের হার্ব দিয়ে বানানোর যে চাপাবাজি এ-এন্ড-ডাব্লিউ ওয়ালারা করে তা সত্য নয়। এটা শুধুমাত্র এক ধরনের হার্ব রুট দিয়ে বানায় বলে ওখানকার জুসওয়ালারা আমাদের জানিয়েছিলো। হোটেলে ফিরে এসে সেদিন প্রায় রাত তিনটা পর্যন্ত সমুদ্রের পাড়ে বসে আড্ডা মেরে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। উঠতেই ইচ্ছে করছিলো না। তারপরও পরের দিনের সফরের কথা চিন্তা করে সবাই ঘুমাতে গেলাম।
 ওরিয়েন্টাল ভিলেজ ও তেলাগা হার্বার পার্কঃ
পরের দিন সকালে উঠে সবাই একেবারে রেডী হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে নাস্তা করে নিলাম ভরপেট। এখানে নাস্তাও ঐ একই ভাত জাতীয়। নাস্তা শেষ হলে আমি একটা ট্যাক্সি ঠিক করে ফেললাম। গন্তব্য লাঙ্কাউয়ির সবচেয়ে আকর্ষনীয় ট্যুরিস্ট স্পট ওরিয়েন্টাল ভিলেজ। কিছু ফোরাম ঘেটে থেকে আগেই যাওয়ার রুট আর ভাড়া দেখে রেখেছিলাম। কিন্তু দেড় বছরের পুরানো ফোরামের পোস্টে লেখা ছিলো ২৮-৩০ রিঙ্গিত লাগবে। ক্যাব ড্রাইভার ৪০ রিঙ্গিত দাবী করলো। শেষ পর্যন্ত ৩৪ রিঙ্গিতে রাজি হলো। সকালে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। এরপর আকাশ পুরোপুরি পরিস্কার। তাই বুড়ো ক্যাব ড্রাইভার বারবার বলছিলো, “টুডে ওয়েদার ইজ ভেরী গুড। ইউ ক্যান সি দা সাইত ক্লিয়ারলী।” কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম যে, ক্যাব ড্রাইভার মালয়। লাঙ্কাউয়ির মনমাতানো আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তায় প্রায় ঘন্টাখানেক ড্রাইভ শেষে আমরা গিয়ে পৌছাই ওরিয়েন্টাল ভিলেজে। পথে ক্যাব ড্রাইভার বিভিন্ন জায়গার পরিচয় আমাদের সামনে তুলে ধরে। লোকটা এতটাই ভদ্র ছিলো যে, আমাদেরকে মেইনগেটে নামিয়ে দেয়ার পরে পায়ে হেটে ভিতরে একেবারে কেবল-কার রাইডের টিকেট কাউন্টার পর্যন্ত দিয়ে আসে এবং বারবার বলতে থাকে, “হারি আপ। অর ইট উইল বি ওভার ক্রাওদেদ।”


প্রবেশ পথ


প্রবেশ পথের লং-শট


ভিতরে ভিলেজের একাংশ

ওরিয়েন্টাল ভিলেজের কেবল-কার রাইড মনেহয় পৃথিবীর দীর্ঘতমগুলোর মধ্যে একটা। আমরা টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়ালাম। জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৩০ রিঙ্গিত করে। সাথে পানির বোতল বা খাবার নিতে দেয় না। নিচের স্টেশন থেকে কেবল গুলো অনেক উঁচু খাড়া একটা পাহাড়ে হারিয়ে গিয়েছে। কেবল- কারগুলো স্টেশনে একদিক দিয়ে প্রবেশ করে খুব আস্তে আস্তে অর্ধবৃত্তাকারে যাত্রীদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে। এর মধ্যে আগের যাত্রীরা নেমে যায়, আর পরের যাত্রীরা ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় একজন ফটোগ্রাফার এসে ছবি তোলে, যা পরে আপনি অর্থের বিনিময়ে কিনে নিতে পারবেন। কেবল -কারে চেপে বসার পরে যখন সেটা স্টেশন থেকে বের হয়ে যায়, ঠিক তখন পাশের দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। আমরা আস্তে আস্তে মাটি থেকে উচুতে পাহাড়ের চূড়ার দিকে উঠতে থাকি। নিচে পাহাড়ী জঙ্গলের সবুজ। আরেকটু এগিয়ে গেলে হাতের ডানে একটা ঝর্ণা আর লাঙ্কাউয়ি স্কাইব্রীজ চোখে পড়ে। এই স্কাইব্রীজেই, এগারো মুল্লুকে পুলিশ উল্লুকের মতন যাকে খুঁজে বেড়ায়, সেই ডন আর তার ভিলেইনের মারামারির শেষ সিকোয়েন্স শুটিং হয়েছিলো। স্কাইব্রীজ অবশ্য সংস্কার কাজের জন্যে বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ।


স্টেশনে এই জায়ান্ট চাকতির চারপাশে অর্ধবৃত্তাকারে ঘোরে কারগুলো


কেবল-কার লঞ্চড


ভিলেজ থেকে উপরে উঠে যাচ্ছি


সবুজ আর সবুজ


স্কাইব্রীজ

কেবল-কারে ওঠা মাত্রই ভয়ে আমার স্ত্রীর চিল্লাপাল্লা শুরু হয়ে গেলো। সেই সাথে সেতু ভাইয়েরও। সুমি আপু একদমই অকুতোভয়, আমার মতন। উনি এতোটাই আনন্দিত ছিলেন যে, আলতাফ রাজার মতন সূরেলা(!!) গলায় গান গাওয়া শুরু করলেন। সেতু ভাইয়ের অবস্থা আমার স্ত্রীর চাইতেও খারাপ। কিছুক্ষণ পর পর উনি বলতে থাকলেন, “এই শোনো, আমার না মাথা ঘুরাচ্ছে। এই শোনো, আমার না পা কাপতেসে।” এসব প্রলাপ বকতে বকতেই একবার ছবি তোলার জন্যে উনি উঠে দাঁড়ালেন, তারপর আবার বললেন, “এই আমার না মাথা চক্কর মারতেসে।” তারপর আর বসতে পারছিলেন না। আমি মনে মনে কই, আরে মিয়া পা কাপাকাপি করলে দাড়ানোর দরকার কি ছিলো? যাই হোক, আমরা চেপে ধরে সেতু ভাইকে সিটে বসালাম। এর মধ্যে উপরের স্টেশন চলে এলো এবং খটাশ করে বাড়ি খেয়ে আস্তে আস্তে কেবল-কার স্টেশনে প্রবেশ করলো। আমরা সবাই নেমে পড়লাম। সেতু ভাইতো নেমে ব্যাপক খুশি, “ও রে ভাই, আল্লাহ বাঁচায় দিসে। উইঠা পড়সি।” এসব কথা বলতে বলতেই যখন উনি সামনে দেখলেন, তখন ওনার মুখ পাংশু হয়ে গেলো। কারণ এটা ছিলো একটা ব্রেক-স্টেশন। মেইন স্পট আরও উঁচুতে এবং এখান থেকে আবার কেবল-কারে চেপে মেইন স্পটে যেতে হবে!


ব্রেক-স্টেশন থেকে মেইন স্পটের ভিউ

আমরা সেতু ভাইকে একটু রেস্ট নিয়ে শান্ত হতে বললাম। উনি বলতে থাকলেন, “এই শোনো তোমরা, আমার না মাথা কেমন কেমন করতেসে। আমি হাটতে পারতেসি না।” ওনার এসব প্রলাপের মধ্যেই আমরা এই স্পট থেকে বেশ কিছু ছবি তুললাম। তারপর সেতু ভাইকে ধরে দ্বিতীয় রাইডের জন্যে নিয়ে গেলাম। এবারে আরও উপরে উঠতে থাকলাম। এক পাশের নজরকাড়া সবুজের সাথে যোগ হলো আরেক পাশের মনোমুগ্ধকর সমুদ্রের সবুজাভ-নীল পানি আর দূরের একটা লাইট হাউস। সবকিছু স্ট্র্যাটেজি গেমের ভিউয়ের মতন কত ছোট ছোট দেখাচ্ছিলো। ঐ লাইট হাউসটা দেখে আমরা সবাই পাগল হয়ে গেলাম সেখানে যাওয়ার জন্যে। পরে জেনেছিলাম যে, ঐ লাইট হাউসের জায়গাটার নাম হচ্ছে “তেলাগা হার্বার পার্ক”। এসব দৃশ্য উপভোগ করতে করতেই একেবারে মেইন স্পটে চলে আসলাম। মেইন স্পটে পাহাড়ের চূড়ার উপরে দুই পাশে দুইটা বিশাল গোল অবজারভেশন প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকে নিচের অবিশ্বাস্য সৌন্দর্য্য চমৎকারভাবে উপভোগ করা যায়। অবজারভেশন প্ল্যাটফর্মের নিচতলায় আবার বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস বিক্রী করে একটু বেশি দামে। আমরা সবাই মিলে সেখান থেকে কোণ-আইস্ক্রীম খেলাম। ইচ্ছে করছিলো বাকি দিনটা ওখানে বসে সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতেই কাটিয়ে দেই। কিন্তু তা তো আর সম্ভব ছিলো না। তাই আমরা আবার নামার জন্যে প্রস্তুত হলাম।


মেইন স্পট থেকে ব্রেক-স্টেশনের ভিউ

 
তেলাগা হার্বার পার্ক

নামার সময় শুরুটা একটু বাম্পি। কারণ অপেক্ষাকৃত একটু দ্রুত রেল থেকে কারগুলোকে এনে কেবলে ছেড়ে দেয়া হয়। এ সময় সবার সম্মিলিত আর্তচিৎকারটা বেশ উপভোগ্য ছিলো। নামার সময় সেতু ভাইয়ের “ভাই কারও মনে কোন কষ্ট দিয়ে থাকলে মাফ করে দিও” লাইনটাও ছিলো বেশ। নিচে নামার পরে সেতু ভাই যেন আকাশে উড়ছিলো। এতো সুখী মানুষ আমি কখনও দেখি নাই। আমি একটু আফসোস করে বললাম, “আহারে, স্কাইব্রীজটা খোলা থাকলে ঐটাতেও ওঠা যাইতো।” আমার কথা শুনে সেতু ভাই বললো, “ধুর মিয়া, আল্লায় বাচাইসে যে ঐটা বন্ধ। এতো উপরে ব্রীজ বানানোর দরকারটা কি ছিলো? ” যাই হোক, আমরা একটু রেস্ট নিয়ে ওরিয়েন্টাল ভিলেজের ভিতর ঘুরে বেড়ালাম। এখানে আপনি হাতিতে উঠতে পারবেন, ঘোড়ায় উঠতে পারবেন, এমনকি বাঘের লেজ দিয়ে কানও চুলকাইতে পারবেন। কিন্তু সবগুলোর জন্যেই আপনার পকেট ভর্তি পাত্তি থাকতে হবে। তাই এসব বাদ দিয়ে সেতু ভাই খুঁজে খুঁজে “তেলাগা হার্বার পার্কে” যাওয়ার একটা প্যাকেজ বের করলো। জনপ্রতি ৩৮ রিঙ্গিত করে খরচ। ঘন্টাখানেকের ট্রিপ। চারজনের জন্যে খরচ ১৫২ রিঙ্গিত হলেও, সেতু ভাই দেখলাম টিকিটওয়ালীকে কি কি জানি চাপাবাজি করলো, আর টিকিটওয়ালীও আমাদের ১৩৬ রিঙ্গিতে টিকিট দিতে রাজি
হয়ে গেলো!

 
মৎস্য
ট্যুরের নাম ডাক-ট্যুর। আমরা সবাই একটা অদ্ভুত ধরনের ট্রাক টাইপের গাড়িতে চেপে বসলাম। সেই গাড়িতে চেপে আমরা বনবাদারের মাঝ দিয়ে সমদ্রের ধারে চলে এলাম। তারপর আমাদের তাজ্জব বানিয়ে সেই গাড়িই হুড়মুড় করে পানিতে নেমে পড়লো। আমরা পানিতে বেশ কিছুদুর জায়গা ঘুরে বেড়ালাম। যেদিকে তাকাই সেদিকেই চমৎকার সব দৃশ্য। একদিকে তাকালে দেখা যায় চমৎকার কালচে সবুজ উঁচু পাহাড়, আরেকদিকে চমৎকার পাড় বাধানো ছোট্ট দ্বীপ। থেমে ছিলো বিভিন্ন ধরনের ইয়ট আর ফিশিং বোট, আর এক সময়তো বিখ্যাত লাইট হাইজের একেবারে কাছ দিয়ে নিয়ে গেলো। ডাক-ট্যুর শেষ করে হোটেলে যখন ফিরছিলাম তখন ফ্রুটফার্ম আর বিচের পাশ দিয়ে আসলাম। ফ্রুটফার্মেও নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে ঢুকতে পারবেন, ইচ্ছেমতন ফলও খেতে পারবেন। আর বিচেতো স্কুবাডাইভিং, প্যারা-সেইলিংসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা আছেই। আমরা যখন হোটেলে ফিরলাম তখন প্রায় বিকেল হয়ে গিয়েছে। আমরা খাওয়াদাওয়া সেরে ছুটলাম সুইমিংপুলে। সেখানে ছিলো দুইটা পুল। একটা পুলে আবার উপর থেকে স্লাইড করার জন্যে স্লিপার ছিলো। ব্যাপারটা বেশ আনন্দদায়ক। প্রায় ঘন্টা তিনেক পুলে জলকেলী করে কাটিয়ে দিলাম। এরপর আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো। আর কিছুই করার থাকলো না। সবাই ঘুমালাম। তারপর রাতে খাওয়া-দাওয়ার পরে আবারও সমুদ্রের ধারে বসে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডাবাজি, ফেসবুকিং আর তারপরে ঘুম।
 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন