
বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। চারিদিকে
ঠান্ডা বাতাস। মন মাতাল করা পরিবেশ। বারান্দায় দাড়িয়ে অনেক্ষণ হয়ে গেল।
বাড়ির বাইরে বের হয়ে ঘুরতে চাইছিল মন। এক বন্ধুকে ফোন করে আসতে বললাম।
বন্ধু কিছুক্ষণ পরেই তার গাড়ি নিয়ে হাজির হলো। বন্ধুর ফোন পেয়ে
দোতলা থেকে নিচে নামলাম। টানা কয়েক ঘন্টা বৃষ্টিতে যেন শীত নেমে এসেছে।
তখন সন্ধা হয়েছে প্রায়। সারাদিন সূর্য দেখা যায়নি। অন্ধকার ছিল
চারিদিকে। দূর দুরান্তের আকাশে ছিল কালো মেঘ। বন্ধুর গাড়িতে উঠে বসলাম।
মালয়েশিয়ার পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্য আমাদের।
আমরা
বের হতেই যেন বৃষ্টি অভিমান করে বসলো। বৃষ্টি কমতে শুরু করল। আধ ঘন্টার
মধ্যে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। আকাশ ধারণ করলো তার চির চেনা নীল- রূপ। যাই
হোক আজ ঘুরবো চেনা-অচেনা পথে। কোনো শাসন নেই, বারণ নেই। ঘরে ফেরার বিশেষ
কোনো প্রয়োজন নেই। রাতের পরিবেশ বরাবরই আমার খুব ভাল লাগে। দিনের মত সড়কে
মানুষের ব্যস্ততা নেই। গাড়ি চলাচল কম। কোলাহল নেই। সব মিলিয়ে রাতই ভাল।
পেট্রল পাম্প থেকে গাড়ির টাংকিতে তেল নিয়ে নিলাম। গাড়ির টাংকি ভর্তি তেল
এখন যাওয়া যাবে অনেক দূর।
রফিকুল ইসলাম সাগর
কুয়ালালামপুর,মালয়েশিয়া
ঘড়ির কাটায় ৮টা ২২ মিনিট। কে এল সি সি
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের সামনে দিয়ে আমাদের গাড়ি চলছে। টুইন টাওয়ারটা
আমার চোখে একেক সময় একেক রকম লাগে। এমনিতেও টুইন টাওয়ার দিনের বেলা এক
রকম রাতের বেলা আরেক রকম। আজ টুইন টাওয়ারটা আমার চোখে অন্যরকম লাগছে।
ভুতুরে ভুতুরে মনে হচ্ছে। আসে পাশে মানুষের আনাগোনা কম। অন্যদিনের মত
ব্যস্ত না। টুইন টাওয়ার অতিক্রম করে গাড়ি ছুটে চলছে। গাড়ির গতি খুব বেশি
না। বৃষ্টি ভেজা পথ। এসি বন্ধ করে জানালা খুলে প্রকিতির মুক্ত বাতাস গ্রহণ
করছিলাম। হালকা রকমের সাউন্ড দিয়ে বাংলা গান শুনছিলাম আমরা। আজ অনেকদিন
পর এভাবে বাংলা গান শুনছি। কুয়ালালামপুরের পথে বাংলা গান শুনতে শুনতে
আমাদের ছুটে চলা।
রাত ১০টার একটু আগে মালয়েশিয়ার সব চেয়ে ব্যস্ততম এলাকা বুকিট বিনতাং এলাকায় যাই। হাজার হাজার বিদেশীর পদচারনায় মুখরিত বুকিট বি
নতাং এলাকা। চারিদিকে কোলাহল, প্রতিটি
বারে ও খাবার দোকানে জমজমাট আড্ডা। পোশাকের দোকান, কসমেটিকস ও ভেরাইটিজ
আইটেম প্রতিটি দোকান গুলোতে ক্রেতার ভীর। এখানে এত এত বিদেশীর আগমন এ
যেন ইউরোপের কোনো দেশ। চার-পাচ জন তাদের মধ্যে একজনের পা নেই প্রতিবন্ধী।
তারা গিটার,হারমনি,তবলা ও বাশি বাজিয়ে গানের আসর জমিয়েছে। শত শত দর্শক
ভীর জমিয়েছে সেখানে। দর্শকদের বিনোদন দিতে শিল্পীরা নেচেও দেখাচ্ছে।
দর্শকরা কেউ কেউ তাদের টাকা দিচ্ছে। এই শিল্পীরা মালয়েশিয়ার ভিক্ষুক।
তারা গান গেয়ে বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে ভিক্ষা করে। কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম
সেখানে আহ ! কী চমত্কার বাশি বাজাচ্ছিলো প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক।
রাতে খাবার খেলাম বুকিট বিনতাংয়ের একটি
খাবার দোকানে। মালয়েশিয়ার অতি জনপ্রিয় খাবার নাসি গরেং। সাথে নিয়েছিলাম
উদাং গরেং। চিংড়ি মাছকে মালয়েশিয়ার ভাষায় বলে উদাং। রাত ১২টার সময়
মিড ভেলির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। সেখানে এক বড় ভাই আছে। তার সাথে দেখা
করব। শুধু দেখা না তাকেও আমাদের সাথে গাড়িতে তুলবো। সে আসতে চাইবেনা জানি,
তার পরেও তাকে নিয়ে আসবই এই উদ্দেশ্য নিয়ে গেলাম। বড় ভাই আমাদের সাথে
যোগ দিলে আনন্দের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। মিড ভেলি গি
য়ে তাকে মিথ্যা কথা বললাম ‘ভাই সামনে
একটু কাজ আছে গাড়িতে উঠেন কাজ শেষে আপনাকে নামিয়ে দিবো। সে বুঝতে পেরেছে
তার পরেও সাথে যোগ দিয়েছে। বলল বুঝছি তোদের পাল্লায় পড়ে সকালে আমি অফিসে
যেতে পারমু(পারব) না। ভাইকে পেয়ে আমাদের দল বড় হলো।
তিনজন মিলে রওনা হলাম গম্বাক যাওয়ার
উদ্দেশ্যে। গম্বাকে অনেক পাহাড়। অনেকের মুখে শুনেছি এই পাহাড় গুলোতে
জ্বীনদের বসবাস। রাতের বেলা নাকি জ্বীন চলাচল করে, অনেকেই দেখেছে।
মালয়েশিয়ান অনেক বন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলাম এই সম্পর্কে তারা সবাই একই কথা
বলল হ্যা মালয়েশিয়ায় শুধু গম্বাক না অনেক জায়গায় জ্বীন আছে। বিশ্বাস
করেছিলাম এই কথা কেননা জ্বীন ও মানুষ আল্লাহরই সৃষ্টি। গম্বাক গিয়েছিলাম
জ্বীন দেখতে। সেখানকার পরিবেশ ভুতুরে। আমরা গাড়ি থামিয়ে বসে ছিলাম গম্বাক
রেল স্টেশনের পাশে। মানুষের চলাচল নেই। আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। মাঝে মাঝে
দু
‘একটা মটর সাইকেল,গাড়ি চলাচল করে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু জ্বীনের দেখা নাই। দূর দুরান্তে দৃষ্টি দিয়ে
আবিস্কার করতে চেষ্টা করলাম কোথাও জ্বীন দেখা যায় কিনা। কিন্তু না, এক
পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গেলাম। তবে একটু ভয় পাচ্ছিলাম জ্বীনদের এলাকায়
গিয়েছিলাম কিনা। রাত ২টার পরে আম্পাংয়ের পথে রওনা করলাম। আম্পাং
পয়েন্টের কাছে পুলিশ চেক পোস্ট। সাত-আট জন পুলিশের একজন আমাদের গাড়ি
থামানোর নির্দেশ দিলেন। গাড়ি থেকে নামলাম। একজন পুলিশ বললেন (আই সি)
দেখাও। মালয়েশিয়ায় জাতীয় পরিচয় পত্রকে বলে (আই সি)। আমরা পাসর্পোট
দেখালাম। পুলশি বলল ওহ আপনারা বিদেশী? পাসপোর্ট ঠিক আছে, ভিসা ঠিক
আছে,গাড়ির কাগজ পত্র ঠিক আছে। এবার বলল গাড়ি চালানোর লাইসেন্স কোথায়?
বন্ধুর এবং আমার দুজনের লাইসেন্স আছে কিন্তু মালয়েশিয়ার না বাংলাদেশের।
এখানেই বেধে গেল সমস্যা। পুলিশ বলল থানায় নিয়ে যাবে গাড়ি সামান দিবে।
সামান মানে (মামলা)। মামলা করলে ৩০০ রিঙ্গিত জরিমানা। মালয়েশিয়ার পুলিশ
সম্পর্কে পূর্বে থেকেই খুব ভাল অভিজ্ঞতা আছে। টাকা পাইলে তারা সব ক্ষমা করে
দেয়। সাহস করে বললাম কিছু টাকা দেই ঝামেলা শেষ করেন। পুলিশ প্রথমে একটু
অভিনয় করল। এমন ভাব যে সে এর আগে আর কোনদিন ঘুষ নেয়নি। একটু ভাব নিয়ে
পরে বলল ২০০ রিগিত দিতে হবে। অনেকক্ষণ তর্ক-বিতর্ক হওয়ার পর অবশেষে ৭০
রিঙ্গিত দিয়ে পুলিশদের ম্যানেজ করলাম। পুলিশের কাছে ছাড় পেয়ে ঘরে
ফিরলাম।
রফিকুল ইসলাম সাগর
কুয়ালালামপুর,মালয়েশিয়া
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন