ইদানিং আমাদের প্রিয় টুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসেবে ব্যাংকক খুব জনপ্রিয়
হচ্ছে। মোটামুটি সস্তা প্যাকেজ ট্যুরগুলোর জন্যই তা সম্ভব হচ্ছে। তবে
থাকা-খাওয়া সস্তা হলেও ব্যাংককে কিন্তু ট্যাক্সি ভাড়া অনেক বেশি। এয়ারপোর্ট
থেকে হোটেল বা হোটেল থেকে শপিং মল - মোটামুটি বেশ ভালোই খরচ। সাথে ট্রাফিক
জ্যাম তো আছেই। আরো আছে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের দুই-নাম্বারি। কোথায় যেতে
বললেন, সে পুরো ব্যাংকক ঘুড়িয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে সেখানে। নামার পর দেখলেন
ভাড়া হলো ১০০০ বাথ! এর থেকে ভুলে যান ট্যাক্সি, সবচাইতে সহজ হলো ব্যাংককের
‘বিটিএস’ বা স্কাই ট্রেন। তবে প্রথমবার গেলে বিটিএস-এ কিভাবে উঠবেন বা কোন
স্টেশনে নামবেন তা একটু ঝামেলার মনে হতে পারে। তাই কয়েকটি পপুলার
ডেস্টিনেশনে যাবার জন্য বিটিএস ব্যবহার করার টিপস নিচে থাকলো।

এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল ঃ সুবর্ণভুমি এয়ারপোর্ট থেকে
শহড়ে আসার জন্য এয়ারপোর্টের সবচেয়ে নিচের তালায় নেমে যান। তারপর এক্সপ্রেস
ট্রেনে ‘ফায়া থাই’ স্টেশনের টিকেট কাটুন। এয়ারপোর্ট লিঙ্ক ট্রেনের সবচেয়ে
শেষ স্টেশন এটাই। ‘ফায়া থাই’ স্টেশনে নেমে আপনি স্কাই ওয়াক দিয়ে চলে যান
পাশের ‘সুকুমভিত লাইন’-এর বিটিএস স্টেশনে। সেখান থেকে বিটিএস তে উঠলে আপনি
আপনার হোটেলের কাছাকাছি স্টেশনে নামতে পারবেন। সাধারণত বাংলাদেশি ট্যুর
অপারেটররা সব হোটেল সুকুমভিত সোই-১১ তে হোটলে বুক করে, তাই আপনাদের হোটেলের
সবচেয়ে কাছাকাছি স্টেশন হবে ‘নানা’। পুরো জার্নি এমআরটি তে করতে আপনার সময়
লাগবে ৪০ মিনিট এবং ১০০ বাথের কম, যা ট্যাক্সি ভাড়া থেকে প্রায় ৫ গুন কম!
শপিং ঃ ধরি আপনি সুকুমভিতে আছেন। তাহলে আপনার কাছাকাছি
স্টেশনগুলো হবে ‘নানা’ অথবা ‘অশোক’। ব্যাংককের সবচেয়ে জনপ্রিয় শপিং মল মনে
হয় ‘এম বি কে’। ‘এমবিকে’ যেতে হলে আপনি ‘নানা’ থেকে টিকেট কাটুন ‘ন্যাশনাল
স্টেডিয়াম’ স্টেশনের। [মনে রাখবেন ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের যাবার সময় আপনাকে
‘সিয়াম’ স্টেশনে নেমে ট্রেন বদলাতে হবে]। আরো একটি শপিং প্লেস হলো ‘সিয়াম
প্যারাগন’। সেখানে যেতে হলে নেমে যান ‘সিয়াম’ স্টেশনে। একসাথে ৪/৫ বড়বড়
শপিং মল পাবেন আপনি ‘সিয়াম’ স্টেশনের আশেপাশে। ‘টার্মিনাল ২১’ আরেকটি
চমৎকার শপিং মল যেখানকার প্রতিটি ফ্লোর এক একটি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে।
এখানে যেতে হলে আপনাকে নামতে হবে ‘আশোক’ স্টেশনে। ‘সেন্টার ওয়ার্ল্ড’,
‘প্লাটিনাম’, ‘বিগ সি’ কিংবা ইলেকট্রনিক মার্কেট ‘পান্তিপ’ যাবার জন্য নেমে
যান ‘চিদ লোম’ স্টেশনে। সেখানে একটি চমৎকার স্কাই ওয়াক রয়েছে পুরো রাস্তার
ওপর দিয়ে। স্কাই ওয়াক দিয়ে একটু হাটলে আপনি সরাসরি নেমে যেতে পারবেন
‘সেন্টার ওয়ার্ল্ডে’। সেখান থেকে হাটা পথেই রয়েছে বাকি মার্কেট গুলো।
ব্যাংকের অন্যতম বিখ্যাত আরেকটি মার্কেট হলো ‘চাতু চাট উইকএন্ড’ মার্কেট যা
শুধুমাত্র শনি-রবিবার খোলা থাকে। সেখানে যাবার জন্য আপনাকে নামতে হবে ‘মো
চিত’ স্টেশনে।
সিনেমাঃ সবার পছন্দের সিনেমা হল হলো সিয়াম প্যারাগনের
‘আই ম্যাক্স’ যেখানে ফোর ডি সিনেমা দেখা যায়। সিয়াম প্যারগন মার্কেটের
উপরেই আছে এই সিনেমা হল। উপরে যতগুলো শপিং মলের কথা বলা হয়েছে তার প্রায়
প্রতিটিতেই রয়েছে মাল্টিপ্লেক্স। তবে ব্যাংককে হিন্দী সিনেমা দেখতে চাইলে
আপনাকে যেতে হবে ‘মেজর সিনেপ্লেক্স সুকুমভিত’-এ, একমাত্র এই হলটিতেই কোন না
কোন হিন্দী সিনেমা চলে। এর জন্য আপনাকে যেহে হবে ‘এক্কামাই’ স্টেশনে।
ব্যাংককে ঘোরাঘুরি করার জন্য বিটিএস সবচেয়ে সস্তা এবং সময় সাশ্রয়ী
সমাধান। ব্যাংককের এমাথা-ওমাথা আপনি ঘুরে বেড়াতে পারবেন চোখের পলকে। আমি
একটা উদাহরণ দেই। একবার আমরা শপিং করছি সেন্টার ওয়ার্ল্ডে, বাইরে ঝুম
বৃষ্টি। ঘড়িতে বাজে ৭ টা আর মেজর সিনেপ্লেক্সে ৭.২০-এ আমাদের সিনেমার
টিকেট কাটা। ট্যাক্সি ওয়ালাকে যাবার কথা বললে সে চাইরো ৩০০ বাথ আর রাস্তার
জ্যাম দেখে বুঝলাল যে যেতে যেতে সিনেমা শেষই হয়ে যাবে! আমরা স্কাই ওয়াকদিয়ে
চলে গেলাম চিদ লোম স্টেশনে আর সেখান থেকে টিকেট কেটে এক্কামাই। পুরো সময়
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু ওদের মার্কেট-স্কাই ওয়াক-স্টেশন সব একটার সাথে
একটা এমনভাবে জোড়া দেয় যে আপনাকে রাস্তায় নামতে হচ্ছেনা আর বৃষ্টিতেও ভিজতে
হচ্ছে না। আমরা প্রায় ২ ঘন্টা আর ৩০০ বাথের ট্যাক্সি রাইড না নিয়ে স্কাই
ট্রেন দিয়ে মাত্র ১৫ মিনিট পর নিজেদের আবিস্কার করলাম সিনেমা হলের ভেতর!
খরচ হলো ৮০ বাথ!
কয়েকটা ছোট ছোট টিপসঃ
কয়েকটা ছোট ছোট টিপসঃ
১. চেষ্টা করবেন পকেটে ভাংতি পয়সা রাখতে, তাহলে স্টেশনে উঠে আপনি
ডিরেক্ট অটোমেটিক টিকেট মেশিন থেকে টিকেট কাটতে পারবেন, লাইনে দাড়িয়ে ভাংতি
পয়সা নেবার দরকার নাই।
২. ট্রেনে ওঠার সময় ভালো মতো খেয়াল করুন শেষ স্টেশনের নামটি । কারণ ভুল ট্রেনে উঠলে আপনাকে উল্টো দিকে যেতে হতে পারে!
৩. ট্রেনে উঠেই বুঝে নিন যে আপনার স্টেশন আসতে আর কত দেরি আছে। কাছাকাছি আসলে তাড়াতাড়ি দরজার কাছে চলে যান। অনেক সময় ট্রেনে এত ভীর থাকে যে উঠতে-নামতে সমস্যা হয়ে যায়।
কোথাও ঘুরতে গেলে আসলে লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের বিকল্প নেই। এতে সময় ও পয়সা দুই ই বাচে, এবং সে দেশের মানুষদের জীবনযাত্রা দেখা যায় খুব কাছ থেকে।
হ্যাপি ট্রাভেলিং।
২. ট্রেনে ওঠার সময় ভালো মতো খেয়াল করুন শেষ স্টেশনের নামটি । কারণ ভুল ট্রেনে উঠলে আপনাকে উল্টো দিকে যেতে হতে পারে!
৩. ট্রেনে উঠেই বুঝে নিন যে আপনার স্টেশন আসতে আর কত দেরি আছে। কাছাকাছি আসলে তাড়াতাড়ি দরজার কাছে চলে যান। অনেক সময় ট্রেনে এত ভীর থাকে যে উঠতে-নামতে সমস্যা হয়ে যায়।
কোথাও ঘুরতে গেলে আসলে লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের বিকল্প নেই। এতে সময় ও পয়সা দুই ই বাচে, এবং সে দেশের মানুষদের জীবনযাত্রা দেখা যায় খুব কাছ থেকে।
হ্যাপি ট্রাভেলিং।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন