চীন একটি জাতিবহুল দেশ যার আয়তন বিশাল।বিভিন্ন জায়গার শহরের গঠন
স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।উত্তরচীনে আছে চীনের রাজধানি পেইচিং; পূর্ব চীনে আছে
চীনের অর্থনৈতিক কেন্দ্র---সাংহাই; পশ্চিমাঞ্চলে সুষ্পস্ট জাতির
বৈশিষ্টসম্পন্ন লাসা; দক্ষিণাংশে আছে চার ঋতুতে বসন্ত কালের মতো খুয়েনমিন
ইত্যাদি।সুন্দর আর জনব্যস্তশহর চীনের ৯৬ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের ভুমিতে এক
একটি উজ্জ্বলমণির মতো বিস্তারিত হয়।
বর্তমানে চীনে মোট ১৩৭টি শহর নিখিল চীনের শ্রেষ্ঠ পর্যটন শহরের উপাধিতে ভুষিত হয়েছে।এগুলোর মধ্যে, সাংহাই শহর, পেইচিং শহর, থিয়েনচিন শহর, ছোংছিং শহর, সেনজেন শহর, হাংযৌ শহর, তালিয়েন শহর, নানজিং শহর, শিয়ামেন শহর, গুয়াংযৌ শহর, ছেংতু শহর, শেনইয়াং শহর, ছিংডাও শহর, নিংপো শহর, সিআন শহর, হারবিন শহর, জিনান শহর, ছাংছুন শহর, লাসা শহর প্রভৃতি।তা ছাড়া, হারবিন শহর, জিলিন শহর, চেংচৌ শহর, চাছিং শহর, লিওযৌ শহর , ছিনতাও শহর প্রভৃতি দশাধিক শহর চীনের ঐতিহাসিক আর সাংস্কৃতিক শহর নির্বাচিত হয়েছে।
পেইচিং
পেইচিং চীনের রাজধানী
এবং চীনের রাজনীতি ও সংস্কৃতিরকেন্দ্র।উত্তরচীনের সমলতভূমিতে অবস্থিত
রাজধানী পেইচিং। ভৌগলিক দিকে থেকে, পেইচিং, আর ইতালির রোম, স্পেনের
মাদ্রিদএকই অক্ষাংশে অবস্থিত।মৌসুমী বায়ুর প্রভাবাধীন বলে শীতকাল আর
শ্রীষ্মকাল অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ, বসন্ত আর শরত ঋতুর সময় নাতিদীর্ঘ আর
শুকনো।বছরে গড়পড়তা তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৮ সেন্টিগ্রেড।
পেইচিংএর ইতিহাস সুদীর্ঘকালের।৩০০ হাজার বছর আগে পেইচিং শহরের গোড়া পত্তন হয়।বসন্ত ও শরত যুগ আর যুদ্ধমান রাজ্যসমূহের যুগে (খৃষ্টপুর্ব ৭৭০ থেকে ২২১ খৃষ্টাব্দ) , পেইচিং অঞ্চল কয়েকটি রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়।ছিন, হ্যান আর তিন রাজ্য সময়পূর্বেপেইচিং শহর চীনের উত্তরাংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল। পেইচিং একটি রাজধানী হিসেবে শুরু হয় ছিন রাজবংশের আমলে ।এর পর পেইচিং ইউয়ান, মিং আর ছিং রাজবংশের রাজধানী ছিল।মোট ৩৪টি রাজা এখান থেকে সারা চীনের প্রশাসন চালাতেন।
নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, বিশেষভাবে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ততা চালু হওয়ার বিশাধিক বছরে পেইচিংএর চেহারা দিন দিন বদলে গেছে এবং যাচ্ছে।নানা ধরনের আধুনিক অট্রালিকানির্মান করা হয়েছে।বৈদেশিক নীতি অনবরত সম্প্রসারিত হয়েছে।বর্তমানে পেইচিং বড় ধাপে আন্তর্জাতিক শহরগুলোর সারিতে প্রবেশ করছে।এখানে প্রাচীন সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আর আধুনিক রীতির সুন্দর সমন্বয় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষন করে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেইচিং প্রত্যেক বছরে লক্ষাধিক বিদেশী আর কোটি কোটি অভ্যন্তরীণ পর্যটককে স্বাগত জানায়।
সুদীর্ঘ ইতিহাস পেইচিংএর জন্য অজস্র সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার আর পুরাকীর্তি এবং বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক আকর্ষন রেখে দিয়েছে।যদি আপনি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও পুরাকীর্তি পছন্দ করেন, তাহলে আপনি সুমহান মহা- প্রাচীর আরোহন করতে পারেন , বিরাটাকারের নিষিদ্ধ নগরী বা রাজপ্রাসাদ যাদুঘর, গ্রীষ্মকালীণ রাজ প্রাসাদ, পোইহাই হৃদ, শিয়াংসান বা সুগন্ধী পাহাড়, স্বর্গণীয়মন্দির প্রভৃতি উদ্যান পরিদর্শন করতে পারেন।যেখানে সুন্দর ,সুচারু আর সুমহান স্থাপত্যগুলো দেখা যায় সেখানে গেলে দেখার শেষ নেই।যদি আপনি চীনের প্রাচীন সংস্কৃতি আর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাহিনী জানতে চান তাহলে আপনি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির বসতি পরিদর্শন করতে পারেন এবং পেইচিং অপেরা শুনতে পারেন।যদি আপনি চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি , সামরিক বিষয়াদি প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রের উন্নতির হালচাল জানতে চান তাহলে আপনি পেইচিংএর শতাধিক যাদুঘর যেতে পারেন।আপনি যদি প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে যান তাহলে পেইচিংএর উপকন্ঠের সুন্দর পাহাড় আর নদ-নদী আপনার কৌতুহল মেটাবে।
বর্তমানে চীনের ৪টি “ক” শ্রেণির দর্শনীয়স্থান পেইচিংএ অবস্থিত।এগুলো হলো: স্বর্গণীয়মন্দির, মিং রাজাদের সমাধিস্থান , গ্রীষ্মকালীণ রাজ প্রাসাদ, পেইচিং সমুদ্রিক প্রাণীর যাদুঘর, বাতালিং মহাপ্রাচীর, পোহাই-চিংসান পার্ক, চীনা জাতির উদ্যান, চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবন, পেইচিং চিরিয়াখানা , পেইচিং উদ্ভিদ জীববিজ্ঞানউদ্যান ইত্যদি।
সিআন
চীনের উত্তর-পশ্চিমাংশে
অবস্থিত সিআন হলো চীনের শানসি প্রদেশের রাজধানী।সিআনকে চীনের উত্তর-পশ্চিম
অঞ্চল আর চীনে অভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলোর মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি আর
পরিবহনের কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়।
চীনের ছ’টি রাজবংশের রাজধানীর (সিআন, লোইয়াং, নানচিং কাইফেং, হাংযৌ, পেইচিং) মধ্যে সিআন শহরের ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ। বাকি পাঁচটি রাজবংশের রাজধানীর তুলনায় সিআন রাজধানী হিসেবে থাকার সময়ও সবচেয়ে দীর্ঘ। সিআনের খ্যাতি চীনের অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে পৃথক।আধুনিক ইতিহাসবিদের ধারণা অনুসারে ,চীনের ইতিহাসে সিআন দশটি রাজবংশের রাজধানী ছিল।এ দশটি রাজবংশ হলো: পশ্চিম চৌ , চিন, পশ্চিম হ্যান, পূর্ব চাও, পূর্ব ছিন, পরবর্তী ছিন, পশ্চিম উয়ে, উত্তর চৌ , সুই আর থাং।সুতরাং সহস্র বছরের প্রাচীন রাজধানী সিআন চীনের ইতিহাসে সুদুর প্রভাব বিস্তার করেছে। চীনের অন্যান্য শহর তার সংগে কোনো তুলনা করা যায় না ।
বিশ্বের চারটি প্রাচীন রাজবংশের রাজধানী হিসেবে সিআন একটি প্রসিদ্ধ দর্শনীয়স্থান।বিশ্বের অষ্টম বড় বিস্ময় বলে খ্যাত ছিন শিহুয়াং-এর সৈনিক ও ঘোড়ার মুর্তির যাদুঘর সিআন শহরের লিঠং বিভাগে অবস্থিত। এই যাদুঘরে মোট ৬০০০টিরও বেশী মূর্তি আছে। এ সব মূর্তি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে মহান আবিস্কার হিসেবে গণ্য করা হয়।তা ছাড়া, সিআনে আরো আছে তাইয়ান প্যাগোডা, হুওছিন পুকুর, হুওয়াসেন পবর্ত প্রভৃতি দশর্নীয় স্থান (ছবি হলো ছিন রাজবংশের সৈনিক ও ঘোড়ার মূর্তির যাদুঘর) লাসা
লাসা চীনের তিব্বত
স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী।তার মোট আয়তন ২৯০৫২ বর্গ কিলোমিটার। হিমালয়ে
পবর্তের উত্তর দিকে অবস্থিত এই শহরে বছরে বেশির সময় আকাশে মেঘমুক্ত ,
বৃষ্টিপাত কম। শীতকালে তেমন ঠান্ডা নেই , গ্রীষ্মকালও তেমন গরম নয়। বছরে
গড়পড়তা তাপমাত্রা ৭.৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রিড। জুলাই, অগাষ্ট আর সেপ্টেম্বর
মাসে বেশি বৃষ্টপাত হয় ।বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০০ মিলিমিটারের
কাছাকাছি। বছরে দিনের আলোর স্থায়িত্বকাল ৩০০০ ঘন্টারও বেশী। তাই লাসাকে
রৌদের শহর ডাকা হয়। লাসার বায়ু সাতজ, রৌদ্রোজ্জ্বল, দিন বেলায় উষ্ণ আবার
রাত্রীবেলায়ায় হিমেল।গ্রীষ্মকালে লাসা একটি অবসর কাটানোর মনোরম জায়গা।
লাসা “পৃথিবীর ছাদ ” নামক ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত। গড়-উচ্চতা সমুদ্র-সমতলের তুলনায় ৩৬০০ মিটারেরও বেশী।সেখানে বায়ুর চাপ এবং ঘনত্ব কম। অভ্যন্তরীণ ভূভাগের চাইতে বায়ুতে অক্সিজেনের অনুপাত গড়পড়তা শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কম। প্রথমে মালভূমিতে আসলে মাথায় ব্যাথা , নিশ্বাসে কষ্টের অনুভূতি হয়।কিন্তু লাসা পৌছানোর দিন পর একটু বিশ্রাম নিলে এ সব লক্ষণ কমে যায় বা অদৃশ্য হয়ে যায় । এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিব্বতে ভ্রমনের সবচেয়ে ভালো সময়।
তিব্বতী ভাষায় লাসার অর্থ হলো দেবতার অধিষ্ঠানের পবিত্র স্থান। লাসা শহরের ইতাহাস সুদীর্ঘকালের ।সেখানে ধর্মনীয় সংস্কৃতির পরিবেশ ঘণ। শহরের প্রধান দর্শনীয়স্থান হলো: ডাওচাও মন্দির, বাখু সড়ক, বুদালা প্রাসাদ ইত্যাদি(ছবি হলো দূর থেকে চোখে পড়া বুদালা প্রাসাদ)
চীনের আর্কষনীয় ছোট নগর
চীনের শহরগুলোর ইতিহাস সুদীর্ঘকালের।বিশেষ করে যে সব শহরের ইতিহাস শতাধিক বছরের এবং যে সব শহর ভালভাবে সংরক্ষিত হয়েছে সে সব শহরের অত্যন্ত আকর্ষণ আছে।যেমন ইয়ুন্নান প্রদেশের লিচিয়াং নদী বিশ্ব সংস্কৃতি উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত হয়েছে। ছোট ছোট শহরের ইতিহাস আর সংস্কৃতি, ছোট ছোট শহরের প্রাচীনকাল ও বর্তমান বহু পর্যটকের অনুসন্ধানের স্থানে পরিণত হয়েছে।সুতরাং চৌওজুয়াং, প্রাচীন ফিনিক্স নগর, ইয়াংসু, উজেন, নানশিয়েন আর ডালি প্রভৃতি ছোট শহরগুলো দেশী-বিদেশী পযর্টকদের নয়নগোচর হয়েছে।
চৌওজুয়াং
চৌওজুয়াং ছোট নগর চীনের পুর্বাংশের চিয়াংসু প্রদেশে অবস্থিত, প্রাচীন সুচৌ শহর থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূর ।চীনের প্রাচীনকালের রবিখ্যাত চিত্রকর মিষ্টার উ গুয়েনজং তাঁর একটি প্রবন্ধে লিখেছেন , “ হুয়ানসেন পাহাড়ে চীনের পবর্তমালার সৌন্দর্যের সমাবেশ , চৌওজুয়াং নগরে চীনের নদনদীর সৌন্দর্যের সমাবেশ। বিদেশের পত্রপত্রিকাগুলোতে চীনের চৌওজুয়াং নগরকে “চীনের প্রথম জলাঞ্চল” বলে আখ্যায়িত হয় ।
চৌওজুয়াং নগরের চার
দিকে বেস্টন করে আছে : দিন হ্রদ,বাইজিয়েন হ্রদ, দিনসেন হ্রদ, নান হ্রদ ও
৩০টি ছোট-বড় নদনদী। গোটা নগরের বাড়ীঘর সবই নদীর তীরে নির্মিত হয়।এ সব
প্রাচীন শৈলীর স্থাপত্য শান্ত আর পরিছন্ন পবিবেশ প্রকাশ পায়।গোটা নগরে ৬০
শতাংশের আবাস মিং আর ছিং রাজবংশ আমলের স্থাপত্য। কেবল ০.৪ বর্গকিলোমিটারের
আয়তন আধিকারী এই প্রাচীন নগরে প্রায় শতাধিক প্রাচীন শৈলীর আবাস আর ষাটটিরও
বেশী ইটের ভাস্কর্য গেট-টাওয়ার রয়েছে ।এর সঙ্গে সঙ্গে চৌওজুয়াং নগরে ১৪টি
স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাচীন সেতু সংরক্ষিত আছে।এ সব সেতুতে দক্ষিণ চীনের
বৈশিষ্টমূলক “ছোট সেতু, নদীতে পানি প্রবাহিত এবং নদীর তীরে আবাস” এই
অদ্বিতীয় রীতিনীতি প্রতিফলিত হয়।চৌওজুয়াং নগরের পরিবেশ শান্ত আর পরিচ্ছন্ন।
চৌওজুয়াং একটি পড়াশুনার সন্তোষজনক জায়গা এবং ওখানে লোকেরা পড়াশুনার দিকে
বেশী মনোযোগ দেন।চীনের মিং আর ছিং রাজবংশ আমলে প্রাসাদের আয়োজিত পরীক্ষায়
চৌওজুয়াং নগরে ২০ জনের বেশী লোক উত্তীর্ণ হয়ে প্রাসাদের কর্মকর্তা হন। এক
সময় অনেক পন্ডিত আর শিল্পী সাহিত্য আর শিল্পর্কমের পদ্ধতিতে এই ছোট নগরের
ইতিহাসের শোভা যুগিয়েছেন।পশ্চিম চিন রাজবংশ আমলের সাহিত্যিক জেন ইয়ু , লিও
ইয়ু শি , লু গুয়েমেন প্রমুখ চৌওজুয়াং নগরে বসবাস করতেন ।
চৌওজুয়াং নগরের প্রধান প্রধান দর্শনীয়স্থান হলো: ছিয়েনফু মন্দির, দেনশিই ডাওয়ুন, সেনঠান, ফুআন সেতু, মিলো ইত্যাদি।
সুচৌ আর সাংহাই শহরের মাঝখানে অবস্থতি বলে চৌওজুয়াং পৌছতে চলাফেরা অত্যন্ত সুবিধাজনক। সাংহাই বা সুচৌ থেকে সুরাসুরি গাড়ীতে চৌওজুয়াং যাতায়াতা করা যায়।সাংহাইয়ের খুব কাছাকাছি বলে পর্যটকরা এক দিনের মধ্যে চৌওজুয়াং এবং সাংহাইয়ের মধ্যে আসা-যাওয়া করেন।সুতরাং, চৌওজুয়াংএ কাতারসন্পন্ন হোটেল বেশী নেই।অধিকাংশ হোটেল হলো স্থানীয় অধিবাসীদের চালানো হোটেল। যদিও ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নয়, তবুও পরিবেশ মন্দ নয়।
প্রাচীন ফিনিক্স নগর
ফিনিক্স নগর চীনের হুনান প্রদেশের পশ্চিমাংশের থু জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে অবস্থিত।নিউজিল্যাণ্ডের লেখক এক সময় প্রাচীন ফিনিক্স নগরকে “চীনের সবচেয়ে সুন্দর ছোট নগরগুলোর অন্যতম” হিসেবে গণ্য করতেন।চীনের ছিং রাজবংশের রাজা খাংশির শাসনকালে প্রতিষ্ঠিত এই নগর এত ছোট যাতে কেবলমাত্র একটি বড় সড়ক আছে।কিন্তু এই সড়ক হলো একটি সবুজ করিডর ।ফিনিক্স নগর হুনান প্রদেশের পশ্চিমাংশের একটি উজ্জ্বল মণি বলে আখ্যায়িত।
প্রাচীন ফিনিক্স নগর
নতুন আর পুরানো দুটো অঞ্চলে ভাগ করা হয়।পুরানো নগর পাহাড়ের তলদেশে এবং
পানির পাশে অবস্থিত।ডোচিয়াংয়ের স্বচ্ছ পানি নগর ছুঁয়ে বয়ে প্রবাহিত হয়।লাল
রংয়ের ইটের তৈরী নগরের দেওয়াল নদীর তীরে বসানো হয় ।নানহুয়া পাহাড়ও
পুরাতন নগরের দেওয়ালের টাওয়ার সামনা-সামনি।ছিং রাজবংশ আমলে এই টাওয়ার
প্রতিষ্ঠিত হয়।নগরের উত্তর দ্বারের বাইরে একটি নদীর উপর একটি সরু কাঠের
সেতু আছে । এই সেতুর স্তম্ভ হলো পাথর। দুজন লোক মুখোমুখি পার হলে দেহ এক
পাশে ঘুরতে হয়।অতীতে এটি ছিল নগর থেকে বহির্গমনের এক মাত্র পথ।
চীনের আধুনিক যুগের বিখ্যাত লেখক সেন ছন ভেনের জন্মস্থান বলে ফিনিক্স নগরের সুনাম অর্জিত হয়।প্রাচীন নগরের জনইন সড়কের প্রস্তরফলক গলির প্রান্তে অবস্থিত সেন ছন ভেনের সাবেক বাসস্থান।তার এই সাবেক বাসস্থান দেখতে ঠিক পেইচিংয়ের চক মেলানো বাড়ীর মতো।গোটা বাসস্থান ইট আর কাঠের কাঠামো।কালো ছাদ আর সাদা দেওয়াল, কাঠে খোদাই-করা জানালায় ঘনঘন সাংস্কৃতিক পরিবেশ প্রকাশ পায়।ফিনিক্স নগরে গেলে আপনি প্রথমে বিমান যোগে হুনান প্রদেশের চিশিও শহর পৌছাবেন, তারপর আবার গাড়ী পরিবর্তন করতে হবে।
SOURCE LINK
বর্তমানে চীনে মোট ১৩৭টি শহর নিখিল চীনের শ্রেষ্ঠ পর্যটন শহরের উপাধিতে ভুষিত হয়েছে।এগুলোর মধ্যে, সাংহাই শহর, পেইচিং শহর, থিয়েনচিন শহর, ছোংছিং শহর, সেনজেন শহর, হাংযৌ শহর, তালিয়েন শহর, নানজিং শহর, শিয়ামেন শহর, গুয়াংযৌ শহর, ছেংতু শহর, শেনইয়াং শহর, ছিংডাও শহর, নিংপো শহর, সিআন শহর, হারবিন শহর, জিনান শহর, ছাংছুন শহর, লাসা শহর প্রভৃতি।তা ছাড়া, হারবিন শহর, জিলিন শহর, চেংচৌ শহর, চাছিং শহর, লিওযৌ শহর , ছিনতাও শহর প্রভৃতি দশাধিক শহর চীনের ঐতিহাসিক আর সাংস্কৃতিক শহর নির্বাচিত হয়েছে।
পেইচিং

পেইচিংএর ইতিহাস সুদীর্ঘকালের।৩০০ হাজার বছর আগে পেইচিং শহরের গোড়া পত্তন হয়।বসন্ত ও শরত যুগ আর যুদ্ধমান রাজ্যসমূহের যুগে (খৃষ্টপুর্ব ৭৭০ থেকে ২২১ খৃষ্টাব্দ) , পেইচিং অঞ্চল কয়েকটি রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়।ছিন, হ্যান আর তিন রাজ্য সময়পূর্বেপেইচিং শহর চীনের উত্তরাংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল। পেইচিং একটি রাজধানী হিসেবে শুরু হয় ছিন রাজবংশের আমলে ।এর পর পেইচিং ইউয়ান, মিং আর ছিং রাজবংশের রাজধানী ছিল।মোট ৩৪টি রাজা এখান থেকে সারা চীনের প্রশাসন চালাতেন।
নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, বিশেষভাবে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ততা চালু হওয়ার বিশাধিক বছরে পেইচিংএর চেহারা দিন দিন বদলে গেছে এবং যাচ্ছে।নানা ধরনের আধুনিক অট্রালিকানির্মান করা হয়েছে।বৈদেশিক নীতি অনবরত সম্প্রসারিত হয়েছে।বর্তমানে পেইচিং বড় ধাপে আন্তর্জাতিক শহরগুলোর সারিতে প্রবেশ করছে।এখানে প্রাচীন সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আর আধুনিক রীতির সুন্দর সমন্বয় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষন করে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেইচিং প্রত্যেক বছরে লক্ষাধিক বিদেশী আর কোটি কোটি অভ্যন্তরীণ পর্যটককে স্বাগত জানায়।
সুদীর্ঘ ইতিহাস পেইচিংএর জন্য অজস্র সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার আর পুরাকীর্তি এবং বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক আকর্ষন রেখে দিয়েছে।যদি আপনি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও পুরাকীর্তি পছন্দ করেন, তাহলে আপনি সুমহান মহা- প্রাচীর আরোহন করতে পারেন , বিরাটাকারের নিষিদ্ধ নগরী বা রাজপ্রাসাদ যাদুঘর, গ্রীষ্মকালীণ রাজ প্রাসাদ, পোইহাই হৃদ, শিয়াংসান বা সুগন্ধী পাহাড়, স্বর্গণীয়মন্দির প্রভৃতি উদ্যান পরিদর্শন করতে পারেন।যেখানে সুন্দর ,সুচারু আর সুমহান স্থাপত্যগুলো দেখা যায় সেখানে গেলে দেখার শেষ নেই।যদি আপনি চীনের প্রাচীন সংস্কৃতি আর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাহিনী জানতে চান তাহলে আপনি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির বসতি পরিদর্শন করতে পারেন এবং পেইচিং অপেরা শুনতে পারেন।যদি আপনি চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি , সামরিক বিষয়াদি প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রের উন্নতির হালচাল জানতে চান তাহলে আপনি পেইচিংএর শতাধিক যাদুঘর যেতে পারেন।আপনি যদি প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে যান তাহলে পেইচিংএর উপকন্ঠের সুন্দর পাহাড় আর নদ-নদী আপনার কৌতুহল মেটাবে।
বর্তমানে চীনের ৪টি “ক” শ্রেণির দর্শনীয়স্থান পেইচিংএ অবস্থিত।এগুলো হলো: স্বর্গণীয়মন্দির, মিং রাজাদের সমাধিস্থান , গ্রীষ্মকালীণ রাজ প্রাসাদ, পেইচিং সমুদ্রিক প্রাণীর যাদুঘর, বাতালিং মহাপ্রাচীর, পোহাই-চিংসান পার্ক, চীনা জাতির উদ্যান, চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবন, পেইচিং চিরিয়াখানা , পেইচিং উদ্ভিদ জীববিজ্ঞানউদ্যান ইত্যদি।
সিআন

চীনের ছ’টি রাজবংশের রাজধানীর (সিআন, লোইয়াং, নানচিং কাইফেং, হাংযৌ, পেইচিং) মধ্যে সিআন শহরের ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ। বাকি পাঁচটি রাজবংশের রাজধানীর তুলনায় সিআন রাজধানী হিসেবে থাকার সময়ও সবচেয়ে দীর্ঘ। সিআনের খ্যাতি চীনের অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে পৃথক।আধুনিক ইতিহাসবিদের ধারণা অনুসারে ,চীনের ইতিহাসে সিআন দশটি রাজবংশের রাজধানী ছিল।এ দশটি রাজবংশ হলো: পশ্চিম চৌ , চিন, পশ্চিম হ্যান, পূর্ব চাও, পূর্ব ছিন, পরবর্তী ছিন, পশ্চিম উয়ে, উত্তর চৌ , সুই আর থাং।সুতরাং সহস্র বছরের প্রাচীন রাজধানী সিআন চীনের ইতিহাসে সুদুর প্রভাব বিস্তার করেছে। চীনের অন্যান্য শহর তার সংগে কোনো তুলনা করা যায় না ।
বিশ্বের চারটি প্রাচীন রাজবংশের রাজধানী হিসেবে সিআন একটি প্রসিদ্ধ দর্শনীয়স্থান।বিশ্বের অষ্টম বড় বিস্ময় বলে খ্যাত ছিন শিহুয়াং-এর সৈনিক ও ঘোড়ার মুর্তির যাদুঘর সিআন শহরের লিঠং বিভাগে অবস্থিত। এই যাদুঘরে মোট ৬০০০টিরও বেশী মূর্তি আছে। এ সব মূর্তি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে মহান আবিস্কার হিসেবে গণ্য করা হয়।তা ছাড়া, সিআনে আরো আছে তাইয়ান প্যাগোডা, হুওছিন পুকুর, হুওয়াসেন পবর্ত প্রভৃতি দশর্নীয় স্থান (ছবি হলো ছিন রাজবংশের সৈনিক ও ঘোড়ার মূর্তির যাদুঘর) লাসা

লাসা “পৃথিবীর ছাদ ” নামক ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত। গড়-উচ্চতা সমুদ্র-সমতলের তুলনায় ৩৬০০ মিটারেরও বেশী।সেখানে বায়ুর চাপ এবং ঘনত্ব কম। অভ্যন্তরীণ ভূভাগের চাইতে বায়ুতে অক্সিজেনের অনুপাত গড়পড়তা শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কম। প্রথমে মালভূমিতে আসলে মাথায় ব্যাথা , নিশ্বাসে কষ্টের অনুভূতি হয়।কিন্তু লাসা পৌছানোর দিন পর একটু বিশ্রাম নিলে এ সব লক্ষণ কমে যায় বা অদৃশ্য হয়ে যায় । এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিব্বতে ভ্রমনের সবচেয়ে ভালো সময়।
তিব্বতী ভাষায় লাসার অর্থ হলো দেবতার অধিষ্ঠানের পবিত্র স্থান। লাসা শহরের ইতাহাস সুদীর্ঘকালের ।সেখানে ধর্মনীয় সংস্কৃতির পরিবেশ ঘণ। শহরের প্রধান দর্শনীয়স্থান হলো: ডাওচাও মন্দির, বাখু সড়ক, বুদালা প্রাসাদ ইত্যাদি(ছবি হলো দূর থেকে চোখে পড়া বুদালা প্রাসাদ)
চীনের আর্কষনীয় ছোট নগর
চীনের শহরগুলোর ইতিহাস সুদীর্ঘকালের।বিশেষ করে যে সব শহরের ইতিহাস শতাধিক বছরের এবং যে সব শহর ভালভাবে সংরক্ষিত হয়েছে সে সব শহরের অত্যন্ত আকর্ষণ আছে।যেমন ইয়ুন্নান প্রদেশের লিচিয়াং নদী বিশ্ব সংস্কৃতি উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত হয়েছে। ছোট ছোট শহরের ইতিহাস আর সংস্কৃতি, ছোট ছোট শহরের প্রাচীনকাল ও বর্তমান বহু পর্যটকের অনুসন্ধানের স্থানে পরিণত হয়েছে।সুতরাং চৌওজুয়াং, প্রাচীন ফিনিক্স নগর, ইয়াংসু, উজেন, নানশিয়েন আর ডালি প্রভৃতি ছোট শহরগুলো দেশী-বিদেশী পযর্টকদের নয়নগোচর হয়েছে।
চৌওজুয়াং
চৌওজুয়াং ছোট নগর চীনের পুর্বাংশের চিয়াংসু প্রদেশে অবস্থিত, প্রাচীন সুচৌ শহর থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূর ।চীনের প্রাচীনকালের রবিখ্যাত চিত্রকর মিষ্টার উ গুয়েনজং তাঁর একটি প্রবন্ধে লিখেছেন , “ হুয়ানসেন পাহাড়ে চীনের পবর্তমালার সৌন্দর্যের সমাবেশ , চৌওজুয়াং নগরে চীনের নদনদীর সৌন্দর্যের সমাবেশ। বিদেশের পত্রপত্রিকাগুলোতে চীনের চৌওজুয়াং নগরকে “চীনের প্রথম জলাঞ্চল” বলে আখ্যায়িত হয় ।

চৌওজুয়াং নগরের প্রধান প্রধান দর্শনীয়স্থান হলো: ছিয়েনফু মন্দির, দেনশিই ডাওয়ুন, সেনঠান, ফুআন সেতু, মিলো ইত্যাদি।
সুচৌ আর সাংহাই শহরের মাঝখানে অবস্থতি বলে চৌওজুয়াং পৌছতে চলাফেরা অত্যন্ত সুবিধাজনক। সাংহাই বা সুচৌ থেকে সুরাসুরি গাড়ীতে চৌওজুয়াং যাতায়াতা করা যায়।সাংহাইয়ের খুব কাছাকাছি বলে পর্যটকরা এক দিনের মধ্যে চৌওজুয়াং এবং সাংহাইয়ের মধ্যে আসা-যাওয়া করেন।সুতরাং, চৌওজুয়াংএ কাতারসন্পন্ন হোটেল বেশী নেই।অধিকাংশ হোটেল হলো স্থানীয় অধিবাসীদের চালানো হোটেল। যদিও ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নয়, তবুও পরিবেশ মন্দ নয়।
প্রাচীন ফিনিক্স নগর
ফিনিক্স নগর চীনের হুনান প্রদেশের পশ্চিমাংশের থু জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে অবস্থিত।নিউজিল্যাণ্ডের লেখক এক সময় প্রাচীন ফিনিক্স নগরকে “চীনের সবচেয়ে সুন্দর ছোট নগরগুলোর অন্যতম” হিসেবে গণ্য করতেন।চীনের ছিং রাজবংশের রাজা খাংশির শাসনকালে প্রতিষ্ঠিত এই নগর এত ছোট যাতে কেবলমাত্র একটি বড় সড়ক আছে।কিন্তু এই সড়ক হলো একটি সবুজ করিডর ।ফিনিক্স নগর হুনান প্রদেশের পশ্চিমাংশের একটি উজ্জ্বল মণি বলে আখ্যায়িত।

চীনের আধুনিক যুগের বিখ্যাত লেখক সেন ছন ভেনের জন্মস্থান বলে ফিনিক্স নগরের সুনাম অর্জিত হয়।প্রাচীন নগরের জনইন সড়কের প্রস্তরফলক গলির প্রান্তে অবস্থিত সেন ছন ভেনের সাবেক বাসস্থান।তার এই সাবেক বাসস্থান দেখতে ঠিক পেইচিংয়ের চক মেলানো বাড়ীর মতো।গোটা বাসস্থান ইট আর কাঠের কাঠামো।কালো ছাদ আর সাদা দেওয়াল, কাঠে খোদাই-করা জানালায় ঘনঘন সাংস্কৃতিক পরিবেশ প্রকাশ পায়।ফিনিক্স নগরে গেলে আপনি প্রথমে বিমান যোগে হুনান প্রদেশের চিশিও শহর পৌছাবেন, তারপর আবার গাড়ী পরিবর্তন করতে হবে।
SOURCE LINK
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন